মসজিদের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষায় করণীয়
মসজিদ মুসলিম সংস্কৃতির অন্যতম নিদর্শন। মসজিদ নির্মাণ করা অনেক ফজিলতের কাজ। ইসলামে নামাজের অবস্থান হলো ঈমানের পর। আর ঈমানদাররা নামাজের জন্য আল্লাহর ঘর মসজিদ তৈরি করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষদিনের প্রতি এবং নামাজ কায়েম করেছে, জাকাত আদায় করে ও আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। তাদেরই পথ প্রাপ্তির আশা আছে।’ -সূরা তাওবা: ১৮
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহতায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।’ –সুনানে তিরমিজি: ২৯২
মসজিদ নির্মাণের প্রকৃত অর্থ হলো- মসজিদকে নামাজ, জিকির, তাসবিহ ইত্যাদির জন্য আবাদ রাখা। সে হিসেবে কোনো কাফের মসজিদ আবাদ করতে পারবে না এবং মোতায়াল্লি হতে পারবে না।
মসজিদের পবিত্রতা রক্ষায় কিছু বিধি-বিধান রয়েছে যা একজন মুমিনকে মেনে চলতে হয়। এসব বিধানের অন্যতম হলো-
১. একনিষ্ঠ নিয়তে, বিনয়ী হয়ে, কম্পিত হৃদয়ে মসজিদে প্রবেশ করা। কারণ আল্লাহতায়ালা মানুষের বাহ্যিক অবস্থার সঙ্গে অন্তরের পরিশুদ্ধতাও লক্ষ্য করেন। প্রিয় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘প্রকৃতপক্ষে সব কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ –সহিহ বোখারি: ১
২. পবিত্র পোশাক দেহ ও মন নিয়ে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তানেরা! তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সাজ-সজ্জা পরিধান করে নাও, খাও ও পান করো, তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করে না।’ -সূরা আরাফ: ৩১
৩. অজু করে মসজিদে প্রবেশ করা বিশেষত অজুর পানি যাতে মসজিদে না পড়ে খেয়াল রাখা। হজরত উসমান (রা.) বলেন, ‘আমি রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অজু করবে আর তা উত্তমরূপে করবে এবং পায়ে হেঁটে ফরজ নামাজ লোকদের সঙ্গে অথবা জামাতের সঙ্গে অথবা মসজিদে আদায় করবে, তার গোনাহ ক্ষমা করা হবে।’ -সুনানে নাসাঈ: ৮৫৬
৪. মসজিদে প্রবেশের সময় ডান পা দিয়ে এবং বের হওয়ার সময় বাম পা দিয়ে নির্দিষ্ট দোয়া পড়া। হজরত ফাতেমা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন তিনি ‘বিসমিল্লাহি আসসালামু আলা রাসূলিল্লাহি আল্লাহুম্মাগফিরলি জুনুবি ওয়াফতাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা’ বলে প্রবেশ করতেন। আর তিনি যখন বের হতেন তখন তিনি বলতেন, ‘বিসমিল্লাহি ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহি আল্লাহুমাগফিরলি জুনুবি ওয়াফতাহলি আবওয়াবা ফাদলিকা।’ -ইবনে মাজাহ: ৮১৭
অপর হাদিসে রয়েছে প্রবেশের সময়, ‘আল্লাহুম্মাফতাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা’ বলা আর বের হওয়ার সময় ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা’ বলা। -সহিহ মুসলিম: ৭১৩
৫. মসজিদে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা এবং বেশি সওয়াবের আশায় ইতেকাফের নিয়ত করা। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন সংবাদ দেবো না যা তোমাদের গোনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যাবে। তা হলো কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও পূর্ণরূপে অজু করা, মসজিদের দিকে অধিক পদক্ষেপ এবং এক নামাজ আদায় করে অন্য নামাজ প্রতীক্ষায় থাকা, এতে পাপরাশি মুছে যায়। -আল মুসতাদরাক লিল হাকিম: ৪৫৬
