আকারে বাড়ে কৃষ্ণগহ্বর, সত্যি হলো হকিংয়ের তত্ত্ব
প্রায় ৫০ বছর আগে ১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে কিংবদন্তি পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং নিজের এক গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছিলেন সময়ের সাথে সাথে ক্রমেই বাড়ে কৃষ্ণ গহ্বর (Black Hole) এর আকার। তখন পর্যন্ত এটা শুধু তাত্ত্বিক একটা ধারনাই ছিল। এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ ছিল না। কিন্তু এবার ৫০ বছর পর এসে এই তত্ত্বের স্বপক্ষে প্রমাণ মিলেছে। জানা যাচ্ছে সময়ের সাথে সাথে সত্যিই আকারে বড় হতে থাকে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর। এটাই হকিংয়ের ‘ব্ল্যাক হোলস’ এরিয়া থিওরেম’।
আর হকিংয়ের এই তত্ত্বকে পরীক্ষামূলক প্রমাণ করলেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-র একদল জ্যোতির্বিজ্ঞানী। ২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘লাইগো’ অবজারভেটরিতে ধরা পড়া এক মহাকর্ষীয় তরঙ্গকে বিশ্লেষণ করেন বিজ্ঞানীরা। কয়েকশো কোটি বছর আগে ব্রহ্মাণ্ডে দূরপ্রান্তে দুটি ব্ল্যাক হোলের মধ্যে ভয়ঙ্কর সংঘর্ষের বার্তা ছিল সেই তরঙ্গে। সেই সংঘর্ষে দু’টি ব্ল্যাক হোল একটিতে পরিণত হয়েছিল। তার ফলে যে প্রচণ্ড আলোড়ন হয়েছিল ব্রহ্মাণ্ডে কয়েকশো কোটি বছর পর তারই বার্তা বয়ে এনেছিল ৬ বছর আগে পৃথিবীতে পৌঁছানো মহাকর্ষীয় তরঙ্গ।
এমআইটি-র গবেষকরা দেখেছেন, সেই বিপুল সংঘর্ষে প্রচন্ড শক্তিতে দুটি ব্ল্যাক হোল যুক্ত হয়ে যে একটি ব্ল্যাক হোল তৈরি হয়, তার আকার দুটি ব্ল্যাক হোলের চেয়ে বড়। তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে এমনটাই জানা যায়। আর এতেই প্রমাণ হয় স্টিফেন হকিংয়ের তত্ত্ব সত্য।
বিষয়টি প্রমাণে এত সময় লাগার পিছনে কিন্তু যুক্তিসঙ্গত কারণও রয়েছে। মহাকাশে হাজার কোটি বছর আগে ঘটা কোন ঘটনা জানতে হলে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সঠিকভাবে বিশ্লেষণের প্রয়োজন পরে। বিষয়টি অনেকটা এরকম যে, কোনও পুকুরের মাঝখানে ঢিল ছুড়লে যেমন পানিতে তরঙ্গের সৃষ্টি হয়ে তা ঢেউয়ের রূপে ধীরে ধীরে পাড়ে এসে পৌঁছায়, ঠিক তেমনই ব্রহ্মাণ্ডের কোথাও কোনও ঘটনা ঘটলে বা দুই মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে সংঘর্ষ হলে সেই ঘটনার রেশও ঢেউয়ের রূপে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের মাধ্যমে পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। আর সেটা বিশ্লেষণ করেই আমরা জানতে পারি হাজার কোটি বছর আগের কোন ঘটনা সম্পর্কে।