গ্র্যামিতে সাইকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন বিয়ন্সে
গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডকে বিশ্ব সঙ্গীতের সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি বলা হয়- এ কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। বিশ্বের যে কোন প্রান্তের শিল্পীর স্বপ্ন থাকে একদিন গ্রামি হাতে তুলবেন। সেখানে কিছু শিল্পী আছেন, যাদের কাছে গ্রামি যেন ডাল-ভাত! প্রতি বছর দু’হাত ভরে গ্রামি ঘরে তোলেন সেই শিল্পীরা। তেমনি একজন বিশ্ববিখ্যাত পপস্টার ও নৃত্যশিল্পী বিয়ন্সে নোয়েলস।
বিয়ন্সে শুধু দর্শক-সমালোচকের কাছেই প্রিয় নয়, তার সহকর্মীদের অনেকেও তাকে আইডল মনে করেন। তাইতো গ্রামি’র মতো স্পেশ্যাল অ্যাওয়ার্ড পেয়ে অনুভূতি প্রকাশের সময় েস্টেজেই বিয়ন্সের নাম উল্লেখ করেন অনেকেই। সেই তালিকায় রয়েছেন ব্রিটনি স্পিয়ার্স, নিকি মিনাজ থেকে শুরু করে হালের লিজ্জো। শুধু তাই নয়, অ্যাডেলের মতো শিল্পী অস্কার পাওয়ার পরও বিয়ন্সেকে আলাদা করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এবার সেই বিয়ন্সেই ইতিহাস পড়লেন গ্রামিতে। গ্রামির মনোনয়নের দিক দিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন আমেরিকান এই তারকা। এ বছরের ‘কাউবয় কার্টার’ অ্যালবামের জন্য গ্রামিতে ১১টি বিভাগে মনোনীত হয়েছেন তিনি। এর সুবাদে গ্র্যামির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মনোনয়ন পাওয়া শিল্পী বনে গেলেন এই সুপারস্টার। তার মনোনয়ন প্রাপ্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৯। এবারের তালিকা প্রকাশের আগেও ৮৮টি মনোনয়ন নিয়ে নিজের স্বামী র্যাপার জে-জি’র সঙ্গে যৌথভাবে এক নম্বরে ছিলেন তিনি। এবার স্বামীকে টপকে গেলেন স্ত্রী!
গতকাল (৯ নভেম্বর) অন্তর্জালে ৬৭তম গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডসের মনোনয়ন তালিকা ঘোষণা করা হয়। একই আসরে কোনও গায়িকারও ১১টি মনোনয়ন পাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। এদিক দিয়েও রেকর্ড গড়েছেন বিয়ন্সে।
দ্বিতীয় সর্বাধিক সাতটি করে মনোনয়ন পেয়েছেন আমেরিকান গায়িকা বিলি আইলিশ, ব্রিটিশ গায়িকা চার্লি এক্সসিএক্স, আমেরিকান র্যাপার কেন্ড্রিক ল্যামার ও পোস্ট ম্যালোন। আমেরিকান গায়িকা টেইলর সুইফট, সাবরিনা কার্পেন্টার ও নবাগতা চ্যাপেল রোন ছয়টি করে বিভাগে মনোনীত হয়েছেন।
গ্র্যামির সর্বোচ্চ সম্মান বর্ষসেরা অ্যালবাম বিভাগের সংক্ষিপ্ত তালিকায় এবার নারীদের আধিপত্য লক্ষণীয়। গ্র্যামির ইতিহাসে বিয়ন্সে সর্বাধিক ৩২টি পুরস্কার জিতলেও বর্ষসেরা অ্যালবাম বিভাগের ট্রফি একবারও ঘরে নিতে পারেননি। ডেস্টিনি’স চাইল্ড ব্যান্ডের কথা ধরলে আরও তিনটি পুরস্কারের অংশীদার তিনি। বর্ষসেরা অ্যালবাম বিভাগে মোট চারবার মনোনীত হয়েছেন বিয়ন্সে। এবার গ্র্যামির সর্বোচ্চ পুরস্কার তিনি জিতবেন কিনা দেখা যাক।
কালো হওয়ায় বিয়ন্সেকে যথাযথ স্বীকৃতি না দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে চলতি বছরের শুরুতে গ্র্যামি অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হওয়ার পর জে-জি ভোটারদের তিরস্কার করেন। তিনি বলেন, ‘সবার চেয়ে বেশি গ্র্যামি পুরস্কার আছে বিয়ন্সের। অথচ সে কখনও বর্ষসেরা অ্যালবাম ট্রফি পায়নি। এটা কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়।’
