কওমি শিক্ষার্থীদের বৈষম্যের অবসানে ১৩ প্রস্তাব

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাই, ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাই, ছবি: সংগৃহীত

কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বরাবরই বৈষম্যের শিকার। রাষ্ট্র, সমাজ ও মানবতার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকার পরও রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। সর্বশেষ বিগত সরকারের আমলে কওমি মাদরাসার তাকমিল তথা দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান দেওয়া হলেও এর আইনি দিকগুলো অস্পষ্ট। ফলে কওমি সনদের স্বীকৃতি হলেও এর যথাযথ মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন অধরা রয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আয়োজিত ‘বৈষম্য নিরসনে কওমি সনদের যথাযথ মূল্যায়ন ও বাস্তবায়নের’ দাবিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

সংগঠনের সভাপতি মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাই বলেন, ‘সনদের স্বীকৃতি এটা কোনো অনুকম্পা নয়; এটা কওমি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার। তাই এর যথাযথ মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন রাষ্ট্রকেই করতে হবে।’

বক্তারা আরও বলেন, কওমি মাদরাসার বিশেষ স্বকীয়তা আছে, নিজস্বতা আছে। তাই সনদের বাস্তবায়ন হতে হবে কওমির মৌলিকত্ব ও এর ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে আপন জায়গায় ঠিক রেখে। তারা বলেন, সনদের বাস্তবায়ন বলতে আমরা চাচ্ছি এতটুকু সুযোগ, যাতে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের মেধাকে মেলে ধরার সুযোগ পায়। উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রগুলোতে এবং যেকোনো প্রতিযোগিতায় বাধাহীনভাবে যেন তারা অংশগ্রহণ করতে পারে। তাদেরকে যেন সমাজের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করার সুযোগ কেউ না পায়। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ছাড়াও কওমি শিক্ষার্থীরা দেশে-বিদেশে বিভিন্নভাবে কষ্টসাধ্য করে নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছে, সুযোগ পেলে যা আরও বহুগুণে ত্বরান্বিত হবে। দেশ ও জাতি তাদের দ্বারা আরও বেশি উপকৃত হবে।

বিজ্ঞাপন

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন শাইখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, নারায়ণগঞ্জ ডিআইটি মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল আউয়াল, জামিয়াতুস-সুন্নাহর পরিচালক মাওলানা নিয়ামতুল্লাহ ফারিদী, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, জামিয়া নূরিয়া কামরাঙ্গীরচরের মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লা আমিন, মুফতি মুশতাকুন্নবী কুমিল্লা, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা হাসান জামিল, বিশিষ্ট দায়ী মাওলানা ফরিদ উদ্দিন আল মোবারক, মুফতি হেমায়েতুল্লাহ কাসেমী, মুফতি আব্দুর রাজ্জাক কাসেমী, মুফতি ইমাদ উদ্দিন, মাওলানা তাজ উদ্দিন হামিদী, মুফতি লুৎফর রহমান ফরায়েজী, মুফতি মাহমুদ মাদানী, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহিয়া, মাওলানা এনামুল হক মুসা, মাওলানা আতাউল করিম মাসুদ, মুফতি আবু মোহাম্মদ রাহমানী, মুফতি আম্মার হোসাইন, মাওলানা ইউনুস ঢালী, মুফতি তাজুল ইসলাম মোমেনশাহী, মুফতি সাকিবুল ইসলাম কাসেমী, তাকওয়া ফাউন্ডেশনের মাওলানা গাজী ইয়াকুব, মুফতি মোহাম্মদ আলী, মুফতি আমিমুল এহসান, আল-মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশের মাওলানা হামজা বিন শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করেন মুফতি আবদুল্লাহ মাসুম। সঞ্চালনায় ছিলেন মুফতি রেজাউল করীম আবরার, মুফতি ইসমাইল সিরাজী আল-মাদানি, মুফতি শামসুদ্দোহা আশরাফী, মুফতি আবদুল আজীজ কাসেমী ও মাওলানা নূরুল করীম আকরাম।

