সৌদি আরবের মক্কায় বিশ্বের দীর্ঘতম হাঁটাপথ ব্যবহার করবেন হজযাত্রীরা। রাস্তাটি আরাফাতের ময়দান থেকে শুরু করে মুজদালিফা হয়ে মিনায় কঙ্কর নিক্ষেপের স্থানে শেষ হয়েছে। এই পথের দৈর্ঘ্য ২৫ কিলোমিটারেরও বেশি। দীর্ঘ এই পায়ে হাঁটা পথ ব্যবহার করে হজের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদন করবেন হজযাত্রীরা।
আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ পথটিই বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ পায়ে হাঁটার পথ। মক্কার হাঁটার পথটি বেশ কয়েকটি পবিত্র জায়গাকে সংযুক্ত করেছে। যার শুরু আরাফাতের ময়দান থেকে, পরে তা মুজদালিফা হয়ে শেষ হয়েছে মিনায় গিয়ে।
বিজ্ঞাপন
হজ মৌসুমে হজযাত্রীরা দীর্ঘ এ পথ অতিক্রম করেন। অবশ্য এসব এলাকায় গাড়ি চলাচলের জন্য আলাদা রাস্তা এবং ইলেকট্রিক ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে। হাঁটাপথকে লাল রঙ দিয়ে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। এই পথে কোনো যানবাহন প্রবেশের অনুমতি নেই।
তীব্র গরমের সময় এই পথে হাঁটার সুবিধার্থে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। এরই অংশ হিসেবে আরাফাতের ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরার পাশে রাস্তার অ্যাসফাল্ট এক প্রকার সাদা উপকরণ দিয়ে ঢাকা হয়েছে। তা প্রায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমতে সাহায্য করবে।
জানা গেছে, তীব্র তাপ থেকে সুরক্ষায় ইতিমধ্যে মসজিদে নামিরার চারপাশে ২৫ হাজার বর্গমিটারের বেশি এলাকায় এ উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে হজযাত্রীরা সূর্যের তীব্র তাপ থেকে রক্ষা পাবে এবং ঠাণ্ডা অনুভূতি লাভ করবে।
বিজ্ঞাপন
নিয়ম অনুসারে হজপালনের জন্য মিনা থেকে আমল শুরু করতে হয়। পরে মিনা থেকে আরাফাতের ময়দান হয়ে মুজদালিফায় রাত কাটিয়ে মিনায় কঙ্কর নিক্ষেপ করে নির্দিষ্ট তাঁবুতে অবস্থান কিংবা মক্কায় গিয়ে তওয়াফ করতে হয়। এই পুরো এলাকায় হজযাত্রীদের হাঁটার জন্য আলাদা রাস্তা রয়েছে। ওই রাস্তা প্রখর রোদের সময়েও গরম হয় না এবং ওপর থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে পানি ছিটানো হয়- পরিবেশ ঠান্ডা রাখার জন্য।
গত বছর শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের স্থান জামারাত এলাকায় যাওয়ার পথে এ উপাদানটি ব্যবহার করা হয়েছিল।
সিলেটের উছমানপুর জামে মসজিদ। অনেকের কাছে এটি ‘গায়েবি মসজিদ’ হিসেবে পরিচিত। প্রায় পাঁচ শ বছর আগে সুলতানি আমলে নির্মিত এই মসজিদটিকে ঘিরে নানা মিথ আছে। আয়তনে খুব ছোট এই মসজিদে নামাজ পড়তে পারেন মাত্র ৫০ জন। সুলতানি আমলে ১৫৩০ থেকে ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মসজিদটি নির্মিত হয়।
প্রচলিত আছে, একসময় মসজিদটি টিলা ও জঙ্গলের আড়ালে হারিয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর জঙ্গল ও টিলা কেটে মসজিদ আবার পুনরুদ্ধার করা হয়। সেই থেকে এটি ‘গায়েবি মসজিদ’ নামে পরিচয় পায়।
মসজিদটি দেখতে অনেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে। জানা গেছে, একসময় নবাব আলীবর্দী খান এবং পরে সুবাদার নজমুদ্দৌলা মীর নজমুদ্দীন আলী খান মসজিদের ব্যয় নির্বাহের জন্য গ্রামের বিশিষ্টজন সৈয়দ খয়রুল্লাহকে ১৮০১ সালে সনদের মাধ্যমে (ফারসি ভাষার সনদ জেলা কালেক্টরেটে সংরক্ষিত আছে) কিছু জমি দান করেন, যাতে জমির আয় দিয়ে মসজিদ পরিচালনা করা যায়। পরবর্তী সময়ে খয়রুল্লাহর বংশধররা ১৯৯৫ সালে মসজিদসহ মসজিদের ভূ-সম্পত্তি ওয়াকফ তালিকাভুক্ত করেন।
