বিশ্বের বিখ্যাত চার মসজিদ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বিশ্বের বিখ্যাত চার মসজিদ

বিশ্বের বিখ্যাত চার মসজিদ

  • Font increase
  • Font Decrease

মসজিদ আল্লাহর ঘর। ‘বায়তুল্লাহ’ তথা আল্লাহর পবিত্র ঘর হিসেবে যাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তা পৃথিবীতে মানবেতিহাসের প্রথম গৃহ হিসেবে পরিচিত। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে বিশ্বমানবতার জন্য নির্মিত প্রথম গৃহ যেটি পবিত্র মক্কা নগরীতে অবস্থিত এবং এই গৃহ হচ্ছে সমগ্র পৃথিবীর জন্য বরকতমণ্ডিত ও সঠিক পথনির্দেশনার অনন্য নিদর্শন।’ সেই পবিত্র গৃহটির নামই হচ্ছে- কাবা শরিফ। পবিত্র কাবার অবস্থান ও মর্যাদা সম্বন্ধে নাজিলকৃত এ আয়াতে কারিমায় মহিমান্বিত এ গৃহের তাৎপর্য ও কার্যকারিতা স্পষ্টভাবেই বিবৃত হয়েছে; যাতে কাবা শরিফ নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ও কর্মপরিধি বিষয়ে আমরা সম্যক অবহিত হতে পারি।

পৃথিবীর সব মসজিদই পবিত্র কাবার অনুসরণে ও একই কার্যপ্রণালির আওতায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। অর্থাৎ মহামহিম প্রভুর ইবাদতের জন্যই মসজিদের সৃষ্টি; পরম স্রষ্টার সুনির্ধারিত অন্যতম হুকুম নামাজ আদায়সহ নানাবিধ ইবাদতের মাধ্যমে আবাদ করাটাই বান্দার কাছে মসজিদের চাওয়া।

‘মসজিদ’ মানে সেজদার জায়গা; যেখানে মহান রবের উদ্দেশে তারই সন্তুষ্টি বিধানের জন্য তাকে ভক্তিভরে সেজদা করা হয় সেটিই মসজিদ। সে অর্থে উম্মতে মোহাম্মদির জন্য গোটা জমিনটাকেই মহান আল্লাহ মসজিদরূপে ছাড়পত্র দিয়েছেন; আর এটি নিঃসন্দেহে তারই প্রেরিত রাসুল (সা.)-এর বরকত! কবির ভাষায়, ‘বিশ্বমানবতার করুণার মূর্তপ্রতীক মহানবী (সা.)-এর শুভাগমনের ফলে মহান আল্লাহ সমগ্র ভূমণ্ডলকেই মসজিদে পরিণত করেছেন।’

দুনিয়ার মুসলমানরা যখনই নামাজের সময় হবে পবিত্র জমিন দেখে সেখানেই নামাজ আদায় করে নিতে পারবে। তার পরেও সুনির্দিষ্ট স্থাপত্য-কাঠামোর আঙ্গিকে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। আর সেই নির্মিত স্থাপনা শুধু নামাজ আদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং মসজিদ থেকেই সমাজ সংস্কারের নানা কর্মসূচি প্রণীত ও বাস্তবায়িত হয়। বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অসংখ্য মসজিদ। আজ এমনই তিনটি মসজিদ নিয়ে আলোচনা করা হলো-

খলিফা আল তাজির মসজিদ, দুবাই

 

খলিফা আল তাজির মসজিদ, দুবাই
এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দেইরাতে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম পরিবেশবান্ধব মসজিদ। দুবাইয়ের বন্দর সাঈদ এলাকায় স্থাপিত এই মসজিদ ২০১৪ সালে নামমাজের জন্য খুলে দেওয়া হয়। খলিফা আল তাজির এই মসজিদ নির্মাণের জন্য ২০ মিলিয়ন দিনার দান করেন। তার নামানুসারেই মসজিদটির নামকরণ করা হয়। ৪৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে নির্মিত এই মসজিদে তিন হাজার ৫০০ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।

দ্বিতলবিশিষ্ট মসজিদটিতে নারীদেরসহ তিনটি নামাজের স্থান আছে। এখানে ৬০০ নারী একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন। তা ছাড়া মসজিদ এলাকায় ইমাম, মোয়াজ্জিন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য আলাদা আবাসন ব্যবস্থাও করা হয়েছে। মসজিদের বাইরে বিশাল কার পার্কিং ও উন্মুক্ত সবুজ চত্বর মসজিদের শোভাকে বৃদ্ধি করেছে। আল তাজির মসজিদের দু’টি মিনারের প্রতিটির উচ্চতা ২৫ মিটার। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখানে পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহার যথাক্রমে ২০ ও ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছে। এ জন্য মসজিদে লাগানো হয়েছে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এলইডি বাতি ও সোলার প্যানেল। দিনে স্বাভাবিক আলোর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য মসজিদের সব জায়গায় ‘ডেলাইট সেন্সর’ বসানো হয়েছে। সব মিলে এটি একটি সর্বাধুনিক আদর্শ মসজিদ।

মসজিদ আল জিকরা, ইন্দোনেশিয়া

 

মসজিদ আল জিকরা, ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভা প্রদেশের পাহাড়ি শহর সেনটুলে আল জিকরা মসজিদ অবস্থিত। এই মসজিদের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা, পানি সংরক্ষণ, নির্মাণসামগ্রী, ভবনের অভ্যন্তরস্থ স্বাস্থ্য পরিবেশ সবই পরিবেশবান্ধব কৌশলে স্থাপিত হয়েছে। মসজিদটির উচ্চতা ও বায়ুচলাচল ব্যবস্থার কারণে সতেজ বায়ু সহজে ভেতরে প্রবেশ করে এবং আলো ও শীতাতপের জন্য বিদ্যুৎ খরচ কম হয়। মসজিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- পানির পুনর্ব্যবহারোপযোগী ব্যবস্থা। এতে পানির অপচয় যেমন কমেছে, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারও হ্রাস পেয়েছে।

মসজিদের বাইরে ৪০ শতাংশ এলাকা উন্মুক্ত এবং সবুজ ঘাসে ঢাকা। এতে মসজিদের শোভা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি পরিবেশ দূষণ কমেছে অনেকাংশে। পরিবেশবান্ধব এই মসজিদের উদ্যোক্তা হাইউ প্রাভোউ। মসজিদটি নির্মাণের পর ২০১৭ সালে নামাজের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এর উদ্বোধনকালে ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট দেশে ২০২০ সালের মধ্যে আরও এক হাজার পরিবেশবান্ধব মসজিদ নির্মাণের আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন এবং সেগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

ডিজনি বড় মসজিদ, মালি

 

ডিজনি বড় মসজিদ, মালি
মালির ডিজনি মসজিদ আফ্রিকার একটি বিস্ময়। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর বৃহত্তম মাটির তৈরি মসজিদ। মসজিদটি মাটি ও গাছের ডাল দিয়ে নির্মিত। এটি হাতে তৈরি মাটির মসজিদ হওয়ায় পরিবেশ দূষণের পরিমাণ এখানে প্রায় শূন্য। স্বল্প ব্যয়ে নির্মিত ১০ ফুট উচ্চতার এই মসজিদের ভিত্তি মাটির তৈরি। মসজিদের দেয়াল মাটি, বালু, ধানের তুষ এবং পানির মিশ্রণে তৈরি ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এরপর এতে সেঁটে দেওয়া হয়েছে কাঠ। মসজিদে তিনটি মিনার আছে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ডিজনি বড় মসজিদটি তিনবারে নির্মিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় এসেছে। ডিজনির ২৬তম মুসলিম শাসক কওই কুনবরো ১৩ শতকে প্রথমবার এই মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদটি একটি নদীর তীরে অবস্থিত। ষোলো শতকে এক প্রলয়ঙ্করী বন্যায় ডিজনি শহরসহ বড় মসজিদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। তখন মসজিদটি দ্বিতীয়বারের মতো পুনর্নির্মাণ করা হয়। তৃতীয়বার বর্তমান মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯০৭ সালে।

কেমব্রিজ কেন্দ্রীয় মসজিদ, যুক্তরাজ্য

 

