‘বিজয়া’য় নিজেকেই ছাড়িয়ে গেলেন স্বস্তিকা
সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই-এ মুক্তি পেয়েছে কলকাতার ওয়েব সিরিজ ‘বিজয়া’। যেখানে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি।
২০২৩ সালে যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুর স্মৃতি আজও টাটকা বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-পরিজনদের মনে। পড়তে গিয়ে বয়েজ হোস্টেলে ভয়ানক র্যাগিংয়ের শিকার হয়েই তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। সেই চিত্রই বিজয়া সিরিজের গল্পের কাঠামো।
র্যাগিং-এর শিকার এক কিশোরের মৃত্যু ও তার মায়ের লড়াইয়ের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিরিজটি। সেই মায়ের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে স্বস্তিকাকে।
এই অভিনেত্রীকে এর আগেও বহুবার মায়ের চরিত্রে দেখা গিয়েছে। কিন্তু এবার যেন তিনি নিজেই নিজেকে ছাপিয়ে গিয়েছে। মায়ের মমতা, সারল্যের সঙ্গে দুর্দমনীয় প্রতিবাদ, প্রতিরোধ এবং কান্নায় ভেঙে পড়াকে ভীষণ নৈপুণ্যের সঙ্গে তুলে ধরেছেন তিনি।
নৈহাটির ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে নীলাঞ্জন। সে চায় না কলকাতায় গিয়ে পড়াশোনা করতে। কিন্তু মায়ের স্বপ্ন, জেদের কাছে বাধ্য হয় সে। কিন্তু কলেজে যাওয়ার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই বাড়িতে তার গুরুতর আহত হওয়ার এবং তিন তলা থেকে পড়ে যাওয়ার খবর আসে। যাকে সুইসাইড কেস বলেই চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেই সাধারণ সুইসাইডের কেস থেকে একজন মা কী করে আসল সত্যি এবং অপরাধীদের বের করে আনে সেটাই ধরা পড়েছে এই সিরিজে।
নীলাঞ্জন এবং অহনের চরিত্রে ছিলেন দেবদত্ত রাহা এবং জিৎ। ক্ষমতাসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবসায়ীর চরিত্রে দেখা গেছে সাহেব চট্টোপাধ্যায়কে।
সোশ্যাল মিডিয়া এখন ‘বিজয়া’র প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাদের মধ্যে কয়েকজনের পোস্ট নিজের ওয়ালে শেয়ার করেছেন স্বস্তিকা। তাবাসসুম নামের এক বাংলাদেশি দর্শক লিখেছেন, ‘আমাদের আশেপাশে সবসময় একজন আমাদের থেকে বেশী ক্ষমতাবান থাকবেই, তাই বলে প্রতিবাদ করা বন্ধ করলে চলবে না। মা তো! সব করতে পারে সন্তানের জন্য। মা আছে তো, মা সব ঠিক করে দেবে। এ বছরের অন্যতম সেরা কাজ দেখলাম, কি দুর্দান্ত অভিনয় স্বস্তিকা মুখার্জির। টিমের প্রত্যেকে অসাধারণ।’
কলকাতার দর্শক পায়েল দাস লিখেছেন, ‘‘বিজয়া’ দেখে খুব কেঁদেছি, আমারও ছেলে আছে সেও একদিন বাইরে যাবে পড়তে, ওটা ভেবেই খুব কষ্ট হয়, ভীষন সুন্দর অভিনয় স্বস্তিকা। ৭ পর্বের সিরিজে কোন বিষয়ই অতিনাটকীয়তা নেই। সায়ন্তন ঘোষালের মতো পোক্ত পরিচালকের থেকে এটাই কাম্য। শুভেচ্ছা ও শুভকামনা ‘বিজয়া’র জন্য।’’
মালবিকা বসু লিখেছেন, ‘বিজয়া দেখে খুব মন খারাপ হয়েছে, আমার মেয়েরাও দূরে থাকে, তাই সবসময় একটা চিন্তা লেগেই থাকে। স্বস্তিকা ম্যাডাম আপনার অভিনয় নিয়ে কোনো রকম মন্তব্য করার ক্ষমতা আমার নেই শুধু একটা কথা বলছি, এটাকে তো অভিনয় মনেই হোলো না, মনে হোলো বিজয়া একদম বাস্তব একজন মানুষ যার জীবনে সত্যিই এরকম ঘটেছে, অসাধারণ লেগেছে আপনাকে। আপনি ঠিক বলেছেন সব মায়েরাই কোথাও গিয়ে এক।’
প্রশান্ত হালদার লিখেছেন, ‘আজ এক অসাধারণ সিরিজ দেখলাম হইচই’য়ে। র্যাগিং কতটা ভয়ানক হতে পারে তাই নিয়ে অনেক সিনেমা, সিরিজ হয়তো হয়েছে, হয়তো অনেক আইনি ব্যবস্থাও এসেছে নতুন করে। কিন্তু যা আগে ছিল এখনও আছে সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে যাইনি, সম্প্রতিকালেই এক ভয়াবহ মৃত্যুর খবরে তার প্রমাণ পেয়েছি। এরকম কত কেস হয়তো হয়েছে, কতগুলো আবার ধামাচাপাও পড়ে গেছে। বিজয়ার মতো কত মা-বাবার কোল খালি হয়ে গেছে, নতুন জীবনের নতুন স্বপ্ন দেখতে আসা ছেলে-মেয়েগুলো স্বপ্নই হয়ে রয়ে গেছে। ভাবছি, এই সিরিজের মতো সব অপরাধীদের যদি এভাবে শাস্তি হত! কি সহজ সরলভাবে সিরিজটিতে বাস্তবতা দেখানো হয়েছে। প্রতিটা স্বার্থান্বেষী, দাম্ভিক ও ক্ষমতাবান মানুষের ও প্রশাসনের নোংরা কালো দিক সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে। প্রত্যেকে ভীষণ ভালো কাজ করেছেন। তবে মায়ের ভূমিকায় বিজয়া মানে স্বস্তিকা মুখার্জি কি অনবদ্য কি সহজ-সরল, তার অভিনয়ের প্রশংসা করার ভাষা আমার নেই। কারণ মনেই হবে না যে তিনি কোনো অভিনয় করছেন, ছেলের সাথে তার খুনসুটি, এই বাবু এটা কর এই বাবু ওটা কেন করিসনি, ছেলেকে আদর ও বেদনার চিত্রগুলোতে প্রত্যেকে তার নিজের নিজের মাকেই খুঁজে পাবে। এই চরিত্রটা উনার থেকে বেশি ভাল কেউ করতে পারতেন বলে আমার মনে হয় না। ভীষন ভালো কাজ হয়েছে পরিচালক সায়ন্সন ঘোষাল স্যার। বিজয়া ২-এর অপেক্ষায় থাকব।’
অদিতি রায় লিখেছেন, ‘র্যাগিং এক ধরনের অপরাধ প্রবণতা, র্যাগিং যারা করে তারা অবদমনে নিরাশাবাদী, র্যাগিং-এর ফলে হাজার স্বপ্নদীপের স্বপ্ন, স্বপ্নদীপদের বাবা-মায়েদের ঘাম ঝরানো অস্তিত্ব মিথ্যা হয়েছে বারবার। ২০২৩-এ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র, ১৭ বছরের স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যুর ক্ষত আজও দগদগে। সচেতনতা জরুরি সব স্তরেই, হয়েছে কি? হবে কি? না হলে? যখন রাষ্ট্রের সব ব্যবস্থা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ কী ভূমিকা নেবে? একবার দেখে নিন হইচই-তে ‘বিজয়া’। চোখ ভিজবে, আমার মতো কঠোর মনের মানুষেরই ভিজেছে! খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন পরিচালক সায়ন্তন ঘোষাল। বিদীপ্তা চক্রবর্তী কী যে অনায়াস আর বিশ্বাসযোগ্য লেগেছে মনোবিদের ভূমিকায়। আসলে ওর মতো শিক্ষিত অভিনেত্রী দরকার খুব এই কারণেই। ও হ্যাঁ, এই সিরিজে স্বস্তিকা মুখার্জি আছে। ওকে নিয়ে আমি কিছু বলবই না! মফস্বলের এক ভঙ্গুর মায়ের ভূমিকায় এই মেয়েটা জাস্ট শিহরণ জাগায়। jaw-dropping acting কাকে বলে জানেন তো?
প্রলয় বোস লিখেছেন, ‘‘স্বস্তিকা মুখার্জি কুর্নিশ আপনাকে, ‘বিজয়া’র মতো একটা সিরিজ উপহার দেওয়ার জন্য। অনেক অভিনয় দেখেছি আপনার। কিন্তু ‘বিজয়া’ সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। ‘বিজয়া’ প্রতিটা মানুষের , প্রতিটা ছাত্র-ছাত্রীর দেখা উচিত। এ রকম সিরিজ খুব কমই হয়।’
এতো প্রতো প্রশংসা পেয়ে স্বস্তিকার নিজের মনে কী অনুভূতি হয়েছে সেকথাও তিনি লিখেছেন ফেসবুকে, ‘সবাই বিজয়া নিয়ে এত কিছু বলছে, সবাই নিজেদের সন্তানদের কথা বলছে, সে তারা দূরে থাক বা কাছে, আমারটাও কত দূরে থাকে। সবার কথা শুনে আমারও মন কেমন করছে। কতদিন দেখতে পাই না, ওই ভিডিও কলটাই জীবনের ধন। মাম্মাই, সোনা মেয়ে আমার। পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল মেয়ে। মায়েরা একইরকম, কোথাও গিয়ে আমরা সবাই একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছি। আমাদের গল্প দেখুন হইচইতে। বিজয়াদের জন্য রইল অনেকটা ভালবাসা।’