দোষীদের শাস্তি না হলে কওমি মাদ্রাসা ধ্বংস হয়ে যাবে

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসের জরুরি বৈঠক, ছবি : সংগৃহীত

আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসের জরুরি বৈঠক, ছবি : সংগৃহীত

মাদ্রাসার দায়িত্ব থেকে কাউকে বহিষ্কারের জন্য নৈতিক স্খলন, আর্থিক কেলেঙ্কারি ও যোগ্যতার অভাব থাকতে হয়। কিন্তু মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযার অপরাধ কী? আমরা এখানে মাওলানা ওবায়দুল্লাহর পক্ষে কথা বলতে আসিনি, আমি মজলুমের পক্ষে এসেছি। দোষীদের শাস্তি না হলে কওমি মাদ্রাসাসমূহ ধ্বংস হয়ে যাবে। পটিয়া মাদ্রাসার ঘটনা কোনো মতানৈক্য নয়, এটা হিংসুকদের হিংসা; এটা মেনে নেওয়া যায় না।

শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম মিয়াখান নগরস্থ জামিয়া মোজাহেরুল উলুমে আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস (বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড)-এর সাধারণ পরিষদ, মজলিসে শূরা ও পরীক্ষা কমিটির এক জরুরি যৌথ-অধিবেশনে পটিয়া মাদ্রাসার মজলিসে শূরার সদস্য ও আল্লামা সুলতান আহমদ নানুপুরী (রহ.)-এর সাহেবজাদা মাওলানা এমদাদুল্লাহ নানুপুরী এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

বোর্ড সভাপতি, জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার পৃষ্ঠপোষক ও মজলিসে শূরার সভাপতি আল্লামা সুলতান যওক নদভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন মাদ্রাসার তিন শতাধিক প্রতিনিধি, বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, মজলিসে শূরার সদস্য ও দেশের শীর্ষ আলেমরা উপস্থিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।

সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা সুলতান যওক নদভী বলেন, আমি পটিয়ার সন্তান, মুরব্বিদের সান্নিধ্য পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযা ইত্তেহাদের মহাসচিব ও পটিয়া মাদ্রাসার বৈধ মুহতামিম।

বিজ্ঞাপন

সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিগত ২৮ অক্টোবর পটিয়া মাদ্রাসায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা নজিরবিহীন, এ ঘটনা মাদ্রাসার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ভূলণ্ঠিত করেছে। মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযার বিরুদ্ধে অন্যায় হয়েছে, এর বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণে তাকে সহযোগিতা এবং মাদ্রাসার হেফাজতে সকলে কাজ করুন।

শনিবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মাওলানা সগির আহমদ চৌধুরী কর্তৃক পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়। বোর্ড মহাসচিবের নির্দেশক্রমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসের জরুরি যৌথ-অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অধিবেশনে পটিয়া মাদ্রাসায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার নিন্দা, দোষীদের তদন্তপূর্বক শাস্তি এবং মজলিসে শূরার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

সভায় জামিয়া সিলোনিয়া ফেনীর নায়েবে মুহতামিম মুফতি আহমদুল্লাহ কাসেমী বলেন, কওমি মাদ্রাসাসমূহ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একটা দুষ্কৃতিকারী মহল উস্তাদদের সঙ্গে বেয়াদবি করে নিজেদের বিপ্লবী বলে জাহের করছে। তাদেরকে এখনই রুখে না দিলে কওমি মাদ্রাসাসমূহ ধ্বংস হয়ে যাবে। পটিয়ার ঘটনায় উস্তাদদের সঙ্গে বেয়াদবির পথ খুলে দেওয়া হয়েছে, যারা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় ইন্দন যুগিয়েছে তারা যত বড়োই হোক না কেন তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

জরুরি অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে ২৮ অক্টোবর পটিয়া মাদ্রাসায় সন্ত্রাসী হামলা ও মহাপরিচালককে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার ঘটনার নিন্দা জ্ঞাপন করা হয় এবং ওই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানানো হয়। সেই সঙ্গে গত ৩ নভেম্বর পটিয়ার ডাক বাংলোয় অনুষ্ঠিত মাদ্রাসার মজলিসে শূরার সিদ্ধান্তসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

অধিবেশনে সিদ্ধান্ত হয়, চট্টগ্রাম শহরে অস্থায়ী কার্যালয় থেকে ইত্তেহাদের যাবতীয় কার্যক্রম চলবে, যথানিয়মে বোর্ডের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং অস্থায়ী কার্যালয় নির্ধারণ ও পরীক্ষা গ্রহণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কার্যনির্বাহী পরিষদকে ক্ষমতা দেওয়া হয়।

বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযার স্বাগত বক্তব্য দিয়ে শুরু হওয়া অধিবেশনে আরও বক্তব্য রাখেন জামিয়া মোজাহের উলুমের মহাপরিচালক মাওলানা লোকমান হাকিম, ইত্তেহাদের সহ-সভাপতি ও জামিয়া পটিয়ার মজলিসে শূরার সদস্য মাওলানা মুফতি কেফায়েতুল্লাহ শফীক, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন আল-মোবারক, ফেনী সিলোনিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা সাইফুদ্দীন ও জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার মজলিসে শূরার সদস্য মাওলানা এমদাদুল্লাহ নানুপুরী ও মাওলানা হাসান মুরাদাবাদী প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন ইত্তেহাদের সহ-সভাপতি মাওলানা ফুরকান উল্লাহ খলীল, মাওলানা হাফেজ সালাহুল ইসলাম, মাওলানা মুসলিম উদ্দীন, মাওলানা আফসার উদ্দীন চৌধুরী, মাওলানা মুফতি এনামুল হক, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা মুহসিন শরীফ ও মাওলানা মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।