কেমব্রিজ কেন্দ্রীয় মসজিদ, যুক্তরাজ্য
এটি যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় পরিবেশবান্ধব মসজিদ। কেমব্রিজ শহরের রোমসি এলাকার মিল রোডে স্থাপিত এই মসজিদ ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল জনসাধারণের নামাজের জন্য খুলে দেওয়া হয়। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের লেকচারার ড. টিমোথি উন্টার ২০০৮ সালে এই মসজিদ প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং এর জন্য তহবিল জোগাড় করার চেষ্টা চালান। ২০০৯ সালে চার মিলিয়ন ইউরো খরচ করে মসজিদের জন্য এক একর জায়গা ক্রয় করা হয়।

স্থাপত্য প্রকৌশলী মার্কস বারফিল্ড, প্রফেসর কেইথ ক্রিটিচলো এবং প্রখ্যাত ইসলামিক গার্ডেন ডিজাইনার ইমমা ক্লার্ক মিলে মসজিদের ডিজাইন তৈরি করেন। অপূর্ব সুন্দর এই মসজিদে এক হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন। তা ছাড়া মসজিদে শিক্ষা-প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের জন্য আলাদা একটি জায়গা আছে। রয়েছে শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা। মসজিদে স্থাপন করা হয়েছে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এবং অন্যান্য শক্তি ক্ষয়রোধক ব্যবস্থা। এলইডি বাতিসহ মসজিদের ছাদে বৃষ্টির পানির জলাধার এবং পানির পুনর্ব্যবহারোপযোগী প্রযুক্তিও এতে সংযুক্ত হয়েছে। এর অনবদ্য নির্মাণশৈলীর কারণে বছরজুড়ে সূর্যের আলো মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। সব মিলিয়ে এটি ইউরোপের একটি বিরল পরিবেশবান্ধব মসজিদ। প্রতিনিয়ত অনেক পর্যটক এই অসাধারণ মসজিদটি দেখার জন্য ভিড় করেন।

   

কবরের জীবন সহজ হওয়ার দোয়া



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জান্নাতুল বাকি, ছবি : সংগৃহীত

জান্নাতুল বাকি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কবরের আজাব দেখানো হয়েছিলো, ফলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কখনও কবরের চেয়ে ভয়াবহ দৃশ্য দেখিনি।’ -সুনানে তিরমিজি : ২৩০৮

নবী কারিম (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা মৃতদেরকে দাফন করা বাদ দিয়ে দেবে, এ ভয় না থাকলে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম, যেন তিনি তোমাদেরকে কবরের কিছু আজাব শুনিয়ে দেন।’ -সহিহ মুসলিম : ৭১০৬

হাদিসে এসেছে, ‘যে মুমিন ব্যক্তি মুনকার-নাকিরের প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারবে, তাকে কবরে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দেওয়া হবে, তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেওয়া হবে, ফলে সে জান্নাতের সিগ্ধ হাওয়া ও সুগন্ধি পেতে থাকবে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৭৫৩

এগুলো দেখার পর সে বলবে, ‘হে আল্লাহ! দ্রুত কেয়ামত সংঘটিত করুন, যাতে আমি আমার পরিবার এবং সম্পদের দিকে ফিরে যেতে পারি।’ -সহিহুল জামে : ১৬৭৬

আর কাফের-মুশরেকদের জন্য কবরকে সংকীর্ণ করে দেওয়া হবে এবং সে তার জাহান্নামের স্থানটি দেখতে পাবে। ফলে ভয়ে আল্লাহকে বলবে, ‘হে রব! কেয়ামত সংঘটিত করবেন না।’ -আল মুসনাদ : ১৮৬৩৭

এজন্য হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের আজাব এবং ফেতনা থেকে বারবার পানাহ চাইতেন। আমরাও নবী কারিম (সা.)-এর ভাষায় এভাবে দোয়া করতে পারি-

اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُبِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্বাবরি।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই। -সহিহ বোখারি : ৮৩২

হজরত উরওয়াহ ইবনে যুবাইর (রহ.) থেকে বর্ণিত, হজরত আয়েশা (রা.) তাকে বলেছেন যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) নামাজে দোয়া বলতেন- (উচ্চারণ) আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্বাবরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জালি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়া ফিতনাতিল মামাতি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মাছামি ওয়াল মাগরামি।