বিয়ন্সের ‘কাউবয় কার্টার’ অ্যালবামকে বিশ্লেষক ও ভক্তরা আমেরিকান কান্ট্রি মিউজিক ও সংস্কৃতিতে উপেক্ষিত কালোদের প্রতি সম্মান হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বিলবোর্ড টপ কান্ট্রি অ্যালবাম চার্টের এক নম্বরে উঠেছিল এটি। কোনও কৃষ্ণাঙ্গ গায়িকার অ্যালবাম এর আগে এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি। যদিও গত সেপ্টেম্বরে আমেরিকায় কান্ট্রি মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসে ভোটাররা অ্যালবামটিকে উপেক্ষা করেছেন।
এবারের গ্র্যামিতে “টেক্সাস হোল্ড ’এম” গানের সুবাদে বর্ষসেরা রেকর্ড ও বর্ষসেরা গান বিভাগ দুটির মনোনয়ন তালিকাতেও আছে বিয়ন্সের নাম। এছাড়া পপ, র্যাপ ও আমেরিকানা বিভাগগুলোতে মনোনীত হয়েছেন তিনি। এর মাধ্যমে ফুটে উঠেছে তার ‘কাউবয় কার্টার’ অ্যালবামের বৈচিত্র্যময় ঘরানা।
বর্ষসেরা অ্যালবাম পুরস্কারটি মোট চারবার জিতেছেন টেইলর সুইফট। তার ‘দ্য টর্চার্ড পোয়েটস ডিপার্টমেন্ট’ অ্যালবামটি আবারও এই বিভাগের মনোনয়ন এনে দিয়েছে তাকে। চলতি বছরের শুরুতে ১৫ সপ্তাহ টপচার্টের শীর্ষে ছিল এই অ্যালবাম। তিনি মোট সাতবার গ্র্যামির সর্বোচ্চ সম্মানের জন্য মনোনীত হলেন।
বর্ষসেরা অ্যালবাম বিভাগে বিয়ন্সে ও সুইফটের প্রতিদ্বন্দ্বী সাবরিনা কার্পেন্টারের “শর্ট এন’ সুইট”, চার্লি এক্সসিএক্সের ‘ব্র্যাট’, বিলি আইলিশের ‘হিট মি হার্ড অ্যান্ড সফট’ ও চ্যাপেল রোনের ‘দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অব অ্যা মিডওয়েস্ট প্রিন্সেস’।
মেয়েরা ছাড়া পুরুষদের মধ্যে বর্ষসেরা অ্যালবাম বিভাগে মনোনীত হয়েছেন আমেরিকান র্যাপার আন্ড্রে থ্রি থাউজেন্ড (বাঁশি যন্ত্রসংগীতের অ্যালবাম ‘নিউ ব্লু সান’) ও ব্রিটিশ জ্যাজ শিল্পী জ্যাকব কলিয়ার (জেসি ভলিউম ফোর)।
গ্র্যামির সামনের সারির চার বিভাগেই মনোনয়ন পেয়েছেন জনপ্রিয় দুই পপতারকা সাবরিনা কার্পেন্টার ও চ্যাপেল রোন। সাবরিনা চলতি বছর তিন হিট গান (এসপ্রেসো, টেস্ট, প্লিজ প্লিজ প্লিজ) উপহার দিয়েছেন। এরমধ্যে বর্ষসেরা রেকর্ড বিভাগে ‘এসপ্রেসো’ ও বর্ষসেরা গান বিভাগে মনোনীত হয়েছে ‘প্লিজ প্লিজ প্লিজ’। বর্ষসেরা রেকর্ড বিভাগে একটি গানের কণ্ঠশিল্পী থেকে শুরু করে যন্ত্রসংগীতসহ সামগ্রিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
বেস্ট নিউ আর্টিস্ট বিভাগে সাবরিনা কার্পেন্টার ও চ্যাপেল রোনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। দুই গায়িকার স্বদেশি পপ-রক গায়ক বেনসন বুন, হিপ-হপ/কান্ট্রি শিল্পী শাবুজে, বহু ঘরানার সংগীতশিল্পী টেডি সুইমস, র্যাপার ডোচি, রক ব্যান্ড ক্রুয়ানবিন একই বিভাগে মনোনীত হয়েছেন। এছাড়া সংক্ষিপ্ত তালিকায় আছেন ব্রিটিশ গায়িকা রেই।
ষাটের দশকের রক ‘এন’ রোলের পথিকৃৎ দ্য বিটলস ও দ্য রোলিং স্টোনস এবারের গ্র্যামিতে মনোনয়ন পেয়েছে। বর্ষসেরা গান বিভাগে জায়গা পেয়েছে বিটলসের ‘নাউ অ্যান্ড দেন’। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় জন লেননের অসমাপ্ত গানটি তৈরি হয়েছে। ৬০ বছর আগে বিটলসের চার সংগীতশিল্পী গ্র্যামিতে সেরা নতুন সংগীতশিল্পী পুরস্কার জিতেছিলেন।
অন্যদিকে আট বছর পর মৌলিক গান নিয়ে প্রকাশ করা রোলিং স্টোনসের ‘হ্যাকনি ডায়মন্ডস’ স্থান করে নিয়েছে রক অ্যালবাম অব দ্য ইয়ার বিভাগে। কেন্ড্রিক ল্যামারের ‘নট লাইক দিস’ সেরা র্যাপ গান ও সং অব দ্য ইয়ারসসহ পাঁচটি বিভাগে মনোনীত হয়েছে।
সবচেয়ে বয়স্ক গ্র্যামি মনোনীত ব্যক্তি এখন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। সেরা অডিও বুক বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে তার ‘লাস্ট সানডেজ ইন প্লেইনস’। ক্ষমতায় থাকাকালে নিজের বাড়ির গির্জায় সানডে স্কুলের শিক্ষক হিসেবে তার প্রার্থনামূলক কাজের সংগ্রহশালা এই অডিও বুক।