ওসমানীনগরের উছমানপুরের গায়েবি মসজিদটি চতুর্ভুজ আকৃতির। এর দৈর্ঘ্য ৩২ ফুট ও প্রস্থ ৩২ ফুট। চতুর্ভুজ আকৃতির হলেও ওপর দিকে উঠতে উঠতে ক্রমেই গোল হয়ে গম্বুজের সঙ্গে গিয়ে মিশেছে এর কাঠামো। মসজিদের দেয়াল ও ছাদে প্রাচীন আমলের নকশার কারুকাজ। দুই দিকে একটি করে জানালা এবং পূর্ব দিকে বিশাল প্রবেশ দ্বারের সঙ্গেই দুই পাশে আরো দুটি ছোট প্রবেশ দ্বার আছে। নানা গবেষণা ও স্থাপত্যবিদদের পর্যালোচনা বলছে, এটি সুলতানি আমলের মসজিদ।
শুধু সিলেটে নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আছে কথিত অনেক গায়েবি মসজিদ। যেমন- দীর্ঘদিন পর আবিষ্কৃত হওয়া ময়মনসিংহের নান্দাইলের মুশুল্লি ইউনিয়নের নগরকুচুরী গ্রামে প্রায় এক হাজার ২০০ বছর আগের গায়েবি মসজিদে সহসাই ভেসে এলো আজানের ধ্বনি। লোকবিশ্বাস, শাহ সুলতান কমরুদ্দিন রুমির (রহ.) সময়ে মসজিদটি অলৌকিকভাবে তৈরি হয়। এটি লোকবিশ্বাসের গায়েবি মসজিদ। মসজিদের আছে পুরনো শিল্পসুষমা, ইটগুলো সাধারণের চেয়ে ভিন্ন আকৃতির এবং দেয়ালের প্রস্থ দেড় হাত।
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের রূপসা গ্রামে আছে গায়েবি মসজিদ। মসজিদসংলগ্ন মাজার থেকে অনুমিত, কোনো এক দরবেশ ইবাদতের জন্য সবার অলক্ষে মসজিদটি নির্মাণ করেন। লোকবিশ্বাস- এখানের মসজিদ, মাজার গায়েবিভাবে তৈরি হয়েছে।
বরিশালের বাকেরগঞ্জে আছে নিয়ামতি গায়েবি মসজিদ। জনশ্রুতি আছে, প্রায় ২০০ বছর আগে জিনেরা এক রাতে মসজিদটি তৈরি করে দেয়।
কিশোরগঞ্জের গুরাই ইউনিয়নের শাহি মসজিদ ৪০০ বছরের প্রাচীন এবং লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, মসজিদটি গায়েবিভাবে নির্মিত।
জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানি এলাকায় ৫০০ বছর আগে গড়ে ওঠে একটি গায়েবি মসজিদ। জানা যায়, এলাকায় আগত কোনো এক পীর-ফকির ইবাদতের জন্য নির্জনস্থান বেছে নেন, তার অলৌকিক ক্ষমতায় এক রাতে মসজিদটি নির্মিত হয়ে যায়।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ছোট কুমিরা ইউনিয়নের মসজিদ্দা গ্রামের হাম্মাদিয়া মসজিদ, চট্টগ্রামের দ্বিতীয় প্রাচীন মসজিদ। কে বা কারা কবে মসজিদটি বানিয়েছে- তা কারো জানা নেই, তাই গোলাপি রঙের এ মসজিদটিকে সাধারণ মানুষ গায়েবি মসজিদ হিসেবে জানে।
ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের ফকিরপাড়ায় আছে একটি গায়েবি মসজিদ। প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর আগে মোগল আমলের কিছু সুফিসাধক মসজিদটি নির্মাণ করেন।
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বান্দুরা গ্রামে আছে প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন ভাঙা মসজিদ। সুবেদার ইসলাম খাঁ ১৬১৫ সালে এখানে একটি শাহি মসজিদ নির্মাণ করালেও তা কালেরগর্ভে হারিয়ে যায়। ১৮৮০ সালে সহসাই মসজিদটির সন্ধান মেলে। তখন থেকেই মসজিদটি পরিচিত ভাঙা মসজিদ, গায়েবি মসজিদ নামে।
কথিত আছে, জিলাদপুরে (মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল) মসজিদ বানানোর জমিতে মাপজোখ করতে করতেই সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে যায়। কিন্তু পরের দিন সকালে সবাই দেখে সেখানে সুন্দর একটি মসজিদ তৈরি হয়ে গেছে। হাজার বছরের প্রাচীন এ মসজিদটি এলাকাবাসীর কাছে গায়েবি মসজিদ ও অলৌকিকত্বের প্রতীক।
প্রায় ২০০ বছর আগের কথা, সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের দারোগারহাটের কৃষক আবদুল গফুর শাহের পেশা ছিল গরু-বাছুর পালন। একদিন তার একটি বাছুর পাহাড়ে হারিয়ে গেলে তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক দিন পর পাহাড়ের উঁচুস্থান থেকে বাছুরের ডাক শুনে গফুর গিয়ে দেখেন সেখানে একটি নামাজের স্থান। জনমানবহীন এ স্থানে কে নামাজ আদায় করেন, এ রহস্য ক্রমে ঘনীভূত হয়। তখন তিনি সেখানে একটি মসজিদ তৈরি করলেন। এরপর পাহাড় থেকে নিয়মিত আজানের ধ্বনি শোনা যেত। এভাবেই মসজিদটির নাম হয় গায়েবি মসজিদ।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারে রয়েছে সুলতানি আমলের ১৯টি মসজিদ। ৭০০ বছরের প্রাচীন এমসজিদগুলো মাটিচাপা পড়ে ছিল, এখনো সাতটি মসজিদ রয়েছে মাটির নিচে। মসজিদগুলোর অন্যতম- সাতগাছিয়া আদিনা মসজিদ, গলাকাটা মসজিদ, হসিলবাগ মসজিদ, নুনগোলা মসজিদ, জোড় বাংলা মসজিদ ইত্যাদি। এই মসজিদগুলো এলাকায় বারোবাজার মাটির নিচের গায়েবি মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদগুলোর প্রত্ন ও পর্যটন গুরুত্ব রয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় এবার নিয়ে টানা তিনবার শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে হংকং। মার্সার কস্ট অব লিভিং সার্ভে থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। বিশ্বের ২২৬টি শহর নিয়ে এই জরিপ করা হয়েছে। জরিপটিতে প্রতিটি শহরের পরিবহন, খাদ্য, পোশাক, গৃহস্থালিসামগ্রী, বিনোদনসহ ২০০-এর বেশি সূচক বিবেচনা করা হয়েছে। এরপর বিভিন্ন শহরের মধ্যে জীবনযাত্রার ব্যয়ের মধ্যে তুলনামূলক হিসাব করা হয়েছে। এমন ব্যয়বহুল এলাকায়ও থেমে নেই ইসলাম ও মুসলমানদের অগ্রযাত্রা।
চীনের বিশেষ প্রাশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে ইসলাম। ১৯৯৩ সালে এ অঞ্চলে মুসলমানের সংখ্যা ছিল ৬০ হাজার আর ২০১৬ সালে মুসলমানের সংখ্যা তিন লাখ অতিক্রম করে। ২০১৪ সালের পরিসংখ্যান মতে হংকংয়ে মুসলিম জনসংখ্যা ৪.১ ভাগে উন্নীত হয়। ১১১০.১৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের হংকংয়ের বর্তমান জনসংখ্যা ৭৫ লাখের কাছাকাছি।
বৌদ্ধ, তাওবাদ ও খ্রিস্ট ধর্মের পর ইসলাম হংকংয়ের চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম। তবে হংকংয়ের বিপুলসংখ্যক মানুষ নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী। হংকংয়ে বসবাসকারী মুসলিমদের মধ্যে ৬০ শতাংশ ইন্দোনেশিয়ান। এ ছাড়া ৪০ হাজার চীনা মুসলিম, ৩০ হাজার পাকিস্তানি মুসলিম রয়েছে।
মুসলিমদের সঙ্গে সঙ্গে হংকংয়ে ইসলামি সংগঠন ও হালাল রেস্টুরেন্টের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
ধারণা করা হয়, আজ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার বছর আগে হংকং ভূমির জন্ম হয় এবং ছয় হাজার বছর আগে সেখানে মানববসতি গড়ে ওঠে। খ্রিস্টপূর্ব ২১৪ সালে হংকংকে কিন সাম্রাজ্য হংকংকে চীনের অন্তর্ভুক্ত করে। তবে ১৮৪১ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার পর আধুনিক হংকংয়ের যাত্রা শুরু হয়।
স্বীকৃতি ইতিহাস অনুযায়ী ব্রিটিশ বাহিনীর সদস্য হিসেবে ভারতীয় মুসলিমরা হংকংয়ে পদার্পণ করলে সেখানে ইসলাম বিকশিত হতে শুরু করে। ব্রিটিশ প্রশাসনই হংকংয়ে মসজিদ ও মুসলিম কবরস্থান নির্মাণের জন্য জায়গা প্রদান করে। সে সময় আসা বেশির ভাগ মুসলিমই ছিলেন সেনা সদস্য। তবে তাদের মধ্যে মুসলিম ব্যবসায়ীও ছিল।
ক্রমবর্ধমান মুসলিমরা একটি জামে মসজিদও নির্মাণ করেছে। ৩০ শেলি স্ট্রিটে ১৮৫০ সালে যার সূচনা হয়েছিল। ১৯১৫ সালে তার পুনর্নির্মাণ হয়। তারপর থেকে তা এখনো দাঁড়িয়ে আছে আশপাশের সুউচ্চ ভবনের ছায়ায়।
হংকংয়ের দ্বিতীয় মসজিদ নির্মিত হয় ১৮৯৬ সালে নাথান রোডে ভিক্টোরিয়া হার্বারের পাশে, যা কলিন মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার নামে পরিচিত। ১৯৭৬ সালে সিম শ সুইয়ের মধ্য দিয়ে রেললাইনের টানেল করার সময় মসজিদটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৮০ সালে তা ভেঙে পুনর্নির্মাণ করা হয়।
মসজিদে আম্মার হংকংয়ের তৃতীয় মসজিদ। ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত মসজিদের নামের সঙ্গে ‘সাদিক’ শব্দটি পরে যুক্ত করা হয়। সাদিক ছিলেন এক চীনা মুসলিম স্থপতি। তিনি মসজিদে আম্মারের প্রতিষ্ঠাতা ও নকশাকারী। একটি নির্মাণাধীন মসজিদসহ বর্তমানে হংকংয়ে মসজিদের সংখ্যা সাতটি। এ ছাড়া মুসলিমদের জন্য শতাধিক স্বীকৃত হালাল রেস্টুরেন্ট, দশটি ইসলামিক স্কুল, কয়েকটি মাদরাসা ও দুটি পৃথক কবরস্থান রয়েছে।
ব্রিটিশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান এইচএসবিসি ইসলামি অর্থব্যবস্থা (Islamic finance system) প্রবর্তন করে। ২০০৭ হংকংয়ে অবস্থিত ‘আরব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ প্রতিষ্ঠা করে ‘এইচকে ইসলামিক ইনডেক্স।’ ইসলামিক ইউনিয়ন অব হংকং, ইসলামিক কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন, হংকং ইসলামিক ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশন, ইউনাইটেড মুসলিমস অ্যাসোসিয়েশন অব হংকং অত্র অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য ইসলামি সংগঠন।
জিলহজ মাসে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৪ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এবার বাংলাদেশ থেকে হজপালনের সুযোগ পাবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। ইতোমধ্যে ২০২৫ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সময় খুব বেশি নেই, অল্প সময়ের মধ্যেই ২০২৫ সালে হজপালনেচ্ছুকদের হজের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সৌদি আরবে ভাষার ভিন্নতা, আবহাওয়া ও নানা কারণে অনেক হজযাত্রী সমস্যায় পড়েন। কয়েকবার হজপালন করেছেন, এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল- কিছুটা ধারণা থাকলে, সচেতন হলে অনেক সমস্যা দূর করা যায়। তাই পাঠকের সুবিধার্থে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো-
করণীয় প্রথমে হজের নিবন্ধনের কাজ শেষ করা। সরকারি মাধ্যমে না বেসরকারি মাধ্যমে হজে যাবেন, সেটা নির্ধারণ করা। প্যাকেজের সুবিধা-অসুবিধা ভালোভাবে বুঝে নেওয়া। পাসপোর্ট করা না থাকলে এখনই জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিল রেখে পাসপোর্ট করা। এবার ৬৫ বা এর বেশি বয়সীরা হজে যেতে পারবেন। হজযাত্রীদের পাসপোর্টের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে হবে। সম্ভব হলে নিজের পাসপোর্ট নিজে করান। কাউকে দিয়ে করালেও আপনার নাম-ঠিকানা পাসপোর্টে ঠিক আছে কি না, যাচাই করে নিন।
