সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে সারাদেশে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। এক দফা দাবিতে উত্তাল রাজপথ।
কোটা সংস্কার চেয়ে আন্দোলনরতদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন করেছেন চলচ্চিত্রশিল্পী, অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ ইউটিউবাররা। তাদের মধ্যে রয়েছেন ছোট পর্দার অভিনেতা নিলয় আলমগীর। তিনি নিজেও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
বিজ্ঞাপন
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের এক পোস্টে নিলয় লেখেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আজকের ছাত্র-ছাত্রীরা আগামী দিনের ভবিষ্যত। তারাই একটা সময় দেশের হাল ধরবে। এত এত ছাত্র ছাত্রী ভুল দাবি করতে পারেনা। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও বলছি, দয়া করে কোটা সংস্কার করে দিন। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারকে যে সম্মান এবং ভালোবাসা আপনি সবসময় দেখিয়েছেন তার জন্য আমরা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের কাছে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবার এখন হাসির পাত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের জায়গাটা ঠিক রাখতে হলেও কোটা সংস্কার মেনে নিন। আন্দোলনরত ছাত্র ছাত্রীদের এই দুরবস্থা সহ্য করার মত না। পুরো জাতি আপনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে।
প্রসঙ্গত, এখন পর্যন্ত কোটা সংষ্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন চিত্রনায়িকা শবনম বুবলি, পরীমণি, অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান, ইউটিউবার ও ইনফ্লুয়েন্সার সালমান মুক্তাদির, অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক, ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর আরএসফাহিম চৌধুরীসহ আরও অনেকে।
দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে সর্বত্র ক্ষমতার রদবদল ও নানা ধরনের সংস্কার হচ্ছে। তাহলে কেন বাদ পড়বে শোবিজ অঙ্গন? এতোদিন বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি কিংবা নেটিজেনদের কটাক্ষ পর্যন্ত থাকলে এবার ফ্রন্ট লাইনে চলে এসেছে অভিনয়শিল্পী সংঘ বনাম সংস্কারকামী শিল্পীদের অবস্থান!
‘অভিনয়শিল্পী সংঘ’ হলো ছোটপর্দার শিল্পীদের সংগঠন। ছোটপর্দায় যারা অভিনয় করেন তাদের অধিকার আদায়, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি ও সমস্যা সমাধানে কাজ করে এই সংগঠন। আর সংস্কারকামী শিল্পীরা হলেন সদ্য গড়ে ওঠা একটি গোষ্ঠী। বললে ভুল হবে না, সে সকল শিল্পীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে তাদের মধ্যে একাংশ হলো এই সংস্কারকামী শিল্পীরা।
এমন নয় যে অভিনয়শিল্পী সংঘের কেউ ছাত্রদের পক্ষে রাজপথে দাঁড়াননি। কিন্তু এই আন্দোলনে অভিনয়শিল্পী সংঘের যে ভূমিকা রাখার দরকার ছিলো না তারা পারেননি বলেও সম্প্রতি কথা উঠেছে। এমনকি এই সংগঠনের কোন কোন শিল্পী সরাসরি ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান করেছেন। ফলে অভিনয়শিল্পী সংঘ আস্থা হারিয়েছে খানিকটা। যার ফলে এই সংগঠনের কিছু সংস্কার দাবি করছে একদল শিল্পী।
তারই প্রেক্ষিতে একটু আগে ফেসবুকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন লিখেছেন, ‘আজ (৭ সেপ্টেম্বর) পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টার সময় আমরা সমমনা সংস্কারকামী পেশাদার অভিনয়শিল্পীরা বসেছিলাম এবং পারস্পরিক আলোচনা এবং সেখানে উপস্থাপিত প্রস্তাবের ভিত্তিতে কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আমরা চাই দেশের মানুষ সেই সিদ্ধান্তগুলো জানুক এবং নিজেদের মতামত জ্ঞাপন করুক।’
এরপর বাঁধন জানান সেই মিটিংয়ে তারা পাঁচটি বিষয় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেগুলো উল্লেখ করে বাঁধন যা লিখেছেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘‘আমরা ফাইনালি পাঁচটি বিষয় সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
১. অভিনয় শিল্পী সংঘ বাংলাদেশের সাথে বেশ কয়েকবার আমরা আলোচনা করতে চেয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী তাদের চিঠি পাঠাই। এরপর তারা জানান যে শুধুমাত্র সংগঠনের সদস্য ছাড়া কারও সঙ্গে তারা বসবেন না। কিন্তু আমরা সকল সাধারণ পেশাদার অভিনয়শিল্পীরা একসাথে আলোচনা করে সংস্কার করতে চেয়েছি। তাই আজ ৭ তারিখ আমরা তাদেরকে চায়ের দাওয়াত দিই। কিন্তু তারা ফিরতি চিঠিতে জানান যে সংগঠনের সদস্য যারা নন তাদের সাথে আলোচনা করবেন কিনা সেটা সাধারণ সদস্যদের সাথে কথা বলে জানাবেন। সংস্কারকামী শিল্পীদের সংগঠনভুক্ত ‘সদস্য’ কিংবা ‘অ-সদস্য’ এই সকল শব্দ ব্যবহার করে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে অভিনয়শিল্পী সংঘ। আমরা তাদের বলতে চাই, বাংলাদেশের সকল অভিনয়শিল্পীকে ‘সদস্য’ ও ‘অ-সদস্য’ এই ধরনের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিতে না দেখে ‘অভিনয়শিল্পী’ হিসেবে দেখুন। আপনাদের সাথে কথা বলার অধিকার যেন সবাই পায় সে ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে এবং যে ঘটনা আপনারা আমাদের সঙ্গে ঘটিয়েছেন তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেবেন।
২.পরিবর্তনশীল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনমুখর বাংলাদেশে অভিনয়শিল্পী সংঘের বর্তমান কমিটি, উপদেষ্টামণ্ডলি, কার্যকরী সদস্য এবং সাধারণ সদস্যদের মধ্যে যারা একটি নির্দিষ্ট শাসন কাঠামোর পক্ষে নিজেদের অবস্থান নিয়ে এবং সমস্ত মানবিক প্রসঙ্গগুলোকে এড়িয়ে গিয়ে অমানবিক-অশিল্পীসুলভ আচরণ করেছেন, তাদের সবাইকে পুরো জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমাদের সাথে বসতে হবে।
৩. উল্লেখিত এক এবং দুই নম্বর প্রস্তাবে যদি তারা অনীহা প্রকাশ করেন তাহলে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এর মধ্যে (পারলে আজ বা কালকের মধ্যে) বর্তমান কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে এবং সকলকে পদত্যাগ করতে হবে।
৪. পদত্যাগ পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন রিফর্মেশন কমিটি গঠন হবে এবং সেই কমিটির আওতায় আগামী ৬ মাস সময়ের মধ্যে আমাদের সংস্কার প্রস্তাবনা অনুযায়ী এই সংগঠনটিকে কিভাবে আধুনিক, যুগোপযোগী এবং সকল পেশাদার অভিনয়শিল্পীদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলে ধরা যায় তা বাস্তবায়ন করার ব্যবস্থা করবে। পরবর্তী নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি এবং পরিবেশ তৈরি করার ব্যবস্থাও গ্রহণ করবে।
৫. আমরা সংস্কারকামী সমন্বিত সাধারণ অভিনয়শিল্পীবৃন্দের পক্ষ থেকে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন দৃশ্যমাধ্যমের অভিনয়শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আহ্বান জানাচ্ছি যে- আসুন আমরা একযোগে আমাদের সকল অভিনয়শিল্পীর স্বার্থ, অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করবে যে সংগঠন সেই ধরনের একটি সংগঠনের রূপরেখা প্রণয়ন করি। আসুন সবাই মিলে কথা বলা শুরু করি এবং নতুন করে বৈষম্যহীন একটি সংগঠন নির্মাণে একসঙ্গে এগিয়ে যাই।’’
মুক্তির প্রথম দিনেই বিশ্বব্যাপী ৯৮ কোটি রুপি আয় করে ইতিহাস সৃষ্টি করে দক্ষিণ ভারতের মেগাস্টার থালাপতি বিজয়ের তামিল সিনেমা ‘দ্য গ্রেটেস্ট অব অল টাইম’। অথচ দ্বিতীয় দিনেই সেই আয় কমে দাঁড়িয়েছে ৫২ কোটি রুপি!
ভারত জুড়ে প্রথম দিনে সিনেমাটির আয় ছিল ৫৪ কোটি রুপি। দ্বিতীয় দিন আসতেই তা কমে দাঁড়ায় ৩০ কোটি রুপি। যার ভেতর ছবিটির তামিল ভার্সন আয় করেছে ২২ কোটি রুপি এবং হিন্দি ভার্সন থেকে আয় এসেছে ১.৬ কোটি রুপি। ফলে বলাই বাহুল্য, দ্বিতীয় দিনে প্রায় অর্ধেক আয় কমে এসেছে ‘দ্য গোট’ ছবিটির।
‘দ্য গ্রেটেস্ট অব অল টাইম’ সায়েন্স ফিকশন অ্যাকশন ঘরানার সিনেমা। এই ছবিতে বিজয়কে দেখা গেছে দ্বৈত চরিত্রে। একটি ইলায়াথালাপতি এবং আরেকটি থালাপতি। একজন ভালো মানুষ, আরেকজন খারাপ। একজনের বয়স কম, আরেকজনের বেশি। ডাবল থালাপতি মানে ডাবল অ্যাকশন। নির্মাতার অসাধারণ নির্মাণের কারণে সিনেমার পর্দা থেকে চোখ সরানোর উপায় ছিল না দর্শকদের। ছবিতে পারিবারিক আবেগ, অ্যাকশন, হিউমার, ড্রামা, টুইস্ট সবই আছে। আছে দেশ বিদেশ ঘুরে বেরানোর গল্প।
‘দ্য গোট’ সিনেমার জন্য ১৭৫ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছেন বিজয়। ভারতের চেন্নাই, হায়দরাবাদ, পদুচেরি, থিরুবানন্তপুরাম ছাড়াও ছবিটির শুটিং হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডে।
সিনেমাটির বিভিন্ন চরিত্রে আরো অভিনয় করেছেন প্রভু দেবা, মোহন, জয়রাম, যোগী বাবু, মীনাক্ষী চৌধুরী, লায়লা প্রমুখ। ৪০০ কোটি রুপি বাজেটের এ সিনেমা প্রযোজনা করছেন কালাপাথি এস. আঘোরাম, কালাপাথি এস. গণেষ, কালাপাথি এস. সুরেশ। – ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, বলিউড মুভি রিভিউজ
আওয়ামীপন্থি শিল্পী সমাজের তালিকায় সবচেয়ে বেশি যারা সরব ছিলেন তাদের মধ্যে শামীমা তুষ্টি অন্যতম। পুরো ছাত্র আন্দোলনে তিনি সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
বিশেষ করে ‘আলো আসবেই’ নামে শিল্পীদের গোপন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন তিনি। সেখান থেকে তার একাধিক এসএমএস ছাত্রদের প্রতি ঘটে যাওয়া নৃশংসতাকে ছোট করে দেখায়।
অথচ সেই অভিনেত্রীর উপলব্ধি জাগ্রত হয়েছে সরকার পতনের ৩২ দিন পর! সেই ‘কুমিরের কান্না’ ফেসবুকে পোস্ট করার পর নেটিজেনরা এক বর্ণও বিশ্বাস করেনি। একইসঙ্গে বিরক্তি, ক্ষোভ এবং শ্লেষ প্রকাশ করেছে তারা।
তুষ্টি লিখেছেন, ‘আমি এই মুহূর্তে যা লিখতে যাচ্ছি, আমি জানি, তার জন্য আমি গালি ও ট্রোলের সম্মুখীন হতে পারি। তবুও আমার অবস্থান পরিষ্কার করতে চাই। আমি প্রথমেই বলে নিতে চাই যে, আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী। এর কারণ আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং ১৯৬৫ সালে মালিবাগ আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তাই আমার বাড়িতে সবসময় এই পরিবেশই ছিল যেখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নিজের পক্ষ ভেবেছি। আমার এই পক্ষপাতিত্ব যে ভুল তাও আমি মনে করি না। আমি মনে করি, আমি আমার অংশগ্রহণ ঠিক বিবেচনা করেই করেছি।’
তুষ্টি এরপর লেখেন, ‘আপনারা সকলেই জানেন কেউ কোনো দলের কর্মী হিসাবে কাজ করে, তখন তার সেই দলের নেতাদের কথামতো কাজ করতে হয়। সে সব দলীয় নির্দেশনার বিপক্ষে গিয়ে কাজ করার পরিস্থিতি থাকে না। এবং আমি তা করতেও চাই না দলের কর্মী হিসাবে। তাই বলে এই হত্যাকাণ্ড, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এই নৃশংসতার আমি সমর্থক নই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে বহু কর্মীই তা ছিলেন না।’
নিজের ভুল স্বীকার করে তুষ্টি লেখেন, ‘আমাদের অনেকেরই পজিশন নেয়া দরকার ছিল। অনেক আগেই দরকার ছিল। আমি জানি, আপনাদের অনেকে এই কথাতেও ক্ষুব্ধ হবেন। কিন্তু আশা করি এটা মানবেন যে, আমরা বাংলাদেশে কী ঘটছে তাও জানতে দেরি করেছি। দলীয় রাজনীতির মধ্যেও খবর ফিল্টার হয়। যার সন্তান গেছে তার অবস্থা ভেবেছি। প্রতি মুহূর্তে আমি, আমাদের কেউ কেউ একটা পজিশন নিতে গেছি। সেসব পজিশন কারো না কারো কারণে অন্য আরেকটা পজিশন হয়ে গেছে। আমরা বিটিভিতে গেছি শিল্পীরা সহিংসতা ও ছাত্রদের হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে, তবে সেটা সংবাদে তেমন করে আসেনি। বরং যা এসেছে তাতে আরও ভুল বোঝার জায়গা তৈরি হয়েছে। আমরা হাসপাতালেও আহতদের দেখতে গেছি। আর তখনো আমি সকল কিছু বুঝে উঠতে পেরেছি তেমন না।’
নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে তুষ্টি লেখেন, ‘আমরা যে যাই ভাবি না কেন, দল মূলত কি কি করতে যাচ্ছে বা কি করবে তা সম্পূর্ণ জানার উপায় আমাদের ছিল না। আমি এসব কথা বলে পক্ষ বদলের চেষ্টা করছি না বরং আমার দলের পক্ষে যে সব মারাত্মক ভুল ছিল বা আমার যে সব ভুল বোঝাবুঝি ছিলো সেগুলো আপনাদের জানাতে এসেছি। আমি একটা সংগঠন করি যেখানে সিংহভাগই এই হিংস্রতা, এই হত্যার সমর্থক নয়। কিন্তু আমাদের কোনো একটা পজিশন কীভাবে নিতে পারি তা ভাবতে ভাবতেই প্রতিদিন আরও নতুন মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন আরও বেশি করে আপনাদের থেকে দূরে সরে গেছি।’
এই অভিনেত্রী তার স্ট্যাটাসে ‘আলো আসবেই’ হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের প্রসঙ্গও টেনে আনেন। এ নিয়ে লিখেছেন, ‘আমি একটা হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ছিলাম। সেখানেও আমি বলেছি যে সকলের সাথে গিয়ে আলাপ করতে হবে। এগুলো বন্ধ করা দরকার। কিন্তু ঘটনা এত দ্রুত ঘটছিল আমি যা সমর্থন করি না তা আপনাদের জানানোর সুযোগ পাইনি। তাছাড়া আমার অনেক সহকর্মীরাও এসবের ভিতরে ছিলেন, পরে হয়তো থাকেননি। তারাও আমাকে অনেক গালাগাল করেছেন তবু আমি বলতে চাই যে আমি আমার সহকর্মীদের জন্য অনেক কিছুই করার চেষ্টা করেছি। এখনো তাই করবো। এছাড়াও আমরা আমাদের সিনিয়র সহকর্মীদের সাথেও যোগাযোগ করতে পরিনি এক সঠিক দিক নির্দেশনার জন্য।’
সবশেষে তুষ্টি লেখেন, ‘আপনাদের সামনে এসে কথা বলতে দেরি করেছি। যে ঘৃণার সম্মুখীন আমরা, যে গালাগালি আমি খেতে পারি সে সবের ভয়েই আরও দেরি করে ফেলেছি। কিন্তু আমি নিজেকে বুঝিয়েছি, এইসব সমালোচনা আর গালি আর ট্রোল আমার গ্রহণ করতে হবে। আর সে সবের মধ্য দিয়েই শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। আপনারা দয়া করে ভুল বুঝবেন না। আমি দল বদলের ইচ্ছা থেকে আসিনি। আমি যে দলে ছিলাম সেই দলের নেতৃবৃন্দের সকল কার্যক্রম যে আমি সমর্থন করি না সেটা জানাতে এসেছি। আমি জানাতে এসেছি আমি দল করলেও নিজের বিচারবুদ্ধি বিবেক-বিবেচনা বিক্রি দিয়ে আমি দল করি না। আমি সকলের মঙ্গল কামনা করছি। শহীদদের আত্মত্যাগ যেন বাংলাদেশে বিফলে না যায় সেই প্রত্যাশা করছি।’
শিরোনামের মর্মার্থের সঙ্গে তার চেয়ে আর কে বেশি মানানসই? হ্যাঁ, আবুল হায়াত এ দেশের সেই অভিনয়শিল্পীর একজন, যিনি সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে কোন সমালোচনা-কন্ট্রোভার্সি ছাড়াই পার করে দিলেন নিরেট ভালোবাসা নিয়ে। বিচিত্র চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন ক্যারিয়ারজুড়ে। মঞ্চ, টিভি নাটক থেকে শুরু করে আর্ট ফিল্ম, কমার্শিয়াল ফিল্ম- সব ক্ষেত্রেই তিনি সফল। জটিল চরিত্র ফুটিয়ে তোলার অসামাণ্য ক্ষমতার পাশাপাশি অনবদ্য ব্যক্তিত্ব, ভরাট কণ্ঠশৈলী ও নান্দনিক উচ্চারণ দক্ষতার জন্য তার ভক্ত আট থেকে আশি। একাধারে তুখোড় অভিনেতা, ভালো বাবা, ভালো স্বামী, ভালো সন্তান, ভালো ভাই এবং ভালো শিক্ষক। ফলে তার পুরোটা জীবনই তো বসন্তের রঙে রঙিন।
আজ এই জীবন্ত কিংবদন্তির ৮০তম জন্মদিন। জীবনের এই পর্যায়ে এসে এই বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্মাতা বলেন, ‘জীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু জন সাধারনের যে ভালোবাসা, তাদের কাছ থেকে যে সম্মান পেয়েছি, তার সাথে আসলে কোনো কিছুরই তুলনা চলে না। তাদের এই ভালোবাসার মাঝেই আমি বেঁচে থাকতে চাই। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই ভালোবাসা বুকে নিয়ে অভিনয় করে যেতে চাই।’
জন্মদিন নিয়ে আলাদা কোনো পরিকল্পনা থাকে না আবুল হায়াতের। পরিবারের সদস্যরাই ঘরোয়াভাবে আয়োজন করেন। বিকেলে এই অভিনেতার জন্মদিন উদ্যাপন করবে টেলিভিশন অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম। তিনি জানান, বিকেলে অভিনয়শিল্পী সংঘের অফিসে কেক কেটে আবুল হায়াতের জন্মদিন উদ্যাপন করবেন শিল্পীরা।
জন্মদিন নিয়ে আবুল হায়াত বলেন, ‘জন্মদিন নিয়ে কখনোই আমার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা থাকে না। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাই। এদিন আমার নাতনি শ্রীষার জন্মদিন। ১২টা বাজলেই আমি ফোন করি, তারাও আমাকে ফোন করে। এ ছাড়া রাত থেকেই আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষীরা ফোন করে, খুদে বার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানায়।’
এ মাসের শেষ দিকে প্রকাশ হবে আবুল হায়াতের আত্মজীবনী ‘রবি পথ’। জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশের ইচ্ছা থাকলেও সময়স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
তিন শতাধিক পৃষ্ঠার বইটি লিখতে আবুল হায়াতের সময় লেগেছে ১০ বছর। আত্মজীবনীতে নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি। রবি পথের প্রচ্ছদ করেছেন তাঁর বড় মেয়ে অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত। প্রকাশ হবে সুবর্ণ প্রকাশনী থেকে।