ঢাকায় ভাসমান ভাতের হোটেল নিম্ন আয়ের মানুষের শেষ ভরসা

  • ছাইদুর রহমান নাঈম,শহিদুল ইসলাম,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা ২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

রাত নয়টায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের তৃতীয় গেইটের আশপাশের ফুটপাতে ভাসমান ভাতের হোটেল গুলোতে শ্রমিকদের জটলা৷ চেয়ার টেবিল নয়, মাটিতে পিড়িতে বসে একজনকে ঘিরে সবাই থালা হাতে খাবারের অপেক্ষায় বসে আছে। একেকজন করে সবার থালায় তুলে দেওয়া হচ্ছে খাবার৷ বিচ্ছিন্ন ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে অনেক স্থানেই৷

মূলত একটু স্বল্প দামে খাবার খেতে মেহনতী মানুষদের আনাগোনা লেগেই থাকে এসব স্থানে। রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে সবধরনের শ্রমজীবী মানুষই এই সব খাবারের ক্রেতা৷

বিজ্ঞাপন

শ্রমজীবী ছাড়াও অনেক মধ্য আয়ের মানুষকে খাবার খেতে দেখা যায়৷ স্বাভাবিকত হোটেল গুলো থেকে কম দামে নানান রকমের তরকারি মিলে এসব ভাসমান দোকানগুলোতে৷ ভাত তরকারি নিয়ে পসরা সাজিয়ে সবগুলো ভাসমান ভাতের দোকানের বিক্রেতা হচ্ছে নারীরা৷ তারাও চেষ্টা করেন সবচেয়ে কম দামে মানুষকে খাবার দিতে৷ খাবারের আইটেম গুলো ছিলো, বিভিন্ন ছোট-বড় মাছ,ভাত,মুরগির গোস্ত,ডাল,ভর্তা সহ আরো অনেক পদের খাবার।

দোকানীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রায় সবাই বাড়তি উপার্জনের জন্য সন্ধার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এভাবেই খাবার নিয়ে বসে থাকেন৷ সারাদিন তারা অন্য নানান রকমের কাজ করে থাকেন৷ এমনি একজন ভাসমান দোকানী পুষ্প বেগম (৪৫)। দেশের বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়৷ ১৬ বছর ধরে তিনি ঢাকায় থাকেন৷ তিন সদস্যের পারিবার তাদের। তিনি জানান, ছয় হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিয়ে একটি রুমে থাকেন৷ সারাদিন বাসায় দোকানে কাজ করেন৷ একটু বাড়তি উপার্জনের জন্য বিশ্রামের সময়টা কমিয়ে এই পেশা ধরে রেখেছেন৷

বিজ্ঞাপন

ছোট্ট ভাসমান ভাতের হোটেলের মালিক পুষ্পর বেগম বার্তা২৪.কমকে জানান, আমাদের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জে, আমি প্রায় ১৬ বছর ধরে এখানে ভাত-তরকারি বিক্রি করি। আমার ছোট ভাতের হোটেলে অনেকেই খেতে আসে। তার মধ্যে বেশিরভাগ শ্রমিক ও রিকশা চালক। আমি প্রতিদিন সন্ধ্যায় ভাত,মাছ,মাংস রান্না করে নিয়ে আসি এবং রাত ২ টা পর্যন্ত বসে ভাতের ব্যবসা করি। ভাতের ব্যবসা করে আমার ২ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি আবার দুই ছেলেকেও প্রতিষ্ঠিত করেছি।

তিনি আরো জানান, জীবন নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই,প্রতিদিন বাসা থেকে রান্না করে নিয়ে আসি আবার রাতেই বাড়িতে ফিরে যাই তবে জিনিসপত্রের ও শাক-সবজির দাম অনেক বেড়েছে বলে লাভের পরিমান এখন অনেক কম তবুও চেষ্টা করি মানুষকে পেট ভরে খাওয়ানোর জন্য।

আরেক ভাসমান ফুটপাতের হোটেলের আরেকজন মালিক রোকসানা বেগম বলেন, 'আমরা বেশি লাভ করিনা,কারন আমাদের এখানে যে পরিমান ভাত তরকারি অল্প টাকায় কাস্টমারকে দিই, সেটা নামি-দামি হোটেল গুলো দিতে পারবে না। একজন মানুষ হিসেবে মানুষের কষ্ট বুঝি। তাই পেট ভরে কাষ্টমার খেতে পারলে আমারও ভালো লাগে। যতদিন বেঁচে আছি এভাবেই মানুষের সেবা করে জীবন কাটাতে চাই।

ভাসমান অস্থায়ী হোটেলে খেতে আসা রিক্সা চালক আব্দুল মতিন( ৪৫) বলেন, 'এই ভাসমান অস্থায়ী হোটেল গুলো আছে বলেন খুব কম দামে খেতে পারি। বাড়িতে বোউ-বাচ্চা আছে তাদের দিকে তাকিয়ে এখানে খেতে আসি অন্তত কিছু টাকা কম লাগবে তাই। এই ধরনের ভাতের হোটেল যদি থাকে তাহলে আমাদের জন্য খুব ভালো হবে।

শ্রমিক আজাহার আলী বলেন, আমি গ্রাম থেকে এসে ঢাকা শহরে যখন যেটা কাজ পাই সেটা করি, একজন শ্রমিক হিসেবে আমার দিনের ইনকাম বেশি না তাই বাধ্য হয়ে এগুলো কাজের পাশাপাশি শুধুমাত্র রাতের বেলাতে রিক্সা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি আর যখন ক্ষুধা লাগে এখানে এসে খুব অল্প টাকায় খাই এতে করে আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হয়েছে।