বঙ্গবন্ধুর দর্শন নিয়ে নাইজেরিয়ার আবুজা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ হাইকমিশন নাইজেরিয়ার আবুজা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ও আন্তর্জাতিকতাবাদ’ বিষয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) আবুজায় বাংলাদেশ হাইকমিশন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানিয়েছে।
আলোচনায় পররাষ্ট্রনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও ভাবনা নিয়ে আলোকপাত করা হয়।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন আবুজা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল-রাশিদ নাল্লাহ এবং প্রথম সচিব ও ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বিদোষ চন্দ্র বর্মন।
উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল-রাশিদ নাল্লাহ তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু শুধু তার দেশের স্বাধীনতার জন্যই সংগ্রাম করেননি, তিনি বিশ্ব মানবতার জন্যও নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। উপাচার্য আরও উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন মহান ব্যক্তিত্ব এবং নেতা। তিনি বলেন, আফ্রিকাসহ বর্তমান বিশ্বে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আজও প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যপূর্ণ। প্রসঙ্গক্রমে তিনি ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলাদেশ ও নাইজেরিয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং দুদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বিদোষ চন্দ্র বর্মন তার বক্তব্যে বলেন, বিশ্ব শান্তি ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবন-দর্শন ও আদর্শের মূলমন্ত্র। পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর মূলনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’-এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের সকল মানুষের জন্য তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আন্তর্জাতিক শান্তি বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধু সর্বদা বিশ্বের নিপীড়িত, শোষিত ও অধিকার বঞ্চিত মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি অপরিহার্য। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মানবতার বিকাশের জন্য শান্তির প্রয়োজনীয়তা গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্বের সকল অঞ্চলের ঔপনিবেশিকতাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাকামী ও আত্ম-নিয়ন্ত্রণকামী মানুষের সংগ্রাম সমর্থন করেছেন এবং এক্ষেত্রে সমর্থন দিতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকেও উৎসাহ জুগিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু তার শান্তিবাদী দর্শনের জন্য উত্তর-ঔপনিবেশিক বিশ্বে অনুপ্রেরণার এক উৎস হয়ে রয়েছেন।
জাতিসংঘ, জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন, কমনওয়েলথ এবং ওআইসি-তে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ও অবদানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধু অব্যাহত অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার পাশপাশি বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি স্বরূপ আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, দুরূহ বাধা অতিক্রমে মানব জাতির অমিত সম্ভাবনার কথা বঙ্গবন্ধু তুলে ধরেছেন এবং বিশ্ব নেতাদেরকে মানব জাতির দুর্ভোগের কারণ না হয়ে মানব জাতির প্রগতির জন্য ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে বঙ্গবন্ধুর নীতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মি. বর্মন বলেন, সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া ও বহিঃবিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু তার সমর্থন অব্যাহত রেখেছিলেন। বর্মন, অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, বঙ্গবন্ধুর বাল্য জীবন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের কথাও সংক্ষিপ্ত ভাবে তুলে ধরেন।
আলোচনা শেষে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আবুজা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে নাইজেরিয়ার সরকার কর্তৃক অবমুক্ত স্মারক ডাকটিকেট হস্তান্তর করেন এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ও আন্তরিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে- অধ্যাপক ক্লিমেন্ট আলাওয়া, উপ-উপাচার্য, অধ্যাপক মালাম রেফুই আহমেদ বাবা, অধ্যাপক ইওয়েমা একেজোনা, অধ্যাপক উবোম বাসে, অধ্যাপক এম এ কাচা এবং অধ্যাপক স্টিফেন গার্বা উপস্থিত ছিলেন।
এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুসা ওলাওফে সভায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।