দৃষ্টিনন্দন মাটির দোতলা বাড়ি, যেন এক রাজপ্রাসাদ
গ্রাম বাংলার মাটির ঘর প্রাচীন ঐতিহ্যে। এক সময় গ্রামে নজর কেড়ে নিতো বিভিন্ন ডিজাইন করা মাটির ঘর। কারো ঘর এক তালা বিশিষ্ট আবার কারো ঘর দোতলা বিশিষ্ট কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এই চিরচেনা দৃশ্য কিন্তু পুরোনো ঐতিহ্য এখনো টিকে আছে নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার মৈনম গ্রামে।
মাটির বাড়িটি দোতলা বিশিষ্ট এবং বাড়িটির প্রতি আনাচে কানাচে দেখলে বিভ্রান্তিতে পড়বে যে কেউ। কারণ বাড়ি জুড়ে সোনালী রঙের খেলা। দোতলা বিশিষ্ট এই মাটির বাড়ির দেয়ালজুড়ে বিভিন্ন রকম ফুল আর লতাপাতার কারুকাজ খচিত। প্রায় আড়াইশ বছরের পুরোনো এই বাড়িটি এখনও স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে রয়েছে কালের সাক্ষী হয়ে।
ইন্টারনেট ও ব্যক্তি মুখে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় আড়াইশত বছর আগে সারদা প্রসাদ রায় নামে একজন জমিদার ছিলেন। তার বাবা এই গ্রামে এসে পালদের কাছ থেকে মাটির এ দোতলা বাড়িটি কিনে নেন এবং তার জমিদারি কার্যক্রম শুরু করেন। এই রায় বাড়ি থেকে নওগাঁর আত্রাই তথা বাংলাদেশের দিনাজপুর ও নাটোর এলাকায় জমিদারি পরিচালনা করা হত।
জমিদার সারদা প্রসাদ রায়ের ছিল দুই ছেলে। বড় ছেলের নাম বড়দা প্রসাদ রায় এবং ছোট ছেলের নাম শরৎ রায়। বড়দা প্রসাদ রায়ের পরিবারকে বলা হতো বড় তরফ আর সারদা প্রসাদ রায়ের পরিবারকে বলা হত ছোট তরফ। বলিহারের রাজা বিমলেন্দু রায় বাহাদুরের মাতুলালয় ছিল এই রায় বাড়ি। এই রায় পরিবার তৎকালীন সময়ে শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিস্তারিত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। সে সময় দুর্গাপূজায় পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া থেকে শিল্পী এনে যাত্রাপালা ও নাচ-গান পরিচালনা করতেন।
তবে এই রাজত্বের ছন্দপতন ঘটে ১৯৬৪ সালের কোন এক সময়ে। শুরু হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। দাঙ্গার কারণ হিসেবে ধরা হয় এই পরিবারের লোকজনের আত্মঅহংকার এবং দাম্ভিকতা। এতে ততকালীন মুসলিম সম্প্রদায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে পরিবারটির ওপর। শুরু হয় দাঙ্গা। সেই দাঙ্গায় এই পরিবারের ১৩ জন সদস্য নিহত হয়।
যুদ্ধের পর পরিবারের অন্য সদস্যরা এক এক করে বিভিন্ন জায়গায় চলে যায়। সর্বশেষ এখানে ছিলেন বুরণ রায় এবং বাবন রায়। তারাও ২০২১ সালে জমিজমা বিক্রি করে নাটোরে চলে যায়বর্তমানে ক্রয় সূত্রে এ বাড়ির মালিক দাবি করেন স্থানীয় এসএম ব্রুহানী সুলতান গামা নামে এক ব্যক্তি। তারাই স্বপরিবারে এই বাড়িতে বসবাস করছেন এখন।
বাড়িটি মেরামত তথা পুরাতন ঐতিহ্য ও জৌলুসও টিকে আছে তাদেরই কারণে ব্রুহানী সুলতানের ছেলে আশকার সুলতান শান্ত ও তার মা জানান, বাড়িটিকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে বাড়তি কিছু কাজ করা হয়েছে। তবে মূল বাড়িটি অক্ষত আছে। সন্ধ্যা নামলেই পুরো বাড়িতে লাল-নীল আলোকসজ্জা করা হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থী আসেন। তবে যেহেতু এই বাড়ির খবর বেশিরভাগ মানুষ জানেন না তাই দূর দূরান্তের মানুষজন তেমন আসেন না।