ঘূর্ণিঝড় সিয়ারানের আঘাতে ইতালিতে নিহত অন্তত ৬
ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলে তাণ্ডবের পর ইতালির মধ্য দিয়ে ঘূর্ণিঝড় সিয়ারান প্রবাহিত হওয়ায় সেটির প্রভাবে দেশটির মধ্য টাস্কানি শহরে অন্তত ছয় জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে আল-জাজিরা।
টাস্কানির গভর্নর ইউজেনিও জিয়ানি বলেছেন, উপকূলীয় শহর লিভোর্নো থেকে মুগেলোর অভ্যন্তরীণ উপত্যকায় প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে শুক্রবার (৩ নভেম্বর) ৬ জন মারা গেছে এবং নদীগুলোর বাঁধ ভেঙে গিয়ে অনেক শহর ও গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ইতালীয় বার্তা সংস্থা এএনএসএ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ফ্লোরেন্সের উত্তরে প্রাটো শহরের দুই জন বয়স্ক ব্যক্তিও রয়েছে।
অন্যদিকে, প্রবল বাতাসে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আলবেনিয়াতেও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
সব মিলিয়ে সিয়ারান ঝড়ে এখন পর্যন্ত ইউরোপজুড়ে মৃতের সংখ্যা ১৪ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানা গেছে।
ইতালীর নাগরিক সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার তিন ঘণ্টায় ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গভর্নর জিয়ানি বলেন, গত ১০০ বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানব প্ররোচিত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সিয়ারানের মতো ঝড়ের সময় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
সরকারের নাগরিক সুরক্ষা মন্ত্রী নেলো মুসুমেসি স্কাই টিজি ২৪-কে বলেছেন, ‘ইতালির আবহাওয়া আরও গ্রীষ্মমন্ডলীয় হয়ে উঠেছে।’
সিয়ারানের তাণ্ডবের কারণে ক্যাম্পি বিসেনজিওর ১৫০ জনসহ প্রায় ১৯০ জন বাসিন্দাকে তাদের বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে। কারণ, তাদের বাড়িগুলো প্লাবিত হয়েছিল এবং পার্ক করা গাড়িগুলো জলে অর্ধেক নিমজ্জিত হয়েছিল।
বাসিন্দা এনজা কারফাগনা রয়টার্স নিউজ এজেন্সিকে বলেন, ‘গত রাতে শুরুর দিকে এটা খুব বড় কিছু বলে মনে হয়নি, কারণ খুব কম বৃষ্টি হয়েছে। তারপর রাত ৯টার দিকে আমরা তাণ্ডব দেখতে পাই।’
সিয়ারানের কারণে ফ্লোরেন্স এবং মিলানের মধ্যে উচ্চগতির ট্রেন পরিষেবাগুলো স্থগিত করা হয়েছে এবং আনুমানিক ৪৮ হাজার লোক বিদ্যুৎহীন রয়েছে বলে জানিয়েছে ইতালির সরকার।
দেশটি ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলগুলোর সহায়তায় প্রাথমিকভাবে ৫ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করেছে।
সিয়ারানের প্রভাবে প্রবল ঢেউ বলকানের অ্যাড্রিয়াটিক উপকূলকেও ধাক্কা দেয় বলে জানা গেছে। এ সময় প্রবল বাতাস গাছ উপড়ে ফেলে এবং বহু বাড়ির ছাদ উড়িয়ে নিয়ে যায়।
বৈরি আবহাওয়ার কারণে ক্রোয়েশিয়ার দ্বীপগুলোর সঙ্গে সংযোগকারী ফেরি পরিষেবাগুলোও স্থগিত করা হয়।
ঝড় সিয়ারান আটলান্টিক থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রবল বৃষ্টি এবং প্রচণ্ড বাতাস সহযোগে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডে ভারী বন্যার সৃষ্টি করেছে।
প্রধানত ব্রিটানির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে ৫ লাখেরও বেশি ফরাসি পরিবার দ্বিতীয় দিনের জন্য বিদ্যুৎবিহীন ছিল। এখনও সেখানে বেশ কয়েকটি এলাকায় ট্রেন চলাচল এবং অনেক রাস্তা বন্ধ রয়েছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ শুক্রবার ব্রিটানির ঝড়বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন ।