কানাডার ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন ভেঙে চুরে দিল গাঁজা
প্রাকৃতিক এক নেশার নাম গাঁজা। শুরুটা চিকিৎসার জন্য হলেও মনুষ্য দরবারে এখন তার একটাই পরিচিতি। আর সেটা হলো নেশার বস্তু হিসেবে। সামাজিক মুল্যবোধ আর নেশার অচৈতন্যতার জন্য পৃথিবীর বহু দেশেই গাঁজাকে রাখা হয়েছে নিষিদ্ধ মাদকের তালিকায়। তবে তার ব্যতিক্রমও আছে বহু দেশে। যেমন কানাডার কথাই ধরা যাক। গাঁজা সেখানে বৈধ। গাঁজাকে স্বীকৃতি দিতে সেখানকার সাধারণ মানুষ আর করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবির মুখে গাঁজাকে বৈধতা দিতে বাধ্য হয় কানাডার সরকার। তবে এখন মনে হয় গাঁজা নিয়ে কানাডার ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে চলেছে।
২০১৮ সালে গাঁজাকে আইনি বৈধতার দেওয়ার পর তাতে বেশুমার অর্থ লগ্নি করতে থাকে বিনিয়োগকারীরা। কানাডার স্টক মার্কেটেও প্রথম সারিতে উঠে আসে গাঁজা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু এখন মনে হয় তাদের মোহ ভঙ্গ হতে শুরু করেছে। কারণ তারা ভেবেছিলো, আইনি স্বীকৃতি পেলে মানুষের মধ্যে গাঁজা সেবনের প্রবণতা আরও বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যারা গাঁজাকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে মাঠে লড়াই করেছিলেন এখন তারাও নিয়মতি গাঁজা সেবন করেন না। নতুনদের মধ্যেও গাঁজা টানার প্রবণতা তেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং গাঁজা আইনি স্বীকৃতি পাওয়ার পর অনেক নিয়মিত গাঁজা সেবনকারী এখন মাসের মধ্যে মাত্র কয়েকবারই গাঁজা টানছেন।
লাখ লাখ ডলারের বিনিয়োগ বাঁচাতে ইতিমধ্যে কানাডা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। তাদের বক্তব্য, তারা একরের পর একর জমিতে গাঁজার চাষ করেছেন। গাঁজাকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু সেই গাঁজার গাছ যখন বড় হয়েছে তখন সেখান থেকে মাদক উপযোগী পাতা আহরণ করতে পারছেন না বাজারে চাহিদা নেই বলে। এভাবে চলতে থাকলে তারা বিরাট লোকসানের মুখে পড়বেন তাতে কোন সন্দেহ নেই।
তবে কানাডা সরকারের সাফ কথা, তারা নেশাকে কেন্দ্র করে আইনি জটিলতা বন্ধ করতেই আইনে পরিবর্তন এনেছিলেন। এর অর্থ এই ছিল না যে সরকার নেশার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলো। গাঁজাকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেটাকে ব্যবসার চরম সুযোগ ভেবে ভুল করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। এখন সরকারের আর কিছুই করার নেই।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আসলেই এখানে সরকারের কিছু করার নেই। কারণ সরকার তো জনগণকে গাঁজা খেতে বাধ্য করতে পারে না। আর এই মন্দা কাটিয়ে কানাডার মাদক ব্যবসা আবার কোনোদিন উঠে দাঁড়াতে পারবে কিনা, সেটাও বলা যাচ্ছে না।