আশুরার রোজা রাখার নিয়ম
মহররম মাস এলেই স্মরণ হয় আনন্দ ও বেদনা ভারাক্রান্ত ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর কথা। হৃদয়ের স্মৃতিপটে ভেসে উঠে কারবালার র্মমান্তিক দৃশ্যপট। ইসলামের ইতিহাসে মহররম মাস খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আল্লাহতায়ালা যে চারটি মাসে যুদ্ধ বিগ্রহ হারাম ঘোষণা করেছেন তার মধ্যে মহররম মাস অন্যতম। এ মাসের দশমদিন পবিত্র আশুরা।
মহররম মাস ও আশুরা সর্ম্পকে পবিত্র কোরআন-হাদিসে যা এসেছে তা হলো, এটা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ সময়। কোরআনে কারিমের ভাষায় ‘আরবাআতুন হুরুম’-অর্থাৎ চার সম্মানিত মাসের অন্যতম এই মাস। এ মাসে রোজা রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ -সহিহ মুসলিম : ২/৩৬৮
এর মধ্যে আশুরার রোজার ফজিলত আরও বেশি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বলেন, ‘আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’ -সহিহ বোখারি : ১/২১৮
হজরত আলী (রা.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমজানের পর আর কোন মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট জনৈক সাহাবি করেছিলেন, তখন আমি তার খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রাখ। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহতায়ালা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’-জামে তিরমিজি : ১/১৫৭
- বছর শুরু হোক সুন্দর জীবনের প্রত্যয়ে
- হিজরি সন গণনার গুরুত্ব
- মহররম মাসে করণীয়-বর্জনীয় ১০ বিষয়
- হিজরি নববর্ষের সূচনা যেভাবে
অন্য হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহতায়ালা অতীতের এক বছরের (সগিরা) গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ -সহিহ মুসলিম : ১/৩৬৭
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। তিনি ওই দিন রোজা রাখতেন এবং ওই দিন রোজা রাখতে উৎসাহিত করেছেন। বর্ণিত আছে যে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার তাৎপর্য বর্ণনাকালে সাহাবায়ে কেরাম আরজ করেন, তবে কী আল্লাহতায়ালা এ দিনটিকে সমস্ত দিনের চেয়ে অধিক মর্যাদা দিয়েছেন? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জবাব দিলেন- হ্যাঁ। এরপর তিনি ইরশাদ করেন, আল্লাহতায়ালা আসমান জমিন, লওহ, কলম, সাগর পর্বত এই দিনে সৃষ্টি করেছেন।
ইসলাম পূর্বকালে বিভিন্ন জাতি বিভিন্ন কারণে এই দিন রোজা রাখতো। হাদিসে এসেছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিনে রোজা রাখতে দেখে তার কারণ জানতে চাইলেন। ইহুদিরা জবাব দিল, এই দিন আল্লাহতায়ালা ফেরাউনকে সাগরে নিমজ্জিত করে হজরত মুসা (আ.) কে বিজয়ী করেছেন। তাই এ দিনটিতে রোজা রাখি।
এ কথা শুনে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তোমাদের চেয়েও নিবিড়। অতঃপর তিনি সাহাবায়ে কেরামকে এদিন রোজা রাখার নির্দেশ দেন। বর্ণিত আছে যে, আশুরার দিন রোজা রাখলে ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্য হয়ে যায় বিধায় হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার পূর্বের বা পরের দিন আরেকটি রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।