দখলমুক্ত মসজিদ পরিদর্শনে যেয়ে কাঁদলেন আজেরি প্রেসিডেন্ট
দখলদার আর্মেনিয়ার কাছ থেকে সদ্য মুক্ত হওয়া আজারবাইজানের অগদাম প্রদেশ সফর করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। সম্প্রতি প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ও দেশটির প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মেহরিবান আলিয়েভ তার ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও আপলোড করেন।
পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায়, অগদাম গ্র্যান্ড মসজিদে সেনাবাহিনীর পোশাকে প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ প্রবেশ করছেন। এ সময় তার স্ত্রী মেহরিবান আলিয়েভ সঙ্গে ছিলেন। মসজিদে প্রবেশের সময় উভয়ে মসজিদের ফটকে চুমু খান, মসজিদে প্রবেশ করে কোরআনে কারিমের একটি কপি মসজিদে রাখেন এবং দোয়া করেন। এ সময় তারা আবেগে কেঁদে ফেলেন এবং আল্লাহতায়ালার দরবারে শোকরিয়া জ্ঞাপন করেন এলাকাটি দখলমুক্ত করার জন্য।
মসজিদটি দীর্ঘ ২৭ বছর পর দখলমুক্ত হয়েছে। ২০ নভেম্বর আজারবাইজানের সেনাবাহিনী আর্মেনিয়ার দখল থেকে মুক্ত অগদাম অঞ্চলে প্রবেশ করে আনুষ্ঠানিকভাবে এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
অগদাম আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে ৩৭৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। এটি নাগার্নো-কারাবাখের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। ১৯৯৩ সালে জেলাটি দখলে নিয়েছিল আর্মেনিয়।
দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহ যুদ্ধের পর ১০ নভেম্বর রাশিয়ার তত্ত্বাবধানে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান নাগার্নো-কারাবাখে যুদ্ধ বন্ধে সম্মত হয়। চুক্তির বাস্তবায়ন তদারকি করতে ইতোমধ্যে নাগার্নো-কারাবাখ অঞ্চলে রুশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা অগদাম গ্র্যান্ড মসজিদ। আর্মেনিয়ানদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পর মসজিদটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নামাজের উপযোগী করা হয়েছে। রাতে আলো জ্বালানোর জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
নাগার্নো-কারাবাখ যুদ্ধে শহরের অনেক ভবন ধ্বংস হয়েছে। তবে টিকে থাকা কয়েকটি ভবনের মধ্যে মসজিদটি অন্যতম। স্থপতি কারবালাই সাফিখান কারাবাখী ১৮৬৮ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে মসজিদটি নির্মাণ করেন।
১৯৯২ সালে দখলের পর মসজিদের ছাদের একাংশ এবং চিলেকোঠা ভেঙে ফেলা হয়। মসজিদের জানালা, দরজা ও অভ্যন্তরীণ ভবন ধ্বংস করা হয়।
২০১০ সালের জুন মাসে মসজিদ দেখতে আসা সাংবাদিক আন্দ্রেই গালাফিয়েভ জানিয়েছিলেন, ‘অগদামের ধ্বংসাবশেষে দিনের বেলা ঘুরে বেড়ানো গবাদি পশুর খাদ্য ও গোবর দিয়ে মসজিদটির মেঝে পুরোপুরি নোংরা করা।’ তার ক্যামেরায় উঠানো ছবিতে মসজিদের মধ্যে গবাদি পশু দেখা যায়।
আজারবাইজানীয়রা বহু আগে থেকেই বলে আসছেন, আর্মেনিয়া মসজিদটি গরু এবং শূকরের আবাস্থল হিসেবে ব্যবহার করছে। পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২০১০ সালের নভেম্বরে নাগার্নো-কারাবাখ সরকার ঘোষণা করে, মসজিদ এবং এর আশেপাশের জায়গাটি পরিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি ছিলো না।
এলাকাটি দখলমুক্ত হওয়ার পর মসজিদ পরিদর্শনের ভিডিও পোস্ট করে মেহরিবান আলিয়েভ জানান, আমরা আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায়ের পাশাপাশি বন্ধু রাষ্ট্রসমূহের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এ সময় আলিয়েভ আর্মেনিয়দের হাতে ধ্বংস হওয়া এলাকা দেখিয়ে বলেন, সমগ্র বিশ্বকে এসব দেখা উচিত। এখানে ভালো কোনো স্থাপনা নেই। সব কিছু আর্মেনিয়রা ধ্বংস করে ফেলেছে।
সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দুই দেশের মধ্যে নাগার্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে যুদ্ধ চলে আসছে বহু আগে থেকেই। ১৯৯১ সালে আর্মেনিয়া নাগার্নো-কারাবাখ দখল করলে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।
পরে চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ হলেও সর্বশেষ ২৭ সেপ্টেম্বর আবারও দুই দেশ যুদ্ধে জড়ায়। পরে আর্মেনিয়া ১০ নভেম্বর রাশিয়ার মধ্যস্থতায় আজারবাইানের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য হয়।
৪৪ এই যুদ্ধে বাকু ৩০০টির বেশি এলকা দখলমুক্ত করে।
চুক্তিটি আজারবাইজানের জয় ও আর্মেনিয়ার পরাজয়ের দলিল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।