কাগুজে ফুলের উদ্যোক্তা

  • রুহুল সরকার, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

উদ্যোক্তা শফিকুল ইসলাম

উদ্যোক্তা শফিকুল ইসলাম

সম্প্রতি সড়কপথে কুড়িগ্রাম থেকে লালমনিরহাট যেতে হঠাৎ চোখ আটকে যায় একটি স্কুল মাঠে। মাঠে ঘাসের ওপর রৌদ্রে রঙিন কিছু শুকোতে দেওয়া হয়েছে। কৌতূহলবশত কাছে গিয়ে দেখা যায় কাগজ দিয়ে তৈরি ফুল।

কাগজে তৈরি ফুলগুলো কলসি আকৃতির। স্থানীয়রা একে ভোমরা ফুল বলে। লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের কদমের তল এলাকায় ছোট পরিসরে স্থানীয় এক ব্যক্তি গড়ে তুলেছেন এই কুটিরশিল্প সেখানেই তৈরি করা হয়েছে এসব ফুল। বিয়ে বাড়ি, জন্মদিন ও হালখাতার সাজসজ্জার কাজে এসব ফুল ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও গ্রামীণ মেলায় শিশুদের দৃষ্টি কাড়ে এসব রঙিন ফুল।

বিজ্ঞাপন

মাঠে ফুল শুকানোর কাজ করছে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী কয়েকজন তরুণ। কথা বলে জানা গেল তারাই নিজ হাতে তৈরি করছে শোভাবর্ধনকারী এসব ফুল।

বিজ্ঞাপন

মুখে না বললেও চোখ বলছিল পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে স্কুল ছেড়ে নিজের ভরণপোষণ ও পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে কিশোর বয়সেই এই পেশায় আসতে হয়েছে তাদের। এই কিশোররা যখন ফুল শুকাতে ব্যস্ত তখন ওই স্কুলমাঠেই সমবয়সী স্কুলছাত্ররা টিফিন পিরিয়ডে খেলছিল ক্রিকেট। কিন্তু সেদিকে দৃষ্টি নেই, একমনে ফুল শুকানোর কাজ করছে তারা।

কলসি আকৃতির এই ফুল তৈরিতে ব্যাবহার করা হয় সাদা কাগজ, আঠা, রং ও বাঁশ। মাঠের পাশেই ছোট টিনশেড কারখানা। কারখানার বারান্দায় দুই তরুণ সাদা কাগজের বান্ডেলে বিশেষভাবে তৈরি চারকোনাকৃতির ফ্রেম দিয়ে প্রতিটি কাগজে আঠা দিয়ে জলছাপ দিচ্ছে এবং একেকটি কাগজকে আলাদা করতে কাগজের একপাশে কাঠের লম্বা ফ্রেমে আটকে রাখছে।

আঠা লাগানোর পর কাগজগুলোকে বাতাসে শুকিয়ে কলসি আকৃতির ফ্রেমে বসিয়ে কাটা হয়। এরপর লাল নীল হলুদের মিশ্রণে রং করা হয়। রং করা হয়ে গেলে রঙিন কাগজগুলো রৌদ্রে শুকাতে দেওয়া হয়। শুকানো হয়ে গেলে বাঁশের দুটি কাঠি দিয়ে আটকানো হয় ফুলগুলোকে। এই কাঠি লাগানোর কাজটি করেন স্থানীয় নারীরা। কারখানার শ্রমিক রাসেলের সাথে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

এরপর এই ফুলগুলো ঢাকার চকবাজারে পাইকারি দামে বিক্রি করা হয়। ঢাকার ব্যসায়ীরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর পর চাহিদা অনুযায়ী এসব ফুল ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকা থেকে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। প্রতিটি ফুলের পাইকারি মূল্য ৬ থেকে ৭ টাকা। খুচরা বাজারে সাধারণত ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়।

ক্ষুদ্র এই কুটির শিল্পের উদ্যোক্তা শফিকুল ইসলাম জানান, আগে ঢাকায় থেকেই এই কাজ করতেন। ঢাকায় এসব পণ্য তৈরি ও শ্রমিক খরচ বেশি তাই নিজ গ্রামে চলে এসে দুই মাস থেকে ছোট পরিসরে কাজ শুরু করেছেন। ৪ জন পুরুষ শ্রমিক ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এখানে কাজ করেন। তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাও করেছেন তিনি এজন্য কোনো টাকা দিতে হয় না শ্রমিকদের। গ্রামের ১৩ জন নারী ফুলগুলোতে বাঁশের কাঠি লাগানোর কাজ করেন। এই নারী শ্রমিকরা ১৪৪টি ফুলে কাঠি লাগালে ১৩ টাকা করে পারিশ্রমিক পান।

তিনি আরো জানান তিনি অনেক স্বপ্ন নিয়ে গ্রামে এসেছেন। রঙিন ফুল তৈরির এই শিল্প সারা লালমনিরহাট জেলার ছড়িয়ে পড়ুক এমনটাই তিনি চান। স্বল্প পুঁজিতে প্রতিমাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা অনায়াসে আয় করা যায় এখান থেকে, তিনি জানান।