চেরনোবিলের কিছু নতুন বাসিন্দা

  • ভাষান্তর: তোফায়েল আহমেদ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভাদিম মিনজুক তার কারখানায়/ছবি: বিবিসি

ভাদিম মিনজুক তার কারখানায়/ছবি: বিবিসি

চেরনোবিলে ১৯৮৬ সালের পারমাণবিক দুর্ঘটনায় তেজস্ক্রিয়া বিষক্রিয়ার কারণে পালিয়ে যায় অনেক বাসিন্দা। ফলে সেখানে গড়ে উঠেছে একগুচ্ছ ভুতের গ্রাম। কিন্তু এখন সংরক্ষিত এলাকার কিনারের দিকের ক্ষয়িষ্ণু বাড়িগুলোতে আবার কিছু নতুন বাসিন্দা বসবাস শুরু করেছেন।

এক উষ্ণ গ্রীষ্মের সন্ধ্যা, মেরিনা কোবলেডেকা তার দুই কিশোরী মেয়ের সাথে বাড়ির পেছনের উঠোনে খেলছেন। পারিবারিক কুকুর বলের সঙ্গে কুস্তি করে মুরগির বাচ্চাগুলোকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে, দেখে হাসছে ইরিনা ও ওলিনা। বাড়ির পেছনদিকের বেড়ার বাইরের দিকের সবকিছু নীরব এবং স্থির হয়ে আছে।

বিজ্ঞাপন

ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় স্টেসিচিনা গ্রামের অনেকগুলো বাড়ি, একটা দোকান এবং লাইব্রেরি খালি পড়ে আছে। শুধুমাত্র যুদ্ধে বিধ্বস্ত বন আবার তার পূর্বের রূপ ফিরে পাচ্ছে। লতানো গুল্মগুলো পরিত্যক্ত বাড়ির ভাঙা দেয়াল ভেদ করে বেড়ে উঠছে। এখানে তাদের কিছু প্রতিবেশীও রয়েছেন। কিন্তু প্রায় সবাই এখানে সত্তর এবং আশির দশকে এসে বসতি গেড়েছেন। সামাজিক অনুদান ও সুযোগ সুবিধার ঘাটতি সত্ত্বেও, চার বছর আগে মেরিনা ও তার দুই কিশোরী মেয়ে তাদের যা কিছু ছিল সব নিয়ে ইউক্রেনের কয়েকশত মাইল অতিক্রম করে চেরনোবিল সংরক্ষিত এলাকার ৩০ কিলোমিটার দূরে বসবাস করতে আসেন।

১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল, চেরনোবিল পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনার শিকার হয়। পাওয়ার সেন্টারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে, যা একটানা ১০ দিন তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়। মেঘ এসব রেডিওঅ্যাকটিভ কণাকে হাজার হাজার মাইল জুড়ে বিস্তৃত করে এবং পুরো ইউরোপ জুড়ে বিষাক্ত বৃষ্টি হতে থাকে। ১ লাখ ১৬ হাজার মানুষ, যারা চেরনোবিলে বসবাস করত সবাইকে তাৎক্ষণিক নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত রিঅ্যাক্টরের আশপাশে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয় যা পরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসমূহেও বর্ধিত হয়।

এর পরের কয়েকমাসে আরও ২ লাখ ৩৪ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে ফেলা হয়, যাদের প্রায় সবাইকে তড়িঘড়ি করে বাসস্থান ছাড়তে হয়েছিল। কিছু সংখ্যককে তাদের সবকিছু গোছাতে মাত্র কয়েকঘণ্টা সময় দেয়া হয়। অন্যদেরকে বলা হয়েছিল, তারা অল্প কিছুদিনের মধ্যে এ স্থান ছেড়ে চলে যেতে হবে এবং আর কখনও ফিরে আসতে পারবে না। এদের অনেকেই যারা প্রান্তিক চাষি ছিল, তাদেরকে অনেকগুলো পাকা টাওয়ার ব্লকে পুনর্বাসন করা হয়। কিন্তু এদের অনেকে কখনই চেরনোবিল ছেড়ে যায়নি।

আজ পর্যন্ত সংরক্ষিত এলাকায় বসবাস করা অবৈধ। এসব নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ১৩০-১৫০ জন বাসিন্দা এখন পর্যন্ত এই এলাকায় বসবাস করছেন। এদের অনেকেই নারী যারা, তাদের ৭০-৮০ দশকে বসবাস করা পূর্বপুরুষদের জমিতে চাষাবাদ করছেন।


বাড়ির উঠোনে খেলছেন মেরিনা ও তার দুই মেয়ে

সংরক্ষিত এলাকার বাহিরে কিছু নতুন আগন্তুক এসেছেন। এদের একজন মেরিনা কোবলেডেকা। মেরিনার বাড়িটি মেরামত করা খুবই প্রয়োজনীয়। মেঝেগুলোতে পচন ধরেছে এবং ধাতব রেডিয়েটার গুলোতেও ফাটল দেখা যাচ্ছে। শীতকালে তাপমাত্রা -২০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়া এসব এলাকায় পচন ধরা মেঝে কিংবা ফাটল পড়া রেডিয়েটরের উপস্থিতি একটি বড় সমস্যা।

তাদের মৌলিক কিছু রাষ্ট্রীয় অনুদান রয়েছে যেমন— গ্যাস, বিদ্যুৎ, মোবাইল সিগন্যাল ইত্যাদি। মোবাইল সিগনাল থাকার মানে হচ্ছে তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু তাদের একটি মাত্র টয়লেট যা বাড়ির বাড়ির বাইরের দিকে। পানিও দূষিত। পানির জন্য তাদের একমাত্র অবলম্বন দূষিত নলকূপ যা পাইপের মাধ্যমে বাড়ির সাথে সংযুক্ত হয়েছে। দূষিত হওয়ার কারণে ব্যবহারের পূর্বে পানিকে আগে ফুটাতে হয়।

গ্রামে একটা ভালো বাড়ি থাকা মানে হচ্ছে ৩৫০০ ডলার ব্যয় করার সামর্থ্য থাকা। কিন্তু এমন সম্পত্তি খুবই কম। কাঠে নির্মিত এসব অধিকাংশ খালি বাড়িই বাড়ির মালিকেরা কয়েক শত ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে।

মেরিনা যখন এখানে আসেন, তখন এমন সস্তা বাড়ি ক্রয় করাও তার জন্য কষ্টকর ছিল। এর পরিবর্তে গভর্নিং কাউন্সিল তার পরিবারকে একটি বাড়িতে ভাগাভাগি করে থাকার এক অস্বাভাবিক প্রস্তাব দেয়। বাড়িতে থাকার বিনিময়ে তারা এক বৃদ্ধের সেবা শুশ্রূষা করবে, যিনি ডিমেনশিয়া নামক রোগের একদম শেষপর্যায়ে আছেন। দুই বছর পূর্বে ওই ব্যক্তি মারা যায় এবং মেরিনার পরিবার সেখানেই বসবাস করা শুরু করে।

উঠোনের বাইরে দাড়িয়ে ইরিনা এবং ওলিনা তাদের পরিবারের বাকিদের দেখাচ্ছে— কিছু মুরগি, খরগোশ, ছাগল এমনকি একজোড়া গিনিপিগও।তাদের স্কুল ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। স্কুলবিহীন দিনগুলোতে তাদের অধিকাংশ সময়ই বাগানে মাকে সাহায্য করা, সবজি ফলানো এবং তাদের পোষা প্রাণীগুলোকে দেখাশোনা করেই কাটায়। পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস হচ্ছে ১৮৩ ডলারের রাষ্ট্রীয় অনুদান (৫২৩৫ ইউক্রেনিয়ান রিবনিয়া), নিজেদের খাদ্য সামগ্রী ফলানো এবং দুধ ও মাংসের জন্য পশু পালন করা তাদের বাজেটের জন্য প্রয়োজনীয়।

বসবাসের জায়গা পাওয়া

মেরিনা এবং তার মেয়েরা পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের এক বিশাল শিল্পনগরী তোসকিভকা থেকে পালিয়ে আসেন। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের ৪ বছরের এ সংঘাতে আনুমানিক প্রায় ১০০০০ মানুষ মারা যায় এবং বিশ লাখেরও অধিক মানুষ বাস্থচ্যুত হয়।

