কুকুরগুলোকে তীরে পৌঁছে দিল কুমির!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মানুষের মধ্যে যেমন একজনের প্রতি আরেকজনের সহানুভতি রয়েছে, ঠিক তেমনি প্রাণীদের মধ্যেও একজনের প্রতি অন্যজনের সহানুভূতি দেখানোর উদাহরণ রয়েছে। এবার একটি কুকুরে প্রতি কুমিরের সহানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। নদীতে আটকা পড়া কুকুরটিকে আক্রমণ করার পরিবর্তে বাঁচিয়ে দিয়েছে। ভারতের মহারাষ্ট্রে সাবিত্রী নদীতে এমন ঘটনা ঘটে। স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, অল্প বয়সী একটি কুকুরকে একদল হিংস্র কুকুর তাড়া করে। কুকুরটি বাঁচার জন্য ভারতের মহারাষ্ট্রের সাবিত্রী নদীতে আশ্রয় নেয়। সেই নদীতে ছিলো তিনটি বিশাল আকৃতির কুমির। কিন্তু, আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে ওই কুমিরগুলো কুকুরটিকে না খেয়ে বরং নিরাপদে তীরে পৌঁছে দেয়। 

তবে বিজ্ঞানীরা বলছে, কুমিরদের ‘সুবিধাবাদী শিকারী’ হওয়ার জন্য খ্যাতি রয়েছে। কিন্তু, কুমিরের এমন কাজ কুকুর এবং কুমির একই প্রজাতির হওয়ায় কুকুরের প্রতি কুমিরের এমন আবেগিক সহানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে।   

থ্রেটেনড ট্যাক্সা জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আশ্রয় নেয়া কুকুরটি ভেসে থাকা তিনটি কুমিরকে দেখতে পায়নি। তবে, কুমিরগুলো শিকার বলে কুকুরটির কাছাকাছি যেতে শুরু করে। 

কুমিরদের ক্ষুধা না থাকার কারণে এমন সহানুভূতি প্রকাশ পেতে পারে বলেও জার্নালে জানানো হয়। সরীসৃপদের এই ধরনের মানসিক অবস্থার উপর খুব কম গবেষণা করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।

ভারতীয় বন্যপ্রাণী ইনস্টিটিউট বলছে, সুবিধাবাদী শিকারী হিসেবে কুমিরের খ্যাতি রয়েছে। কুমিরগুলো প্রায় ১৬ ফুটের মত লম্বা এবং ওজন ৪৫০ কেজি। যা অনায়েসেই কুকুরটিকে গ্রাস করতে পারতো। কিন্তু, সেটা না করে কুকুরের প্রতি কুমিরের আবেগিক সহানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে।

   

বিরল কুমিরের জন্ম হলো ফ্লোরিডায়



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বিরল কুমিরের জন্ম হলো ফ্লোরিডায়

বিরল কুমিরের জন্ম হলো ফ্লোরিডায়

  • Font increase
  • Font Decrease

পৃথিবী বড়ই অদ্ভুত এক জায়গা। আমাদের দৃষ্টিসীমার মধ্যে চেনা জানা জিনিসেই কত বৈচিত্র্য। সেখানে না দেখার মধ্যে না জানি কত কি রয়ে গেছে! তেমনই এক উদাহরণ এখন আমাদের চোখের সামনে। অসম্ভবের উর্ধ্বে গিয়ে দেখা মিললো এক সাদা কুমিরের। বিরল প্রজাতির এই প্রানীর জন্ম হয়েছে ফ্লোরিডায় অবস্থিত গ্যাটরল্যান্ড অরল্যান্ডো এলিগ্যাটর পার্কে।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায় এর আগে বিশ্বে বেঁচে থাকতে সক্ষম মাত্র ৭ টি সাদা কুমির চিহ্নিত করা গেছে। তার মধ্যে ৩ টি গ্যাটরল্যান্ডের তত্ত্বাবধায়নে আছে। ৩৬ বছর আগে লিউসিয়ানায় এরকম শ্বেতবর্ণের কুমিরের পরিবার আবিষ্কার করা হয়েছিল। তারপর এই প্রথম কোনো ধবল শিশুর জন্ম হলো। এদের চোখ স্বাভাবিকের মতো উজ্জ্বল নীল না হয়ে গোলাপি রঙের হয়। নবজাবক শিশুটি স্ত্রীলিঙ্গধারী। তার সাথে আরেক স্বাভাবিক বর্ণের পুরুষ শিশুরও জন্ম হয়েছে। 

এই পার্কের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাণিটির একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছিল। যার ক্যাপশনে লেখা হয়, এই প্রাণিটি বিরল সীমানা অতিক্রম করেছে। যা একদম অসাধারণ এবং বিশ্বের প্রথম। আগামী বছর থেকে ভাইয়ের সাথে সাদা রঙের এই কুমির শিশুকে জন সাধারণের সামনে পরিদর্শনের জন্য রাখা হবে। দুই সহোদরকে দেখার ও নামকরণের জন্য সবাইকে আহ্বান করেছেন কর্তৃপক্ষ।   

শ্বেতবর্ণের কুমিরের অনন্য জিনগত কিছু পরিবর্তনের কারণে এমনটা হয়েছে। তবে মাঝে মাঝে তাদের শরীরে ছোট ছোঠ দাগ বা স্পট দেখা যেতে পারে।  কিন্তু শরীর বর্ণহীন হওয়ায় রোদে বেশিক্ষণ থাকা এর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ তার শরীর সহজেই রোদে পোড়ার সম্ভাবনা থাকে।  

তথ্যসূত্র: ইউপিআই.কম

;

জলের সখা ছোট-পানকৌড়ি



বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
চা বাগানের লেকে বসে আছে ছোট-পানকৌড়ি। ছবি: বিভোর

চা বাগানের লেকে বসে আছে ছোট-পানকৌড়ি। ছবি: বিভোর

  • Font increase
  • Font Decrease

আমাদের বৃহত্তর সিলেট চা শিল্পাঞ্চলময়। বিস্তর এলাকাজুড়ে চা বাগানগুলো ভিন্ন ধরণের এক প্রাকৃতিক শোভা বৃদ্ধি করে রয়েছে। যেখানে চোখ কেবলই জুড়ায়। আমরা চা বাগান দেখে বারবার মুগ্ধ হই।

প্রায় প্রতিটি চা বাগানের অন্তঃপুরে আরও এক অদেখা সৌন্দর্য নেপথ্যেই রয়ে গেছে। বলাই বাহুল্য, দূর থেকে আসা নানাপ্রান্তের পর্যটকরা এই সৌন্দর্যের পরশ এখনো পাননি। তবে এই সৌন্দর্য সহজলভ্য নয়। অনুমতি ছাড়া চা বাগানের ভেতরে প্রবেশ না করলে সেই সৌন্দর্যকে প্রত্যক্ষ করা যায় না।

আর তা হলো জলময় হ্রদ। প্রায় প্রতিটি চা বাগানেই থাকে হ্রদ বা লেক। বৃহদাকার পাহাড়ি গাছগাছালিতে পূর্ণ টিলাময় শোভা এই লেক-কে সৌন্দর্যের সর্বোচ্চ সীমায় নিয়ে গেছে। এখানেই নানা প্রজাতির পাখিদের বাস। পাখিরা এখানে তাদের দিবসরজনী অবস্থান করে প্রাকৃতিক মুগ্ধতা ছড়ায়।

চা বাগানের সেইসব লেকেই জলের শোভা। জলের সখা হয়ে ছোট-পানকৌড়ি সেখানে বসতি গেড়েছে। ওরা পরিবারভুক্ত হয়ে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অবস্থান করছে। পানিতেই জীবন। সেই জীবনের ধারায় টিকে থাকার নিরন্তর প্রচেষ্টায় কালো দেহের অধিকারী পানকৌড়িদের নিত্য সংগ্রাম।

ছোট-পানকৌড়িদের বিশেষ দিক হলো- যেখানে উড়ে এসে বসে সেখানেই দুই দিকের ডানা মেলে ধরে কিছুক্ষণের জন্য। তাতেই যেনো ক্লান্তি কাটানোর প্রয়াস। এভাবে ডানা মেলে ধারার দৃশ্য দূরে থেকে অপূর্ব লাগে। যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। তবে এই দৃশ্য যে সব থাকে তা নয়। ইচ্ছে হলে সে এমনটা করবে। নয়তো করবে না। অন্যান্য পাখিদের মতোই চুপচাপ ডালে গিয়ে বসবে।

ছোট-পানকৌড়ির ইংরেজি নাম Little Cormorant এবং বৈজ্ঞানিক নাম Microcarbo niger. এরা আকারে হাঁসের মতো, মাত্র ৫১ সেন্টিমিটারের। সারাদেহ কালো হলেও তাদের থুতনি সাদাটে। বুক ও পেট কালচে বাদামি।

