আদম ধর্ম ও এক পরিবারের ৯ সদস্যের ট্রেনে কাটা পড়ে আত্মহত্যার কাহিনী



ওসমান জাফর, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
ঘটনাস্থল ময়মনসিংহ পৌরসভার কাশর এলাকা

ঘটনাস্থল ময়মনসিংহ পৌরসভার কাশর এলাকা

  • Font increase
  • Font Decrease

১১ জুলাই, ২০০৭ সাল। জামালপুরের জগন্নাথগঞ্জ স্টেশন থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত নিয়মিত চলাচল করে জিএম এক্সপ্রেস ২৫৪ ডাউন নামক লোকাল ট্রেনটি। আজ ট্রেন চালাচ্ছেন ড্রাইভার (লোকো মাস্টার) আব্দুল মতিন এবং মোঃ এনায়েত খান। ময়মনসিংহ পৌরসভার কাশর এলাকার ইটখলায় যখন ট্রেনটি আসে, তখন ঘড়িতে সময় বেলা ৩টা ১০ মিনিট। হঠাৎ ড্রাইভাররা দেখেন, রেলপথের বাঁ পাশ থেকে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ একে অন্যকে ধরাধরি করে রেল লাইনের দিকে আসছে।

মোট ৯ জন। পুরুষ, নারী, শিশু—সবাই একই পরিবারের সদস্য। রেললাইন ধরে চুপচাপ বসে পড়ে তারা।

প্রথমে ড্রাইভাররা কিছুই বুঝতে পারেননি। পরে খেয়াল করলেন, তারা রেললাইন পার হচ্ছে না, লাইনের ওপরেই বসে আছে। ড্রাইভার হুইসেল দিলেন। তারা লাইন থেকে সরল না। ড্রাইভাররা বুঝতে পারলেন এরা সবাই আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে। ট্রেন ইমার্জেন্সি ব্রেক করালেন। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। চোখের সামনে ৯ জন মানুষকে চাপা দিয়ে ট্রেন বেশ খানিকটা সামনে গিয়ে থামে।

এ বাড়ি থেকে বের হয়েই আত্মহত্যা করে তারা

গাড়ি থেকে নেমে সবাই দেখতে পায়, ২ জন তখনও বেঁচে আছে। একটা বাচ্চা ছেলে এবং একজন তরুণী ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন শরীর নিয়ে ‘পানি পানি’ চিৎকার করছে। স্থানীয় লোকজন তাদেরকে পানি খাইয়ে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু তারা পথেই মারা যায়। রেললাইনের কয়েক কিলোমিটার জায়গা জুড়ে ৯ জন মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশের কাটা টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল। রক্ত, মাংস আর হাড়ে পুরো রেললাইন রক্তাক্ত। গাড়ি থেকে নেমে এই দৃশ্য দেখে একজন ড্রাইভার জ্ঞান হারান।

ঘটনাস্থলে দ্রুত পুলিশ পৌঁছায়। আশেপাশের মানুষদের সাথে কথা বলে নিহতদের নাম ঠিকানা জানতে পারে। মা, ২ ছেলে, ৪ মেয়ে এবং ২ নাতি নাতনী আত্মহত্যা করেছিল একসাথে। এরা হলো—মা হেনা আনোয়ার (৬০), পুত্র আরিফ আনোয়ার (৩০) ও রাহাত আনোয়ার (২২), কন্যা আক্তারী আনোয়ার (৩৫), মুর্শেদা আনোয়ার (২৭), মুন আনোয়ার ওরফে মবি (৩০) ও শবনম আনোয়ার (১৮), নাতি মৌলা আনোয়ার (৮) এবং নাতনী মৌ আনোয়ার (১০)। রেললাইনের পাশেই তাদের বাড়ি।

ওই বাড়ির ভেতর গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কেউ নেই। একটি পাকা ঘর। পাঁচ-ছয়টি কক্ষ। উঠানে কবরের মতো বড় একটি গর্ত খোঁড়া। বারান্দায় লাশ নেওয়ার খাট। রান্নাঘরে কাটা ছোট মাছ পড়ে আছে। তরিতরকারিও কেটেকুটে রাখা হয়েছে।

খুঁড়ে রাখা কবর

একজন সাংবাদিকের বর্ণনায়—মা, ২ নাতি, ৫ মেয়ে এবং এক ছেলের কথা বলা হয়েছে। আসলে ডেডবডিগুলো এমনভাবে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল যে, কে ছেলে আর কে মেয়ে সেটা বের করা বেশ কঠিন।

বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ বেশ কিছু ডায়েরি ও হাতে লেখা কাগজপত্র উদ্ধার করে। এগুলোর কিছু বাংলায় আবার কিছু ইংরেজিতে লেখা। এগুলোয় বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য ছিল। ইংরেজিতে একটি ডায়েরিতে লেখা ছিল—“আমরা পৃথিবীর একমাত্র পরিবার যারা স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল। মোহাম্মদের আইনের বাইরে এবং সব ধর্মের সব কার্যকলাপের বাইরে। তাহলে আমরা কে? আমরা হলাম আদম।”

এ ছাড়া “সবার উপরে আদম সত্য, জুলুমের বিচারের ব্যবস্থা করিব”—ইত্যাদি ধরনের বেশ কিছু মন্তব্য ছিল।

ময়মনসিংহ পৌরসভার স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার মোজাম্মেল হক ইউসুফ বলেন, এ পরিবারটির সঙ্গে এলাকার কারো সম্পর্ক ছিল না। কেউ তাদের বাসায় যেত না। তারাও এলাকায় অন্য কারো বাসায় যেত না। আশপাশের কোনো পরিবারের সঙ্গে তাদের খারাপ সম্পর্ক বা রেষারেষিও ছিল না।

ঘটনার নেপথ্যে আনোয়ার দরবেশ-প্রতিষ্ঠিত ‘আদম ধর্ম’
আনোয়ার দরবেশের ছোট ভাই, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আব্দুল হান্নান থাকেন ময়মনসিংহের গোহাইলখালিতে। সাংবাদিকদের তিনি জানান, “আমার ভাই (আনোয়ার দরবেশ) হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছিল। মৃত্যুর পরে ওর পরিবারের বাকি সবাই খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে। তারপর থেকে তারা আমাদের এবং অন্যান্য আত্মীয়দের সাথে দূরত্ব তৈরি করে। কেউ ওদের খোঁজখবর নিতে গেলে দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিত।”

তবে ওই বাসায় যেসব ডায়েরি এবং অন্যান্য বই পুস্তক পাওয়া গেছে সেখানে খ্রিস্টধর্মের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। ময়মনসিংহ এলাকার চার্চে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এই পরিবারটি কখনো কোনো খ্রিস্টধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়নি।

আদম বাড়ির নামফলকে লেখা সতর্কবার্তা

এরই মাঝে ঘটনায় যোগ হয় নতুন টুইস্ট। ১৪ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মেদ্দা এলাকায় এক নারী নিজেকে আনোয়ার দরবেশের মেয়ে মবি বলে দাবি করেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমার নাম মবি। পেপারে দেখছি আমি মৃত বলে খবর ছাপা হয়েছে। আমি বেঁচে আছি। ওই বাড়িতে আমি ছিলাম না, কিন্তু আমার ছেলে মওলা আর মুন ওই বাসায় ছিল। ওরা খুন হয়েছে।”

মবি এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে মানতে নারাজ। তিনি দাবি করেন, এটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তিনি বলেন, “আমার ভাই, আনোয়ার মাহিন, অক্সফোর্ড ইনিভার্সিটিতে পড়ত। ২০০৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত কিছু লোক ওকে খুন করে। সেই একই লোকজন আমাদের বাড়ি দখল করতে চায়। তারাই আমার পরিবারের ৯ জনকে ট্রেনের তলায় ফেলে দিয়েছে। তবে মবি তার ছেলে এবং মেয়ের ডেডবডি আনার জন্য ময়মনসিংহে যাননি।

পুলিশ তখন নতুন করে ডেডবডির স্তূপ ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করে। এতদিন ধরে যাকে মবির ডেডবডি বলে ধারণা করা হচ্ছিল, এটা তাহলে মবি নয়, মবি বেঁচে আছে। তাহলে এই অজানা মেয়েটি কে?

উদ্ধারকৃত ডায়েরিগুলোর মধ্যে লিনা নামে একজনের ডায়েরিও পাওয়া যায়। ডায়েরি থেকে যানা যায়, লিনা এই পরিবারের সদস্য নয়। লিনার মা আর বাবা আনোয়ার দরবেশের মুরিদ ছিলেন। তারা মাঝে মাঝে এই বাড়িতে এসে থাকতেন। লিনাও আসতেন নিয়মিত। একসময় লিনা আনোয়ার দরবেশের প্রতিষ্ঠা করা ‘আদম ধর্ম’ গ্রহণ করেন এবং নিজের পরিবার ছেড়ে এই পরিবারে এসে থাকতে শুরু করেন। এর আগে বাড়ির ‘কাজের মেয়ে’ হিসেবে তাকে কোনো কোনো সাংবাদিক উল্লেখ করেছিলেন। তবে পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের ডায়েরিতে লিনার কথা উল্লেখ নেই।

আনোয়ার দরবেশ সম্পর্কেও বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেল। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পরে তিনি বেশ ধর্মকর্ম শুরু করেন। এলাকার মানুষ তাকে দরবেশ/ ফকির ও পীর বলে ডাকত। তবে ধীরে ধীরে তার চিন্তাভাবনা প্রচলিত ইসলামিক চিন্তা চেতনার চেয়ে একটু ভিন্ন হয়ে গেল। অন্যান্য ধর্মীয় অনুসারীদের সাথে তিনি আলোচনা করতে বসলে প্রায়ই তর্ক শুরু হয়ে যেত। ১৯৯৫ সালে গ্রামের একটি চায়ের দোকানে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে তর্কের একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। চায়ের দোকানের লোকজন তখন তাকে মারধোর করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।

এ ঘটনার পর থেকে তিনি বাড়ির বাইরে যাওয়া একেবারে কমিয়ে দেন। পরিবারের অন্যরাও তাই করে। সম্ভবত এরপর থেকে তিনি তার ভক্ত কিংবা মুরিদদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদেরই নিজধর্মে দীক্ষিত করতে শুরু করেন। তার সবচেয়ে বড় শিষ্য হয়ে ওঠে তার বড় ছেলে আরিফ আদম। ২ জন মিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধ্যান করতেন ।

আনোয়ার দরবেশ মারা যান ২০০০ সালের ১১ জুলাই ঢাকার একটি হাসপাতালে। মৃত্যুর পরে তার ডেডবডি কিভাবে সৎকার করা হবে সে বিষয়ে তিনি একটি লিখিত নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বলেছিলেন—“মৃত্যুর পরে আমার কোনো জানাজা দিবা না, গোসল করাবা না, কাফনের কাপড় পরাবা না। যে কাপড় পরে মারা যাব, সেই কাপড়ে সেই অবস্থাতেই আমাকে কবর দিবা। কোনো কবরখানায় আমাকে নিবে না, বাড়ির ভিতরে গর্ত খুঁড়ে আমাকে কবর দিবে। আমার মাথা থাকবে পূর্বে, পা থাকবে পশ্চিমে আর মুখ দক্ষিণ দিকে ঘুরানো থাকবে। যদি অন্য রকমভাবে কবর দাও, তাহলে আমি কঠিন প্রতিশোধ নিব।”

আনোয়ার আদমের বাড়ির হোল্ডিং প্লেট

আদম পরিবার ঠিক এইভাবেই বাবার ডেডবডি কবর দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু স্থানীয় জনগণ তা হতে দেয়নি। পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট এবং স্থানীয় হুজুরদের উপস্থিতিতে তার গোসল, জানাজা এবং কবর দেওয়া হয় ইসলামী পদ্ধতিতে। আদম পরিবারের কেউ সেই জানাজায় উপস্থিত হয়নি।

এই ঘটনার পর আদম পরিবার ঢাকায় চলে যায়। সেখানে বড় ছেলে আরিফ কোনো এক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এবং পরিবারের খরচ চালাতেন (একজনের ডায়েরি থেকে দেখা যায়, আরিফ ঢাকার ৫২টা ইউনিভার্সিটির ডিন ছিল!)।

২০০৫ সালে ঢাকায় আরিফ মারা যায় কিংবা খুন হয়। পুরো পরিবার তখন আবার গ্রামে ফিরে আসে। পরিবারের একমাত্র পুরুষ সদস্য তখন রাহাত। তার ওপর দায়িত্ব পরিবারের ভরণপোষণের। তিনি কী ধরনের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন কিংবা তার পরিবারের সদস্যরা অর্থাভাবে না খেয়ে থাকত কিনা, তা জানা যায়নি। তবে তার ডায়েরিতে তিনি লিখেছেন—We are the only family in the world that is independent and selfdepanded. We are the only one family in the world that is totally independed and selfdepended and out of mohamod’s rules.,law and relisious activities and relisions. (ডায়েরির মূল বানান অবিকৃত রাখা হয়েছে)

বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পরে বড় বোন আক্তারী আনোয়ার সংসারের হাল ধরেন। তিনি অন্যান্য ভাইবোনের মধ্যে আদম ধর্মের উপাচারগুলো চালু রাখেন। বাবা এবং বড় ভাইয়ের আত্মার সাথে কথা বলার জন্য পরিবারটি তখন নিয়মিত ধ্যান শুরু করে। একসময় তারা সফল হয়। বাবার আত্মা প্রথমে আক্তারীর দেহে ভর করে। আক্তারীর মুখ দিয়ে আনোয়ার দরবেশ তখন আদেশ-নিষেধ দেওয়া শুরু করলেন। (আক্তারী আনোয়ারের ডায়েরির কিছু অংশ তিনি লিখেছেন তার নিজের জবানীতে। কিছু অংশ লেখা আছে তার বাবা আনোয়ার আদমের জবানীতে) ধীরে ধীরে সবার শরীরেই তার বাবা এবং ভাইয়ের আত্মা ভর করে। ডায়েরিতে লিনার ভাষ্যানুযায়ী, এই পরিবার সারাদিন ঘুমাত আর সারারাত জেগে জেগে ধ্যান করত।

প্রত্যেক সদস্যই মৃত্যুর আগে তাদের নিজেদের কথা গুছিয়ে ডায়েরিতে লিখেছিল। অধিকাংশ লেখাই ইংরেজিতে, কিছু আছে বাংলায়। মা হেনা আনোয়ার সম্ভবত লেখাপড়া জানতেন না, তার পক্ষ থেকে এক মেয়ে তার কথাগুলো লিখে দিয়েছেন। এমনকি ২টা বাচ্চাও তাদের কথা ডায়েরিতে লিখেছে। তারা স্বেচ্ছায় লিখেছে নাকি অন্য কেউ তাদেরকে ডিক্টেশন দিয়ে লিখিয়েছে তা পরিষ্কার নয়।

ডায়েরি থেকে জানা যায়, তারা অনেক আগে থেকেই এই আত্মহত্যার প্ল্যান করছিল। এটা তাদের কাছে আত্মহত্যা নয়, এটা তাদের কাছে ছিল বাবা এবং বড় ভাইয়ের সাথে মিলিত হওয়ার উপলক্ষ। জুলাই মাসের ৭ তারিখে তারা একবার আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেও পরে বাতিল করে। বাবা আনোয়ার আদমের মৃত্যু দিবস ১১ জুলাই পর্যন্ত তারিখ পেছানো হয় এবং ওইদিনই তারা একসাথে আত্মহত্যা করে। তাদের ভাষায়—‘বাবা এবং বড় ভাইয়ের সাথে মিলিত হতে যায়।’

প্ল্যানচেট : মৃত বাবা ও ভাইয়ের আত্মার সাথে যোগাযোগের সরঞ্জাম

ডায়েরি থেকে উদ্ধারকৃত লেখাপত্র অনুযায়ী—আদম হচ্ছেন বিশ্বের প্রথম মানুষ। তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। অন্যান্য সব মানুষ আদমেরই অংশ (বনি আদম)। আদম বিভিন্ন সময়ে মারা যান, আবার পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জন্মগ্রহণ করেন। বিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে আদম হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আনোয়ার আদম।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিকী ওই সময় বাড়িটিতে ঢুকতে পেরেছিলেন এবং কিছু ছবি তুলতে পেরেছিলেন। প্রথম ছবি বাদে এই লেখায় ব্যবহৃত সব ছবিই তার তোলা। উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে—বাড়ির জানালায় সাইনবোর্ডের মতো করে একটি হোয়াইট বোর্ড টানানো। সেখানে মার্কার পেন দিয়ে ভুল গ্রামারের ইংলিশে কিছু কথা লেখা আছে। ভাবানুবাদ করলে সম্ভবত এইরকম দাঁড়ায়, “এটা আদমের বাড়ি। বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা হচ্ছে আদম। সবার উপরে আদম সত্য। এই বাড়িতে কেউ ঢুকবে না এবং কেউ কিছু টাচ করবে না। যদি কেউ আমাদের আদেশ অমান্য করে বাসায় ঢোকো, তাহলে আমরা প্রতিশোধ নিব। আদেশক্রমে-আদমেরা।”

বোর্ডের উপরে হেডলাইন লেখা ‘এডামস হোম’ এবং নিচে তারিখ লেখা—১১ জুলাই ২০০৭। আবু বকর সিদ্দিকীর ভাষ্যে জানা যায়, বাসার ভেতরে একটি রুমের ছাদে বেশ কয়েকটা দড়ি ঝোলানো ছিল। সম্ভবত ওরা প্রথমে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করার প্ল্যান করেছিল। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, খাটের ওপরে চেয়ার রাখা। সম্ভবত গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল।

ট্রেনে কাটা পড়ার আগে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার প্রস্তুতি

অন্য ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি রুমের ভিতরে মোমবাতি, কাগজ এবং কিছু থালাবাসন রাখা। দৃশ্যটা দেখে মনে হতে পারে কেউ রান্নাবান্না করছিল। আবার রান্নাবান্না বাদে অন্য কোনো স্পিরিচিয়াল কাজেও কেউ এগুলো ব্যবহার করে থাকতে পারে। মৃত ব্যক্তির আত্মার সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য প্লানচেট এবং কাগজ ব্যবহৃত হয়।

বেশ কিছুদিন পুলিশের হেফাজতে লাশগুলো (ডেডবডির ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন অংশগুলো) থাকলেও সেগুলো কেউ নিতে আসেনি। অবশেষে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের কাছে সেগুলো হস্তান্তর করা হয়। আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম মুসলিম রীতি মেনে দাফন সম্পন্ন করে।

এই ঘটনার আগে বা পরে আর কেউ কখনো আদম ধর্ম সম্পর্কে কথা বলেনি কিংবা আদম ধর্মের অনুসারী হওয়ার দাবি করেনি।

আদম ধর্ম প্রতিষ্ঠা ও অনুসারীদের আত্মহত্যার বৈজ্ঞানিক কারণ
কলকাতার সাইকোলজিস্ট প্রফেসর নাসিমা সেলিম এই ঘটনা নিয়ে একটি থিসিস পেপার লেখেন। তিনি সকল তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে দাবি করেন, আদম ফ্যামিলি Shared Delusion অথবা Shared Psychotic Disorder (SPD) নামক মানসিক রোগে ভুগছিল। পরিবারের খারাপ আর্থিক অবস্থা, এলাকাবাসীর অপমান ইত্যাদি কারণে আনোয়ার দরবেশ সম্ভবত সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং নিজেকে তিনি আদম দাবি করা শুরু করেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা যেহেতু তার প্রতি খুব নির্ভরশীল ছিল, তাই তার সব কথা বিশ্বাস করল। নিজেরাও হয়ে উঠল আদম ধর্মের অনুসারী। এক মেয়ে যখন দাবি করলেন, আমার শরীরে আদমের আত্মা ভর করেছে, তখন সবাই তাকে বিশ্বাস করল, বাকিদের শরীরেও আদমের আত্মা আসতে শুরু করল। শুধুমাত্র মেজো মেয়ে মবি—শক্ত মানসিকতার ছিলেন বলে তিনি শেয়ারড ডিলুশনের শিকার হননি। অন্য সবাই দুর্বল মানসিকতার বলে সবার শেয়ার্ড ডিলুশন হয়েছে।

নাসিমা সেলিম তার থিসিসে দেখান—বড় মেয়ে আক্তারীর বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল। মুর্শেদা এবং শবনমের বয়স হয়ে গেলেও বিয়ে হচ্ছে না। প্রচলিত অর্থে তাদের সামনে সুনিশ্চিত কোনো ভবিষ্যত ছিল না। তাই তারা মানসিকভাবে ছিলেন দুর্বল ও ভেঙে পড়া। অন্যদিকে মবির বিয়ে হয়েছিল, ২ বাচ্চা নিয়ে সুখের সংসার তার। এ নিশ্চয়তায় তিনি মানসিকভাবে অন্যদের চেয়ে সবল ছিলেন।

বড় ছেলে আরিফ মানসিকভাবে খুব একটা সুখী ছিলেন এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। অন্যদের ডায়েরি থেকে তার এক প্রেমিকার উল্লেখ পাওয়া যায়, যার নাম ফাতেমা। সেই ফাতেমাকেও আদম ধর্ম সম্পর্কে জানানো হয়েছিল, কিন্তু ফাতেমা আদম ধর্ম গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে নিজের প্রেমিকা এবং পরিবারের মধ্যে সম্ভাব্য টানাপোড়েনের আশঙ্কায় আরিফ সম্ভবত মানসিকভাবে অশান্তিতেই ছিলেন। শেয়ার্ড ডিলুশন, সিজোফ্রেনিয়া কিংবা অন্য যে কোনো মানসিক রোগের জন্য যা সুবিধাজনক অবস্থা।

প্রফেসর নাসিমা সেলিম

এছাড়া প্রফেসর নাসিমা সেলিম এই রোগকে সম্ভাব্য Folie a` famille বলে চিহ্নিত করেছেন। ‘ফলি এ ফ্যামিলি’ রোগে সাধারণত পরিবারের সদস্যরা অদ্ভুত আচরণ শুরু করে। বিশেষত একজন সদস্যের কোনো অস্বাভাবিক প্রবণতা অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৮ সালে সুইডেনের উরুসুলা এরিকসন রাস্তায় বের হয়ে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ার চেষ্টা করেন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। একটুপরেই তার যমজ বোন সাবিনা এরিকসনও একইভাবে হাইওয়েতে বের হয়ে গড়ির সাথে ধাক্কা খাওয়ার চেষ্টা করেন। ভাগ্যক্রমে তিনিও বেঁচে যান। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সাইকোলজিস্টরা তাদের ফলি এ ফ্যামিলি রোগের শিকার বলে চিহ্নিত করে।

২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ৫ সদস্যের একটি পরিবার বাড়ি থেকে বের হয়ে ১৬০০ কিলোমিটার দূরে চলে যান উদ্দেশ্যহীনভাবে। তাদের কারো একজনের মনে হচ্ছিল, বাড়ি থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই ভালো। বাকিরাও প্রভাবিত হন। তারাও ফলি এ ফ্যামিলি রোগে আক্রান্ত ছিলেন।


আরো পড়ুন ➥ গত শতকের সবচেয়ে নৃশংসতম গণ-আত্মহত্যার কাহিনী

   

রাস্তায় জমা পানিতে হারানো শৈশব খুঁজে পেয়েছে তারা



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
জমে থাকা পানি শৈশবের উল্লাস এনে দিয়েছে তাদের মনে

জমে থাকা পানি শৈশবের উল্লাস এনে দিয়েছে তাদের মনে

  • Font increase
  • Font Decrease

টানা বৃষ্টিতে রাস্তায় জমেছে পানি। দুর্ভোগের শেষ নেই সাধারণ মানুষের। রিকশা বা ভ্যানে চড়ে কোমর সমান পানি ডিঙ্গিয়ে যাতায়াত করছে মানুষ। পানির উপর ভাসছে ড্রেন আর রাস্তার ময়লা। ময়লা-আবর্জনার সাথে রাস্তার সেই নোংরা পানিতে আপন মনে ভাসতে দেখা যায় দুই শিশুকে। এ যেন শৈশবের উল্লাস এনে দিয়েছে তাদের মনে। ভেসে আসা ড্রাম আর ককশিটকে পুঁজি করে আপন মনে খুনসুটিতে মেতেছে তারা।

জমা পানিতে উল্লাসে মেতেছে তারা

বলছি রাজধানীর নিউ মার্কেটের সামনে রাস্তায় জমে থাকা নোংরা পানিতে সাঁতার কাটা শিশু রাবেয়া ও মিমের কথা। ইট পাথরের শহরে বসবাসকারী শিশুরা জানে না দুপুরবেলা পুকুরে লাফালাফি করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানিতে সাঁতারের আনন্দ। তাই তো বছরের রেকর্ড গড়া এই বৃষ্টি যেন আনন্দের জোয়ার বইয়ে দিয়েছে তাদের মনে। সুযোগ পেয়ে রাস্তায় জমে থাকা নোংরা পানিতেই সাঁতারের সখ মেটাচ্ছিলো তারা।

খুনসুটির ব্যস্ততার মাঝে কথা হয় রাবেয়া ও মিমের সাথে। রাবেয়া জানায়, নিউ মার্কেট এলাকায় মায়ের সাথে থাকে সে। মিম তার প্রতিবেশি। এক সাথেই খেলে তারা। গ্রামে থাকতে সাঁতার শিখেছিল রাবেয়া। মায়ের সাথে শহরের এসে আর সাঁতার কাটতে পারেনি। তাই মিমকে রাস্তায় জমে থাকা পানিতে সাঁতার শিখিয়ে একেই সাথে সাঁতার কাটছে তারা।

টানা বৃষ্টিতে রাস্তায় জমেছে পানি, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

নোংরা পানিতে সাঁতার কাটা দেখে অনেকেই শিশু রাবেয়া ও মিমের দিকে চোখ বাঁকা করে তাকালেও বাস্তবতা ভিন্ন। ইট পাথরের শহরের সুইমিং পুল কিংবা টাকা দিয়ে সাঁতার কাটার সুযোগ নেই তাদের। তাই ইচ্ছা যখন সাধ্যের কাছে জিম্মি তখন রাবেয়া মিমদের সাঁতার এই শহরের বড় সৌন্দর্যই বটে।

;

চুলের কারণে দু'বার স্কুল থেকে বরখাস্ত



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য মানুষ চুলের কতই না স্টাইল করে থাকেন। কিন্তু, সেই স্টাইল করা চুলই যুক্তরাষ্ট্রের এক তরুণের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। চুলের স্টাইলের জন্য তাকে স্কুল থেকে বরখাস্ত হতে হয়েছে, তাও একবার নয়, দুইবার। বরখাস্ত হওয়া ছাত্রটির নাম ড্যারিল জর্জ (১৭)। সে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের মন্ট বেলভিউয়ের বারবারস হিল হাই স্কুলে পড়াশোনা করে। সিএনএন, এনবিসির বরাত দিয়ে এমন খবর প্রকাশ করেছে এনডিটিভি।

এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের মন্ট বেলভিউয়ের বারবারস হিল হাই স্কুলের ছাত্র ড্যারিল জর্জকে চুলের স্টাইলের (ড্রেডলকস স্টাইল) জন্য দুইবার স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এতে বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এই স্টাইলে প্রথমবার স্কুলে যাওয়ার পর তাকে দুই সপ্তাহের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছিল। দু’সপ্তাহের শাস্তি শেষ করে সে আবার চুলের একই স্টাইল করে স্কুলে আসে। পরে তাকে দ্বিতীয়বারের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় জর্জের মা দারেশা জর্জ অনেক কেঁদেছিলেন বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়।   

জর্জের মা দারেশা জর্জ সিএনএনকে জানান, আমার ছেলেকে শিক্ষার সাথে অপ্রাসঙ্গিক কিছুর জন্য শাস্তি পেতে হয়েছে। সে এই পরিস্থিতির কারণে হতাশা বোধ করছে।

দারেশা জর্জ আরও জানান, আমাদের পূর্বপুরুষ সবার ড্রেডলক স্টাইল ছিল এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই নিয়ম সবাই মেনে আসছে। আমাদের কাছে চুলের এই স্টাইলটির সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। ড্রেডলক স্টাইল আমাদের শক্তি এটাই আমাদের শিকড়।

সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, স্কুল কর্তৃপক্ষ ড্যারিলকে বলেছিল ছোট ছোট বেনি বাঁধা চুল তার চোখের নিচে, কানের নিচে এসে পড়ে, যা তাদের প্রতিষ্ঠানের পোশাকবিধির লঙ্ঘন।  

দারেশা এনবিসি নিউজকে বলেন, চুলের কারণে ড্যারিলকে স্কুলে শাস্তি দেয়া হয়েছে। সেই শাস্তির কথা শুনে আমি নিজেই কান্না করি। দারেশা বলেন, একটি ছোট্ট ঘরে বেঞ্চে আট ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এটি খুবই অস্বস্তিকর। প্রতিদিন সে বাড়িতে এসে বলে, দীর্ঘ সময় টুলে বসে থাকার কারণে তার পিঠে খুব ব্যথা হয়।

