মন্দ ও কটু কথা পরিহারে নবীর আদর্শ

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মন্দ কথা ও কাজ পরিহার করা ইসলামের শিক্ষা, ছবি: সংগৃহীত

মন্দ কথা ও কাজ পরিহার করা ইসলামের শিক্ষা, ছবি: সংগৃহীত

হজরত ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুল্ললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নমনীয় প্রকৃতির লোক ছিলেন। তার ভেতর-বাহির পরিষ্কার ছিল এবং তার ক্রোধ ও সন্তুষ্টি মুখমণ্ডল মোবারকেই প্রকাশ পেত। বেশি রাগের সময় তিনি দাড়ি মোবারকে বার বার হাত বুলাতেন। -ইবনে হাব্বান

হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারো সামনাসামনি তার অপছন্দনীয় কথা বলতেন না। -ইবনে হাব্বান

বিজ্ঞাপন

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার হলুদ রঙের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট আসলে, তাতে তিনি অসন্তুষ্ট হয়েও তাকে কিছু বলেননি, সে চলে গেলে বললেন, তাকে বলে দিয়ো সে যেন হলুদ রঙের পোশাক ছেড়ে দেয়। -সুনানে আবু দাউদ

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক গ্রাম্য ব্যক্তি নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে মসজিদে (নববিতে) পেশাব করতে শুরু করে। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) তাকে মারার জন্য উদ্যত হলেন, নবী কারিম (সা.) তাদেরকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, তাকে কিছু বলো না; পরে তাকে ডেকে এনে বুঝালেন। দেখ! মসজিদ পেশাব-পায়খানা করার জায়গা নয়।

বিজ্ঞাপন

অপর এক বর্ণনায় এসেছে যে, নবী কারিম (সা.) সাহাবাদের বললেন, তাকে ভয় দেখিয়ো না। বরং কাছে ডেকে আনো। -সহিহ বোখারি

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবা এক গ্রাম্য ব্যক্তি নবী কারিম (সা.)-এর কাছে কিছু চাইল। তিনি তা দান করে বললেন, আমি তোমার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করিনি? সে অস্বীকার করে বলল, উত্তম তো দূরের কথা মধ্যম ধরণের ব্যবহারও করেননি। তার এ কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম বিক্ষুব্ধ হয়ে মারার জন্যে প্রস্তুত হলে নবী কারিম (সা.) হাতের ইশারায় নিষেধ করে ঘরে চলে যান এবং পরে সেই গ্রাম্য ব্যক্তিকে ডেকে এনে আরো বেশি দান করে বললেন, কেমন এখন তো উত্তম ব্যবহার করেছি? সে বলল, হ্যাঁ, আপনার পরিজনকে এ দানের বিনিময়ে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন। নবী কারিম (সা.) বললেন, তুমি যা ইতিপূর্বে বলেছো, তা তোমার মনে আছে, সে জন্য আমার সাহাবাদের অন্তর ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। কাজেই এখন তুমি আমার সামনে যা বললে, এ কথাগুলোই আমার সাহাবিদের সামনে বলে তাদের অন্তরের ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি দূর করো, অবশ্য যদি এতে তোমার বিরক্তিবোধ না হয়। সে তা বলতে অস্বীকার করলো। পরের দিন সন্ধ্যায় নবী কারিম (সা.) বাইরে তাশরিফ এনে সাহাবায়ে কেরামদের (রা.) সম্বোধন করে বললেন, এ গ্রাম্য লোকটি গতকাল যা বলেছে তা হয়তো তোমাদের জানা আছে। পরে আমি তাকে আরো দান করলে সে বলেছ যে, আমার উত্তম ব্যবহারে সে সন্তুষ্ট হয়েছে। এ বলে নবী কারিম (সা.) গ্রাম্য ব্যক্তিকে বললেন, কি ভাই! ঠিক না? সে বলল, হ্যাঁ। আপনার পরিবারবর্গকে ওই দানের বিনিময়ে আল্লাহ আপনাকে বিনিময় দান করুন।

অতঃপর নবী কারিম (সা.) সাহাবাদের বললেন, আমার আর এ গ্রাম্য লোকটির উদাহরণ এমন, যেমন কোনো ব্যক্তির উট ছুটে পালাচ্ছে, আর লোকেরা তাকে ধরার জন্য পিছু ধাওয়া করেছে, তাতে ওই উটটি আরো ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আরো দ্রুতবেগে পালাতে শুরু করেছে। তখন সেই উটের মালিক চিৎকার করে বলল, তোমরা আমার উট ধরার এরুপ ব্যর্থ চেষ্টা আর করো না। আমি তাকে ধরার এবং বশীভূত করার ভালো কৌশল জানি। অতঃপর উটওয়ালা কিছু খাদ্য ইত্যাদির প্রলোভন দেখিয়ে উটটিকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করলে উটটি তার কাছে এসে বসে পড়ল। সে তখন তার হাওদা বেঁধে আরোহণ করল। অতঃপর নবী কারিম (সা.) বললেন, সেদিন এ ব্যক্তি যে কথাগুলো বলেছে, যদি তখন তোমাদের ওই অবস্থার ওপর ছেড়ে দিতাম, তোমরা হয়ত তাকে মেরেই ফেলতে, আর এ অবস্থায় সে দোজখবাসী হয়ে যেত। -ইবনে হাব্বান

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার যুদ্ধ চলাকালীন নবী কারিম (সা.)-এর খেদমতে আরজ করা হলো যে, এখন শত্রুদের ওপর অভিশাপ করাই আপনার জন্যে উপযোগী, নবী কারিম (সা.) উত্তর দিলেন, আমাকে রহমতস্বরুপ প্রেরণ করা হয়েছে, অভিশাপের জন্যে নয়। -সহিহ মুসলিম