গাজায় ইসরায়েলি হামলা: নিহত বেড়ে ৪০০০৫, শিশু ১৬৪৫৬

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বর্বর হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে হামলায় মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৪০ হাজার পাঁচ জনে। এর মধ্যে অন্তত ১৬ হাজার ৪৫৬ জন শিশু ও ১১ হাজার নারী রয়েছেন।

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার লাইভ আপডেট প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৬ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৫ জনে। এছাড়াও গত অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনের ৯২ হাজারেরও বেশি নাগরিক আহত হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, কমপক্ষে আরও ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছে। সে সংখ্যা গণনা করা গেলে মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেত।

আসুল মাতার নামের একজন ফিলিস্তিনি নাগরিক আল-জাজিরাকে বলেন, আপনি কি কল্পনা করতে পারেন ৪০ হাজার মানে কি? এটি একটি বিপর্যয়কর সংখ্যা, যা বিশ্ব কল্পনাও করতে পারে না। তা সত্ত্বেও, বিশ্ব প্রতিদিন, প্রতি মিনিটে এসব হত্যাকাণ্ড দেখছে, শোনছে। অথচ তারা নীরব হয়ে আছে। কিছুই বলছে না। আমরা শক্তিহীন। আমরা ক্লান্ত।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিহতের সংখ্যা ঘোষণার পরপরই বৃহস্পতিবার বিকেলে কাতারের রাজধানী দোহায় যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে নতুন দফায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু হয়। কাতার, মিশর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আলোচনায় ইসরায়েলের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছিল।

জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে দুই-তৃতীয়াংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, আজ বিশ্বের জন্য একটি ভয়ঙ্কর মাইলফলক চিহ্নিত করা হয়েছে। এই অকল্পনীয় পরিস্থিতি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তৈরি করেছে। যাদের যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব দেওয়ার পরও নিয়ম না মেনে তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। 

আল জাজিরার সংবাদদাতা হানি মাহমুদ যিনি গাজার দেইর এল-বালাহতে অবস্থান করছেন, তিনি জানান, ৪০ হাজার কেবল একটা তালিকা। এর বাইরে গাজা জুড়ে হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কেননা, এখনো অনেক মানুষ ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছেন, অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। যাদের তথ্য এখনো সংগ্রহ করা যায়নি। তাদের পরিবারের সদস্যরাও তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য জানে না।

বোমার তীব্রতা এতোই বেশি যে, যার কারণে অনেকে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে তিনি জানান।

এদিকে, ফিলিস্তিনের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত খান ইউনিসের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। নির্দেশের পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হামলার ভয়ে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি নাগরিক খান ইউনিস থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের ফুটপাথ ও রাস্তায় রাত্রিযাপন করতে হচ্ছে। খাদ্য ও পানির সংকটে তারা না খেয়ে দিন পার করছেন।

ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া তথ্যমতে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজা উপত্যকার মোট জনসংখ্যার ১.৮ শতাংশ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ৩০ বছরের কম বয়সী রয়েছে ৭৫ শতাংশ।

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী ক্রমাগত নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে গাজার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা।

এদিকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। তাদের এ প্রস্তাবকে লঙ্ঘন করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হামলা অব্যাহত রেখেছে। ক্রমাগত নৃশংস হামলায় কারণে এরই মধ্যে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক নিন্দার সম্মুখীন হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ৫ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আর ৯২ হাজার ৪০১ জন। এছাড়া বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। সংকট দেখা দিয়েছে খাদ্য ও পানির। ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।

অন্যদিকে হামাসের হামলায় এ পর্যন্ত ইসরায়েলের ১ হাজার ১৩৯ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া বন্দি রয়েছেন ২০০ -এর অধিক।