চায়নাকে দায়ী করা শুধু ভয়ানকই না, এটা আসল ঘটনা বুঝতেও অসুবিধা করে



অ্যান্ড্রু লিউ
গ্রাফিক: বার্তা২৪.কম

গ্রাফিক: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপের রাজনীতিবিদেরা কোভিড-১৯ মহামারিতে তাদের অব্যবস্থাপনা ঢাকার ব্যাপারে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বস্তুত ‘চায়না’ নামক ধারণাটি তাদের কাছে ‘বলির পাঠা’ হয়েই ধরা দিয়েছে। কিন্তু, তাদের চায়নাকে দোষী করবার আসল ‘বিউটি’টা এই বিষয়ের অস্পষ্টতার মধ্যেই নিহিত আছে। সমালোচকের দল শুধু এই একটা বিষয়েরই কেন নিন্দা করে যাচ্ছে যে, (চায়নার) কমিউনিস্ট পার্টি কিভাবে জানুয়ারির ভয়ঙ্কর সপ্তাহগুলোতে তথ্য গোপন করতে পারল? যুক্তরাষ্ট্রের উদারপন্থী এবং রক্ষণশীল—ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ—প্রত্যেকেই এই প্রতিরক্ষার ঢাল ব্যবহার করে যাচ্ছেন।

এটা কি সুনিশ্চিত হয়েছে যে, চায়নার নাগরিকেরাই প্রকৃত কালপ্রিট আর তাদের উদ্ভট সংস্কৃতি এবং খাদ্যাভ্যাসই এই ভাইরাসের জন্য দায়ী? বিষয়টা নাইজেল ফারাজের (ব্রিটিশ পলিয়িশিয়ান) হাতে অর্পণ করলে বোধগম্য হতে পারে—যিনি বোকার মতো দুইদিকেই কথা বলে যাচ্ছেন। দু পার্শ্বই একসঙ্গে দখল করতে চাচ্ছেন। “চায়নার নাগরিকদের বিরুদ্ধে কোনো মন্দ-উচ্চারণ” নয় বটে, কিন্তু সমস্যাটা আসলে “চায়নার বন্যপ্রাণী-বাজারের ভয়ঙ্কর হাইজিন কন্ডিশন”-এর সঙ্গেই জড়িত।

যাহোক, আসল বিষয় হলো, আমরা ইদানীং দেখতে পাচ্ছি, চায়নার সমালোচনা কেমন করে এখানকার চাইনিজ এবং এশিয়ান বসবাসকারীদের ওপর একটি বর্ণবাদী আগ্রাসনে রূপ নিচ্ছে। যেই এশিয়ানরা মূলত যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম ইউরোপ এবং ওশেনিয়ার দেশগুলোতে বসবাস করে থাকেন।

আরো পড়ুন করোনাভাইরাস পরবর্তী দুনিয়া

ভিন্ন জাতীয়তাবাদের প্রতি ঘৃণা থেকে তৈরি এসকল আগ্রাসনের বিষয়ে যারা, অর্থাৎ উদারপন্থীরা যেসব নিন্দাবাক্য উচ্চারণ করেন, আমি সেগুলো সমর্থন করি। কিন্তু আবার ভয়ই পাই যে, চায়নার মানুষ এবং সংস্কৃতিকে স্বীকার করে উদারপন্থীদের এই কান্না শেষপর্যন্ত এমন কোনো আগ্রাসনের ছকই তৈরি করবে কিনা, যেই ছকের মধ্যে পড়ে আমরা তর্কের বিষয়-আশয় এবং সেগুলোর মধ্যকার তফাৎ-পার্থক্যগুলোকেই নিশ্চিহ্ন করে দেব। যেই বিষয়গুলো আমরা ইতিহাসের গতি-প্রতিক্রিয়ার মহামূল্য খেসারতের মধ্য দিয়ে পাচ্ছি।

এই মহামারির বিষয়ে চায়নার ভূমিকা বুঝতে গেলে আমাদের অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, গত কয়েক বছরে বৈশ্বিক বাজারে চায়নার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান কী। মূলত এই বিষয়টাই ভাইরাসের বিস্তারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, এবং ওইসকল ইউরো-আমেরিকান নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ারও বীজবপন করেছে।

আচ্ছা, এই অভিযোগটি গ্রহণ করার মধ্য দিয়েই শুরু করা যাক যে, বনরুই খাওয়ার এক অদ্ভুত সংস্কৃতির দোষেই নোভেল করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে। একথা যদিও সঠিক যে চায়নার মূল ভূখণ্ডে বনরুইয়ের আঁশ ও মাংস একটি লোকজ ঔষধ হিসেবে প্রচলিত, কিন্তু পরিসংখ্যান আসল ব্যাপারটা নির্দেশ করছে। এটা (এই বনরুইয়ের উপস্থিত) মূলত আমাদের বৈশ্বিক পুঁজিব্যবস্থাপনারই প্রভাব, এবং যা মূলত চায়নার ব্যবসায়িক শ্রেণির প্রবৃদ্ধি জোগানোতে লিপ্ত ছিল। ১৯৯৪ সালে প্রাণীটির কেজিপ্রতি মূল্য ছিল ১৪ ডলার, আজকে সেটি দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ৬০০ ডলারে। সেইসঙ্গে, অবৈধ পাচারের দায়ে প্রতিদিন এটি দশ টনের বেশি বাজেয়াপ্তই হতো। এই প্রাণিটির ভোক্তারা সাধারণতই এটি অর্ডার করতেন তাদের বিত্তভাবপূর্ণ অবস্থার প্রকাশ করতে, অথবা স্টক মার্কেটের একটি নির্দিষ্ট ভালো দিন উদযাপনের জন্য। সংখ্যায় এই বনরুইয়ের ভোক্তাশ্রেণী চায়নার মূল জনসংখ্যার অনুপাতে নগন্য। এমনিতে, চায়নার বেশিরভাগ নাগরিকই এইসব অনিষিদ্ধ প্রাণী গ্রহণ করবার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকেই সমর্থন করে থাকে।

আরো পড়ুুন করোনাবিরোধী যুদ্ধে মানবজাতি নেতৃত্বহীন

এই পরিসংখ্যান বিবেচনায়, নতুন করে আলাপে আসা বনরুইয়ের ঘটনাটাও শেষপর্যন্ত চায়নার উদারবাদী অর্থনীতির ফলাফল হিসেবেই প্রতিপন্ন হয়—যা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত এবং যা সাদামাটা অর্থে চায়নার সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার অংশ না।

ভাইরাসের এই উৎপত্তির বিষয়টি, ওই একই বিষয়—ওই অর্থনৈতিক জোরজবস্তিই যা কিনা ভাইরাসের পৃথিবীব্যাপী বিস্তারেও ভূমিকা পালন করেছে। উহান, যেই শহরে ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে, তা মূলত কয়েকটি উপকূলীয় অঞ্চলের মধ্যকার একটি কেন্দ্রস্থল, যথা ঘুয়াংঝু, সাংহাই। এই শহরটি একটি ‘দ্বিতীয় সারি’র শহর হলেও, উহান, সেইসঙ্গে আজকালকার বিশ্বায়নের জন্য উপযুক্ত এক সর্বাধুনিক স্থান হিসেবেই বিবেচ্য। পুঁজিবাদ যে ধরনের সস্তা মূল্যের জমি আর অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারের অনুবর্তী থাকে, এটি সেরকমেরই একটি জায়গা।

ফেব্রুয়ারি এবং মার্চের করোনাভাইরাস কেসগুলো বেশ কিছু অর্থনৈতিক লেনদেনের খবরাখবর আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে, যেগুলো দৃষ্টির অনেকটাই বাইরে ছিল। যেমন ইরানের বৃহত্তর শহর কোম-এর পরিকাঠামোতে চায়নার বিনিয়োগ, অথবা, উহানের গাড়ির পার্টস তৈরির ইন্ডাস্ট্রি কারখানাগুলোর সঙ্গে সারবিয়া, সাউথ কোরিয়া অথবা জার্মানির চুক্তি। হয়তো বা, নোভেল করোনাভাইরাস সবার প্রথম চায়নাতেই আবির্ভূত হয়েছে, তা সত্ত্বেও এই মহামারির নিয়ত ক্রিয়াশীল বিস্তার এবং এর চূড়ান্ত পরিণতির জন্য দায়ী কয়েকটি মাত্র বৈশ্বিক সংঘটক, যথা—বাণিজ্য, পর্যটন, এবং পণ্যের সাপ্লাই চেইন। আর এই সংঘটকগুলো মূলত একবিংশ শতকের মহাবিত্তপ্রতিম চাহিদাযজ্ঞের ওপরেই নির্মিত।