৬. মসজিদে শোরগোল না করা, মানুষকে ডিঙিয়ে সামনে না যাওয়া, আঙ্গুল না ফোটানো। হজরত হাসান বসরি (রহ.) হতে বর্ণিত, রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের জন্য এমন একটি সময় আসবে যখন মসজিদে পার্থিব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে, সুতরাং তোমরা তাদের সঙ্গে বসবে না, তাদের সঙ্গে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। -শোয়াবুল ঈমান: ২৭০১
৭. মসজিদে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে নিষিদ্ধ ওয়াক্ত না হলে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে দুই রাকাত নামাজ আদায় না করে বসবে না। - সহিহ মুসলিম: ১০৯৭
৮. আজানের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে প্রবেশ করা এবং প্রথম কাতারে যাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করা। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ যদি জানত আজান ও প্রথম কাতারের মধ্যে কী ফজিলত রয়েছে, আর তা লটারি ব্যতীত পাওয়া সম্ভব না হত, তা হলে তা পাওয়ার জন্য লটারি করত। আর যদি জানত মসজিদে আগে আসার মধ্যে কী ফজিলত তাহলে তার জন্য প্রতিযোগিতা করত। -সহিহ বোখারি: ৬১৫
৯. মসজিদে গমনকারীর প্রতি পদক্ষেপে একটি পূণ্য অর্জিত হয়, মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, একটি পাপ মোচন হয়। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নামাজের মধ্যে ওই ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি প্রতিদান লাভের অধিকারী যে অধিক দূর হতে পায়ে হেঁটে নামাজে আসে। -সহিহ মুসলিম: ৬৬২
১০. ইমামের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনা, সর্বাবস্থায় ইমামের অনুসরণ করা, জ্ঞানার্জনে আগ্রহী হওয়া কর্তব্য। হজরত রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি মসজিদে ভালো কিছু শিক্ষার জন্য অথবা শিক্ষা দেওয়ার জন্য গমন করল তার জন্য একটি পরিপূর্ণ হজের সাওয়াব রয়েছে। -ইমাম তাবরানি, মুজামুল কবির: ৭৪৭৩
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, যে ব্যক্তি তার মাথা ইমামের পূর্বে উঠিয়ে ফেলে তার কী এ ভয় নেই যে আল্লাহতায়ালা তার মাথাকে গাধার মাথা বানিয়ে দেবেন অথবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতি বানিয়ে দেবেন। -সহিহ মুসলিম: ৬৪৭
১১. মসজিদে তাড়াহুড়া না করে স্থির ও শান্ত হয়ে বসা। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা নামাজে আসবে অবশ্যই ধীরস্থিরতা বা শান্তভাব বজায় রাখবে। যেটুকু পাবে তা আদায় করবে আর যা পাবে না তা পূর্ণ করবে। -সহিহ বোখারি: ৫৯৯
১২. আজান হওয়ার পর মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েজ নেই। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মসজিদে থাকা অবস্থায় আজান হলো তারপর কোনো প্রয়োজন ছাড়াই মসজিদ থেকে বের হয়ে গেল অথচ আর ফিরে আসল না তাহলে বুঝে নেবে সে একজন মুনাফিক। -ইবনে মাজাহ: ৭৩৪
১৩. মসজিদের ওপর রাস্তা বানানো এবং এর ভেতর দিয়ে বারবার গমনাগমন করা জায়েজ নাই।
১৪. মসজিদে থুথু ফেলা গোনাহের কাজ। ইচ্ছাকৃতভাবে কিবলার দিকে পা বিছিয়ে দেওয়া মাকরূহ।
১৫. মসজিদে ভিক্ষা করা হারাম, যদি কেউ ভিক্ষা করেও ফেলে তাহলে তাকে ভিক্ষা দেওয়া ও হারাম।