২৭ বছর পর আলোকিত হলো কারাবাখের গ্র্যান্ড মসজিদ
২৭ বছর পর আলোকিত হলো কারাবাখের অগদাম গ্র্যান্ড মসজিদ। ২০ নভেম্বর আজারবাইজানের সেনাবাহিনী আর্মেনিয়ার দখল থেকে মুক্ত ‘অগদাম’ অঞ্চলে প্রবেশ করে আনুষ্ঠানিকভাবে এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এর পর নিজেদের অঞ্চল ‘অগদাম’ ফিরে পেয়ে আনন্দে ভাসছে আজারবাইজান।
এর ফলে ২৭ বছর আগে যেসব আজারি ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, এখন তারা ফিরে আসতে পারবেন। তাদের ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
‘অগদাম’ এলাকাটি আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে ৩৭৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। এটি নাগার্নো-কারাবাখের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। ১৯৯৩ সালে জেলাটি দখলে নিয়েছিল আর্মেনিয়া।
দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহের যুদ্ধের পর গত ১০ নভেম্বর রাশিয়ার তত্ত্বাবধানে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান নাগার্নো-কারাবাখে যুদ্ধ বন্ধে সম্মত হয়। চুক্তির বাস্তবায়ন তদারকি করতে ইতোমধ্যে নাগার্নো-কারাবাখ অঞ্চলে রুশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
দু’দেশের স্বাক্ষরিত চুক্তিতে বলা হয়েছে, আর্মেনিয়া দখলীকৃত ‘অগদাম, লাচিন ও কালবাজার’ এলাকা আজারবাইজানের কাছে হস্তান্তর করবে।
চুক্তি অনুযায়ী কারাবাখ অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আজারবাইজানের লাচিনকে করিডোর হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি পাবে আর্মেনিয়া। এর বিনিময়ে আর্মেনিয়াও আজারবাইজান ও নাখচিভান প্রজাতন্ত্রের মধ্যে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য করিডোর সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা ‘অগদাম গ্র্যান্ড মসজিদ।’ আর্মেনিয়ানদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পর এর কিছু অংশ দ্রুত সংস্কার শেষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নামাজের উপযোগী করা হয়েছে। রাতে আলো জ্বালানোর জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ ২৭ বছর পর আলোকিত হয়েছে মসজিদ প্রাঙ্গণ।
আজারী বাহিনী কর্তৃক এই অঞ্চল পুনরায় মুক্ত করার পরে, পাকিস্তানে অবস্থিত আজারবাইজানের রাষ্ট্রদূত ‘আলী আলিজাদেহ’ এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘আর্মেনিয়ানরা দখলের পর অগদাম গ্র্যান্ড মসজিদের অংশবিশেষ ধ্বংস করে ফেলে। তবে দীর্ঘ ২৭ বছর পর এটি আবারও সজীবতা ও জাঁকজমকতা ফিরে পেয়েছে।’
আজারবাইজানের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গ্র্যান্ড মসজিদটি উদ্ধারের পর এখানে আজান দেওয়া হয়েছে, আদায় করা হয়েছে জুমার নামাজও।
নাগার্নো-কারাবাখের সাতটি জেলার মধ্যে অগদাম একটি। অঞ্চলটি ১৯৯০ দশকের গোঁড়ার দিকে আর্মেনিয়ান বাহিনী দখল করে নেয়।
১১ নভেম্বর, আজারবাইজানের সেনাবাহিনী আর্মেনিয়ার সঙ্গে ভয়াবহ সংঘাতের অবসানের পরে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণার পরে এই অঞ্চলটি মুক্ত করে।
নাগার্নো-কারাবাখ যুদ্ধে শহরের অনেক ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। কিছু ভবন টিকে থাকে, যার মধ্যে মসজিদটি অন্যতম। স্থপতি কারবালাই সাফিখান কারাবাখী ১৮৬৮ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে মসজিদটি নির্মাণ করেন। পাথরের কলাম দিয়ে নির্মিত দ্বিতল মসজিদের উঁচু দু’টি মিনার ও গম্বুজযুক্ত ছাদ মসজিদের বিশেষ আকর্ষণ।
১৯৯২ সালে দখলের পর মসজিদের ছাদের একাংশ এবং চিলেকোঠা ভেঙে ফেলা হয়। মসজিদের জানালা, দরজা ও অভ্যন্তরীণ ভবন ধ্বংস করা হয়। তখনকার যুদ্ধে প্রাণ হারানো কয়েকশ’ মানুষের মরদেহ মসজিদে সমাহিত করা হয়।
২০১০ সালের জুন মাসে মসজিদ দেখতে আসা সাংবাদিক আন্দ্রেই গালাফিয়েভ জানিয়েছিলেন, অগদামের ধ্বংসাবশেষে দিনের বেলা ঘুরে বেড়ানো গবাদি পশুর খাদ্য ও গোবর দিয়ে মসজিদটির মেঝে পুরোপুরি নোংরা করা।’ তার ক্যামেরায় উঠানো ছবিতে মসজিদের মধ্যে গবাদি পশু দেখা যায়।
যদিও আজারবাইজানীয়রা বহু আগে থেকেই বলে আসছেন, আর্মেনিয়া মসজিদটি গরু এবং শূকরের আবাস্থল হিসেবে ব্যবহার করছে। ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২০১০ সালের নভেম্বরে নাগার্নো-কারাবাখ সরকার ঘোষণা করে, মসজিদ এবং এর আশেপাশের জায়গাটি পরিষ্কার করা হয়েছে। তারা এও ঘোষণা দেয়, অগদামের মসজিদের পাশাপাশি শুশার মসজিদগুলোও সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি ছিলো না।