রাশিয়ার কাছ থেকে ভিয়েতনামকে সরাতে হ্যানয়ে বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভিয়েতনাম সফর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ককে সর্বোচ্চ কূটনৈতিক মর্যাদায় উন্নীত করেছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, বাইডেনের রবিবারের (১০ সেপ্টেম্বর) ওই সফরকে কেন্দ্র করে দুই দেশ এখন একে অপরের ব্যাপক কৌশলগত অংশীদার।
যুক্তরাষ্ট্র কয়েক মাস ধরেই ভিয়েতনামকে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার জন্য প্রস্তাব দিচ্ছে। কারণ, চীন-সম্পর্কিত ঝুঁকি থেকে ওয়াশিংটনের বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইন সুরক্ষিত রাখার কৌশল হিসাবে ভিয়েতনামকে একটি প্রধান অংশীদার দেশ হিসাবে দেখে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে, একটি দীর্ঘ এবং ঠান্ডা যুদ্ধযুগের অর্ধ শতাব্দী পর বাইডেন হ্যানয়ে পৌঁছেছেন।
বাইডেনের সম্মানে দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। ওই অনুষ্ঠানে স্কুলের ছাত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ওড়ানো বেয়নেটেড রাইফেল বহন করে বাইডেনকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।
আলোচনার সময় বাইডেনও ভিয়েতনামের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, তা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা দুই দেশের মধ্যে ৫০ বছরের অগ্রগতির চিহ্ন খুঁজে পেতে পারি। এই সম্পর্ক সংঘাত থেকে স্বাভাবিক হয়ে উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছেছে।’
ভিয়েতনামকে ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের মধ্যে হিমশীতল সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করতে হচ্ছে, কারণ দেশটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় পা রাখার চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে, সম্ভবত চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ চীনা কর্মকর্তারা আগামী সপ্তাহের মধ্যে ভিয়েতনাম সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ভিয়েতনামের কর্মকর্তা এবং কূটনীতিকরা বলেছেন, হ্যানয় সব পরাশক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।
রাশিয়ার সঙ্গে ভিয়েতনামের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার সময়ও হ্যানয় এ কথাই বলেছে।
রয়টার্স একটি নথি হাতে পেয়েছে, যেখানে জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, সাবমেরিন বিধ্বংসী বিমান ও হেলিকপ্টার, অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট মিসাইল সিস্টেম, ফাইটার জেটসহ ভারী অস্ত্র কেনার জন্য ভিয়েতনামকে রাশিয়ার সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
ওই নথি থেকে আরও জানা গেছে যে, একটি ঋণ চুক্তির জন্য কয়েক ধরে মাস হ্যানয়কে চাপ দিচ্ছে মস্কো।
ভিয়েতনামের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র নথিগুলোর বিষয়ে মন্তব্যের জন্য একাধিক অনুরোধের জবাব দেননি।
হ্যানয় যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক অস্ত্র সরবরাহকারীর সঙ্গে একই রকম আলোচনা করছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভিয়েতনাম ও রাশিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিরক্ষা বৈঠক হয়েছে।
বাইডেনের সঙ্গে বিমানে ভারতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের একটি গ্রুপ থেকে ভিয়েতনামে যাওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন ফিনার রবিবার সাংবাদিকদের বলেন, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীতকরণের মাধ্যমে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।
তিনি বলেন, এই পর্যায়ে ঘোষণা করার মতো কোনও অস্ত্র চুক্তি নেই।
কিন্তু ফিনার জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার অংশীদাররা ভিয়েতনামকে রাশিয়ার সামরিক সরবরাহ থেকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে। ভিয়েতনামের সম্পর্ক মজবুত করার মাধ্যমে হ্যানয়েকে মস্কোর উপর সামরিক নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে যুক্তরাষ্ট্র।