মুসলমান মুসলমানের প্রতি জুলুম করে না
ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র- এ নিয়েই মানুষের জীবন। তাই সভ্য জীবনযাপনের জন্য এগুলোকে সভ্য করা আবশ্যক। সে জন্য হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দিয়েছেন একটি পূর্ণাঙ্গ ফর্মুলা ‘ইসলাম’। ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে মনোনীত জীবনব্যবস্থা হলো ইসলাম।’
একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও বৃদ্ধকালের প্রতিটি বিষয় ইসলামে বর্ণিত হয়েছে। যেমন একটি শিশুকে নামাজ ও ধর্মের প্রতি অভ্যস্ত করে তুলতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের কথা বলো। ১০ বছর হলে তাকে শাসন করো ও বিছানা আলাদা করে দাও।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৫
শিশু-কিশোরদের আদব ও শিষ্টাচার শিক্ষার ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশ হলো, ‘যে ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না সে আমার উম্মত নয়।’ -জামে তিরমিজি : ১৯২১
যুবকদের প্রতি ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বার্ধক্যের আগে যৌবনের মূল্যায়ন করো।’ -তারগিব তারহিব : ৩৩৫৫
পারবারিক জীবন গোছালো ও সুশৃঙ্খল করার জন্য ইসলাম আমাদেরকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে। পরিবারের একে অপরের অধিকারের প্রতি লক্ষ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। কোরআন মাজিদে নির্দেশ এসেছে এভাবে, ‘তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো।’ -সুরা আন নিসা : ১৯
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম হলো সে, যে তার পরিবারের কাছে সর্বোত্তম। আর আমি আমার পরিবারের কাছে সর্বোত্তম।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৬৮২
সুষ্ঠু সমাজ গঠনে ইসলাম আমাদেরকে সামাজিক বহু দায়দায়িত্ব ও শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছে। ইসলামি সমাজে মুসলমানদের মধ্যে ভেদাভেদ দূর করে সমতার ঘোষণা করেছে। একে অপরের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ আচরণ করতে আদেশ দিয়েছে।
হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ করো না। একে অপরের পেছনে পড়ে দোষ তালাশ করো না। অন্যের বেচাকেনার ওপর অপরজন বেচাকেনা করো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা ও ভাই ভাই হয়ে থাকো। মুসলমান মুসলমানের ভাই। মুসলমান মুসলমানের প্রতি জুলুম করে না এবং তাকে অপদস্থ ও হেনস্তা করে না।’ -সহিহ মুসলিম : ১৫১০
ইসলাম একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে। ইসলামি ইতিহাসেই সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধানের কথা পাওয়া যায়। বিচারব্যবস্থায় ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি যদি বিচার করেন তাহলে তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত বিচার করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকদের ভালোবাসেন।’ -সুরা মায়িদা : ৪২
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ন্যায়পরায়ণ শাসক কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়ায় থাকবে।’ -সহিহ বোখারি : ৬৬০
মানুষের জীবনের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর বিষয়েও ইসলাম সুন্দর সমাধান দিয়েছে এবং সৃজনশীল বাস্তবমুখী নির্দেশনা দিয়েছে। সুতরাং আমাদের আলোকিত জীবন গড়তে হলে ইসলামই একমাত্র মাধ্যম।