তুরস্কের আরারাত পর্বতেই কি ভিড়েছিল নুহ (আ.)-এর কিশতি

  • এইচ এম মনিরুজ্জামান, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

তুরস্কের আরারাত পর্বতের এই জায়গায় নুহ (আ.)-এর কিশতি ভিড়েছিল বলে ধারণা করা হয়, ছবি: সংগৃহীত

তুরস্কের আরারাত পর্বতের এই জায়গায় নুহ (আ.)-এর কিশতি ভিড়েছিল বলে ধারণা করা হয়, ছবি: সংগৃহীত

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের ধারাবাহিক নিয়মে দিনরাত্রির পরির্বতনের মাধ্যমে বুধবার হিজরি বছরের ১০ মহররম। দিনটি আশুরা হিসেবে পরিচিত। ইতিহাসে বাঁকে বাঁকে পৃথিবীতে দিনটিতে ঘটেছে অসংখ্য স্মরণীয় ঘটনা। এর অন্যতম হলো, মহাপ্লাবনের পর হজরত নুহ (আ.)-এর কিশতি জুদি পর্বতে স্থির হওয়ার ঘটনা।

এক হাদিসে এসেছে, ‘এটি সেদিন, যেদিন হজরত নুহ (আ.)-এর কিশতি জুদি পর্বতে স্থির হয়েছিল। তাই হজরত নুহ (আ.) আল্লাহর শুকরিয়াস্বরূপ সেদিন রোজা রেখেছিলেন।’ -মুসনাদে আহমাদ : ২/৩৫৯

বিজ্ঞাপন

হজরত নুহ (আ.) সাড়ে নয় শত বছর যাবৎ তাওহিদের বাণী প্রচারের পর যখন সে যুগের মানুষ আল্লাহর বিধিনিষেধ পালনে অস্বীকৃতি জানায়, তখন নেমে আসে আল্লাহর গজব। ফলে হজরত নুহ (আ.)-এর সম্প্রদায় ধ্বংস হয়েছে আর রক্ষা পেয়েছে শুধু তাওহিদে বিশ্বাসীরা।

আশুরার দিনেই মহাপ্লাবনকালে হজরত নুহ (আ.)-এর অনুসারীদের নিয়ে জুদি পাহাড়ের পাদদেশে এসে থেমেছিল নৌকাটি। ঘটনাটি পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা এভাবে বর্ননা করেছেন, ‘আমি নুহকে তার সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায় তোমরা আল্লাহর বন্দেগি করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোনো মাবুদ নেই। তোমরা কি ভয় করো না। তখন তার সম্প্রদায়ের কাফের প্রধানরা বলেছিল এতো তোমাদের মতোই একজন মানুষ ছাড়া কিছুই নয়। সে তোমাদের ওপর নেতৃত্ব করতে চায়। আল্লাহ ইচ্ছা করলে ফেরেশতাই নাজিল করতেন। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে এরুপ কথা শুনিনি। সুতরাং সে তো এক উন্মাদ ব্যক্তি ছাড়া কিছু নয়। সুতরাং কিছুকাল অপেক্ষা করো। নুহ (আ.) বলেছিলেন, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে সাহায্য করো, কেননা তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে। অতঃপর আমি তার কাছে আদেশ প্রেরণ করলাম যে, তুমি আমার দৃষ্টির সামনে এবং আমার নির্দেশে নৌকা তৈরি করো। এরপর যখন আমার আদেশ আসে এবং চুল্লি প্লাবিত হয়, তখন নৌকায় তুলে নাও প্রত্যেক জীবের এক জোড়া এবং তোমার পরিবারবর্গকেও, তাদের মধ্যে যাদের বিপক্ষে পূর্বে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাদের ছাড়া এবং তুমি জালেমদের সম্পর্কে আমাকে কিছু বলো না, নিশ্চয় তারা নিমজ্জিত হবে। যখন তুমি ও তোমার সঙ্গীরা নৌকায় আরোহন করবে, তখন বলো, আল্লাহর শোকর, যিনি আমাদেরকে জালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে উদ্ধার করেছেন। আরও বলো, পালনকর্তা আমাকে কল্যাণকরভাবে নামিয়ে দাও, তুমি শ্রেষ্ঠ অবতরণকারী।’ -সুরা মুমিনুন : ২৩-২৯

বিজ্ঞাপন

তখন আল্লাহতায়ালা নুহ (আ.)-এর নৌকা জুদি পাহাড়ে থামিয়ে দেন এবং তারা সেখানে নৌকা থেকে অবতরণ করেন। আর এ দিনটি ছিল আশুরার দিন।

হজরত নুহ (আ.)-এর সময় যখন মহাপ্লাবন শুরু হয় তখন নবী নুহ (আ.) আল্লাহতায়ালার আদেশে বিশাল কাঠের নৌকা তৈরি করে তাতে প্রত্যেক জীব-জন্তু ও প্রজাতি থেকে এক জোড়া করে নৌকায় তুলে নেন। সেই সঙ্গে তার দাওয়াতে যেসব বিশ্বাসী নর-নারী সাড়া দিয়েছিল তাদেরকেও তিনি নৌকায় তুলেছিলেন। আল্লাহর গজবে টানা ৪১ দিনের ভারীবৃষ্টিতে যখন সমগ্র দুনিয়া প্লাবিত হয়ে গেলো তখন আল্লাহর ইচ্ছায় নৌকা তুরস্কের জুদি পাহাড়ে গিয়ে থামে। পরবর্তীতে সেই নৌকা জুদি পাহাড়ে কালের বিবর্তনে ধ্বংস হয়ে পাহাড়ের উঁচু টিবিতে পরিণত হয়।

হজরত নুহ (আ.)-এর নৌকা যে আল্লাহতায়ালার নিদর্শনরূপে পৃথিবীতে আজও টিকে আছে তার প্রমাণ পবিত্র কোরআন নিজেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি নুহকে বহন করলাম তাতে যা ছিলো তক্তা ও পেরেক সম্বলিত, তা ভেসে চলেছিলো চোখের সামনে, এটা তার পক্ষ থেকে প্রতিশোধ ছিল, যাকে প্রত্যাখান করা হয়েছিলো। আর অবশ্য এটিকে রেখে দিয়েছি এক নিদর্শনরূপে। অতএব কেউ কি আছে যে, এ নিদর্শন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে?’ -সুরা কামার : ১৩-১৫

চীনা ও তুর্কী গবেষেকদের সমন্বয়ে গঠিত নোয়াস আর্ক মিনিস্ট্রিজ ইন্টারন্যাশনাল নামক হংকংভিত্তিক একটি সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, তুরস্কের মাউন্ট আরারাত (জুদি পর্বত)-এর ১৪ হাজার ৭০০ ফুট উঁচুতে স্তরীভূত কাঠের জাহাজের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর কয়েকটি ছবি প্রকাশ করে তারা দেখিয়েছেন, জাহাজটির গঠন কাঠামো এবং অভ্যন্তরীণ অন্যান্য নিদর্শন থেকে তারা ৯৯.৯ ভাগ নিশ্চিত যে, এটিই কোরআন মাজিদ ও বাইবেলে উল্লেখিত নূহের কিশতি।

সংস্থাটি জাহাজের কার্বন পরীক্ষাও সম্পন্ন করেছেন। তারা জানিয়েছেন, এ পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেছে স্তরীভূত কাঠের বয়স ৪,৮০০ বছর। অনুসন্ধানি দলের সদস্য ইয়ং উইং-চুং একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বলেছেন, আমরা ১০০ ভাগ নিশ্চিত নই যে এটা নুহের কিশতি, তবে আমরা ৯৯.৯ ভাগ নিশ্চিত যে এটাই সেই নুহ নবীর নৌকা।