কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে বাইডেন
গাজা শাসনকারী ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান সংঘাত সমাধানে বাইডেন প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপ বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। বিশেষ করে গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের নারকীয় হামলার পর বাইডেন প্রশাসনকে জটিল কূটনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যার প্রভাব পুরো মধ্যপ্রাচ্যে পড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে যুদ্ধ। এর ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে এক ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মুখে পড়বেন বাইডেন। কারণ, এই সংঘাতে একদিকে যেমন তেলের বাজার অস্থিতিশীল হতে পারে। আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতিতে আটকে থাকা যুক্তরাষ্ট্রকে এখন মনোযোগ অন্যদিকে সরাতে হবে। তাই বলা যায়, কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বাইডেন প্রশাসন।
মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাইডেনের সফরের মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন প্রশাসনের সংহতির বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠকের কথা ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের।
কিন্তু গাজা উপত্যকায় হাসপাতালে ইসরায়েলের বোমা হামলার জেরে জো বাইডেনের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছেন আরব নেতারা। এবিষয়ে জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেন, যুদ্ধ বন্ধ করা ছাড়া এখন আর আলোচনা করে কোনো লাভ নেই।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, হাসপাতালে হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। ক্ষুব্ধ হয়ে মাহমুদ আব্বাস বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করে জর্ডান থেকে তাৎক্ষণিকভাবে রামাল্লায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিশর, জর্ডান ও তুরস্ক গাজার আল-আহলি আরব হাসপাতালে বিমান হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই মৃত্যুর জন্য হামাসকে দায়ী করেছেন।
আরব নেতাদের সঙ্গে বাইডেনের বৈঠক বাতিলকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কূটনৈতিক ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এই মুহূর্তে বাইডেনের ইসরায়েল সফর কঠিন করে তুলেছে।
এদিকে আল–আহলি আরব হাসপাতালে ইসরায়েলের হামলায় হতাহতের ঘটনায় বাইডেন দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে বলেছেন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি বাইডেনের সফর নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় বলেছেন, দীর্ঘদিনের মিত্র বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জন্য কঠিন কিছু প্রশ্ন অপেক্ষা করছে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও দাতব্য সংস্থাগুলো হাসপাতালে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানও হামলার নিন্দা জানাচ্ছেন। নিন্দা জানিয়েছেন পশ্চিমা দেশের অনেক নেতাও।
গাজায় হাসপাতালে হামলা চালিয়ে শত শত বেসামরিক নাগরিককে হত্যার ঘটনায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘হতভম্ব’। এ হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন তিনি।
গাজার আল–আহলি আরব হাসপাতালে ইসরায়েলের বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ জনে। গাজায় ২০০৭ সালের পর কোনো একটি হামলায় এটি সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা।