৯০ বছর বয়সেও মঞ্চে মধ্যমণি কাঙালিনী সুফিয়া, সঙ্গ দিলেন সাব্বির
বার্ধক্যের ভারে ন্যুব্জা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বাউলশিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া। বয়স ৯০ বছর পেরিয়েছে। শরীরে নানান রোগে বাসা বেঁধেছে। তবুও মঞ্চে উঠে গান গেয়ে মঞ্চ মাতালেন এই প্রবীণ শিল্পী। বয়স হলেও, এখনো নেচে নেচে গান করেন সুফিয়া। তার কণ্ঠের জাদু এখনো যেস অক্ষত আছে।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চে তরঙ্গ কালচারাল ফেস্ট ও মেলার আয়োজিত সাংস্কৃতিক উৎসবের সমাপনী দিনে তিনি গান পরিবেশন করেন। খ্যাতনামা এ শিল্পীর গানে মুগ্ধ হয়ে দর্শকরা উল্লসিত হয়ে ওঠে। তার সঙ্গে পরে যোগ দেন ‘চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ’ খ্যাত সাব্বির কোরাইশিসহ লালন একাডেমির শিল্পী ও বাউলরা।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা নিয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বাউলশিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া বলেন, ‘আমার বয়স ৯০ বছর পেরিয়েছে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার বয়স হয়েছে। এখন আর আগের মতো গাইতে পারি না, তবুও চেষ্টা করি। এখন মেয়ে আমাকে সহযোগিতা করে।’
অনুষ্ঠানে দর্শক হিসেবে উপস্থিত নারী উদ্যোক্তা সাফিনা আঞ্জুম জনী বলেন, ‘টাকা দিয়ে গুণী শিল্পীর মূল্যায়ন হয় না। এরপরও গানে মুগ্ধ হয়ে সামান্য কিছু টাকা উপহার দিলাম। উনি ৯০ বছরে যে ভাবে গান গাইলেন, দর্শকরা তার কন্ঠের জাদুময়ী গামে মুগ্ধ হয়ে শুনেছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাদক, সন্ত্রাস দূর করা সম্ভব। এই আয়োজনের মাধ্যমে মেলায় আগত দর্শকরা বিনোদনের খোরাক হিসেবে জনপ্রিয় শিল্পীদের গান উপভোগ করতে পারলো।’
তরঙ্গ সংগঠনের সভাপতি তাসফী পারভেজ রোহান বলেন, ‘কুষ্টিয়াবাসী ভাগ্যবান। কাঙালিনী সুফিয়ার মতো একজন গুণী শিল্পীর গান শুনে মানুষ যেমন আনন্দিত তেমনি আমরা আয়োজক হিসেবেও ধন্য। এ বয়সেও তিনি গান গেয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন। আমরা ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখতে চাই।’
জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার সুজন রহমান জানান, ‘হাসি-কান্নার মতো উৎসবের রংও সর্বজনীন। ঠিক যেমন একই রকম রং জগতের তাবৎ যাতনা আর প্রেমের। প্রেম, যাতনা, সম্মিলন নানা ভাব থেকে গানের সৃষ্টি। তরঙ্গ সংগঠন আয়োজিত অনুষ্ঠানে মেলা বাউল গানসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন এবার দর্শককে মুগ্ধ করেছে। এই মেলা থেকে উৎসারিত গান যাপিত জীবন উদযাপনের রঙিন অনুষঙ্গ বলেও জানান তিনি।’
বাংলার কৃষ্টি কালচার ও ঐতিহ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে কুষ্টিয়ায় ৪ নভেম্বর শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব শেষ হয়েছে শুক্রবার। তরঙ্গ সংগঠনের আয়োজন জেলা শিল্পকলা একাডেমির আঙ্গিনায় এ উৎসবে শহরের প্রায় ৩০টি স্টল বসেছে।
দেশীয় পণ্য ও খাদ্য সামগ্রী নিয়ে মেলায় উপস্থিত হয় উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি উন্মুক্ত মঞ্চে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীদের সমন্বয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত, ফোন, আধুনিক গান, বাউল ও সাধুসঙ্গ, ব্যান্ড শো, নৃত্য, আবৃত্তি ও বাদ্যযন্ত্রের ঝনঝনানি উপস্থাপন করেছে।