চাইনিজ সংস্কৃতির কিছু প্রচ্ছন্ন ধারণার ওপর দোষ দিয়ে আলাপ শেষ করবার সত্যিকার বক্রাঘাতটা হলো, এই মহামারিকে সবচাইতে ভালোভাবে প্রতিহত করেছে কিন্তু চাইনিজ সংস্কৃতিরই সংখ্যাগরিষ্ঠ কয়েকটি দেশ, যেমন তাইওয়ান (৩৮০ জন আক্রান্তের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু), সিংগাপুর (১৯১০ জন আক্রান্তের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু), এবং হংকং (৯৭৪ জন আক্রান্তের মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু)।

হ্যাঁ, তাদের এই দায়িত্বশীল পরিচালনা অনেকটাই ২০০৩ সালের সার্স প্রাদুর্ভাবের আঘাতের বরাতে প্রাপ্ত, কিন্তু এটি সেইসাথে কিছু সামর্থ্যবান কল্যাণকর রাষ্ট্রের ইতিহাসের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ বিষয়। যেই রাষ্ট্রগুলো ক্রমাগত স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ করেছে এই ধরনের সংকটকাল ভালোভাবে মোকাবেলা করবার উদ্দেশ্যে। ইউরোপ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের দৃশ্য এমনটা নয়।

[আমার] এই চায়না-বিরোধিতাকে প্রতিহত করবার মানে কিন্তু ক্ষমাপ্রার্থনা না, বা [চায়না] রাষ্ট্রের ক্রিয়াকলাপকেও জাস্টিফাই করা না। এটা খুবই পরিষ্কার যে, সেখানকার স্থানীয় দায়িত্বশীলেরা ডাক্তার লি ওয়েনলিয়াংকে চুপ করিয়ে ভুল করেছে। যিনি এই ভাইরাসের বিষয়ে বন্ধুদেরকে সতর্ক করেছিলেন, ঠিক যতটা আগে তা করা সম্ভব ছিল। এবং এটাও ঠিক যে, চায়না সরকার ধারাবাহিকভাবে ভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর প্রতুলতার বিষয়টিও দূরে সরিয়ে রেখেছিল।

কিন্তু একটি স্বেচ্ছাচারী শাসন এবং একটি গণতান্ত্রিক শাসনের মধ্যকার বৈপরিত্য কি এতটাই প্রকট, যেমনটা পশ্চিমের ভাবাদর্শীরা বলে থাকে? বেশিরভাগ পর্যবেক্ষক এ ব্যাপারে একমত যে, উহানে ঘটমান ওই সময়কার ক্রাইসিস চায়না সরকার প্রথম তিন সপ্তাহ চাপা দিয়ে রেখেছিল, এবং এই নিখোঁজ সময়টাও মূলত ভাইরাসাটির স্থানিক এবং বৈশ্বিক পার্থক্যগুলোকে মীমাংসা করেছে। তথাপি এটাই প্রতীয়মান যে, চায়না ছাড়া অন্যান্য সরকারেরা সেই তুলনায় বরং অনেক দেরিতেই সজাগ হয়েছে। যুক্তরাজ্য একঘেয়ে ভঙ্গিতে ঘটনাটা আট সাপ্তাহ ধরে টেনেছে, আর যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট বিপদসংকেত উপেক্ষা করছে ৭০ দিন পর্যন্ত।

এই নিষ্ক্রিয়তা অংশত ওই পশ্চিমা কৈবল্যেরই একটা ‘প্রোডাক্ট’। যে বিশ্বাস করতে চেয়েছে ভাইরাস এবং মহামারি যা হবার সব ‘ওইখানেই’ হবে, ওইসব গরিব অ-শেতাঙ্গ দেশে।

আরো পড়ুন করোনাভাইরাস : দেশভেদে মৃত্যুহারে ফারাক কেন?

এশিয়াবিরোধী রেসিজমকে চ্যালেঞ্জ করবার পক্ষে এই দিকটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইসব ঝগড়াঝাঁটি ও দোষাদোষি খেলা না খেলে—‘জাস্টিস ইজ গ্লোবাল’-এর ডিরেক্টর তবিতা জো যেমনটা বলেছেন—আমাদের উচিত বুঝতে পারা যে, কিভাবে এসব অদূরদর্শী জাতীয়তাবাদী বিষয়-আশয় মারাত্মক রকমের অকার্যকর প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। ইতালির খারাপ সাপ্তাহগুলো চলাকালে, সেখানকার দায়িত্বশীলরা স্বীকার করেছেন, তারা প্রথমদিকে উহানের ক্রাইসিসটাকে দেখেছিলেন ‘সায়েন্স ফিকশন মুভি আর এর সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই’ হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রে, ক্যানসাসের এক রাজনীতিবীদ বিবৃতিতে জানিয়েছেন তার এলাকা নিরাপদ, কারণ সেখানে হাতেগোনা কয়কজন চাইনিজ নাগরিকই আছেন। ফিলেডেলফিয়াতে জাতিবিদ্বেষের আরো ভয়ানক মাত্রা দেখা গিয়েছে। সেখানে গুজব ছড়িয়ে গেছে যে, এই ভাইরাস কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের কিছু করবে না। কারণ এটা একটা ‘চাইনিজ ডিজিজ’। এমনসব ভুলভাল তথ্য যে, দায়িত্বশীলরাই এখন ভয় পাচ্ছেন যে এগুলো হয়তো অসাম্যকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাবে।

পরিশেষে, এই মহামারি এবং এর সহগামী এশিয়াবিরোধী নেতিবাচকতা, উভয়েই সক্রিয় আছে—এইসব সংস্কৃতি আর ভিনদেশিকে ঘৃণা করবার প্রশ্নের মধ্য দিয়ে, এবং জীবন-মৃত্যুর গুরুতর পরিণতিকে মাথায় করে। পরোক্ষ অর্থে, এই দুটোই বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে চায়নার বিপুল উত্থানের বাইপ্রোডাক্ট। এই উত্থান শুধুমাত্র ভাইরাসের জন্য দায়ী ‘সাপ্লাই চেইন’ আর ‘পর্যটিন নেটওয়ার্ক’কেই পরিগঠন করে না, বরং ইউরো-আমেরিকার শতবর্ষী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইজ্জতকেও হুমকির মুখে ফেলে।

যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে কিছু জনপ্রিয় দাবির মধ্য দিয়ে এই ধরনের ভয় স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, চায়না একাই—তাদের নিজ দেশের রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়িক শ্রেণি নয়—উৎপাদনের কাজ হারাবার কারণে দায়ী ছিল। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে ‘হুয়াই’য়ের ফাইভ জি নেটওয়ার্ক প্রোভাইড প্রসঙ্গে নাগরিকদের দুশ্চিন্তা খুব স্পষ্টভাবে সামনে চলে এসেছে, এটাকে গ্লোবাইলাইজেশনের বিরুদ্ধ অবস্থানকৃত একটি গণভোটের ফলস্বরূপও দেখা যেতে পারে। চীনের প্রতি এই ভয় শুধু করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি না, বরঞ্চ এই ভয়ের মধ্য দিয়ে সবচেয়ে উপযুক্ত রূপকটাই প্রতিভাত হয়ে যাচ্ছে যে, কিভাবে পৃথিবীব্যাপী অদৃশ্য এক বিপুল ধ্বংসযজ্ঞের আরম্ভ হয়েছে।

এই রূপক সুস্পষ্ট করে যে, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলেই এই বিপজ্জনক চিন্তাভাবনাগুলা মুহূর্তে হারিয়ে যাবে না, যতক্ষণ না আমরা সহনশীলতার ‘উদারপন্থী’ মনোভাবের চাইতেও বেশি কিছুর চাহিদা অনুভব করব। পশ্চিমের চায়নাবিরোধী নেতিবাচকতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা এখানকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোরজবস্তিগুলোকেও চিহ্নিত করতে হবে, এবং এগুলোকেও সামনে নিয়ে আসতে হবে। এবং এখানকার জাতীয়তাবাদকেও আমাদের বুঝতে হবে, যা আমাদের সমাজ এবং আজকের এই বিশ্বব্যাপ্ত গণস্বাস্থ্যের সংকটের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।


দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রবন্ধের রূপান্তর
অনুবাদ: যাকওয়ান সাঈদ

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;