সংঘাত শুরু হয় ২০১৪ সালে, যখন রাশিয়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপ নিজেদের ভূখণ্ডে যুক্ত করে। সশস্ত্র রুশভাষী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা রাশিয়ার পক্ষভুক্ত হয়। যোদ্ধারা কয়লাশিল্পের কেন্দ্রস্থল ডনবাসে দোনস্ক ও লুহানস্ক শহরে দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী ছিটমহল ঘোষণা করে। যেহেতু রাশিয়াপন্থি যোদ্ধারা একের পর এক গ্রাম দখলে নিয়ে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে শহর বিতাড়ন করছিল, মেরিনাদের বাড়ি তখন তীব্র শেলিংয়ের লক্ষবস্তু হয়।

প্রতিদিন সকালে কিছু সময় ছাড়া বোমাবর্ষণ অনবরত চলত। সাময়িক যুদ্ববিরতির সময় প্রত্যেকে কিছুটা স্বাভাবিকতা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করত। এ সময়ে ইরিনা এবং ওলিনা স্কুলে যেত, তাদের মা মেরিনা বাজারে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু দুপুরের আগেই যুদ্ধ শুরু হত। অধিকাংশ রাতই তাদের তীব্র গোলাবর্ষণের মধ্য কাটাতে হতো।

এমনি এক ফাঁকে ইরিনা এবং ওলিনা বাড়ি ফেরার পথে অপ্রত্যাশিত ভাবে তারা ক্রসফায়ারের মধ্যে পড়ে যায়। তারা এক দোকানির কাছে গিয়ে আশ্রয় নেয়। দোকানি পরে তাদেরকে রাস্তা থেকে দূরে এক বাড়িতে নিয়ে রাখে। এ ঘটনার পরই মেরিনা তাদের বাড়ি ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ডনবাস অঞ্চলের এরকম দশটি পরিবার ছিল যারা একইরকম দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সংরক্ষিত অঞ্চলের কাছাকাছি এলাকায় বসবাস করতে যায়। মেরিনার মতো তারাও পুরনো বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের পরামর্শে এখানে আসে। এমনকি এক মহিলা জানান, ‘ইউক্রেনের মধ্য সবচেয়ে কম মূল্যে জীবনযাপন করা যায় এমন জায়গা’ লিখে তিনি গুগলে খোঁজ করেন। উত্তর আসে, ‘চেরনোবিলের কাছে’।

বিপর্যয়ের পর থেকে বিজ্ঞানীরা মাটি, গাছপালা এবং পশুপাখিদের ওপর তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পরীক্ষা করছেন, এমনকি সংরক্ষিত এলাকার বাহিরেও। বায়ুমণ্ডলে তেজস্ক্রিয়তা আর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নেই, বলছিলেন ভেলরি কাশপারভ, তিনি ইউক্রেনিয়ান ইনস্টিটিউট অব কালচারাল রেডিওলজির ডিরেক্টর। কিন্তু কিছু এলাকার মাটির দূষিত অবস্থা মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হতে পারে। কাশপারভ এবং তার দল সংরক্ষিত এলাকার বাহিরের গরুর দুধে অতিরিক্ত পরিমাণ সিজিয়াম-১৩৭ এর উপস্থিতি পেয়েছেন। ঘাসের মাধ্যমে শোষিত সিজিয়াম কণা গবাদি পশুর মধ্য ছড়িয়েছে।

এর গ্রহণের মাত্রা বৃহৎ পরিমাণে হলে মানবকোষ সমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এটা থাইরয়েড ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু কাশপারভ বলছিলেন এসব ঝুঁকি কিছু নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তার দল এমন হটস্পট নির্ধারণে কাজ করছেন, যাতে সংরক্ষিত এলাকার বাহিরে যারা বসবাস করছেন তারা কী ধরনের সম্ভাব্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন তা নির্ধারণ করা যায়।

এক মানচিত্রে স্টাচিয়ান গ্রাম দেখাচ্ছিলেন কাশপারভ যেখানে মেরিনার পরিবার বসবাস করে। এই গ্রামেই নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর থেকে সিজিয়াম-১৩৭ ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলছিলেন উৎপাদিত শাকসবজি, ছাগলের দুধে এসবের ঝুঁকি খুবই কম। কিন্তু এই এলাকায় বন্য খাদ্য সামগ্রী যেমন— মাশরুম অথবা বন্য ব্যারিজ এসবের মধ্যে তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকি নির্ণয়ে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।

মেরিনা বলেন, তেজস্ক্রিয়তার সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে তাকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন, তার পরিবার এসবের থেকেও ভয়াবহ কিছু থেকে পরিত্রাণ পেয়েছে, আর তা হল যুদ্ধ। তেজস্ক্রিয়তা হয়ত আমাদের ধীরে মেরে ফেলতে পারে, কিন্তু এখানে গুলি অথবা বোমা মেরে মারতে পারবে না।

এক উদ্যোক্তা

রাজধানী কিয়েভ থেকে গাড়িতে করে মাত্র দুই ঘণ্টারও কম রাস্তা। সংরক্ষিত এলাকা বরাবর এই ভুতুড়ে নগরে শুধু কিছু পরিবারই সুযোগের সন্ধানে আসেনি, আছেন কিছু উদ্যোক্তাও।

প্রতিদিন ভাদিম মিনজুক তার পালিত কুকুরকে নিয়ে সংরক্ষিত এলাকার শুরু নির্দেশকারী উঁচু কাটাতারের বেড়া বরবার হাটেন। পাখির কিচিরমিচির ও বনের নিস্তব্ধতা উপভোগের জন্য এটি তার প্রিয় একটি জায়গা।

এটা ফিনল্যান্ডের উত্তরে কিংবা আলাস্কাতে বসবাস করার মতো, বলছিলেন ভাদিম। এই এলাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব পুরো ইউক্রেনের মধ্যে সর্বনিম্ন, প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র দুই জন।

ভাদিম মিনজুক তার কারখানায়

পূর্ব ইউক্রেনের হরলিভকাতে তার আগের বাসস্থান, যেখানে প্রতি বছর মিলিয়ন ডলার ব্যবসা করা যেত। কিন্তু শহর যখন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হল, আর্টিলারির আনাগেনা বাড়ছিল, তখন তার এককালের বর্ধিষ্ণু কলকারখানা ও ওয়্যারহাউজগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। ভাদিম এখনও স্মরণ করেন একদিনের ঘটনা। বাড়ির পেছনের দরজার দিকে তিনি দেখেন বিদ্রোহী সেনারা বাগানের বেড়ার ডানদিকে ব্যারিকেড তৈরি করছে। মাঝেমধ্যে সৈন্যরা ১০০ মিটারেরও কাছাকাছি চলে যাচ্ছিল।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তার পরিবারকে শহরের বিভিন্ন সেনা চেকপোস্টে পরিচয়পত্র দেখাতে হয়েছে। তারা রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছে। এমনকি তাদের সামনে থেকেই বিদ্রোহীরা এক ব্যক্তিকে কার থেকে তুলে নিয়ে যায়, তারপর তাদের সামনেই হত্যা করে।

প্রথমে ভাদিম তাদের ছেলেমেয়েদের নিরাপদে সরিয়ে রাখে। তারপর তারাও একদিন এই অঞ্চল ত্যাগ করে। হরলিভকাতে যা কিছু ছিল, সবকিছু পেছনে ফেলে চলে যায় তারা। প্রথম কয়েক মাস সঞ্চয় থেকে খরচ করেছেন। ভাদিম পুরো ইউক্রেন চষে বেড়িয়েছেন যাতে পরিবারকে নিয়ে নতুন একটা জীবন শুরু করা যায়

এক আত্মীয় শুনেছিলেন চেরনোবিলে কিছু সম্পত্তি সস্তায় বিক্রি করা হবে। তিনি সরেজমিন দেখতে সেখানে যান, গিয়ে ডিডাককি নামক এক গ্রামে এক পরিত্যক্ত শস্যাগার দেখতে পান। সংরক্ষিত অঞ্চলের ঠিক ডানপাশে এবং রাজধানী কিয়েভ থেকে মাত্র ১১৫ কিলোমিটার দূরত্ব। সাথে সম্পত্তির মূল্যও সস্তা ছিল। সুতরাং এটা একটা বাস্তবসম্মত ব্যবসার সুযোগ ছিল। স্থানীয়রা এর লোহা ও কলকব্জা নিয়ে যাওয়ায় এর ছাদটা ফুটো হয়ে যাচ্ছিল। আমি মালিকের সাথে দেখা করে একটি চুক্তি করি।

১৪০০ ডলারে গুদাম ও আরও তিনটি বাড়ি মাত্র ২৪০ ডলারে কিনে ভাদিম সেগুলোকে বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করেন এবং ধাতু গলানোর ব্যবসা শুরু করেন। আমার কৌশল ছিল বর্জ্য থেকে তৈরি পণ্য দিয়ে ব্যবসা শুরু করা, বলছিলেন ভাদিম। প্রথম বছর সবচেয়ে কঠিন ছিল, কিন্তু গত দুই বছর আমার ব্যবসা ভালো হয়েছে।

এমনকি ভাদিম ডনবাসের প্রাক্তন সাত কর্মীকে আবার নিয়োগ করেন এবং তার একটি বাড়িকে হোস্টেলে রূপান্তর করে তাদের থাকার ব্যবস্থা করেন। আমি আমার জীবিকা নির্বাহ করি এবং কর্মীরা যেন ভালো সঞ্চয় করতে পারে এজন্য তাদেরও সহযোগিতা করি। আমি এই গ্রামের সর্বোচ্চ করাদাতা। পরিশেষে আমি ইউক্রেনীয়, এবং আমার দেশকে সহায়তা করতে চাই।

ভাদিম বলেন, মাঝেমধ্যে আমি তেজস্ক্রিয়তার কথাও চিন্তা করি। এমনকি তিনি তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপের জন্য হাত দিয়ে নড়াচড়া করা যায় এমন গিগার কাউন্টারও ক্রয় করেন। কিন্তু তিনি ভীত ছিলেন না। তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে বায়ুমণ্ডলে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা নিরাপদ পর্যায়ে আছে। সর্বোপরি আপনি যুদ্ধে যে ভয়াবহতা দেখেছেন তার তুলনায় তেজস্ক্রিয়তা কিছুই না।

তিনি এখানে জীবনকে উপভোগ করছেন। এটা শুধু যুদ্ধের অনুপস্থিতিই না, বিশেষ একধরনের শান্তিও বটে। মেরিনা এবং ভাদিম উভয়ের পরিবারই বলছিলেন কিভাবে এই শান্তপ্রকৃতি এবং পরিবেশে দীর্ঘসময় ধরে হাঁটাকে তারা ভালবাসেন। জীবন হয়ত খুবই সাধারণ এখানে কিন্ত কোনো পরিবারই এখান থেকে আর বড় শহরে যেতে চায় না। এমনকি যদিও এটার অর্থ এই হয় যে সেখানে প্রচুর বন্ধু ও সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে। আমি তেজস্ক্রিয়তাকে ভয় পাই না বলছিলেন মেরিনা। আমার বাচ্চাদের মাথার ওপর দিয়ে আর গোলা উড়ছেনা, এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। এই শান্ত পরিবেশে আমরা দুশ্চিন্তা ছাড়াই ঘুমোতে যাই এবং কোথাও আমাদের আর লুকিয়ে থাকতে হয় না। এভাবেই ইতি টানছিলেন মেরিনা।

ভাদিম বলেছিলেন, তার স্ত্রী ওলিনা কখনও কখনও অবরুদ্ধ অঞ্চলটির সাথে তাদের যুদ্ধবিধ্বস্ত আদি শহর হরলিভাকার তুলনা করেন। তবে এখানে একটি স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে— এখানে সংরক্ষিত অঞ্চলের প্রান্তে তিনি বিশ্বাস করেন, তাদের পরিবারের একটি ভালো ভবিষ্যৎ রয়েছে। আমার মনে হয়েছিল— আমরা সব হারিয়ে ফেলেছি, বলছিলেন ভাদিম।

অনুবাদক:তোফায়েল আহমেদ (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর), আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

সূত্র: বিবিস