পানকৌড়িই চা বাগানের জলাধার বা লেকের ভালোবাসার জলসখা। খাদ্যের জোগানই শুধু নয়, তার একাকীত্বের বিরহগাঁথা গানগুলোও শুনে থাকে সেই লেক। এভাবেই জলের সঙ্গে তার দীর্ঘকালের বন্ধুত্ব। একে অপরের সঙ্গে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা। কেউ কাউকেই ছেড়ে যাবার নয়।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংঘ (আইইউসিএন), বাংলাদেশ এর তালিকায় এই পাখিটি ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্থ’ পাখি হিসেবে চিহ্নিত।

;

ঠাকুরগাঁওয়ে কমলা বাগান করে চমক সৃষ্টি  



রবিউল এহ্সান রিপন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট, বার্তা ২৪.কম, ঠাকুরগাঁও 
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

থোকায় থোকায় ঝুলছে কমলা, ফলনে ভরে গেছে পুরো বাগান। চারপাশে কমলার চোখ জুড়ানো দৃশ্য বিমোহিত করছে সবাইকে। দেখতে যেমন মনোমুগ্ধকর তেমনি স্বাদে অনন্য। রসালো ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এ কমলালেবু ফলটি চাষ করে কৃষিতে নতুন চমক সৃষ্টি করেছেন জয়নাল আবেদীন।

কমলা বাগানের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আকৃষ্ট করে সবাইকে। এমন দৃশ্য দেখতে ভারতের দার্জিলিংসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যান ভ্রমণ পিপাসু মানুষেরা। সেই দার্জিলিং জাতের কমলা চাষ করে তাক লাগিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের জয়নাল আবেদীন। তার পুরো বাগানজুড়ে কমলা ফলনে ভরে গিয়েছে। কমলা বাগানের এমন দৃশ্য দেখতে বাগানে ভীড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের দক্ষিণ বঠিনা গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন। পেশায় তিনি একজন সরকারি চাকরিজীবী। চাকরির সুবাধে বিভিন্ন স্থানে কমলার বাগান দেখে মুগ্ধ হোন তিনি। শখের বসে চার বছর আগে বাড়ির পাশে শুরু করেন বাগান। চুয়াডাঙ্গা থেকে নিয়ে আসেন মাল্টা ও কমলার চারা। তার এক বছর পর থেকে ফলন আসা শুরু করে তার। মাল্টার ফলন শেষ হওয়ার পর এখন শুধু কমলার ফলন। গত বছর কমলার বেশি ফলন না আসলেও এবারে ফলনে ভরে গেছে বাগান।

ছবি: দার্জিলিং জাতের কমলার গাছ

তার বাগানে ৩ একর জমি জুড়ে রয়েছে তিন শতাধিক দার্জিলিং জাতের কমলার গাছ। গত বছর ফলন কম হওয়ায় বাগান থেকে এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছেন তিনি। এবারে ফলনের মাত্রা ছড়িয়ে যাওয়ায় প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার ফলন বিক্রির আশা তার। কমলা বাগান থেকে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন তিনি।কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, জেলায় ছোট বড় মিলে ৭ টি বাগানে ৭.২ হেক্টর জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। ক্রমশ বেড়ে চলছে ফলটির আবাদ। কমলা চাষে যুক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন উদ্যোক্তারা।

কমলা বাগানের এমন দৃশ্য দেখতে প্রতিনিয়ত ভীড় জমান দর্শনার্থীরা। চারদিকে এমন দৃশ্য দেখে আর বাগানে কমলা খেয়ে তুষ্টির কথা জানান তারা।শহর থেকে কমলা বাগান দেখতে আসা পারভেজ বলেন, কমলা বাগানে এত সুন্দরভাবে কমলা ঝুলে আছে যা দেখে মন জুরিয়ে গেল। কমলা বাগান দেখতে ভারতে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নিজ শহরে কমলা বাগান দেখে আমি মুগ্ধ। আর কমলা খেয়ে দেখলাম অনেক সুস্বাদু।

পরিবার নিয়ে বাগানে আসা নাজমা আক্তার বলেন, ‘পরিবার নিয়ে বাগানে এসেছি। বাচ্চারা কমলা বাগান দেখে অনেক খুশি। আর গাছ থেকে কমলা পেরে খেতে পারে তাদের আনন্দের শেষ নেই। আসলে বাগানটিতে এসে আমরা সবাই খুশি।’

ছবি: বাগানের পরিচর্যায় রফিকুল ইসলাম

বাগানের পরিচর্যা ও প্রতিনিয়ত কাজ করেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাগান দেখাশুনাসহ কমবেশি সব কাজ করি। এই বাগানে আমরা ৬/৭ জন কাজ করি। এখানে কাজ করে আমাদের সংসার ভালোই চলছে।

শখ থেকেই সফলতার হাতছানি পেয়েছেন বাগান মালিক জয়নাল আবেদিন। তিনি বলেন, চাকড়ির সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হত। কমলা বাগান দেখে আমি মুগ্ধ হয়েই নিজে বাগান করার ইচ্ছা জাগে। সেই মোতাবেক এই বাগান করেছি। পরের বছরে বাগানের পরিধি আরো বাড়িয়ে কমলার বাগানে চমক সৃষ্টি করতে চাই। নতুন উদ্যোক্তারা কমলার চাষ করলে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, জমি উপযোগী হওয়ায় জেলায় কমলা ও মাল্টা বাগানের আবাদ ক্রমশ বেড়েই চলছে। বাগান করে সফল হচ্ছেন কৃষকেরা। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বিক তত্ত্বাবধান ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

;

জাবিতে কমছে পরিযায়ী পাখি, শীতেও মিলছেনা দেখা



মাহমুদুল হাসান, বার্তা২৪.কম, জাবি করেসপন্ডেন্ট
ছবি: অরিত্র সাত্তার

ছবি: অরিত্র সাত্তার

  • Font increase
  • Font Decrease

পরিযায়ী পাখির এক অবাধ বিচরণস্থল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। আঁকা-বাঁকা লেক আর সবুজ গাছপালায় আচ্ছাদিত এই ক্যাম্পাসে শীতের পূর্ব থেকেই আসতে শুরু করে পাখিগুলো। তবে বিগত কয়েকবছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাধে গাছ কাটা পড়ায় কমেছে এসব পাখির নিরাপদ আবাসস্থল। এছাড়া যেসকল লেকে এই পাখিরা বিচরণ করে সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করা ও কোলাহলমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারায় বেশ কয়েকবছর ধরে কমতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা। এ অবস্থা জারি থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ক্যাম্পাসে এই পাখির দেখা মিলবেনা বলে আশঙ্কা করছেন পাখিপ্রেমিরা।

জানা যায়, সাধারণত নভেম্বর মাস থেকে এসব পাখি আসতে শুরু করে। তবে এবার ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও লেকগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাখি দেখা মিলছেনা। সাধারণত জলময়ূর, ছোট সরালি, গার্গিনি, চিতা টুপি, বামুনিয়া, মুরহেন, খঞ্জনা, পিনটেইল, কোম্বডাক, পচার্ড, লাল গুড়গুটি, জলপিপি, শামুকভাঙা, নাকতা, মানিকজোড়, খোঁপাডুবুরি, ছোট পানকৌড়ি প্রভৃতি পরিযায়ী পাখি ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে আসে। তবে এবছর দেশীয় সরালিসহ মাত্র তিন থেকে চারটি প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে।

 

উত্তরের লেঞ্জা হাঁস/ ছবি: অরিত্র সাত্তার

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে লেক রয়েছে ২৬টি। এগুলোর মধ্যে ট্রান্সপোর্ট চত্বর সংলগ্ন লেক, আলবেরুণী হলের বর্ধিতাংশ সংলগ্ন লেক, মনপুরা সংলগ্ন লেক ও ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের অভ্যন্তরের লেকটিতে গত কয়েকবছর ধরে পাখি বিচরণ করতে দেখা গেছে। এছাড়া কয়েকবছর আগেও আল বেরুনি হল সংলগ্ন লেক, জিমনেশিয়াম সংলগ্ন লেক, বিপিএটিসি সংলগ্ন লেকে পরিযায়ী পাখির দেখা মিললেও বর্তমানে দেখা যায় না।

এদিকে সরেজমিনে লেকগুলোতে দেখা যায়, এবার ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের অভ্যন্তরের লেকে সবচেয়ে বেশি পাখি এসেছে। ট্রান্সপোর্ট সংলগ্ন লেকে প্রথমদিকে কিছু পাখি আসলেও সেগুলো পরে আল বেরুণী হলের বর্ধিতাংশ সংলগ্ন লেকে শিফট করেছে। এর বাইরে অন্য লেকগুলোতে পাখির দেখা মিলেনি। পাখির নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে একটি ফেস্টুন ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে আর কোনো সচেতনতামূলক কার্যক্রম চোখে পড়েনি। ছোট ছোট কিছু বোর্ড দেখা গেলেও সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উদ্যোগে লাগানো হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য বছর লেক পরিষ্কার করা হলেও এবার পাখি আসাকে কেন্দ্র করে নতুন করে কোন পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম করা হয়নি।

 

উত্তরের খুন্তি হাঁস/ ছবি: অরিত্র সাত্তার

পাখি গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান বার্তা২৪ ডটকমকে বলেন, ‘অন্যান্য বছরে এই সময়ে যে পরিমাণ পাখি থাকে এবার তার চেয়ে অনেক কম। হয়তো এবছর শীত বাড়লে পাখির পরিমাণ বাড়তে পারে। এখন পর্যন্ত দেশীয় পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে সরালি আর বাহিরের পাখিদের মধ্যে খঞ্জনা, টেগা, চটক, ওয়ারব্লার এই কয়েকটি প্রজাতির পাখিই এসেছে। তবে অন্যান্য বছর এই সময়ে কিছু হাস আসে, কিন্তু এ বছর সেগুলো চোখে পড়েনি।’

সম্প্রতি ট্রান্সপোর্ট সংলগ্ন লেকের পিছনে সমাজবিজ্ঞান ভবনের বর্ধিতাংশ ভবন নির্মাণের কারণে কাটা পড়েছে অনেক গাছ ও ঝোপঝাড়। গাছগুলো কাটা পড়ায় পাখিরা হারিয়েছে তাদের আবাসস্থল। ফলে গাছে থাকা পাখিগুলো তাদের বিচরণস্থল পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে বলে মনে করেন পাখিপ্রেমিরা। এছাড়া ট্রান্সপোর্ট চত্বর সংশ্লিষ্ট দোকানগুলোর পেছনে শিক্ষার্থীসহ বহিরাগতদের আড্ডা বাড়ার কারণে ও লেক পরিষ্কারকালীন অনেক প্রয়োজনীয় জলজ উদ্ভিদ উপড়ে ফেলায় সেখানে পাখি অবস্থান না করার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী অরিত্র সাত্তার।

তিনি বলেন, ‘মানুষের আচরণগত কারণে দিন দিন এখানে অতিথি পাখির সংখ্যা কমছে। লেকগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে কিন্তু কাজের সময় দায়িত্বশীল কেউ সেখানে থাকেনা দেখভালের জন্য। ফলে সবসময়ই দেখা যায় কচুরিপানার সাথে সাথে পাখিদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু জলজ উদ্ভিদও উপড়ে ফেলা হচ্ছে। যার কারণে পাখিরা আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ট্রান্সপোর্টের লেকে এখন পাখি দেখা যাচ্ছে না, অথচ তার পাশের লেকেই দেখা যাওয়ার কারণ সেখানে পাখিদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু জলজ উদ্ভিদ রয়েছে। আমাদের উচিত লেকের পরিবেশ ও পাখিদের আশ্রয়স্থল পরিযায়ী পাখিদের জন্য নিরাপদ রাখা।’

 

রাজ সরালি/ ছবি: অরিত্র সাত্তার

ক্যাম্পাসে আসা পাখিগুলো অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অতিথি পাখিরা আমাদের ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে এখন খুব একটা আসছে না। এর মানে এই নয় যে তারা আর কোথাও আসছে না। ক্যাম্পাসের আশেপাশের গেরুয়া, মিরেরটেক এলাকা সংলগ্ন লেকগুলোতে পাখিরা ঠিকই আসছে।’

এছাড়া পাখি গবেষক অধ্যাপক মনিরুল হাসান বার্তা২৪ ডটকমকে বলেন, ‘এবছর অনেক গরম আবহাওয়া পাখি কমার একটা কারণ হতে পারে। সাধারণত ডিসেম্বরে অনেক বেশি ঠান্ডা থাকলেও এ বছর তার ব্যতিক্রম।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে পাখিগুলো গাছপালায় থাকে সাধারণভাবেই গাছপালা কাটার কারণে সেগুলোর পরিমাণও কমে যাবে। জলবায়ুর পরিবর্তনও পাখি কমে যাওয়ার একটা কারণ হতে পারে। লেকগুলোর পানিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেশি হওয়ায় কচুরিপানা দ্রুতই বেড়ে যায়। আমরা প্রতিবারই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পরিযায়ী পাখি আসার পূর্বেই লেকগুলো সংস্কারের পরামর্শ দেই। এছাড়া পাখির কমে যাওয়া ঠেকাতে আবাসস্থলগুলোকে নির্বিঘ্ন, নিরাপদ ও কোলাহলমুক্ত রাখতে হবে।’ 

;