অর্থ : হে আল্লাহ! কবরের আজাব থেকে, মাসিহে দাজ্জালের ফেতনা থেকে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফেতনা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ্! গোনাহ ও ঋণগ্রস্ততা থেকেও আপনার নিকট আশ্রয় চাই। তখন এক ব্যক্তি তাকে বলল, আপনি কতই না ঋণগ্রস্ততা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তিনি (আল্লাহর রাসুল সা.) বললেন, যখন কোনো ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন কথা বলার সময় মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে। -সহিহ বোখারি : ৮৩২

;

তুরস্কের প্রবীণ আলেম ড. লুতফি দুগানের ইন্তেকাল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
লুতফি দুগান, ছবি : সংগৃহীত

লুতফি দুগান, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

তুরস্কের প্রবীণ আলেম রাজনীতিবিদ ও ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান ড. লুতফি দুগান ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন।

সোমবার (৪ নভেম্বর) আংকারার বাসকেন্ট ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৯৩ বছর।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ‘তুরস্কের ধর্মবিষয়ক সাবেক প্রধান ও ইসলামি পণ্ডিত লুতফি দুগানের মৃত্যুত আমি গভীর শোক জানাচ্ছি। মহান আল্লাহ তার ওপর অনুগ্রহ করুন এবং তার পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়দের ধৈর্য ধারণের তাওফিক দিন।’

লুতফি দুগান ১৯৩০ সালে গুমুশানে প্রদেশের সালিয়াজি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুহাম্মদ ফাহমি আফেন্দির কাছে তিনি পবিত্র কোরআন শিক্ষা লাভ করেন এবং খালু হাফেজ ফাওজি আফেন্দির কাছে হিফজ সম্পন্ন করেন।

তৎকালীন সময়ের বড় বড় আলেমদের কাছে আরবি ভাষা, কেরাত ও তাজবিদ বিষয়ক শিক্ষা লাভ করেন। স্থানীয় উজকান মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন।

পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় অনুষ্ঠিত ইফতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিভিন্ন শহরের সহকারী মুফতি ও মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়া বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন এবং ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি এই বিভাগের প্রধান ছিলেন।

তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজমুদ্দিন এরবেকানের আহ্বানে তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮০ সালে সংঘটিত অভ্যুত্থানের পর তিনি চার মাস কারাবন্দি ছিলেন। বহু ভাষায় পারদর্শী এই আলেম ১৯৮৭ সালে ইসলামিক সায়েন্স রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিশিং ফাউন্ডেশন নামে একটি ইসলামি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন এবং এর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

;

জলবায়ু সম্মেলনে চালু হলো ধর্মীয় প্যাভিলিয়ন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কপ-২৮ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ধর্মীয় প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন, ছবি : সংগৃহীত

কপ-২৮ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ধর্মীয় প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস’(কপ-২৮) জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সবচেয়ে বড় সম্মেলন। ৩০ নভেম্বর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলা জলবায়ু সম্মেলনের চতুর্থদিনে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে ধর্মীয় প্যাভিলিয়ন। জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় বিশ্বাসী সম্প্রদায় ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতেই তা চালু করা হয়।

প্যাভিলিয়ন আয়োজনে সহযোগিতা করে কপ-২৮ প্রেসিডেন্সি, সহনশীলতা ও সহাবস্থান মন্ত্রনালয়, দি হলি সি, জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) ও মুসলিম কাউন্সিল অফ এল্ডার্স।

৪ ডিসেম্বর (রোববার) প্যাভিলিয়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান, সহনশীলতা ও সহাবস্থান বিষয়ক মন্ত্রী শেখ নাহিয়ান বিন মুবারক আল নাহিয়ান ও পোপ ফ্রান্সিসের প্রতিনিধি ভ্যাটিকান স্টেট সেক্রেটারি কার্ডিনাল পিয়েত্রো প্যারোলিন। এই প্যাভিলিয়নের মাধ্যমে বিশ্বাসী সম্প্রদায় ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করাই প্রধান লক্ষ্য।

