ট্রাম্পকে সতর্ক করল জার্মানি ও ফ্রান্স

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ড দখল করতে সামরিক শক্তি প্রয়োগের হুমকি ফিরিয়ে না নেয়ায় নবনির্বাচিত মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সতর্ক করেছে জার্মানি ও ফ্রান্স। জার্মানি, ফ্রান্স ও ডেনমার্ক মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের সদস্য।

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।

বিজ্ঞাপন

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ বলেছেন, ‘সীমানার অখণ্ডতার নীতি প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তা খুব ছোট বা খুব শক্তিশালী দেশ যাই হোক না কেন।’ শোলজ জোর দিয়ে বলেন, ‘ন্যাটো আমাদের প্রতিরক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার এবং আটলান্টিক মহাসাগর উপকূলীয় দেশগুলোর সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু।’ ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল ব্যারো বলেছেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে কখনই বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সার্বভৌম সীমান্তে আক্রমণ করতে দেবে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কি এমন এক যুগে প্রবেশ করেছি যেখানে আবারও শক্তিশালীদের টিকে থাকার নিয়ম দেখা দিচ্ছে? তাহলে এর উত্তর হবে- হ্যাঁ।’ ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাহলে কি আমাদের নিজেদেরকে ভয় ও উদ্বেগে কাবু হতে দেয়া উচিত, অবশ্যই না। আমাদের জেগে উঠতে হবে এবং নিজেদের শক্তি গড়ে তুলতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

এর আগে বুধবার জাঁ-নোয়েল ব্যারো ফ্রান্স ইন্টার রেডিওকে বলেন, ‘আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করেন যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ড আক্রমণ করবে কি না, তাহলে আমার উত্তর হবে- না।‘ জার্মানি ও ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইইউ-এর প্রধান দুই সদস্য, যাদের প্রায়ই এই জোটের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে অভিহিত করা হয়।
তবে ইইউ কীভাবে সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে তা অনুমান করা বেশ কঠিন। ইইউ-এর নিজস্ব কোনো প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেই এবং এর ২৭টি সদস্য দেশের বেশিরভাগই ন্যাটোর অংশ।

গত মঙ্গলবার ট্রাম্প আবারও তার গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছেন, আর্কটিক দ্বীপ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য 'গুরুত্বপূর্ণ'।
২০১৯ সালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম মেয়াদে গ্রিনল্যান্ড কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প। এরপর তিনি বারবারই এই ধারণা উত্থাপন করে আসছেন। ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে এক স্বাধীন সংবাদ সম্মেলনে তিনি গ্রিনল্যান্ড নিয়ে এই মন্তব্য করেন।

গ্রিনল্যান্ড বা পানামা খাল দখলের জন্য তিনি সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘না, আমি আপনাকে এই দুটির কোনোটির বিষয়েই আশ্বস্ত করতে পারছি না। কিন্তু আমি এটুকু বলতে পারি যে অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য আমাদের এগুলো প্রয়োজন।’ স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে গ্রিনল্যান্ডে মার্কিন রাডার ঘাঁটি রয়েছে।
ওয়াশিংটনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই এটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্প বলেন, দ্বীপটি চীনা ও রাশিয়ান জাহাজগুলোর অবস্থান চিহ্নিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেগুলো তার মতে ‘সর্বত্র ছড়িয়ে আছে।’ তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মুক্ত বিশ্বের সুরক্ষার কথা বলছি।’

ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন মঙ্গলবার ডেনিশ টেলিভিশনকে বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা গ্রিনল্যান্ডবাসীর’ এবং কেবল স্থানীয় জনগণই এর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারেন। তবে, তিনি জোর দিয়ে বলেন, ডেনমার্কের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাও প্রয়োজন।

গ্রিনল্যান্ডের পার্লামেন্ট সদস্য কুনো ফেনকার বিবিসিকে বলেছেন, তারা ট্রাম্পের কাছ থেকে কিছু 'জোরালো মন্তব্যের' জন্য প্রস্তুত ছিলেন, তবে দ্বীপের সার্বভৌমত্ব ও নিজেদের সবকিছু নিজেদেরই নিয়ন্ত্রণের থাকার আলোচনার ঊর্ধ্বে।’
গ্রিনল্যান্ডের শাসক জোটের অংশ সিউমুট পার্টির ফেনকার বলেন, ‘গঠনমূলক সংলাপ এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে পারস্পরিকভাবে লাভজনক অংশীদারিত্বকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ স্বাগত জানাবে।’

ডেনমার্ক ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করে একটি মুক্ত সহযোগিতার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেননি তিনি। মাত্র ৫৭ হাজার জনসংখ্যার দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডে স্বায়ত্তশাসন রয়েছে, তবে এর অর্থনীতি মূলত কোপেনহেগেন থেকে আসা ভর্তুকির ওপর নির্ভরশীল এবং এটি এখনও ডেনমার্কের অংশ। প্রায় ৮০ শতাংশ অঞ্চল তুষারাবৃত হলেও এই দ্বীপে বিরল খনিজ পদার্থের সবচেয়ে বড় মজুদ রয়েছে, যা ব্যাটারি এবং উচ্চ-প্রযুক্তির ডিভাইস তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ড্যানিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের জ্যেষ্ঠ আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক স্টেফেন ক্রেটজ গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুক থেকে বিবিসিকে জানান, তিনি যাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাদের বেশিরভাগই ট্রাম্পের সামরিক শক্তি ব্যবহার করে অঞ্চলটি দখল করার হুমকি শুনে ‘স্তম্ভিত’।