চেরনোবিলের কিছু নতুন বাসিন্দা



ভাষান্তর: তোফায়েল আহমেদ
ভাদিম মিনজুক তার কারখানায়/ছবি: বিবিসি

ভাদিম মিনজুক তার কারখানায়/ছবি: বিবিসি

  • Font increase
  • Font Decrease

চেরনোবিলে ১৯৮৬ সালের পারমাণবিক দুর্ঘটনায় তেজস্ক্রিয়া বিষক্রিয়ার কারণে পালিয়ে যায় অনেক বাসিন্দা। ফলে সেখানে গড়ে উঠেছে একগুচ্ছ ভুতের গ্রাম। কিন্তু এখন সংরক্ষিত এলাকার কিনারের দিকের ক্ষয়িষ্ণু বাড়িগুলোতে আবার কিছু নতুন বাসিন্দা বসবাস শুরু করেছেন।

এক উষ্ণ গ্রীষ্মের সন্ধ্যা, মেরিনা কোবলেডেকা তার দুই কিশোরী মেয়ের সাথে বাড়ির পেছনের উঠোনে খেলছেন। পারিবারিক কুকুর বলের সঙ্গে কুস্তি করে মুরগির বাচ্চাগুলোকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে, দেখে হাসছে ইরিনা ও ওলিনা। বাড়ির পেছনদিকের বেড়ার বাইরের দিকের সবকিছু নীরব এবং স্থির হয়ে আছে।

ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় স্টেসিচিনা গ্রামের অনেকগুলো বাড়ি, একটা দোকান এবং লাইব্রেরি খালি পড়ে আছে। শুধুমাত্র যুদ্ধে বিধ্বস্ত বন আবার তার পূর্বের রূপ ফিরে পাচ্ছে। লতানো গুল্মগুলো পরিত্যক্ত বাড়ির ভাঙা দেয়াল ভেদ করে বেড়ে উঠছে। এখানে তাদের কিছু প্রতিবেশীও রয়েছেন। কিন্তু প্রায় সবাই এখানে সত্তর এবং আশির দশকে এসে বসতি গেড়েছেন। সামাজিক অনুদান ও সুযোগ সুবিধার ঘাটতি সত্ত্বেও, চার বছর আগে মেরিনা ও তার দুই কিশোরী মেয়ে তাদের যা কিছু ছিল সব নিয়ে ইউক্রেনের কয়েকশত মাইল অতিক্রম করে চেরনোবিল সংরক্ষিত এলাকার ৩০ কিলোমিটার দূরে বসবাস করতে আসেন।

১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল, চেরনোবিল পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনার শিকার হয়। পাওয়ার সেন্টারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে, যা একটানা ১০ দিন তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়। মেঘ এসব রেডিওঅ্যাকটিভ কণাকে হাজার হাজার মাইল জুড়ে বিস্তৃত করে এবং পুরো ইউরোপ জুড়ে বিষাক্ত বৃষ্টি হতে থাকে। ১ লাখ ১৬ হাজার মানুষ, যারা চেরনোবিলে বসবাস করত সবাইকে তাৎক্ষণিক নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত রিঅ্যাক্টরের আশপাশে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয় যা পরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসমূহেও বর্ধিত হয়।

এর পরের কয়েকমাসে আরও ২ লাখ ৩৪ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে ফেলা হয়, যাদের প্রায় সবাইকে তড়িঘড়ি করে বাসস্থান ছাড়তে হয়েছিল। কিছু সংখ্যককে তাদের সবকিছু গোছাতে মাত্র কয়েকঘণ্টা সময় দেয়া হয়। অন্যদেরকে বলা হয়েছিল, তারা অল্প কিছুদিনের মধ্যে এ স্থান ছেড়ে চলে যেতে হবে এবং আর কখনও ফিরে আসতে পারবে না। এদের অনেকেই যারা প্রান্তিক চাষি ছিল, তাদেরকে অনেকগুলো পাকা টাওয়ার ব্লকে পুনর্বাসন করা হয়। কিন্তু এদের অনেকে কখনই চেরনোবিল ছেড়ে যায়নি।

আজ পর্যন্ত সংরক্ষিত এলাকায় বসবাস করা অবৈধ। এসব নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ১৩০-১৫০ জন বাসিন্দা এখন পর্যন্ত এই এলাকায় বসবাস করছেন। এদের অনেকেই নারী যারা, তাদের ৭০-৮০ দশকে বসবাস করা পূর্বপুরুষদের জমিতে চাষাবাদ করছেন।


বাড়ির উঠোনে খেলছেন মেরিনা ও তার দুই মেয়ে

সংরক্ষিত এলাকার বাহিরে কিছু নতুন আগন্তুক এসেছেন। এদের একজন মেরিনা কোবলেডেকা। মেরিনার বাড়িটি মেরামত করা খুবই প্রয়োজনীয়। মেঝেগুলোতে পচন ধরেছে এবং ধাতব রেডিয়েটার গুলোতেও ফাটল দেখা যাচ্ছে। শীতকালে তাপমাত্রা -২০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়া এসব এলাকায় পচন ধরা মেঝে কিংবা ফাটল পড়া রেডিয়েটরের উপস্থিতি একটি বড় সমস্যা।

তাদের মৌলিক কিছু রাষ্ট্রীয় অনুদান রয়েছে যেমন— গ্যাস, বিদ্যুৎ, মোবাইল সিগন্যাল ইত্যাদি। মোবাইল সিগনাল থাকার মানে হচ্ছে তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু তাদের একটি মাত্র টয়লেট যা বাড়ির বাড়ির বাইরের দিকে। পানিও দূষিত। পানির জন্য তাদের একমাত্র অবলম্বন দূষিত নলকূপ যা পাইপের মাধ্যমে বাড়ির সাথে সংযুক্ত হয়েছে। দূষিত হওয়ার কারণে ব্যবহারের পূর্বে পানিকে আগে ফুটাতে হয়।

গ্রামে একটা ভালো বাড়ি থাকা মানে হচ্ছে ৩৫০০ ডলার ব্যয় করার সামর্থ্য থাকা। কিন্তু এমন সম্পত্তি খুবই কম। কাঠে নির্মিত এসব অধিকাংশ খালি বাড়িই বাড়ির মালিকেরা কয়েক শত ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে।

মেরিনা যখন এখানে আসেন, তখন এমন সস্তা বাড়ি ক্রয় করাও তার জন্য কষ্টকর ছিল। এর পরিবর্তে গভর্নিং কাউন্সিল তার পরিবারকে একটি বাড়িতে ভাগাভাগি করে থাকার এক অস্বাভাবিক প্রস্তাব দেয়। বাড়িতে থাকার বিনিময়ে তারা এক বৃদ্ধের সেবা শুশ্রূষা করবে, যিনি ডিমেনশিয়া নামক রোগের একদম শেষপর্যায়ে আছেন। দুই বছর পূর্বে ওই ব্যক্তি মারা যায় এবং মেরিনার পরিবার সেখানেই বসবাস করা শুরু করে।

উঠোনের বাইরে দাড়িয়ে ইরিনা এবং ওলিনা তাদের পরিবারের বাকিদের দেখাচ্ছে— কিছু মুরগি, খরগোশ, ছাগল এমনকি একজোড়া গিনিপিগও।তাদের স্কুল ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। স্কুলবিহীন দিনগুলোতে তাদের অধিকাংশ সময়ই বাগানে মাকে সাহায্য করা, সবজি ফলানো এবং তাদের পোষা প্রাণীগুলোকে দেখাশোনা করেই কাটায়। পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস হচ্ছে ১৮৩ ডলারের রাষ্ট্রীয় অনুদান (৫২৩৫ ইউক্রেনিয়ান রিবনিয়া), নিজেদের খাদ্য সামগ্রী ফলানো এবং দুধ ও মাংসের জন্য পশু পালন করা তাদের বাজেটের জন্য প্রয়োজনীয়।

বসবাসের জায়গা পাওয়া

মেরিনা এবং তার মেয়েরা পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের এক বিশাল শিল্পনগরী তোসকিভকা থেকে পালিয়ে আসেন। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের ৪ বছরের এ সংঘাতে আনুমানিক প্রায় ১০০০০ মানুষ মারা যায় এবং বিশ লাখেরও অধিক মানুষ বাস্থচ্যুত হয়।

