আল আমীন মিশন: পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজে শিক্ষা প্রসারের নবদূত



মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম
পশ্চিমবঙ্গ আল আমীন মিশনের একটি ক্যাম্পাস, ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গ আল আমীন মিশনের একটি ক্যাম্পাস, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘সত্যিকারের শিক্ষক তারাই, যারা জাতিকে ভাবতে সাহায্য করেন। কাজের মাধ্যমে নিজের মমত্ববোধকে সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দেন।’ এমনই একজন আলোকিত মানুষ এম নুরুল ইসলাম। পশ্চিমবঙ্গের আলোচিত শিক্ষা সংগঠন ‘আল আমীন মিশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের ভাবতে শিখিয়েছেন, স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। তার দেখানো পথে জীবনে সাফল্য পেয়েছে হাজার হাজার মুসলিম শিক্ষার্থী। তিনি তাদের মাঝে স্বপ্নে বীজ বপন না করলে, ভারতের মতো দেশে কঠোর প্রতিযোগিতায় হারিয়ে যেত তারা। যথাযথ পরিবেশের অভাবে তাদের শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব হতো না।

‘একমাত্র শিক্ষাই পাড়ে মানুষকে আলোর দিশা দেখাতে’ মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী এম নুরুল ইসলামের শিক্ষা বিপ্লবে কারণে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজে এক নবজাগরণ তৈরি হয়েছে। তবে এখনও অনেক পথ বাকি।

সত্তরের দশকে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা যখন শিক্ষা থেকে যোজন যোজন কোষ দূরে, তখন আশির দশকের প্রায় শেষ দিকে মুসলিম সমাজকে শিক্ষার আলো দেখানোর জন্য এগিয়ে আসেন এম নুরুল ইসলাম। পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজের সর্বস্তরের বিস্তারের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন আল আমীন মিশন।

পশ্চিমবঙ্গ আল আমীন মিশনের খলতপুর ক্যাম্পাস, ছবি: সংগৃহীত

১৯৫৯ সালের ১৭ অক্টোবর হাওড়া জেলার খলতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। অত্যন্ত মেধাবী ও প্রখর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এম নুরুল ইসলাম ১৯৮৪ সালের মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় খলতপুর গ্রামে তিনি ‘ইন্সটিটিউট অফ ইসলামিক কালচার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। অবাক করা তথ্য হলো, সমাজের মানুষের ‘মুষ্টির চাল’কে আয়ের মাধ্যম ধরে স্থানীয় একটি কওমি মাদরাসার সহায়তায় ওই মাদরাসার ভবনে আবাসিক ছাত্রাবাস শুরু করেন। পরে ১৯৮৭ সালের ১ জানুয়ারি ইন্সটিটিউট অফ ইসলামিক কালচারের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়, ‘আল আমীন মিশন।’ বর্তমানে তিনি আল আমিন মিশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তার মতে, ‘আমি মনে করি, আল্লাহতায়ালা হলেন সব থেকে বড় পরিকল্পনাকারী। এই যে আল আমীন মিশন, এসব তারই পরিকল্পনার ফসল।’

গোটা ভারত বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র যখন ইংরেজি মাধ্যমের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে, সবাই ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে সেদিকে, আল আমীন মিশন তখন দেখিয়ে দিয়েছে বাংলা মাধ্যমে পড়েও বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো যায়। দেশে-বিদেশে কর্মে এবং গবেষণায় যুক্ত আল আমীনের ছেলে-মেয়েরাই তার উজ্জ্বল উদাহরণ।

আল আমিন মিশন থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৯ হাজার শিক্ষার্থী বেরিয়েছেন এবং তাদের বেশিরভাগই ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মানবসেবায় নিযুক্ত। তাদের মধ্যে চিকিৎসক ৪ হাজার, স্বাস্থ্যকর্মী ৪ হাজার, ইঞ্জিনিয়ার ৩ হাজারের বেশি। কেউবা আবার মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক, আবার কেউ গবেষক। অনেকেই উচ্চপদে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। এছাড়া ডব্লিউবিসিএস, নার্সিং, হোমিওপ্যাথি, আর্য়ুবেদ এবং ভেটেনারিতেও মিশনের প্রভূত সাফল্য রয়েছে। এখনও প্রতি বছর চারশ’র বেশি ছেলে-মেয়ে মেডিকেলে ভর্তি হচ্ছে। সাফল্যের হারের দিক থেকে এই ফলাফল ভারতের সংখ্যালঘু পরিচালিত সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সেরা। বর্তমানে আল আমীন মিশনের পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার। ৩ হাজার শিক্ষক আর শিক্ষাকর্মী এসব ছাত্র-ছাত্রীদের সন্তানসম স্নেহে পড়াশোনা করিয়ে থাকেন।

আল আমীন মিশনের প্রতিষ্ঠাতা এম নুরুল ইসলাম, ছবি: সংগৃহীত

মাত্র সাত জন দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি অনুন্নত এলাকায় পথ চলা শুরু আল আমীন মিশনের। ওই ছাত্রদের পড়াশোনার জন্য যথেষ্ট অর্থের দরকার ছিল, সেই অর্থ সংগ্রহ করতে এম নুরুল ইসলাম ‘ভিক্ষার ঝুলি’ নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন। জাকাতের টাকা ও কিছু সমাজসেবী মানুষের সাহায্যে চলতে শুরু করে আল আমীন মিশন। একটা সময় জাকাত ও সমাজসেবীদের সাহায্য পর্যাপ্ত না হওয়ায় এম নুরুল ইসলাম স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে অর্থাভাব মিটিয়েছেন।

প্রথম থেকেই এম নুরুল ইসলামের ইচ্ছা ছিলো, শুধু শিক্ষিত নয়; মানুষের মতো মানুষ তৈরি করতে হবে। আর পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজে শিক্ষাবিপ্লব ঘটাতে হলে, শুধু একটি আবাসিক মিশন যথেষ্ট নয়। তাই পশ্চিমবঙ্গের সব জেলায় শুরু হয় আল আমীন মিশনের বিভিন্ন শাখা তৈরি কাজ।

বর্তমানে রাজ্যের ১৭টি জেলায় ৭০টি শাখা ছড়িয়ে আছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও আসাম, ত্রিপুরা, মধ্যপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডের মতো অন্যান্য রাজ্যে এখন আল আমীন মিশন বিস্তৃত। তার নিরলস পরিশ্রম, স্বপ্নকে ছোঁয়ার অদম্য জেদ ও প্রখর দূরদৃষ্টির জন্য মাত্র ৩৭ বছরে আল আমীন মিশন একটি আলোচিত শিক্ষাবিপ্লবের নামে পরিণত হয়েছে। আল আমীন মিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন সমাজে শিক্ষার আলো জ্বেলে দেওয়ার জন্য। পশ্চিমবঙ্গের পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের জন্য আল আমীনের মতো আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দরকার। এখন অবশ্য অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হতে শুরু করেছে।

আল আমীন মিশনকে বলা হয়, ‘দরিদ্র মেধাবী ছাত্রের সাফল্যের সোপান।’ আল আমীন আছে বলেই মুসলিম সমাজে শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। প্রতি বছরের মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, জয়েন্ট এন্ট্রান্স, নিট, ডাব্লুবিসিএসের ফলাফল প্রমাণ করে আল আমীন মিশন মুসলিম সমাজকে কতটা এগিয়ে নিয়েছে। আল আমীন না থাকলে হাজার হাজার ছেলে-মেয়ের অস্তিত্ব থাকতো না, আল আমীন মিশন তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বলেই তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিষ্ঠিত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে। বাংলার মুসলিম সমাজে শিক্ষার প্রতি আসক্তি তৈরি করছে আল আমীন মিশন।

আল আমীন মিশনের অধীনে ১৯৯২ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট শিল্পপতি পতাকা শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার আলহাজ মোস্তাক হোসেনের সেবামূলক সংস্থা জি ডি চ্যারিটেবল সোসাইটির জি.ডি স্কলারশীপ পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া শিক্ষার কাজকে আরও বেগবান করতে ১৯৯৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের মাওলানা আজাদ এডুকেশন ফাউন্ডেশন ৪৫ লাখ, ২০০৩ সালে প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক মৃণাল সেন মঞ্জুরীকৃত এমপি ল্যাডস ফান্ড ৮৮ লাখ টাকা দেয়। এভাবেই মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় মিশনের কাজ এগিয়ে চলছে।

দিনের পর দিন একই পোশাকে থেকে কোনোরকম পারিশ্রমিক ছাড়া কাজ করে যাচ্ছেন এমন নুরুল ইসলাম। মিশনের উত্তরণের জন্য জীবনে চাকরি করার ইচ্ছে ছিল না। তবুও ফান্ডের কথা ভেবে ১৯৯১ সালে মিশনের কাছেই আসন্ডা আদর্শ শিক্ষা সদনে চাকরি নেন। কিন্তু বেতনের টাকাটা জমা হতে থাকে মিশনের ফান্ডে।

আল আমীন মিশনের বর্ধমান ক্যাম্পাস, ছবি: সংগৃহীত

২০০১ সালে নানির দেওয়া জায়গায় স্থায়ীভাবে মিশনের জন্য একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। পরে মিশনের কাজ সম্প্রসারণ করতে বিভিন্ন সময়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের মাইনুদ্দিন আহমেদ, সাজাহান বিশ্বাস, বীরভূমের হজরত দাতা মাহবুব শাহ ওয়ালী (রহ.) ওয়াকফ স্টেট, পশ্চিমবঙ্গ ওয়াকফ বোর্ড, বেঙ্গালুরুর সাদাতুল্লাহ খান, বিখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এ.কে. জালালউদ্দিন, মৃণালকান্তি দুয়ারী, কেন্দ্রীয় সরকারের ফ্রি কোচিং স্কিম ফান্ড, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, সোলেমান মোল্লা, আব্দুর রহমান, এস এম আনোয়ার, খলিলুর রহমান, শওকত আলী, হারুন রসিদ, মুকতার আলম, তাবারক হোসেন মিস্ত্রি, আজিজুর রহমান মোল্লা ও মারুফ-ই-ইলাহীসহ অনেক সমাজ ও শিক্ষাদরদী মানুষের সাহায্য ও সহযোগিতা পেয়েছে মিশন। এভাবে সমাজের অসংখ্য সহৃদয় শিক্ষানুরাগী, শুভানুধ্যায়ীরা আল আমীনের সঙ্গে আছেন। যারা বাংলার পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজকে বিকশিত করার জন্য সবসময় চিন্তা করেন ও অকৃপণভাবে বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত।

২০১৫ সালে শিক্ষাক্ষেত্রে রাজ্যজুড়ে বিশেষ অবদানের জন্য আল আমীন মিশনকে ‘বঙ্গভূষণ সম্মাননা’য় সন্মানিত করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। একই মঞ্চে বঙ্গবিভূষণ সম্মাননায় ভূষিত হয় রামকৃষ্ণ মিশন ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ। সরকারি দু’টি কমিটিতে আল আমীন মিশন প্রতিনিধিত্বও করছে। এর আগে আল আমীন মিশন টেলিগ্রাফ স্কুল অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স পায় ২০০২ সালে, ২০০৯ সালে পায় বেগম রোকেয়া পুরস্কার।

২০২০ সালেও মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, জয়েন এন্ট্রান্স ও নিট পরীক্ষায় আল আমীন মিশনের শিক্ষার্থীরা নজরকাড়া সাফল্য অর্জন করেছে। এমন কোনো বছর আর পরীক্ষা নেই- যেখানে রাজ্য মেধা তালিকায় আল আমীনের শিক্ষার্থী থাকে না। প্রতিবছর মিশনের ছাত্র-ছাত্রীদের নিট পরীক্ষার ফলাফল মানুষের নজর কাড়ে। ২০২০ সালেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। নিটে ৫৬৫ নম্বরের ওপর পেয়েছে ৩২০ জন ছাত্র-ছাত্রী। আল আমীন মিশন থেকে এ বছর সর্বভারতীয় স্তরে সর্বোচ্চ র‍্যাঙ্ক হয়েছে ৯১৬। গোটা ভারতে ১৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এ বছর নিট পরীক্ষা দিয়েছিল, তন্মধ্যে ৯১৬ র‍্যাঙ্ক করে মিশনের মুখ উজ্জ্বল করেছে জিসান হোসেন।

আল আমীন মিশনের একটি প্রতিষ্ঠান, ছবি: সংগৃহীত

যেখানে সত্তরের দশকে মুসলিম সমাজের ছাত্ররা ডাক্তার তো দূরের কথা উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়তে পারবে কিনা সন্দেহ ছিল, সেখান এখন প্রতি বছর আল আমীন থেকে ৩০০-৪০০ জন ডাক্তার তৈরি হচ্ছে। এর থেকে আনন্দের খবর আর কি হতে পারে? বিগত ৩-৪ বছর থেকে ডাক্তারের মোট আসনের ১৫-২০ শতাংশ আল আমীন মিশনের ছেলে-মেয়েরা লাভ করছে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের এমন কোনো হাসপাতাল পাবেন না, যেখানে মিশনের ছাত্র-ছাত্রী নেই।

আল আমীন মিশন পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজকে আলোর দিশা দেখিয়েছে। এখন বাংলায় প্রতিটি মা-বাবা চায়, তাদের সন্তান যেন আল আমীনে পড়তে পারে। এম নুরুল ইসলামসহ আল আমীন মিশনের একান্ত চাওয়া, পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজ শিক্ষিত হয়ে নিজের মেরুদণ্ড শক্ত করে দাঁড়াক। এ জন্য তার মতো আরও অনেক মানুষ দরকার সমাজে।

নাম পরিবর্তনের পর ৩৪ বছর বহু গৌরবজনক অধ্যায় পেরিয়ে এসেও আল আমীন মিশনের কোনো লোগো ছিল না। ২০২০ সালের শেষদিকে মিশনের লোগো বানানো হয়েছে। হয়েছে মিশনের নিজস্ব অ্যাপ। করোনার সময়েও মিশন পঠন-পাঠন চালু রেখেছে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে। মিশনের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা গড়ে প্রায় ৭০ শতাংশ বেতন পাচ্ছেন গত এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত। এভাবে আল আমীন মিশনকে এগিয়ে নিচ্ছেন এম নুরুল ইসলাম ও তার সঙ্গিরা।

   

হজযাত্রীদের সেবায় সৌদি ঐতিহ্য



রাহাফ জামবি
অতীতে হজযাত্রীরা দীর্ঘসময় নিয়ে জাহাজে করে আসতেন জেদ্দায়, ছবি: সংগৃহীত

অতীতে হজযাত্রীরা দীর্ঘসময় নিয়ে জাহাজে করে আসতেন জেদ্দায়, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ষাটের দশকে বেশিরভাগ মানুষ পবিত্র হজপালন করতে আসতেন জলপথে অর্থাৎ জাহাজে। কোনো হজযাত্রীর জেদ্দাবন্দরে পৌঁছাতে চার-পাঁচ মাস সময় লেগে যেত। জেদ্দায় আসার পরে চড়তে হতো মক্কার বাসে। এ সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের যাত্রার সঙ্গী হতেন একজন মুতাওয়িফ।

মুতাওয়িফ হলেন একজন গাইড, হজযাত্রীদের সেবা প্রদানকারী। তিনি মক্কা-মদিনায় হজযাত্রীদের নানাভাবে, নানাক্ষেত্রে সহায়তা করেন এবং তাদের যত্ন নেন, আবাসান ও খাবারের ব্যবস্থা করেন। ঐতিহ্যগতভাবে একজন মুতাওয়িফ পারিবারিকভাবে দায়িত্বটি পালন করতেন এবং এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এভাবেই রীতিটি হস্তান্তরিত হতো। একসময় এই অতীত রীতি ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।

রিয়াদের বাসিন্দা হায়াত ইদ একজন সাবেক মুতাওয়িফ। তিনি অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, এ সময়টাতে তিনি তার সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরে, বাড়িতে ধূপ জ্বালিয়ে দূর থেকে আসা হজযাত্রীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত থাকতেন।

ইদের দাদা একসময় হজযাত্রীদের আবাসনের ব্যবস্থা করে দিতেন এবং সেগুলো নিজেই পরিষ্কার করতেন। তিনি হজযাত্রীদের সহায়তা দেওয়ার জন্য সুপারভাইজার এবং অনুবাদক নিয়োগ করতেন। পরে এ দায়িত্ব বর্তায় তার ছেলে ইদের বাবার হাতে।

হায়াত ইদের বাবা জামিল আবদুর রহমান ইদ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হজযাত্রীদের ‘শায়খ’ (শায়খ একটি সম্মানসূচক পদবি। এটি সাধারণত ধর্মীয় শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো। তবে সৌদি আরবে কোনো বিষয়ে অভিজ্ঞদের পদবি হিসেবেও শায়খ ব্যবহৃত হয়।) ছিলেন বলে জানান তিনি। জনসাধারণের মাঝে মুতাওয়িফদের শায়খ হিসেবেই পরিচিতি ছিল।

ইদ পরিবার বংশ পরম্পরায় হাজিদের সেবা করে আসছেন, ছবি: সংগৃহীত

হায়াত ইদ বলেন, ‘আমার দাদার পাশাপাশি দাদীও মুতাওয়িফ ছিলেন। আমার দাদা ছিলেন ‘জাভার শায়খ’ অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়া থেকে আগত হজযাত্রীদের সেবা করতেন তিনি। আমার দাদা-দাদি মারা যাওয়ার পর আমার বাবা মুতাওয়িফের পদ গ্রহণ করেন।’

যাট ও সত্তরের দশকের সেই দিনগুলোর কথা মনে করে ৫০ বছর বয়সী ইদ বলেন, হজযাত্রীরা তার পরিবারকে চিঠি পাঠাতেন যেন তাদের আবাসনের সুযোগ হয়। হজযাত্রীদের জন্য ঈদের সময় বাড়তি খাবারেরও প্রস্তুতি নিত তার পরিবার।

শায়খরা হজযাত্রীদের হজের আচার-অনুষ্ঠান এবং তাদের কী করা উচিত সেসব বুঝিয়ে দিতেন। তাদেরকে মক্কা এবং অন্যান্য স্থানে নিয়ে যাওয়া এবং সঙ্গে করে বাড়ি ফিরে আনার দায়িত্ব ছিল তাদের।

এ সময় তার ভাই আদেল ইদ বলেন, মুতাওয়িফের ভূমিকা অতীতে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান ছিল কিন্তু এখন এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকায় পরিণত হয়েছে।

হজযাত্রীদের খাবারের প্রস্তুতি, ছবি: সংগৃহীত

প্রত্যেক মুতাওয়িফকে তাদের সামর্থ্যের ভিত্তিতে নির্দিষ্টসংখ্যক হজযাত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হত। কেউ মাত্র ১০০ জনের দায়িত্ব নিত, আবার অনেকে ১ হাজার জনেরও দায়িত্ব নিতে পারত। তবে তাদের অবশ্যই হজযাত্রীদের ভাষা বোঝার জন্য বা তাদের সঙ্গে কথা বলতে দোভাষী নিয়োগ দিতে হত।

তিনি বলেন, প্রত্যেক মুতাওয়িফ একাই হজযাত্রীদের সেবা করতে পারতেন। তারা নির্দিষ্ট এলাকার হজযাত্রীদের সুষ্ঠুভাবে সেবা প্রদানের জন্য সেসব দেশে ভ্রমণ করতেন এবং তাদের বিভিন্ন বিষয়গুলো শিখে আসতেন। তাদের খাদ্যাভ্যাস, রুচি, আচার-আচরণ ও ভাষা রপ্ত করাও ছিল একজন মুতাওয়িফের বিশেষ গুণ।

ইদ পরিবার ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা হজযাত্রীদের সহায়তা করত। তাই তারা মালয় ভাষা এবং তাদের মেহমানদের পছন্দের মশলা এবং খাবার সম্পর্কে শিখেছিলেন, যেন তারা হজযাত্রীদের যতটা সম্ভব মক্কাকে নিজের বাড়ি অনুভব করাতে পারেন।

একইভাবে ৪৬ বছর বয়সী উইজদান আবদুর রাজ্জাক লুলু বুকাস উত্তরাধিকারসূত্রে মুতাওয়িফের পেশা পেয়েছেন। তিনি মালয় ভাষায় সাবলীল ছিলেন। তার বাবা এবং দাদার কাছ থেকে মালয় ভাষা রপ্ত করেন তিনি।

১৯৯৩ সালে হজযাত্রীদের সঙ্গে আবদুর রাজ্জাক লুলু বুকাস, ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, কিছু জাতীয়তা বা দেশের ভাষা অন্যদের চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং বলে মনে হয়। এক্ষেত্রে আমরা সে দেশের অনুবাদক নিয়োগ দিই। উদাহরণস্বরূপ, আমরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হজযাত্রীদের সেবাপ্রদানের ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলি। কিন্তু চীনা ভাষা কঠিন, তাই আমরা চীনা যাত্রীদের জন্য একজন দক্ষ অনুবাদক নিয়োগ দিয়েছি।

বুকাস বলেন, কিছু হজযাত্রী ঈদুল আজহায় মুতাওয়িফকে উপহার দেওয়ার জন্য উপহার হিসেবে সোনা বা মুক্তা নিয়ে আসতেন। তার বাবা, আবদুল হান্নান লুলু বুকাস হজযাত্রীদের কাছ থেকে অনেক উপহার পেয়েছেন বলে তার নামের সঙ্গে লুলু যোগ করেছেন যার অর্থ মনিমুক্তা।

মুতাওয়িফ থাকা অবস্থায় ঘটা এক অবিস্মরণীয় পরিস্থিতির বর্ণনা করেন বুকাস। তিনি একজন গর্ভবতী নারী হজযাত্রীর কথা বলেন, যিনি হজে এসে বাচ্চা জন্ম দিয়েছিলেন। তিনিই তখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং ওই নারী নিরাপদে সন্তান জন্ম দেন।

বুকাস বলেন, তিনি বছরের পর বছর ধরে হজের বহু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তবে বর্তমান সময়ে বেশ ভালোই পরিস্থিতির পরিবর্তন দেখেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, অতীতে এবং আধুনিক সময়ের হজের মধ্যে পার্থক্য হলো- যাতায়াত ও আবাসনের অসুবিধা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগে কয়েক মাস সময় লেগে যেত। যা এখন মাত্র ঘণ্টায় সমাধান হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সৌদি সরকারের প্রশাসনিক সুবিধার বিষয়টির ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

আরব নিউজ থেকে অনুবাদ আসমা ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম

;

সৌদিতে আরও এক বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি মৌসুমে হজ পালন করতে গিয়ে মো. মোস্তফা (৮৯) নামে আরও এক হজ যাত্রী মারা গেছেন। শনিবার (১৮ মে) মক্কায় মারা যান তিনি।

রোববার (১৯ মে) রাত ২টার হজ পোর্টালের আইটি হেল্প ডেস্কের প্রতিদিনের বুলেটিন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে, গত বুধবার (১৫ মে) চলতি হজ মৌসুমে সৌদি আরবের প্রথম বাংলাদেশি এক হজযাত্রী মারা যান। মো. আসাদুজ্জামান নামের ওই ব্যক্তি মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন।

এ দিকে পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত (১৮ মে রাত ১টা ৫৯ মিনিট) সৌদি পৌঁছেছেন ২৮ হাজার ৭৬০ জন হজযাত্রী। মোট ৭২টি ফ্লাইটে তারা সৌদিতে পৌঁছান। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার ৭৪৭ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী ২৫ হাজার ১৩ জন। এখন পর্যন্ত ৮১ হাজার ৮৬২টি ভিসা ইস্যু করা হয়েছে।

হজ সম্পর্কিত সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এয়ারলাইন্স, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হজ অফিস ঢাকা এবং সৌদি আরব সূত্রে এ তথ্য জানিয়েছে হেল্পডেস্ক।

হেল্প ডেস্কের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত মোট ৭২টি ফ্লাইটের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ২৮টি, সৌদি এয়ারলাইনসের ২৬টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।

হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর গত মধ্যরাত পর্যন্ত ৮১ হাজার ৮৬২ জন হজযাত্রীর ভিসা ইস্যু হয়েছে। সে হিসেবে এখনো ৩ হাজার ৩৯৫ জন হজযাত্রীর ভিসা হয়নি। সর্বশেষ শনিবার (১৮ মে) মো. মোস্তফা নামের ৮৯ বছর বয়সী হজযাত্রী মক্কায় মারা যান।

;

নিবন্ধিত কোনো হজযাত্রী হজপালনে বঞ্চিত হবেন না



মুফতি এনায়েতুল্লাহ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
হজ ক্যাম্পে হজযাত্রীদের একাংশ, ছবি: বার্তা২৪.কম

হজ ক্যাম্পে হজযাত্রীদের একাংশ, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নিবন্ধিত কোনো হজযাত্রী হজপালনে বঞ্চিত হবেন না বলে আশাবাদী বাংলাদেশ হজ অফিসের পরিচালক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান।

ভিসা না হওয়া হজযাত্রীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। তবে বাংলাদেশ হজ অফিসের পরিচালক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, চলতি হজ মৌসুমে নিবন্ধিত সবার ভিসা হবে বলে আমি আশাবাদী। কয়েকটি এজেন্সির হজযাত্রী নিয়ে জটিলতা হচ্ছে, তার অর্ধেকই ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে। বাকি কাজ সমাধানের পথে।

জিলহজ মাসে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে ৯ মে শুরু হওয়া হজফ্লাইট শেষ হবে ১০ জুন। এই সময়ের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গাইডসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ১১৭ জন। ইতোমধ্যে ২৮ হাজার ৪ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। ৮২ হাজার ১০০ জনের ভিসা ভিসা হয়েছে। এখনও বেসরকারিভাবে নিবন্ধিত ৩ হাজার ৩৩৬ জনের ভিসা হয়নি।

মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, পরিচালক, হজ অফিস, ছবি: বার্তা২৪.কম

জানা গেছে, যথাসময়ে ভিসার আবেদন না করায় ওয়ার্ল্ডলিঙ্ক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (লাইসেন্স ৫৭০, যাত্রী সংখ্যা ২৮৬), আনসারি ওভারসিস (লাইসেন্স ৬০১, যাত্রী সংখ্যা ২৬০), আল রিসান ট্রাভেল এজেন্সি (লাইসেন্স ৬৭২, যাত্রী সংখ্যা ৪৪৪), মিকাত ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস (লাইসেন্স ১০২৫, যাত্রী সংখ্যা ৩৭৫), নর্থ বাংলা হজ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (লাইসেন্স ১০৮৬, যাত্রী সংখ্যা ২৬০), হলি দারুন নাজাত হজ ওভারসিস (লাইসেন্স ১৪৬২, যাত্রী সংখ্যা ২৫০) কে ধর্ম মন্ত্রণালয় শোকজ করে। এসব এজেন্সির মাধ্যমে ১ হাজার ৮৭৫ জনের চলতি বছর হজে যাওয়ার কথা রয়েছে।

আর আল রিসান ট্রাভেলস এজেন্সির নিবন্ধিত হজযাত্রীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কারও ভিসা না করায় বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুস সালাম মিয়ার দেশত্যাগ স্থগিত ও তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আল রিসান ট্রাভেলস এজেন্সিসহ অভিযুক্ত এজেন্সির মালিকদের নিয়ে আমরা বসে, পয়েন্ট পয়েন্ট ধরে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করেছি। ইতোমধ্যে হলি দারুন নাজাত হজ ওভারসিস, ওয়ার্ল্ডলিঙ্ক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এবং মিকাত ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের হজযাত্রীদের ভিসা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অন্যদেরও হয়ে যাবে। নিবন্ধিত কোনো হজযাত্রী হজপালন থেকে বঞ্চিত হবেন না বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এমন আশাবাদী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে হাব সভাপতি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব অংশে যে পরিমাণ অর্থ প্রেরণ করা দরকার এজেন্সিগুলো তা পাঠিয়েছে। আর যতটুকু সমস্যা রয়েছে, আশা করি তা সমাধান করা যাবে।

এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম, ছবি: বার্তা২৪.কম

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আল রিসান ট্রাভেলস এজেন্সি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুস সালাম মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি এবার হজে কোনো লোক পাঠাইনি। আকবর হজ গ্রুপের মুফতি লুৎফর রহমান ফারুকী তার লাইসেন্সে সমস্যা হওয়ায় আমার লাইসেন্স ব্যবহার করে ৪৪৮ জন হজযাত্রী পাঠাচ্ছে। চলতি সমস্যা নিয়ে হাব সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে মুফতি লুৎফর রহমান সৌদি থেকে ফোনে কথা বলেছেন, তিনি আশ্বস্থ করেছেন; আজকালের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ জনের ভিসা হয়ে যাবে। আর আগামীকাল বা পরশুর মধ্যে সবার ভিসা হয়ে যাবে। তিনি মদিনার বাড়ি ভাড়া করেছেন, মক্কার বাড়িও ভাড়া হওয়ার পথে।’

;

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগমুহূর্তে ছেলের খুনিকে ক্ষমা করলেন বাবা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আল হুমাইদি আল হারবি, ছবি: সংগৃহীত

আল হুমাইদি আল হারবি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মৃত্যদণ্ড কার্যকরের আগ মুহূর্তে ছেলের খুনিকে ক্ষমা করে দিলেন বাবা। শেষ সময়ে জন্মদাদা বাবার এমন উদারতা দেখে উপস্থিত কর্মকর্তারা হতবাক হয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে সৌদি আরবে। খবর গালফ নিউজের।

আল হুমাইদি আল হারবি নামের ওই বাবা হঠাৎ করে দণ্ড কার্যকরের স্থানে যান। সেখানে গিয়ে ঘোষণা দেন, ছেলের হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন তিনি। ওই হত্যাকারীর দণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি নেওয়ার আগে আল হুমাইদি আল হারবির কাছে একাধিকবার গিয়েছিলেন সরকারি কর্মকর্তারা।

কিন্তু ওই সময় তিনি ছেলের হত্যাকারীকে ক্ষমা করতে চাননি। কিন্তু পরে নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। নিজ ছেলের হত্যাকারীকে ক্ষমা করার একমাত্র অধিকারী ব্যক্তি ছিলেন ওই বাবা। সে অনুযায়ী, বিনা শর্তে তিনি হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেন। এতে করে সেখানে থাকা সবাই বেশ অবাক হন।

আল হারবি জানিয়েছেন, ধর্মীয় দিক বিবেচনা করে তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও প্রথমে হত্যাকারীকে ক্ষমা করতে চাননি। কিন্তু পরে নিজের মন পরিবর্তন করেন। ছেলের হত্যারকারীকে ক্ষমা করা ওই বাবার এমন উদারতার প্রশংসা করেছেন সাধারণ মানুষ। তারা এটিকে ক্ষমার একটি অনন্য উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

খবরে প্রকাশ, নিজ গোত্রের প্রতিবেশীর বন্ধুর ছেলের হাতে তার ছেলে খুন হন। দেশটির আইন অনুযায়ী বিচার শেষে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়। সৌদি আরবের আইনে রক্তপণ নিয়ে কিংবা অভিভাবক হিসেবে খুনিকে ক্ষমা করে দেওয়ার বিধান রয়েছে।

সে হিসেবে তিনি ছেলের খুনিকে ক্ষমা করে বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক আজও আগের মতো।’

তার স্পষ্ট কথা, আমি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ছেলের হত্যাকারীকে ক্ষমা করেছি। এ বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তারা ক্ষমার কথা বললেও তার পরিবার ক্ষমা প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর আমাদের সম্পর্ক গত ছয় দশকের মতোই আজও আছে। ছেলের খুনের পর যেমন ছিল, এখনও সম্পর্ক তেমনি আছে।

হত্যাকারীর বাবা আবদুল মাজিদ আল হারবি বলেন, আমি নিহতের বাবাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা করি এবং সম্মান করি, তিনি আমার ভাইয়ের চেয়েও বেশি।

;