দারেশা জর্জ এই ঘটনার জন্য আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে বলেও গণমাধ্যমে জানানো হয়।

;

ভাস্কর্যে চড়ে জরিমানা গুনলেন ২০ লাখ টাকা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হাতি, ঘোড়ার পিঠে চড়ার শখ নাই এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। সেটা ছোটবেলা হোক কিংবা বড় হলেও। হাতি, ঘোড়ার পিঠে চড়ার সুযোগ থাকলে সেই সুযোগ সহজে কেউ হারাতে চায় না। তবে, বাস্তবে উঠতে না পারলেও অনেকেই 'দুধের স্বাদ ঘোলে মেটান'। ইট-পাথরের তৈরি বাঘ, সিংহ, হাতি ও ঘোড়ার পিঠে বসে ছবি উঠাতেও কেউ কার্পণ্য করে না। কিন্তু, এমন শখ পূরণ করতে গিয়ে এক আইরিশ পর্যটককে জরিমানা গুনতে হয়েছে। তাও আবার সেই জরিমানার পরিমান ১০০ বা ২০০ টাকা নয়, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২০ লাখ টাকা (১৯ হাজার মার্কিন ডলার)। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে এমন ঘটনা ঘটেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম নিউইর্য়ক পোস্টের বরাত দিয়ে এমন বিচিত্র খবর দিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি।

এ ঘটনাটির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (আগের নাম টুইটার) ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, আইরিশ ওই পর্যটক এক ব্যক্তি সিংহের মাথায় একটি হাত দিয়ে রেখেছে ও তার আরেক হাতে একটি টর্চ—এমন একটি ভাস্কর্যের সিংহের পিঠে চড়ে নামতে গিয়ে ভাস্কর্যের একটি অংশ ভেঙে ফেলেন।

নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক আইরিশ পর্যটক বেলজিয়ামের ব্রাসেলস স্টক এক্সচেঞ্জে ‘দ্য বোর্স’ নামে একটি সিংহের ভাস্কর্যে চড়ে নামার সময় ভাস্কর্যের হাতে থাকা মশালটি ভেঙে ফেলেন। যার কারণে ওই ব্যক্তিকে ১৯ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ওই পর্যটক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। ভেঙে ফেলা ভাস্কর্যটি সংস্কারের একদিন পরই এমন ঘটনা ঘটেছে। ভাস্কর্যটি সংস্কার করতে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়েছিল বলেও জানানো হয়। 

গণমাধ্যমটির খবর অনুযায়ী, পুলিশ ওই পর্যটককে কাছের একটি ফাস্ট-ফুড রেস্তোরাঁ থেকে গ্রেফতার করে। পর্যটক তার ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে জানেন না বলে দাবি করেছেন।

সংস্কার প্রকল্পের ব্যবস্থাপক নেল ভ্যানডেভেনেট গণমাধ্যম ভিআরটি নিউজকে বলেন, ব্রাসেলস স্টক এক্সচেঞ্জ ভবন এবং এই ভাস্কর্যগুলো আমাদের তালিকাভুক্ত ঐতিহ্যে। আমরা দ্রুত এটি সংস্কার করতে চাই, তবে এতে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসও লাগতে পারে।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, পুরো ভবনটির আগের সৌন্দর্য মাত্রই ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ভবনের দুটি সিংহের ভাস্কর্যসহ অনেক ক্ষেত্রে সংস্কার করতে হয়েছে।

নেল আরও বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, ভাস্কর্যগুলোকে মানুষ অনেক গুরুত্ব দেবে। কিন্তু যা হয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক।’

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভাস্কর্য মেরামত করতে বেলজিয়াম সেই আইরিশ পর্যটকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চাইছে। 

;

বেগুন চাষে ব্যস্ত জামালপুরের চাষিরা



সাহিদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, জামালপুর
বেগুন চাষে ব্যস্ত জামালপুরের চাষিরা

বেগুন চাষে ব্যস্ত জামালপুরের চাষিরা

  • Font increase
  • Font Decrease

যমুনা-ব্রহ্মপুত্র বিধৌত জামালপুরের ইসলামপুরের চরাঞ্চলের মাটি বেগুন চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। প্রতি বছর রবি মওসুমে ইসলামপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়ে থাকে। স্বল্প সময় ও স্বল্প খরচের বেগুন চাষে অধিক টাকা আয় করে থাকেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। তাই স্থানীয় কৃষকরা বেগুন গাছকে নাম দিয়েছেন টাকার গাছ।

চলতি বছর বন্যা না হওয়ায় বেগুন চাষিরা তাই আগে ভাগেই আগাম বেগুন চাষে মাঠে নেমেছেন। ইসলামপুরের চরাঞ্চলে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের বেগুন, শীতের সবজি হিসাবে দেশ-বিদেশে ব্যাপক কদর ও সুখ্যাতি রয়েছে। ইসলামপুরের উৎপাদিত সাদা, কালো ও বল বেগুন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হয়ে থাকে। এছাড়া বেগুন চাষে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় বাড়ছে চাষীর সংখ্যা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরের ১ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করা হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছে ৪২ হাজার ২৪০ মেক্টিক টন বেগুন। ২০২১-২২ অর্থ বছরের ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বেগুন উৎপাদন হয়েছে ৪৫ হাজার ৭২৫ মেক্ট্রিক টন বেগুন। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের ১ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে ৫০ হাজার ৭৮০ মেক্ট্রিক টন বেগুন উৎপাদন হয়েছে।

বেগুন চাষে ব্যস্ত জামালপুরের চাষিরা 

এছাড়াও ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে বেগুন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছেন স্থানীয় কৃষি অফিস। এতে ৫২ হাজার ৩৯০ মেক্ট্রিক টন বেগুন উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্যে এক কেজি বেগুন ৫০ টাকা।

ফলে ১ মেক্ট্রিক টন বেগুনের দাম দাঁড়ায় ৫০ হাজার টাকা। আর ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বেগুন উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষমাত্রা অনুযায়ী ৫২ হাজার ৩৯০ মেক্ট্রিক টন বেগুনের মূল্য ৫০ টাকা দরে আনুমানিক বাজার মূল্যে ২৬১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বিক্রি হতে পারে বলে ধারণা কৃষি বিভাগের।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৪০ শতাংশের এক বিঘা জমিতে সাড়ে ৪ হাজার বেগুনের চারা রোপণ করা যায়। ফল আসতে ৪৫ দিন সময় লাগে। এসময় পর্যন্ত কৃষকদের খরচ হয় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকার মতো। আবহাওয়া ও জমির উর্বরতা ভালো হলে ৪৫ দিন পর থেকে টানা তিন মাস প্রতি সপ্তাহে ১৫ থেকে ২০ মণ বেগুন তুলে বাজারে বিক্রি করতে পারেন কৃষকরা। গড় হিসাবে এ তিন মাসে বিঘা প্রতি উৎপাদন হয়ে থাকে ২২০ মন বেগুন। পাইকারি গড় হিসাবে ২০ টাকার দরে বাজার মূল্যে দাঁড়ায় ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।

চরপুটিমারী ইউনিয়নের ৪নং চরের কৃষক শফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘তার গত বছরের এক বিঘা জমিতে মোট খরচ হয়েছে ৩৬ হাজার টাকার মতো। আর বেগুন বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো। কম খরচে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় এবছর তিনি ৬ বিঘা জমিতে বেগুনের চারা রোপণ করেছেন’।

বেগুন চাষে ব্যস্ত জামালপুরের চাষিরা 

একই এলাকার কৃষক আমজাদ মিয়া বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘বেগুনে আরও লাভ বেশী হতো । সঠিক সময়ে যদি কৃষি অফিসাররা আমাদের সঠিক পরামর্শ দিতো। তারা আমাদের কোন খোঁজ-খবরই রাখেন না। আমরা গ্রামের মানুষ চাষাবাদ করেই সংসার চালাই। সব সময় মাঠেই পড়ে থাকি। গত ১৫ দিন হলো সাড়ে তিন বিঘা জমিতে বেগুনের চারা গাছ লাগিয়েছি। মাঝে খেতের কিছু চারা গাছ নষ্ট হয়ে গেছে।’

গাইবান্ধা ইউনিয়নের নাপিতেরচর এলাকার সোহাগ মিয়া নামে এক কৃষক বলেন, ‘সত্যি বলতে আমরা কৃষক মানুষ। এই যে আমি এক বিঘা জমিতে বেগুন গাছের চারা লাগিয়েছি, এটাকে আমি চারা গাছ মনে করি না , মনে করি টাকার গাছ। আশা করছি গত বছরের মতো এবছরেও ভালো ফলন হবে। তাই দিন রাত রোদে পুড়ে পরিশ্রম করে যাচ্ছি কিছু-টাকা লাভের আশায়।’

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ ও ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান আকন্দ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘চলতি বছর বন্যা না হওয়ায় কৃষকদের আমরা পরামর্শ দিয়েছি বেগুন চাষে। তাই তারা আমাদের পরামর্শে আগে ভাগেই আগাম বেগুন চাষে মাঠে নেমেছেন। এ উপজেলায় বারি-১ জাতের বেগুন বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে। এছাড়া বোম্বাই বেগুন, লম্বা বেগুন ও বাগলতি (ফম বেগুন) বেগুন নামে আরও তিন জাতের বেগুনের চারা রোপন করা হয়েছে।;

জামালপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জাকিয়া সুলতানা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘এ উপজেলার মাটি পলি দো-আঁশ হওয়ায় এখানে বেগুন চাষ বেশি হয়। আমরাও কৃষকদের বেগুন চাষে উদ্বুদ্ধ করি ও বেগুন চাষের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। সারা দেশে এ বেগুনের চাহিদা রয়েছে।’

;