নবী কারিম (সা.) যেমন ছিলেন
মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার জন্যই সর্বোত্তম আদর্শ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য রাসুল (সা.)-এর আদর্শই সর্বোত্তম আদর্শ। সারাবিশ্বে জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল যুগের সকল মানুষের সেরা মানুষ হজরত মুহাম্মদ (সা.)। সারা দুনিয়ার সবচেয়ে আলোচিত উচ্চারিত নাম হজরত মুহাম্মদ (সা.)। রবিউল আউয়াল মাস আগমনের সঙ্গে সঙ্গে সর্বত্র হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে আলোচনার মাহফিল শুরু হয়। রাসুল (সা.)-এর আদর্শে নতুন করে পথচলার শপথ গ্রহণ করে উম্মতরা। কিন্তু রবিউল আউয়াল মাস চলে গেলে শপথের কথা আমরা অনেকেই ভুলে যাই। ফলে আমরা ভুলে গেছি আমাদের আত্মপরিচয়। তাই সারাবিশ্বে মুসলমানদের ওপর চলছে সীমাহীন শোষণ ও নিপীড়ন। সর্বত্র জ্বলছে অশান্তির আগুন। নতুন করে শান্তিময় বিশ্ব গড়ে তুলতে রাসুলের (সা.) আদর্শের কোনো বিকল্প নেই।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কেমন ছিলেন? এ বিষয়ে জানার আগ্রহ প্রত্যেক মুসলমানের। বিভিন্ন কিতাবে বর্ননায় এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সুন্দর আকৃতি বিশিষ্ট, সৌরভে সুবাসিত, গঠনে মধ্যম, দেহে সবল, মাথা ছিল বড় আকৃতির, দাড়ি ছিল ঘন, হস্ত ও পদ-দ্বয় ছিল মাংসল, উভয় কাঁধ ছিল বড়, চেহারায় ছিল রক্তিম ছাপ, চুল ছিল সরল, গন্ডদ্বয় কোমল। চলার সময় ঝুঁকে চলতেন, মনে হতো যেন উঁচু স্থান থেকে নিচুতে অবতরণ করছেন। যদি কোনো দিকে ফিরতেন, পূর্ণ ফিরতেন। মুখমন্ডলের ঘাম সুঘ্রাণের কারণে মনে হত সিক্ত তাজা মুক্তো। তার উভয় কাঁধের মাঝখানে নবুওয়তের মোহর ছিল অর্থাৎ সুন্দর চুল ঘেরা গোশতের একটি বাড়তি অংশ।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সুমহান, পূর্ণ ও শ্রেষ্ঠতর চরিত্রে সুসজ্জিত, সবদিকে অতুলনীয়। আল্লাহতয়ালা রাসুলের (সা.) চরিত্র সর্ম্পকে বলেন, ‘এবং নিশ্চয় তুমি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ -সুরা কালাম : ৪০
আল্লাহতায়ালা রাসুলের (সা.) জীবনাদর্শ সর্ম্পকে বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাঝে উত্তম নমুনা রয়েছে।’ -সুরা আহজাব : ২১
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বাপেক্ষা তাকওয়া অবলম্বনকারী ছিলেন। তিনি গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করতেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ সম্পর্কে আমি তোমাদের চেয়ে বেশি অবগত এবং আল্লাহকে আমি তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি। স্বয়ং সাহাবায়ে কেরাম এ কথার সমর্থনে সাক্ষ্য দিয়েছেন। হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) বলেন, ‘আমরা গণনা করে দেখতাম হজর রাসুলুল্লাহ (সা.) এক মজলিসে একশত বার বলতেন, হে আমার রব! তুমি আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার তওবা কবুল করো, নিশ্চয় তুমি তওবা কবুলকারী, দয়াশীল।
নবী আকরাম (সা.) স্বীয় রবের অনুগত ছিলেন। তিনি মেনে চলতেন তার আদেশ-নিষেধ। আমলে সালেহ বেশি বেশি করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) নবী কারিম (সা.)-এর অবস্থার বিবরণ দিয়ে বলেন, নবী কারিম (সা.)-এর আমল ছিল ধারাবাহিক। তিনি যা পারতেন তোমাদের কেউ কি তা পারবে? তিনি রোজা পালন করতেন- এমনকি আমরা বলতাম তিনি এর ধারাবাহিকতা আর পরিত্যাগ করবেন না। তিনি রোজা পালন বাদ দিতেন, এমনটি আমরা বলতাম- তিনি আর রোজা পালন করবেন না। তুমি তাকে রাতে নামাজরত অবস্থায় দেখতে না চাইলেও নামাজরত অবস্থায় তাকে দেখতে পাবে। তুমি তাকে রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে না চাইলেও ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে দেখতে পাবে। -জামে তিরমিজি : ৭০০
হজরত আউফ বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম, তিনি মেসওয়াক করলেন, অতঃপর অজু করলেন, এরপর দাঁড়িয়ে নামাজ আরম্ভ করলেন, আমিও তার সঙ্গে দাঁড়ালাম, তিনি সুরা বাকারা পড়া শুরু করলেন, দয়া সংবলিত আয়াত পড়া মাত্র থেমে প্রার্থনা করলেন। শাস্তির অর্থ সংবলিত আয়াত পড়া মাত্র থেমে মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইলেন। অতঃপর দাঁড়ানোর পরিমাণ রুকুতে অবস্থান করলেন এবং পড়তে লাগলেন- মহা প্রতাপশালী, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, রাজত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী সত্তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। অতঃপর সেজদা করলেন এবং অনুরূপ পড়লেন, এরপর সুরা আলে ইমরান পড়লেন। অতঃপর একেকটি সুরা পড়তেন থেমে। -সুনানে নাসাঈ : ১১২০
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর গোটা জিন্দেগি পরিচালিত হয় পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে। পবিত্র কোরআন অবিশ্বাসীদের চ্যালেঞ্জ দেয়, তারা যেন একত্রিত হয়ে কোরআনের একটি আয়াতের মতো আয়াত তৈরি করতে চেষ্টা করে। পৃথিবীর কোনো মানব কোরআনের এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। পৃথিবীতে পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্রসহ নানা মতবাদ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলেও কোনো তন্ত্রমন্ত্র মানুষকে শান্তি দিতে পারেনি।
কয়েক যুগ ধরে বিভিন্ন দেশে নানা মতবাদ দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। তাই আজকে বিশ্ববাসী কোরআনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। কেননা একমাত্র নবী মুহাম্মদ (সা.) সাড়ে চৌদ্দশ’ বছর আগে কোরআনের আলোকে মদিনায় শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই মানবজাতির জন্য কোরআনই একমাত্র শান্তির ঠিকানা- তা আজ পরীক্ষিত ও প্রমাণিত।