তবে ক্যান্সার, অ্যাডভান্সড কার্ডিয়াক, লিভার সিরোসিস, কিডনি রোগ, সংক্রামক যক্ষা, ডিমেনশিয়া প্রভৃতি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত এবং গর্ভবতী নারী ও চলাচলে অক্ষম ব্যক্তিদেরকে হজের নিবন্ধন না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
লেনদেনে সতর্কতা হজ প্যাকেজের পুরো অর্থ শুধু সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা সরাসরি এজেন্সিতে জমা দিয়ে হজযাত্রীদের টাকা পরিশোধের রসিদ সংরক্ষণ করতে হবে। কোনোভাবেই মধ্যস্বত্বভোগীদের সঙ্গে লেনদেন করা যাবে না। হজযাত্রী নারী ও শিশু থাকলে মাহরামসহ একসঙ্গে টাকা জমা দিতে হবে। এছাড়া কোরবানির খরচ হিসেবে প্রত্যেক হজযাত্রীকে (সাড়ে সাতশ’ রিয়াল) আলাদা নিতে হবে। ঘোষিত হজ প্যাকেজের চেয়ে কম টাকায় হজে গেলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কোনোভাবেই মধ্যস্বত্বভোগী, দালাল বা তথাকথিত মোয়াল্লেমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন না। কোন কোন এজেন্সির বিরুদ্ধে সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ রয়েছে, তা যাচাই করুন।
হজ প্যাকেজ ও খরচ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা টাকা কমবেশির ভিত্তিতে নয়, প্যাকেজের সুবিধাদি দেখে, শুনে, বুঝে এজেন্সি বাছাই করবেন। বিশেষ করে বাসাভাড়া, হজের সময় মিনায় তাঁবুতে বা আজিজিয়ায় থাকা না থাকা ইত্যাদি আগে থেকে জেনে নিতে হবে। এজেন্সির লোক হজপালনে কতটা সহায়তা করবে, কোন কোন জায়গায় নিয়ে যাবে, সব কিছু জেনে নেবেন।
হজ প্যাকেজ কত দিন, সৌদি আরবে অবস্থানের মেয়াদ কত দিন, কোথায় কত দিন অবস্থান এবং তা কীভাবে, বিস্তারিত জানতে হবে। গত কয়েক বছর কত নম্বর মোয়াল্লেমের অধীন ওই এজেন্সি হজপালন করছে, তা জানতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশের জন্য ১ থেকে ১১৫টি মোয়াল্লেম রয়েছে। দাম অনুযায়ী জামারা (শয়তানকে পাথর মারার স্থান) থেকে মিনার তাঁবুর দূরত্ব নির্ভর করে। এখানে বাংলাদেশি এজেন্সির তৎক্ষণাৎ করণীয় কিছু থাকে না, তবে অতিরিক্ত সেবা খরচ দিয়ে কিছু সেবা মিলে। এটা নিয়ে মিনায় বির্তক হয়। যদিও তখন হজের জন্য হাজি সাহেব এবং এজেন্সির মালিক সবাই এহরাম অবস্থায় থাকেন।
মক্কা-মদিনায় বাসার অবস্থান মক্কায় বাসার ধরন ও তা কাবা শরিফ থেকে কত দূরে, বাসায় লিফট আছে কি না, বাসার প্রতি কক্ষে কতজন এবং বাথরুম কতজনের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে, জেনে নেবেন। একই কথা মদিনার বাসার জন্য প্রযোজ্য।
ফিতরা ফিতরা বা স্থানান্তর (অর্থাৎ মক্কায় বাসা কাবা শরিফের কাছে-দূরে একাধিকবার বদল করাকে ফিতরা বলে) আছে কি না। হজের আগে না পরে ফিতরা হবে, তা জানতে হবে।
খাবার ও নাস্তা সৌদি আরবে পৌঁছে তিন বেলা খাবার দেওয়া হবে কি না বা বিকল্প ব্যবস্থা কী, তা জানতে হবে।
দমে শোকর বা হজের কোরবানি প্রতারণা এড়াতে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক বা আইডিবির কুপন কিনে দেওয়া ভালো। এর বাইরে নিজে অথবা এজেন্সির লোক ছাগল কিনে কোরবানি দেবেন অথবা কোরবানি সম্পর্কে হাজি কীভাবে নিশ্চিত হবেন, তা-ও আগে থেকে জেনে নিতে হবে। এজেন্সিকে দায়িত্ব দিলে বিশ্বাসের সঙ্গে দেবেন, প্রথমে বিশ্বাস করে পরে অবিশ্বাস করে সম্পর্ক নষ্ট করবেন না। প্রয়োজনে এজেন্সির মালিকের সঙ্গে প্রতিনিধি দিয়ে দেবেন।
মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা হজের সফরে প্রচুর হাঁটাচলা করতে হয়। চাইলে যখন-তখন যানবাহন পাওয়া যায় না। এটাও মাথায় রাখা। উমরায় তাওয়াফ, সাঈ, মিনা, জামারায় পাথর মারা, মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে হজের তাওয়াফ, সাঈ করতে প্রচুর হাঁটাচলা করতে হয়। এসবের জন্য মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা জরুরি। মিনা, আরাফায় খাবার, যাতায়াত, মক্কায় তাওয়াফ, সাঈ করতে যাওয়ার বিষয়ে কী ব্যবস্থা এবং মোয়াল্লেম কী কী সুবিধা দেবেন, তা-ও বিস্তারিত জেনে নেবেন। আপনার সঙ্গী অসুস্থ বা দুর্বল হলে বিকল্প ব্যবস্থাও জেনে নিতে হবে।
হজের নিয়মকানুন জানা প্রয়োজনীয় বই-পুস্তক, হজ গাইড সংগ্রহ করে পড়ুন। হজসংক্রান্ত নিয়মকানুন জানুন। প্রয়োজনে যারা হজে গেছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করুন। বিভিন্ন জায় হজ প্রশিক্ষণ হয়, সেগুলোতে যোগ দিন।
রাস্তাঘাট সম্পর্কে ধারণা রাখা সৌদি আরবের টিভি চ্যানেলে ২৪ ঘণ্টা মসজিদে নববি ও কাবা শরিফে তাওয়াফ সম্প্রচার করে, সম্ভব হলে ওই সব চ্যানেল দেখলে আগে থেকে উমরা, তাওয়াফ ও মসজিদের ঐতিহাসিক স্থানগুলো সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। এর বাইরে ছাপানো অথবা ইন্টারনেটে মক্কা, মদিনা, মিনা, আরাফাতের মানচিত্র পাওয়া যায়। সম্ভব হলে মানচিত্র দেখুন, তাহলে ওখানকার রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বাইতুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. হাবিবুর রহমান ৪৯ দিনে কোরআনে কারিম মুখস্থ করে হাফেজ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। তার বয়স মাত্র ৮ বছর।
মেধাবী এই শিশু নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বীজবাগ ইউনিয়নের বালিয়াকান্দী গ্রামের সৌদি প্রবাসী মাইনুদ্দিন রাসেলের ছেলে।
জানা গেছে, মো. হাবিব ২০২২ সালে এক বছর নুরানী পদ্ধতিতে পড়ার পর ২০২৩ সালের মাঝামাঝি বাইতুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল হিফজ মাদরাসায় ভর্তি হয়ে নাজেরা (কোরআন দেখে পড়া) পড়ে। এরপর ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ১৯ তারিখে কোরআন শরিফ হেফজ (মুখস্থ) শুরু করে। এরপর ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৪৯ দিনে পুরো কোরআন মুখস্ত করে সে। এমন বিরল কৃতিত্ব অর্জনে তার শিক্ষক ও পরিবারের লোকরা আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত।
হেফজ শুরুর পর সে প্রথমে পাঁচ পৃষ্ঠা, তারপর ১০পৃষ্ঠা ও ১৫ পৃষ্ঠা করে মুখস্থ করত।
কোরআনে কারিম মুখস্থ করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এটি ইবাদত ও পরম সৌভাগ্যের বিষয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরআনে কারিম মুখস্থ করার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন। কোরআনের হাফেজদের পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশে প্রচুর হেফজ মাদরাসা রয়েছে, যেখানে শিশু-কিশোররা কোরআনের তালিম নেওয়ার পাশাপাশি হেফজ করে থাকেন।
সম্প্রতি তুরস্কে অনুষ্ঠিত পবিত্র কোরআন হেফজ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশের হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ। বিমানবন্দরে নামার পর তাকে ফুলেল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এর আগে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের হাফেজরা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন।