গঠিত হলো ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি'। অনুদান কমিটির প্রধান হিসেবে আছেন তথ্য উপদেষ্টা, আছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মমও।
সরকারি অনুদান দেওয়ার জন্য স্বচ্ছতা ও সর্বোচ্চ পেশাদারির সঙ্গে চলচ্চিত্র বাছাইয়ের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি' পুনর্গঠন করা হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামকে সভাপতি করে মোট ১০ জন সদস্যকে নিয়ে গঠিত করা হয়।
বিজ্ঞাপন
আজ (০৭ অক্টোবর) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে আছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র)।
এ ছাড়া কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নায়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিস বিভাগের শিক্ষক ও অভিনেতা-নির্দেশক ড. আবুল বাশার মো. জিয়াউল হক (তিতাস জিয়া), চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক খান শারফুদ্দীন মোহাম্মদ আকরাম (আকরাম খান), চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার নার্গিস আখতার, রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি আহমেদ মুজতবা জামাল, নির্মাতা ও সম্পাদক সামির আহমেদ, অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম।
বিজ্ঞাপন
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, চলচ্চিত্রশিল্পে মেধা ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা এবং বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য’ চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান প্রদান নীতিমালা-২০২০ (সংশোধিত)’ অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারি অনুদান প্রদানের লক্ষ্যে প্রাপ্ত প্যাকেজ প্রস্তাবসমূহ পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্য সরকার ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি' পুনর্গঠন করল।
দেশ ও আন্তর্জাতিক সিনেমার অঙ্গণে সাড়া ফেলা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এখন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন। সম্প্রতি তিনি এই পদে শপথ গ্রহণের পর থেকেই নেটিজেনদের বড় এক অংশ তার সমালোচনা করছে। তাকে আওয়ামী সরকারের দোসর বলে অভিহীত করেছেন অনেকেই।
এমন প্রেক্ষাপটে ফারুকীকে নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী স্ট্যাটাস দিয়েছেন এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই নজরুল ইনস্টিটিউটের দায়িত্ব পাওয়া গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলী। বলে রাখা ভালো, জুলাই আন্দোলনের একেবারে শুরু থেকেই যে ক’জন সংস্কৃতিকর্মী ছাত্রদের পাশে থেকেছেন তাদের মধ্যে মোস্তফা সয়রার ফরুকী ও লতিফুল ইসলাম শিবলী অন্যতম।
এই গীতিকবি লিখেছেন, ‘কবি নজরুল ইনস্টিটিউট হল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে, সেই অর্থে আমার দপ্তরের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা হলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। দফতর প্রধান হিসেবে গতকাল আমি আমার দফতরের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। এটাকে ফারুকী হেটারসরা দোষ হিসেবে দেখছে, অসুবিধা নেই। আমার সাথে ফারুকির সম্পর্ক ভাই ও বন্ধুর মত। এই সম্পর্ক প্রায় ২৫ বছরের পুরাতন। ফারুকির স্ত্রী তিশা ও তার ভাই ইথেন আমার ছোট ভাই-বোনের মত। তাদের বাবা মা আমাকে সন্তানতুল্য আদর করতেন। সেই ফারুকি এখন কর্মসূত্রে আমার দফতরের মন্ত্রী। এই দুই সম্পর্কের কারণে আমার কাজের ক্ষেত্রটা অনেক সহজ হবে, এটাই স্বাভাবিক।’
ফারুকীকে শিবলী এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন সেই স্ট্যাটাসে, ‘ফারুকী দোষ-গুণে মেশানো একজন মানুষ। এই মন্ত্রণালয় চালানোর যোগ্যতা তার আছে। অতীতে তার ফ্যাসিবাদের সাথে ঘেঁষাঘেসির যেমন প্রমাণ আছে, তেমনি তাদের বিরোধিতা করারও প্রমাণ আছে। আমি খুব ভাল করেই জানি আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের দের দ্বারা সে কেমন নিগৃহীত হয়েছে। জুলাইয়ের তীব্র দিনগুলিতে আমরা যখন আসহায়ের মত দেশের সেলেব্রিটি বুদ্ধিজীবীদের সমর্থনের আশায় তাকিয়ে ছিলাম, তখন ২/১ জন ছাড়া আর কাউকে আমাদের পাশে পাইনি। সেই জুলাইয়ে ২/১ জনের মধ্যে ফারুকী ছিলেন একজন। ফারুকীর সেই সময়ের স্ট্যাটাসগুলো অনেক তরুণকে সাহস জুগিয়েছে।’
ফারুকীর প্রশংসা করে শিবলী লেখেন, ‘অনেকের মত সে চুপ থাকে নি। নিশ্চিত নিরাপত্তার জীবন ফেলে ফারুকি রিস্ক নিয়েছিল। জুলাই আন্দোলন ফেইল করলে আমাদের অনেকের মত ফারুকীর পরিণতিও ভয়াবহ হত। আমি ফারুকীর জুলাইয়ের ভূমিকার জন্য তার অতীত ভুলতে রাজি আছি । নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল।’
এরপর নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন শিবলী, ‘আর এখন থেকে ভবিষ্যতের ফারুকী তো আমাদের নাগালের মধ্যেই থাকবে। আমি ইনসাফ থেকে কখনই নড়ব না ইনশাআল্লাহ। ফারুকী যতক্ষণ ইনসাফের উপর থাকবে ততক্ষণই সে আমার নেতা। ইনসাফ থেকে সরে দাঁড়ালে সবার আগে আমিই তার বিরুদ্ধে দাঁড়াব। ইনসাফের প্রশ্নে আমি কারো পরোয়া করি না। মনে রাখবেন, আমি এই কথা যার জন্য বলছি পদাধীকার বলে তিনি এখন আমার বস। এবং তিনি আমার বন্ধু তালিকায় আছেন।‘
ফারুকীর ওপর আস্থা রেখে শিবলী লিখেছেন, ‘গতকালের ছবিতে যারা আমাদের মাথার উপর শেখ মুজিবের ছবি দেখেছেন, তাদের জানার জন্য বলছি যে– ফারুকী আজ তার অফিস তথা সংস্কৃতি মন্ত্রণালায় থেকে ফ্যাসিবাদের আইকন শেখ মুজিবের ছবি সরিয়ে ফেলেছেন। সম্ভবত সচিবালয়ে এই কাজ ফারুকীই প্রথম করলেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ফারুকীর মধ্যে আমি সেই স্পিরিট দেখেছি– সে আমাদের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবে ইনশাল্লাহ। আমরা একটু অপেক্ষা করি আর তার কর্মের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমি সর্বদা আপনাদের ভালো পরামর্শ তার কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য আপনাদের সাথে আছি। আমাকে ভুল বোঝার দরকার নাই।’
এই স্ট্যাটাসে নিজের দায়িত্ব নিয়ে লতিফুল ইসলাম শিবলী লিখেছেন, ‘আমার কাছে নজরুল ইনস্টিটিউট কোন চাকরির জায়গা না। নজরুল আমার সাংস্কৃতিক বিপ্লবের হাতিয়ার। যে হাতিয়ার দিয়ে আমি ফ্যাসিবাদের ন্যারেটীভের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নেমেছি। এই লড়াইয়ে আমার মত ফারুকীও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ।’
ভারতীয় বহুল প্রশংসিত প্রবীণ শিল্পী মনোজ মিত্র মারা গেছেন। কয়েক বছর ধরে বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তার ভাই অমর মিত্র। মনোজ মিত্রের প্রয়াণে শিল্পী সমাজ ছাড়াও শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকাল ৮ টা ৫০ মিনিটে ইহলীলা ত্যাগ করে পরপারে চলে গেলেন মনোজ মিত্র। গুণী এই শিল্পী কাজ করেছেন অসংখ্য সিনেমাতে। এছাড়াও তিনি একাধারে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন মঞ্চে কাজ করেও। তার লেখা নাটকও অনেক প্রশংশিত হয়েছিল।
গত সেপ্টেম্বরেও একবার গুরুতর অসুস্থ হয়েছিলেন মনোজ। তখন অবশ্য সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন, তবে এবার আর শেষরক্ষা হলো না। চিকিৎসাচলাকালে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছিল তার হৃদকার্যে অসুবিধা হচ্ছিল। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। অবশেষে বার্ধক্যজনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন জনপ্রিয় এই অভিনেতা।
৮৬ বছর বয়সী অভিনেতা মনোজ মিত্র জন্মগ্রহণ করেছিলেন এপার বাংলায়। খুলনার সাতক্ষীরার চোক্কামোক্কাই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দেশভাগের পর সপরিবারে পশি্চমবঙ্গে পাড়ি জমান তারা।
তার সবচেয়ে আলোচিত কাজ হলো বাঞ্ছারামের বাগানে, সেখানে তিনি প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এছাড়াও, মিত্র তপন সিনহা, সত্যজিৎ রায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, বাসু চ্যাটার্জি, তরুণ মজুমদার, শক্তি সামন্তের মতো নামকরা পরিচালকের সঙ্গে অসংখ্য কাজ করেছেন তিনি।
অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক লেখা এবং পরিচালনার জন্যও তার বেশ সুনাম ছিল। তার লেখা নাটকগুলোর মধ্যে বহুল আলোচিত নাটক হলো- বোগল ধীমান, সাজানো বাগান , চোখে আঙ্গুল দাদা , কালবিহঙ্গো , পরবাস , অলোকানন্দর পুত্র কন্যা , নরক গুলজার , অশ্বথামা , চকভাঙ্গা মধু , মেষ ও রাখশ , নয়শো ভোজ , ছায়ার প্রশাদ , দেশ্বরম , শ্বরপদ , শ্বরপদ্ম প্রভৃতি।
কলকাতার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে মুভিজ থেকে ২০২৫ সালের জন্য ১৮টি সিনেমা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জমকালো আয়োজনের মধ্যে সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতার তাজ হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ছিলেন ওপার বাংলার নামী শিল্পী ও পরিচালকরা।
পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন আবির, অঙ্কুশ, শ্বাশ্বত, জিতু, অর্ণিবান, ঋত্বিক,ঋতুপর্ণা, শ্রাবন্তী, দর্শনা৷ পায়েলদের মতো প্রথমসারির তারকা। আরও ছিলেন সৃজিত মুখার্জি, শিবুপ্রসাদ, জয়দীপ মুখার্জির মতো প্রথমুসারীর নির্মাতারা।
এতসব তারকাদের ভীড়ে মধ্যমনি হয়েছিলেন ঢাকাই মেগাস্টার শাকিব খান। এসকে মুভিজের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্কের কারণে মুম্বাইয়ের 'বরবাদ' ছবির শুটিং থেকে এক রাতের জন্য কলকাতা আসেন তিনি। অনুষ্ঠানে উপস্থাপক মীর মঞ্চে শাকিবকে বাংলাদেশিদের গর্ব মেগাস্টার সম্মোধন করে ডেকে নেন।
তখন শাকিব মঞ্চে গিয়ে তার মুক্তির অপেক্ষায় থাকা 'দরদ' ছবি নিয়ে বলেন, আগামী ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ইন্ডিয়াসহ বিশ্বের ২০টির বেশি দেশে দরদ মুক্তি পাচ্ছে। এটি অত্যন্ত চমৎকার একটি গল্পের সিনেমা। গান রিলিজ হতে দেরি হলেও আসার সাথে সাথে সবার ভালোবাসায় এক ঘন্টায় ট্রেন্ডিংয়ে এসেছে। যা আমাকে অভিভূত করেছে।
মঞ্চে দাঁড়িয়ে শাকিব যৌথ প্রযোজনা নিয়েও আলাপ করেন। তিনি বলেন, যতবারই এখানে (কলকাতা) আসি, কখনো দুই বাংলাকে আলাদা মনে হয় না। আমার কাছে মনে হয়, এখানকার সবাই ওখানে গেলেও একই অনুভব করেন। দুই বাংলায় যৌথ প্রয়াসে সিনেমা নির্মাণ বরাবরই ইতিবাচক। এতে দুই ইন্ডাস্ট্রিই সমৃদ্ধ হয়।
এদিকে, সেখানকার ১৮টি সিনেমার মধ্যে শাকিবের ছবি থাকছে কিনা সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। তবে সূত্র জানাচ্ছে, প্রাথমিক আলাপ হয়েছে। আগামীতে বড় আয়োজন করে ব্লকবাস্টার শিকারী, নবাবের পর ফের জানানো হবে এসকে মুভিজের সঙ্গে শাকিবের নতুন কাজের খবর।
দেশের তরুণ নৃত্যশিল্পীদের মধ্যে প্রসিদ্ধ নাম হৃদি শেখ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও কুড়িয়েছেন সুনাম। নিয়মিত নাচভিত্তিক কনটেন্ট তৈরি করে আলাদা দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন। সমসাময়িক বিষয়ে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসিদ রণ
মাসিদ রণ: যেখানে দেশের অনেকেই উন্নত দেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে যেখানে রাশিয়া ছেড়ে বাংলাদেশে চলে এলেন। কোন অনুশোচনা হয় এ নিয়ে?
হৃদি শেখ: এটা ঠিক যে রাশিয়ায় আমার বেড়ে ওঠা, পড়াশুনা, বন্ধু-বান্ধব, নাচের আন্তর্জাতিক সব প্রশিক্ষণ, কর্পোরেট জব- সবটাই ছিলো। কিন্তু দেশে এসে আমার একদমই অনুশোচনা বোধ করার কোন কারণ নেই। যারা বিদেশে চলে যেতে চান তা মূলত ভালো জীবিকার জন্য। কিন্তু আমি তো আমার বাংলাদেশেই সব পাচ্ছি। আমি কি খারাপ আছি (হাহা)? তবে এটা ঠিক যে একদম বাংলাদেশে থেকে যাবো এটা শুরুতে ভাবিনি। ‘চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে’তে ২০১৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও কিন্তু আমি রাশিয়ায় আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলাম। কিন্তু কোভিডের পর থেকে দেশেই সব প্রস্তুত করে নিয়েছি।
মাসিদ রণ: সম্প্রতি আন্তর্জাতিক কনটেন্ট ক্রিয়েটর নয়েলের সঙ্গে একটি কোলাবোরেশন করেছেন যা সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণ সাড়া ফেলেছে। এর পেছনের গল্পটি কেমন ছিলো?
হৃদি শেখ: আসলে দর্শক আমাকে নানা মাধ্যম থেকে চেনেন। কেউ চেনেন ‘চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে। কেউ আবার চেনেন বলিউডভিত্তিক রিয়েলিটি শো ‘ড্যান্স প্লাস’-এর মাধ্যমে। জেন জি আবার আমার দর্শক হয়েছে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম কিংবা টিকটকের মাধ্যমে। ফলে আন্তর্জাতিক যে কোন বয়সী কনটেন্ট ক্রিয়েটর বাংলাদেশে এলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারাই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন কোলাবোরেশন করার জন্য। কোন কোন ক্ষেত্রে আমিও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তেমনি নয়েলও আমার ইন্সটাগ্রাম স্টোরিগুলো আগে থেকেই দেখতো। যেহেতু সে আমার সম্পর্কে টুকটাক জানে তাই আমি তাকে মেসেজ করে বলি যে, তুমি আমার দেশে এসেছ, যদি কোন সাহায্য লাগে বলতে পারো। অল্প সময়ের মধ্যেই সে আমাকে রিপ্লাই দেয় এবং আমরা দেখা করি। এরপর কোন প্ল্যান ছাড়াই রাস্তার মধ্যে আমরা ওই ভিডিওটি করে ফেলি।
আমাকে যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ কিছুটা হলেও চেনেন, তাই চাইলেই রাস্তায় ওভাবে নেমে পড়তে পারি না। কিন্তু নয়েলের ভিডিও’র কনসেপ্টটাই হলো একেবারে অথেনটিকভাবে সবকিছু করতে হয়। তার স্টাইলে কাজ করে ভালো লেগেছে। পরে তো সেই ভিডিও মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হয়েছে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে। বাই দ্য ওয়ে, নয়েল কিন্তু আমার নাচের স্কুলের বাচ্চাদের সঙ্গেও কনটেন্ট করেছে। সেটাও আপনারা তার আইডিতে দেখতে পাবেন।
মাসিদ রণ: সম্প্রতি ‘হলুদ হলুদ ড্যান্স’ গানে আপনার আরেকটি নাচের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে চিত্রনায়িকা দীঘি, কনটেন্ট ক্রিয়েটর কারিনা কায়সারের সঙ্গে দেখা গেছে আপনাকে...
হৃদি শেখ: হ্যাঁ। ওই ভিডিওটা করেছি গত শুক্রবার মুক্তি পাওয়া ‘৩৬ ২৪ ৩৬’ সিনেমার প্রমোশনের জন্য। ‘হলুদ হলুদ ড্যান্স’ কিন্তু ওই ছবিরই গান। দীঘি তো নাচতে পারে আমরা সবাই জানি, ও খুব সুইট। কিন্তু কারিনা এভাবে দ্রুত নাচের স্টেপগুলো তুলে ফেলতে পারবে আমি ভাবতেই পারিনি। খুব মজা হয়েছে কাজটি করে। তবে এই ভিডিওটি শুধু এজন্য করিনি যে আমার সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ফলোয়ার আছে বলে। বরং তারা জানে যে আমার সেই দক্ষতা আছে যা দিয়ে একটি মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করতে পারবো। আমি এমন কনটেন্ট ক্রিয়েটর না যে ঘরে বসে ফোনের ক্যামেরার ভিডিও করে ছেড়ে দিলাম! যারা করেন, তাদেরকে আমি ছোট করে দেখি না। আসলে একটা সফল ক্যারিয়ারের পেছনে সমৃদ্ধ ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হয়। নিজেকে বরাবরই ছাড়িয়ে যেতে হয়। সেজন্যই আমি এতো বড় ফ্লোর ভাড়া করে স্টুডিও বানিয়েছি। সম্পূর্ণ প্রফেশনাল সেট-আপ তৈরি করেছি। আমার একশ’র ওপরে স্টুডেন্ট রয়েছে যারা নিয়ম করে আমার কাছে নাচ শিখতে আসছে।
মাসিদ রণ: নানা মাধ্যমে কাজ করে সফলতা পেলেও ফিল্মের কোরিওগ্রাফিতে আপনাকে দেখা যায় নি কেন?
হৃদি শেখ: আসলে আমাদের দেশে ফিল্মের গানের বাজেট খুব কম থাকে। যে দু-একটা ছবিতে ভালো বাজেট থাকে সেখানে তারা বিদেশি কোরিওগ্রাফারকে নিয়ে নেয়। বাজেট না থাকলে আমি যতো ভালো কোরিওগ্রাফি করি না কেন, সেটা ঠিকঠাক পর্দায় ফুটে উঠবে না। তাই অল্প বাজেটের ছবিতে কাজ করে আমার এতোদিনের অর্জিত সুনাম নষ্ট করতে চাই না।
এই প্রশ্নের আরও একটা উত্তর আমার কাছে আছে। সেটি হলো, ২০২৪-এ এসে আমি কোন মাপের কোরিওগ্রাফার কিংবা আমার দক্ষতা প্রমাণের জন্য শুধুমাত্র সিনেমার গান করাটাই একমাত্র উপায় নয়। আমি নিয়মিত ভালো কনটেন্ট তৈরী করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করছি। সেটি দেখেই কিন্তু কমেন্ট বক্সে অনেকেই আমাকে সিনেমার গানে কোরিওগ্রাফি কেন করছি না সেটা জানতে চান। আমার সেই দক্ষতা না থাকলে তারা এমন প্রত্যাশা করতেন না আমাকে নিয়ে।
এছাড়া আমি কিছু মিউজিক ভিডিওর কাজ করেছি যেটা চলচ্চিত্রের অনেক গানের চেয়ে বড় বাজেটের। ফলে এখন মেধা প্রকাশের অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে। সবাই অবশ্য সেই প্ল্যাটফর্মগুলো ক্রিয়েট করতে পারেন না। আমাদের দেশে অনেক মেধাবী নাচের ছেলে মেয়ে আছে, যারা হৃদি শেখের জায়গায় অন্তত আসতে চায়। তাদেরকে সুযোগ দিতে হবে। নয়তো তাদের মেধা মানুষের কাছে পৌঁছবে কিভাবে?
মাসিদ রণ: বলিউডের ‘ভুলভুলাইয়া ৩’ ছবির ‘মেরে ঢোলনা ৩.o’ গানের কোরিওগ্রাফি ভালো লাগেনি বলে ফেসবুক পোস্ট করেছিলেন...
হৃদি শেখ: হ্যাঁ। বলিউডের কাজের মান খুবই উন্নত, তাদের কাজ দেখে আমরা অনুপ্রাণীত হই। কিন্তু সব সময় যে তাদের কাজ ভালো হবে না নয়। সেখানেও আমাদের দেশের মতো সিন্ডিকেট রয়েছে। একটা চক্র সব বড় কাজগুলো বাগিয়ে নেয়। নতুন ট্যালেন্টকে বিকশিত হতে দিতে চায় না। উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি, নোরা ফাতেহির যে বিখ্যাত গানগুলো আপনারা দেখেনে, তার কোরওগ্রাফার হিসেবে যাদের নাম প্রকাশিত হয় আসলে কিন্তু তারা কোরিওগ্রাফিগুলো করেন না। যারা আসলেই কাজগুলো করেছেন তারা আমার পরিচিত, তারাই আমাকে কথাগুলো বলেছেন।
ওহ প্রসঙ্গ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম, সেটা বলতে চাই সেটা হলো- ‘মেরে ঢোলনা ৩.o’ গানটি শ্রেয়া ঘোষাল কি দারুণ গেয়েছেন, কম্পোজিশনও দুর্দান্ত। কিন্তু কোরিওগ্রাফি আপ টু দ্য মার্ক হয়নি। যা হয়েছে অনেকেই হয়তো পছন্দ করছেন, কিন্তু এই গানটির যেহেতু আলাদা লেগেসি রয়েছে সেই অনুযায়ি আরও মারাত্মক কিছু আশা করেছিলাম। তাছাড়া যে দুই জন অভিনেত্রী পারফর্ম করেছেন তাদের মধ্যে একজনের পারফরমেন্সও আশাব্যঞ্জক নয়। আশা করি পাঠক বুঝতে পারছেন আমি কার কথা বলছি।
মাসিদ রণ: অনেক তারকার সঙ্গে আপনি কোলাবোরেশন করেছেন। কার সঙ্গে কাজ করে সবচেয়ে ভালো লেগেছে?
হৃদি শেখ: সিয়াম আহমেদ আমার ভালো বন্ধু। তার সঙ্গে বেশ আগে ‘বন্ধুরে’ মিউজিক ভিডিওটি করেছিলাম। এখনো সেই কাজটির কথা অনেকেই বলেন। সিয়ামের ভালো কাজ করার ব্যাপারে ডেডিকেশন আমাকে মুগ্ধ করেছে। এ ছাড়া যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তাদের মধ্যে বিদ্যা সিনহা মিমকে খুব ভালো লেগেছে। তিনি দেশের প্রথম সারির তারকা, কিন্তু কাজের সময় খুব আন্তরিক। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে আামদের, তাই কাজ করতে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে।
মাসিদ রণ: এমন স্বপ্ন আছে যা পূরণ হয়নি?
হৃদি শেখ: ড্যান্স প্লাসে আমি শাহরুখ খান, হৃত্বিক রোশানের সঙ্গেও স্টেজ শেয়ার করেছি। এখন স্বপ্ন দেখি শাকিরার সঙ্গে কাজ করার। কাজ করতে না পারি, অন্তত দেখা হলে বলতে চাই, আমি আপনার নাচের অনেক বড় ভক্ত। আর অর্জনের কথা বলতে গেলে, একজন বাংলাদেশি হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার স্বপ্ন দেখি। আরেকটি স্বপ্ন অবশ্য কখনোই পূরণ হবে না, সেটি হলো মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গে পারফর্ম করা!