সেমিনারে স্বীকৃতির মানোন্নয়ন বিষয়ে ১০ দফা প্রস্তাবনা এবং ০২ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। প্রস্তাবনাগুলো হলো- ১. কওমি মাদরাসাসমূহের সনদ ইস্যু, স্বীকৃতি ও মানোন্নয়নের জন্য অনতিবিলম্বে আল-হাইয়াতুল উলইয়ার অধীনে ইউজিসির অনুমোদনক্রমে কওমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (National Qawmi University-NQU) প্রতিষ্ঠা করা।

২. দাওরায়ে হাদিস বা তাকমিলের সনদ ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি বিষয়ে কওমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রদান করা। ৩. তাকমিলের প্রয়োজনীয় শিক্ষাক্রম তৈরি, সিলেবাস পূণর্গঠন, পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ন সার্বিক বিষয় কওমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হবে। ৪. শুধু দাওরায়ে হাদিস নয়, বরং কওমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক হিসেবে ফজিলতের স্বতন্ত্র স্বীকৃতিও প্রদান করা।

৫. নাহবেমীর জামাতকে এসএসসি, কাফিয়া জামাতকে এইচএসসি মানের স্বীকৃতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষার অধীনে প্রদান করা। এ জন্য একটি স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম তৈরি করা। ৬. সব তাখাসসুস (অন্তত দুই বছর মেয়াদী)-কে নিজ নিজ সাবজেক্টে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা হিসেবে জাতীয় কওমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বীকৃতি ও সনদ প্রদান করা। এ জন্য জাতীয় কওমি বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্ববধানে একটি শিক্ষাক্রম তৈরি করা।

সিলেবাস বিষয়ে প্রস্তাবনাগুলো হলো- ৭. দাওরায়ে হাদিসের জন্য জাতীয় কওমি বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্ববধানে একটি শিক্ষাক্রম এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যেখানে বিদ্যমান সিলেবাস ৯০% বহাল থাকবে। ৮. ফজিলত স্তরের জন্য ইসলামি ভ্রান্ত মতবাদ বিষয়ক একটি প্রেজেন্টেশন সিলেবাসে যুক্ত থাকবে। এ জন্য তাকমিলের মতো একটি স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম তৈরি করা। ৯. এ ছাড়া নাহবেমির ও কাফিয়া জামাতসমূহে বাংলা, ইংরেজি ও অংকের প্রাথমিক পাঠদানের মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা।

উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে- ১০. সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডাবল মাস্টার্স এবং পিএইচডির সুযোগ প্রদান করা।

কর্মস্থলে: ১১. সরকারি বা বেসরকারি চাকরিতে উক্ত বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত যেসব পদ রেয়েছে, সেগুলোতে কওমি সনদকে গ্রহণ করা।

এর বাইরে যারা বিগত সময়ে উক্ত প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের আগে দাওরায়ে হাদিস বা তাকমিলে পাশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদেরকে পূর্বোক্ত প্রস্তাবনা অনুসারে অ্যাসাইনম্যান্ট পত্র লেখার শর্তে কওমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একই মানের মাস্টার্সের সনদ প্রদান করা। যারা ইতোমধ্যে তাখাসসুস সম্পন্ন করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে পূর্বোক্ত প্রস্তাবনা অনুসারে নির্ধারিত রিসার্চ পেপার জমা দেওয়ার শর্তে কওমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সংশ্লিষ্ট সনদ প্রদান করা।

কর্মসূচি : এক. ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত দেশব্যাপী জেলা পর্যায়ে দাবি বাস্তবায়নে সেমিনার ও শিক্ষা অফিসার বরাবর স্মারকলিপি পেশ। দুই. অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ঢাকায় জাতীয় সমাবেশ।