এ সময় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন মিসরের বিশ্বখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম শায়খ ড. আহমদ আল-তাইয়েব এবং পোপ ফ্রান্সিস। তারা জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম বলেন, ‘মুসলিম কাউন্সিল অব এল্ডার্সের ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ সত্যিই নানা কারণে প্রশংসনীয়। প্রথমত, কপ-২৮ এর আবুধাবি আন্তঃধর্মীয় বিবৃতিতে স্বাক্ষর করার জন্য এখানে বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত, কপ-২৮ এ প্রথমবারের মতো ফেইথ প্যাভিলিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জের সময়ে ধর্মীয় নেতাদের কণ্ঠস্বর শোনানোর জন্য মূল্যবান সুযোগ তৈরি হয়েছে।’

এ সময় আল-আজহারের ইমাম গাজায় নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের জীবন রক্ষায় ধর্মীয় নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘আজ বিশ্বের এমন জোটের প্রয়োজন যা কারো বিরুদ্ধে নয়; বরং সবার উপকারে কাজ করবে। আসুন, ধর্মীয় প্রতিনিধি হিসাবে আমরা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করি যেন আমরা দেখাতে পারি, পরিবর্তন সম্ভব। যেন সবাইকে সম্মানজনক ও টেকসই জীবনধারা দেখাতে পারি। আসুন, আমরা বিশ্বনেতাদের আমাদের সাধারণ ঘর রক্ষা করার জন্য বলি।’

কপ-২৮ এর সভাপতি ড. সুলতান আল জাবের বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের রাজনীতি, সীমানা বা ধর্ম নিয়ে চিন্তা করে না। তাই জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় আমাদের সাফল্য নিশ্চিত হবে ওই সময় যখন আমরা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারব। কারণ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সামাজিক দায়িত্ববোধ ও সচেতনতা প্রচারে ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের গ্রহের সুরক্ষায় ধর্মীয় নেতারা ঐতিহাসিক মুহূর্তে একত্রিত হয়েছে।

;

যেসব নেয়ামত পরীক্ষার বিষয়



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
স্ত্রী-সন্তানের প্রতি ভালোবাসায় সতর্ক থাকা, ছবি : সংগৃহীত

স্ত্রী-সন্তানের প্রতি ভালোবাসায় সতর্ক থাকা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মানুষের আসল আবাস জান্নাত। কিছু দিনের জন্য তাদের দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে। আবার আমাদেরকে জান্নাতে যেতে হবে। তবে এমনিতেই নয়, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে। দুনিয়ায় মানুষকে ভালো-মন্দ, আনন্দ-বেদনা, আলো-অন্ধকার, সুখ-দুঃখ অবস্থায় জীবন অতিবাহিত করতে হয়। দুনিয়ার এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে আমরা দুঃখ-দুর্দশা, রোগ-শোক, অভাব-অনটন ইত্যাদিকেই কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা মনে করি। কিন্তু বাস্তবতা হলো- দুঃখ-দুর্দশা, রোগ-শোক ইত্যাদি অপ্রীতিকর অবস্থা যেমন পরীক্ষা তেমনি সুখ-শান্তি, সম্পদ-প্রাচুর্য, আরাম-আয়েশ, স্বস্তি-সুস্থতা ইত্যাদি প্রীতিকর অবস্থাও পরীক্ষার বিষয়।

স্ত্রী-সন্তানের প্রতি ভালোবাসায় সতর্ক থাকা
এমন পরীক্ষার বিষয় হলো- স্ত্রী-সন্তানকে ভালোবাসা এবং স্বাস্থ্য-সুস্থতা ও রূপ-গঠন। বিষয় দুটি আল্লাহতায়ালার নেয়ামতও বটে। তাই এই দুই বিষয় থেকে সতর্ক থাকা।

ইসলামি স্কলাররা বলেন, মানুষ সবচেয়ে বেশি মহব্বত করে স্ত্রী ও সন্তানকে। তাদেরকে নিয়েই তার যত কল্পনা ও পরিকল্পনা। তাদের জন্যেই তার জীবন ও যৌবন সে তিলে তিলে ক্ষয় করে। এমন ভালোবাসার মানুষগুলো ও তাদের ভালোবাসার ক্ষেত্রগুলো পরীক্ষার বিষয়। স্ত্রী-সন্তান এবং তাদের ভালোবাসা যেন আল্লাহর হুকুম পালন এবং তার সন্তুষ্টি লাভের পথে বাধা হতে না পারে- এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। দয়াময় আল্লাহতায়ালাও আমাদের এভাবে সতর্ক করেছেনে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কতক স্ত্রী ও কতক সন্তান তোমাদের শত্রু। সুতরাং তোমরা তাদের সম্পর্কে সচেতন থাকো।’ -সুরা তাগাবুন : ১৪

যে স্ত্রী ও সন্তানের জন্য এত মহব্বত, যাদের জন্য মরণপণ এত সংগ্রাম, তারাই শত্রুতে পরিণত হতে পারে, যদি তাদের ভালোবাসায় নিজের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা হয়, আল্লাহর হক বা বান্দার হক নষ্ট করা হয়।

বিদ্যা-বুদ্ধি ও দৈহিক নেয়ামত সম্পর্কে সচেতন থাকা
আল্লাহতায়ালা মানুষকে আত্মিক, দৈহিক, আর্থিক, ছোট, বড়- যাকে যে নেয়ামত দান করেছেন; সেই নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে এবং তা আল্লাহর হুকুমমতো ব্যবহার করতে হবে। যাকে আল্লাহতায়ালা বিদ্যা-বুদ্ধির নেয়ামত দান করেছেন তাকে ওই জ্ঞান ও বিদ্যার হক ও দাবি কী- তা জেনে সেগুলো আদায় করার চেষ্টা করতে হবে।

যাকে আল্লাহতায়ালা স্বাস্থ্য-সুস্থতা ও রূপ-গঠনের নেয়ামত দান করেছেন তাকে এর শোকর আদায়ের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। এই নেয়ামত যেন তাকে অহংকারী না বানাতে পারে এবং যারা এ নেয়ামত পায়নি তাদের প্রতি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ভাব যেন পয়দা না হয়, সে ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে।

তেমনি ইলম ও বিদ্যা অর্জন করে গর্বিত হওয়া যাবে না। যাকে আল্লাহতায়ালা ইলমের ক্ষেত্রে তার মত মর্যাদা দান করেননি তার প্রতি যেন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অহংকারের আচরণ না হয় এবং ইলম অনুযায়ী আমল থেকে গাফেল না হয়।

যে সুখ-শান্তি ও অর্থ-প্রাচুর্যের নেয়ামত পেয়েছে, সে যেন নেয়ামতের দাতাকে না ভোলে। আখেরাত থেকে গাফেল না হয়। শান্তি ও প্রাচুর্যের নেয়ামত পেয়ে খুশিতে মাতোয়ারা না হয়। আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতায় মত্ত না হয়।

মোটকথা, আল্লাহতায়ালা মানুষকে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে, ছোট-বড় যত নেয়ামত দান করেছেন; ওই নেয়ামতের শোকর আদায় করব। এর হক ও দাবিগুলো জেনে সেসব আদায় করার চেষ্টা করব। এভাবে যদি আমরা কষ্ট-ক্লেশ, বিপদ-মসিবত ইত্যাদি প্রতিকূল ও অবাঞ্ছিত অবস্থায় সবর করি এবং সুখ-শান্তি, স্বস্তি-সুস্থতা ইত্যাদি অনুকূল ও বাঞ্ছিত অবস্থায় শোকর করি তাহলে নেয়ামত ও মসিবত সবই আমাদের জন্য কল্যাণকর হবে, আখেরাতের পাথেয় হবে এবং মর্তবা বুলন্দির কারণ হবে।

মুমিন এমনই হয়- এটিই প্রকাশ পেয়েছে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বাণীতে, ‘ঈমানদারের অবস্থা কী অপূর্ব! তার সবকিছুই তার জন্য কল্যাণকর। আর এ শুধু মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য। যদি সে সুখ-সচ্ছলতা পায় তাহলে শোকর করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণের হয়। আর যদি দুঃখ-অনটনের শিকার হয় তাহলে সবর করে, ফলে তা-ও তার জন্য কল্যাণের হয়।’ -সহিহ মুসলিম : ২৯৯৯

আল্লাহতায়ালা আপন রহমতে প্রত্যেক মুমিন-মুসলিমকে মসিবত ও নেয়ামতের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করুন। সমস্ত খায়ের ও কল্যাণ দান করুন এবং সব ধরনের অকল্যাণ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

;