২০২০: করোনায় গৃহবন্দি, উৎসববিহীন, নিস্তব্ধতার পৃথিবী
গৃহবন্দি, উৎসববিহীন, নিস্তব্ধতার ধূসর পৃথিবী আস্ত একটি বছর পেরিয়ে চলেছে নতুন আরেকটি বছরে। করোনায় ২০২০ সালের পুরোটা দগ্ধ করে নতুন সংক্রমণের তীব্র ভীতিময় করোনার মারাত্মক পদধ্বনিতে আসছে নতুন বছর ২০২১ সাল।
চীনে উদ্ভূত করোনাভাইরাস দংশিত ২০২০ সালের শেষলগ্নে বিশ্বে আবার শোনা যাচ্ছে করোনার পদধ্বনি। যুক্তরাজ্যে দেখা মিলেছে আরো শক্তিশালী করোনার নমুনা। আতঙ্কের মাধ্যমে সূচিত বছরটি শেষও হচ্ছে করোনার নতুন ধরনের সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কায় আবর্তিত হয়ে। একদিকে ভ্যাকসিন আর অন্যদিকে নতুন সংক্রমণের দোলাচলে সূচিত হতে চলেছে নতুন বছর ২০২১ সাল।
প্রচলিত নিয়মে বছর শেষের সালতামামির সময় ২০২০ সালকে কেমনভাবে চিত্রিত করা হবে? বৈশ্বিক মহামারির বছর ছিল ২০২০ সাল। ছিল সঙ্গরোধ ও দূরত্বের বছরও। মন্দা, চাকরিহীনতা, হতাশা ও ভীতির নিঝুম বছর ছিল ২০২০ সাল।
প্রায় আট কোটি আক্রান্ত আর সাড়ে সতেরো লাখ মানুষের মৃত্যু চিহ্নিত ২০২০ সালের স্থবির পৃথিবীতে গৃহবন্দিত্বই ছিল নিয়তি। মানুষ মুক্ত প্রকৃতি ও গতিশীল পৃথিবীর আবহ এড়িয়ে নিরাপদ দূরত্বে থেকেছে প্রায়-পুরোটা বছরই। স্বাভাবিক জীবনের স্থবিরতার মতো স্তব্ধতায় আচ্ছন্ন ছিল উৎসবের সকল আয়োজন।
মানুষের জীবনে অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় উৎসবগুলোও পালিত হয়েছে অতীব সীমিত পরিসরে। বিশ্ব মুসলিমের মিলনমেলা হজ্ব সীমিতভাবে পালিত হয়েছে। ওমরাহ পালনেও মান্য করা হচ্ছে বিধি-নিষেধ।
বছরের শেষ প্রান্তে ২৫ ডিসেম্বরের বড়দিনের আয়োজনে খ্রিস্টান সম্প্রদায় চিরাচরিত ঐতিহ্যে উৎসবমুখর হতে পারেননি। পশ্চিমা জগতে ক্রিসমাসের উদ্দাম ও হুল্লোড় ছিল অনুপস্থিত। মার্কেট, শপিংপ্লেস লোকে লোকারণ্য হয় নি।
উপমহাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও অতীতের মতো বর্ণাঢ্য উৎসবময়তায় পূজা পালন করতে পারেননি। সীমিতভাবে পালিত হয়েছে ধর্মীয় উৎসবের মতোই বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক আয়োজন। তবে প্রতিটি আয়োজনেই কল্যাণ ও দুর্যোগ মুক্তির কাতর প্রার্থনা উচ্চারিত হয়েছে।
সভ্যতার আদি থেকেই যে উৎসব মিশে আছে মানুষের জীবনের সঙ্গে, করেনাকালে তাতে ছেদ পড়ছে। ধুসর পৃথিবীর ম্লান দৃশ্যপটে মৃত্যুর প্রলম্বিত মিছিল নস্যাৎ করেছে স্বাভাবিক জীবনশৈলী আর উৎসবের আবেদন। দমবন্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্ববাসীর আস্ত একটি বছর ২০২০ সাল কেটেছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় এবং সঙ্কট মুক্তির আশাবাদে।