সংঘাত শুরু হয় ২০১৪ সালে, যখন রাশিয়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপ নিজেদের ভূখণ্ডে যুক্ত করে। সশস্ত্র রুশভাষী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা রাশিয়ার পক্ষভুক্ত হয়। যোদ্ধারা কয়লাশিল্পের কেন্দ্রস্থল ডনবাসে দোনস্ক ও লুহানস্ক শহরে দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী ছিটমহল ঘোষণা করে। যেহেতু রাশিয়াপন্থি যোদ্ধারা একের পর এক গ্রাম দখলে নিয়ে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে শহর বিতাড়ন করছিল, মেরিনাদের বাড়ি তখন তীব্র শেলিংয়ের লক্ষবস্তু হয়।

প্রতিদিন সকালে কিছু সময় ছাড়া বোমাবর্ষণ অনবরত চলত। সাময়িক যুদ্ববিরতির সময় প্রত্যেকে কিছুটা স্বাভাবিকতা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করত। এ সময়ে ইরিনা এবং ওলিনা স্কুলে যেত, তাদের মা মেরিনা বাজারে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু দুপুরের আগেই যুদ্ধ শুরু হত। অধিকাংশ রাতই তাদের তীব্র গোলাবর্ষণের মধ্য কাটাতে হতো।

এমনি এক ফাঁকে ইরিনা এবং ওলিনা বাড়ি ফেরার পথে অপ্রত্যাশিত ভাবে তারা ক্রসফায়ারের মধ্যে পড়ে যায়। তারা এক দোকানির কাছে গিয়ে আশ্রয় নেয়। দোকানি পরে তাদেরকে রাস্তা থেকে দূরে এক বাড়িতে নিয়ে রাখে। এ ঘটনার পরই মেরিনা তাদের বাড়ি ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ডনবাস অঞ্চলের এরকম দশটি পরিবার ছিল যারা একইরকম দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সংরক্ষিত অঞ্চলের কাছাকাছি এলাকায় বসবাস করতে যায়। মেরিনার মতো তারাও পুরনো বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের পরামর্শে এখানে আসে। এমনকি এক মহিলা জানান, ‘ইউক্রেনের মধ্য সবচেয়ে কম মূল্যে জীবনযাপন করা যায় এমন জায়গা’ লিখে তিনি গুগলে খোঁজ করেন। উত্তর আসে, ‘চেরনোবিলের কাছে’।

বিপর্যয়ের পর থেকে বিজ্ঞানীরা মাটি, গাছপালা এবং পশুপাখিদের ওপর তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পরীক্ষা করছেন, এমনকি সংরক্ষিত এলাকার বাহিরেও। বায়ুমণ্ডলে তেজস্ক্রিয়তা আর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নেই, বলছিলেন ভেলরি কাশপারভ, তিনি ইউক্রেনিয়ান ইনস্টিটিউট অব কালচারাল রেডিওলজির ডিরেক্টর। কিন্তু কিছু এলাকার মাটির দূষিত অবস্থা মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হতে পারে। কাশপারভ এবং তার দল সংরক্ষিত এলাকার বাহিরের গরুর দুধে অতিরিক্ত পরিমাণ সিজিয়াম-১৩৭ এর উপস্থিতি পেয়েছেন। ঘাসের মাধ্যমে শোষিত সিজিয়াম কণা গবাদি পশুর মধ্য ছড়িয়েছে।

এর গ্রহণের মাত্রা বৃহৎ পরিমাণে হলে মানবকোষ সমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এটা থাইরয়েড ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু কাশপারভ বলছিলেন এসব ঝুঁকি কিছু নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তার দল এমন হটস্পট নির্ধারণে কাজ করছেন, যাতে সংরক্ষিত এলাকার বাহিরে যারা বসবাস করছেন তারা কী ধরনের সম্ভাব্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন তা নির্ধারণ করা যায়।

এক মানচিত্রে স্টাচিয়ান গ্রাম দেখাচ্ছিলেন কাশপারভ যেখানে মেরিনার পরিবার বসবাস করে। এই গ্রামেই নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর থেকে সিজিয়াম-১৩৭ ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলছিলেন উৎপাদিত শাকসবজি, ছাগলের দুধে এসবের ঝুঁকি খুবই কম। কিন্তু এই এলাকায় বন্য খাদ্য সামগ্রী যেমন— মাশরুম অথবা বন্য ব্যারিজ এসবের মধ্যে তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকি নির্ণয়ে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।

মেরিনা বলেন, তেজস্ক্রিয়তার সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে তাকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন, তার পরিবার এসবের থেকেও ভয়াবহ কিছু থেকে পরিত্রাণ পেয়েছে, আর তা হল যুদ্ধ। তেজস্ক্রিয়তা হয়ত আমাদের ধীরে মেরে ফেলতে পারে, কিন্তু এখানে গুলি অথবা বোমা মেরে মারতে পারবে না।

এক উদ্যোক্তা

রাজধানী কিয়েভ থেকে গাড়িতে করে মাত্র দুই ঘণ্টারও কম রাস্তা। সংরক্ষিত এলাকা বরাবর এই ভুতুড়ে নগরে শুধু কিছু পরিবারই সুযোগের সন্ধানে আসেনি, আছেন কিছু উদ্যোক্তাও।

প্রতিদিন ভাদিম মিনজুক তার পালিত কুকুরকে নিয়ে সংরক্ষিত এলাকার শুরু নির্দেশকারী উঁচু কাটাতারের বেড়া বরবার হাটেন। পাখির কিচিরমিচির ও বনের নিস্তব্ধতা উপভোগের জন্য এটি তার প্রিয় একটি জায়গা।

এটা ফিনল্যান্ডের উত্তরে কিংবা আলাস্কাতে বসবাস করার মতো, বলছিলেন ভাদিম। এই এলাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব পুরো ইউক্রেনের মধ্যে সর্বনিম্ন, প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র দুই জন।

ভাদিম মিনজুক তার কারখানায়

পূর্ব ইউক্রেনের হরলিভকাতে তার আগের বাসস্থান, যেখানে প্রতি বছর মিলিয়ন ডলার ব্যবসা করা যেত। কিন্তু শহর যখন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হল, আর্টিলারির আনাগেনা বাড়ছিল, তখন তার এককালের বর্ধিষ্ণু কলকারখানা ও ওয়্যারহাউজগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। ভাদিম এখনও স্মরণ করেন একদিনের ঘটনা। বাড়ির পেছনের দরজার দিকে তিনি দেখেন বিদ্রোহী সেনারা বাগানের বেড়ার ডানদিকে ব্যারিকেড তৈরি করছে। মাঝেমধ্যে সৈন্যরা ১০০ মিটারেরও কাছাকাছি চলে যাচ্ছিল।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তার পরিবারকে শহরের বিভিন্ন সেনা চেকপোস্টে পরিচয়পত্র দেখাতে হয়েছে। তারা রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছে। এমনকি তাদের সামনে থেকেই বিদ্রোহীরা এক ব্যক্তিকে কার থেকে তুলে নিয়ে যায়, তারপর তাদের সামনেই হত্যা করে।

প্রথমে ভাদিম তাদের ছেলেমেয়েদের নিরাপদে সরিয়ে রাখে। তারপর তারাও একদিন এই অঞ্চল ত্যাগ করে। হরলিভকাতে যা কিছু ছিল, সবকিছু পেছনে ফেলে চলে যায় তারা। প্রথম কয়েক মাস সঞ্চয় থেকে খরচ করেছেন। ভাদিম পুরো ইউক্রেন চষে বেড়িয়েছেন যাতে পরিবারকে নিয়ে নতুন একটা জীবন শুরু করা যায়

এক আত্মীয় শুনেছিলেন চেরনোবিলে কিছু সম্পত্তি সস্তায় বিক্রি করা হবে। তিনি সরেজমিন দেখতে সেখানে যান, গিয়ে ডিডাককি নামক এক গ্রামে এক পরিত্যক্ত শস্যাগার দেখতে পান। সংরক্ষিত অঞ্চলের ঠিক ডানপাশে এবং রাজধানী কিয়েভ থেকে মাত্র ১১৫ কিলোমিটার দূরত্ব। সাথে সম্পত্তির মূল্যও সস্তা ছিল। সুতরাং এটা একটা বাস্তবসম্মত ব্যবসার সুযোগ ছিল। স্থানীয়রা এর লোহা ও কলকব্জা নিয়ে যাওয়ায় এর ছাদটা ফুটো হয়ে যাচ্ছিল। আমি মালিকের সাথে দেখা করে একটি চুক্তি করি।

১৪০০ ডলারে গুদাম ও আরও তিনটি বাড়ি মাত্র ২৪০ ডলারে কিনে ভাদিম সেগুলোকে বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করেন এবং ধাতু গলানোর ব্যবসা শুরু করেন। আমার কৌশল ছিল বর্জ্য থেকে তৈরি পণ্য দিয়ে ব্যবসা শুরু করা, বলছিলেন ভাদিম। প্রথম বছর সবচেয়ে কঠিন ছিল, কিন্তু গত দুই বছর আমার ব্যবসা ভালো হয়েছে।

এমনকি ভাদিম ডনবাসের প্রাক্তন সাত কর্মীকে আবার নিয়োগ করেন এবং তার একটি বাড়িকে হোস্টেলে রূপান্তর করে তাদের থাকার ব্যবস্থা করেন। আমি আমার জীবিকা নির্বাহ করি এবং কর্মীরা যেন ভালো সঞ্চয় করতে পারে এজন্য তাদেরও সহযোগিতা করি। আমি এই গ্রামের সর্বোচ্চ করাদাতা। পরিশেষে আমি ইউক্রেনীয়, এবং আমার দেশকে সহায়তা করতে চাই।

ভাদিম বলেন, মাঝেমধ্যে আমি তেজস্ক্রিয়তার কথাও চিন্তা করি। এমনকি তিনি তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপের জন্য হাত দিয়ে নড়াচড়া করা যায় এমন গিগার কাউন্টারও ক্রয় করেন। কিন্তু তিনি ভীত ছিলেন না। তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে বায়ুমণ্ডলে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা নিরাপদ পর্যায়ে আছে। সর্বোপরি আপনি যুদ্ধে যে ভয়াবহতা দেখেছেন তার তুলনায় তেজস্ক্রিয়তা কিছুই না।

তিনি এখানে জীবনকে উপভোগ করছেন। এটা শুধু যুদ্ধের অনুপস্থিতিই না, বিশেষ একধরনের শান্তিও বটে। মেরিনা এবং ভাদিম উভয়ের পরিবারই বলছিলেন কিভাবে এই শান্তপ্রকৃতি এবং পরিবেশে দীর্ঘসময় ধরে হাঁটাকে তারা ভালবাসেন। জীবন হয়ত খুবই সাধারণ এখানে কিন্ত কোনো পরিবারই এখান থেকে আর বড় শহরে যেতে চায় না। এমনকি যদিও এটার অর্থ এই হয় যে সেখানে প্রচুর বন্ধু ও সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে। আমি তেজস্ক্রিয়তাকে ভয় পাই না বলছিলেন মেরিনা। আমার বাচ্চাদের মাথার ওপর দিয়ে আর গোলা উড়ছেনা, এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। এই শান্ত পরিবেশে আমরা দুশ্চিন্তা ছাড়াই ঘুমোতে যাই এবং কোথাও আমাদের আর লুকিয়ে থাকতে হয় না। এভাবেই ইতি টানছিলেন মেরিনা।

ভাদিম বলেছিলেন, তার স্ত্রী ওলিনা কখনও কখনও অবরুদ্ধ অঞ্চলটির সাথে তাদের যুদ্ধবিধ্বস্ত আদি শহর হরলিভাকার তুলনা করেন। তবে এখানে একটি স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে— এখানে সংরক্ষিত অঞ্চলের প্রান্তে তিনি বিশ্বাস করেন, তাদের পরিবারের একটি ভালো ভবিষ্যৎ রয়েছে। আমার মনে হয়েছিল— আমরা সব হারিয়ে ফেলেছি, বলছিলেন ভাদিম।

অনুবাদক:তোফায়েল আহমেদ (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর), আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

সূত্র: বিবিস

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

;