শিশুদের লাশের সারি দেখে ঘুমাতে পারছেন না গাজার গোর খোদক
সাদি বারাকা। ৬৩ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি। পেশায় কবর খননকারী। জীবনে অনেক কবর খনন করেছেন তিনি। দেখেছেন অনেক বর্বরতা। তবে এবারের বর্বরতা যেন তিনি ভুলতেই পারছেন না। খেতে গেলে মনে পড়ে। মনে পড়ে ঘুমাতে গেলেও। তিনি খেতে পারেন না। পারেন না ঘুমাতে। স্মৃতিগুলো তাকে পীড়া দিয়ে বেড়ায়। তিনি ভাবেন, কী দোষ ছিল এই শিশুদের? কেনই বা তাদের নৃশংসতার টার্গেট করা হচ্ছে?
তারা বাঁচতে চায়, যেভাবে বাঁচতে চায় পৃথিবীর অন্যান্য মানুষ। তারা সার্বভৌমত্ব চায়, যেভাবে সার্বভৌমত্ব ভোগ করে অন্যরা। এটাই কি তাদের অপরাধ? তবে কি তাদের বেঁচে থাকারও অধিকার নেই? নেই মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার?
এভাবেই নানা প্রশ্নের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন কবর খননকারী বৃদ্ধ সাদি বারাকা। জানেন, কেউ তার প্রশ্নের উত্তর দেবে না। বলবে না, তোমাদেরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আছে সার্বভৌমত্ব ভোগ করার। তবুও তিনি প্রশ্নগুলো ভুলতে পারেন না। পারেন না তৃপ্তিতে ঘুমাতে, এমনকি স্বাদের লোকমাটাও গিলতে।
তার এই দুঃখগুলোই শেয়ার করেছেন তুরস্কভিত্তিক গণমাধ্যম আনাদুলু এজেন্সির সঙ্গে। প্রশ্নগুলো রেখেছেন বিশ্ব মানবতার সামনে। যদি আরব বিশ্বের বিবেক নাড়া দেয়! যদি মুসলিম বিশ্বের আত্মসম্মানবোধ জেগে ওঠে!
তিনি বলেন, কবর খনন করাই আমার পেশা। এই তো সেদিনই আমি ৬০০ শিশুর লাশ দাফন করেছি। এ সংখ্যা আমার জন্য বেশি নয়। গত পাঁচ বছরে আমি এরও বেশি লাশ দাফন করেছি। কিন্তু এবার শিশুদের লাশের সঙ্গে যে নৃশংসতা দেখেছি, তা আগে দেখিনি। দখলদারদের এই নৃশংসতা নাৎসিদের বর্বরতাকেও হার মানাবে।
তিনি আরও বলেন, এবার দখলদারদের টার্গেটই হলো নারী ও শিশু। তাদের লক্ষ্য করেই হামলা চালাচ্ছে দখলদার বাহিনী। সেজন্য নিহতদের ৭০ ভাগই নারী ও শিশু। তাদের প্রতি এমন অবিচার করা হচ্ছে, অতীতের কোনো সময়ই তার নজির নেই।
বৃদ্ধ বারাকা বলেন, প্রতিদিনই অনেক মানুষ মারা যায়। তাই আলাদাভাবে কবর দেওয়া সম্ভব হয় না। তাদের একত্রে গণকবরে রাখা হয়। দুঃখের বিষয় হলো, তাদের পরিচয়ের জন্য একটি ফলকও বসাতে পারছি না। ফলক বসাব কী করে? ফলক বসানোর মতো পর্যাপ্ত রসদই তো নেই। গাজা একদম শেষ। গাজাতে কিছুই নেই।
ফিলিস্তিনি এই বৃদ্ধ বলেন, এক কবরে অনেককে কবর দিতে হচ্ছে। স্থানভেদে কখনো ৪৫ জনকে দাফন করতে হয়। কখনো দাফন করতে হয় আরও বেশি। একবার তো এক কবরে ১৩৭ জনকে দাফন করেছি। এদের চিহ্নিত করার কোনো ব্যবস্থাও নেই। দাফনের পর উঠিয়ে চিহ্নিত করারও কোনো সুযোগ নেই। তাই কার স্বজন কোথায় সমাহিত হয়েছেন, তা চিরকাল অজানাই রয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, হামাস সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে যুদ্ধকে নির্দিষ্ট রেখায় সীমাবদ্ধ রাখতে। তারা চায় যুদ্ধ হোক হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে। হামলা হোক তাদের টানেল কিংবা অবস্থানকেন্দ্রে। কিন্তু হামাসের চাওয়াতেই তো সব হয় না। হামাসের পাতানো ছকেও তারা হাঁটে না। তাদের লক্ষ্যই হলো নারী ও শিশু। তাদের রক্তের দিকেই ছুটে যায় বারবার। তাই নারী ও শিশুরা হচ্ছে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত।
তিনি বলেন, আমরা কিচ্ছু চাই না। সাহায্য কিংবা খাদ্যেরও নেই দরকার। আমরা চাই শান্তি। আমরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই। মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে চাই। আমাদের সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে দিন। আমরা মুক্তভাবে বাঁচি।