নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মসজিদে নববিতে শিশুরা মসজিদে আসত, খেলত এবং আনন্দ করত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের কখনো বাধা দেননি, তাদের ধমকও দেননি; বরং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে তাদের মধুর স্মৃতি রয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জন্য নামাজ সংক্ষিপ্ত করেছেন।
অথচ আমাদের সমাজের কেউ কেউ মসজিদে শিশুদের আগমন বা তাদের উপস্থিতিকে ভিন্ন চোখে দেখে। কেউ কেউ ভালো চোখে দেখলেও অনেকে বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে দেখে থাকে। তবে নিরপেক্ষভাবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করলে ভিন্ন ফলাফল সামনে আসে।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ‘ইনসাইড দ্য হারামাইন’ নামের এক ফেসবুক পেইজে দ্য মোস্ট লাক্সারিয়াস স্কুল ট্রিপ! (সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্কুল সফর) শিরোনামে কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একদল স্কুল শিক্ষার্থী হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা জিয়ারত ও রিয়াজুল জান্নাতে নামাজ আদায় করছে। হাজার হাজার মানুষ ছবিটি শেয়ার করেছেন ও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তবে ছবিটি মদিনার কোন স্কুলের বা কবে তারা মসজিদে নববিতে এসেছিলেন, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারীরা শিক্ষার্থীদের সৌভাগ্যবান উল্লেখ করে তাদের জন্য দোয়া করেছেন। অনেকেই বলছেন, ‘আহ! আমি যদি ওই দলের ছাত্র হিসেবে থাকতাম।’
একজন লিখেছেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মসজিদমুখী করে গড়ে তোলা, তাদের অন্তরে রাসুলের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে- এমন কাজ করা প্রত্যেক অভিভাবকের একান্ত দায়িত্ব। এমন শিক্ষা সফর সত্যিই আকর্ষণীয়।’
অনেকের মতে, ‘এটা সত্যিই আশীর্বাদ ভ্রমণ! একদিন এই শিশুরা বুঝতে পারবে, এই অভিজ্ঞতাটি কতটা মূল্যবান ছিল!’
হজরত শাদ্দাদ ইবনে আউস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন এশার নামাজের সময় হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের দিকে বের হয়ে এলেন। তখন তিনি হজরত হাসান অথবা হুসাইন (রা.)-কে বহন করে আনছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) সামনে অগ্রসর হয়ে তাকে রেখে দিলেন। এরপর নামাজের জন্য তাকবির বললেন ও নামাজ শুরু করলেন। নামাজের মধ্যে একটি সিজদা দীর্ঘ করলেন। (হাদিস বর্ণনানাকারী বলেন) আমার পিতা (শাদ্দাদ) বলেন, আমি আমার মাথা তুললাম এবং দেখলাম, ওই ছেলেটা রাসুল (সা.)-এর পিঠের ওপর রয়েছেন। আর তিনি সিজদারত অবস্থায় আছেন।
অতঃপর আমি আমার সিজদায় গেলাম। রাসুল (সা.) নামাজ শেষ করলে লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আপনার নামাজের মধ্যে একটি সিজদা এত দীর্ঘ করলেন এতে আমরা মনে করলাম, হয়তো কোনো ব্যাপার ঘটে থাকবে। অথবা আপনার ওপর অহি নাজিল হচ্ছে। তিনি বললেন, এর কোনোটাই ঘটেনি, বরং আমার ওই (অধস্তন) সন্তান আমাকে সাওয়ারি (বাহন) বানিয়েছিল। আমি তাড়াতাড়ি উঠতে অপছন্দ করলাম, যাতে সে তার কাজ সমাধা করতে পারে। -সুনানে নাসায়ি : ১১৪১
আল্লাহর রাসুল (সা.) এভাবেই মসজিদে শিশুসুলভ আচরণ সহ্য করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদা আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে এশার নামাজ পড়ছিলাম। রাসুল (সা.) যখন সিজদা দিতেন তখন হাসান-হুসাইন (রা.) লাফ দিয়ে রাসুল (সা.)-এর পিঠে উঠতেন। আর রাসুল (সা.) সিজদা থেকে মাথা তোলার সময় পেছন থেকে হাত দিয়ে তাদের নামিয়ে দিতেন। এভাবে রাসুল আবার সিজদা দিলে তারাও (হাসান-হুসাইন) আবার রাসুল (সা.)-এর পিঠে চড়তেন। এভাবে রাসুল (সা.) নামাজ শেষ করতেন। -মুসনাদে আহমদ : ১০৬৫৯
অন্য বর্ণনায় আছে, রাসুল (সা.) যখন সিজদা দিতেন তখন হাসান-হুসাইন (রা.) লাফ দিয়ে রাসুল (সা.)-এর পিঠে উঠতেন। তখন সাহাবারা তাদের নিষেধ করতে চাইলে রাসুল (সা.) সাহাবাদের হাতের ইশারায় বোঝালেন তারা যেন তাদের (হাসান হুসাইন)-কে ছেড়ে দেয়। এভাবে তিনি নামাজ শেষ করলেন। -সহিহ ইবনে খুজাইমা : ৮৮৭
উল্লিখিত হাদিস দুটি আমাদের সামনে মসজিদে নববির দুটি চিত্র বর্ণনা করছে। ফুঠে উঠেছে মসজিদে নববিতে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে শিশুদের এক মধুর মুহূর্ত। প্রথম হাদিসে দেখা যায়, হাসান অথবা হুসাইন (রা.) কেউ একজন রাসুল (সা.)-এর পিঠে চড়ার কারণে তিনি নামাজে সিজদাকে দীর্ঘ করলেন। আর বললেন, ‘আমি তাড়াতাড়ি উঠতে অপছন্দ করলাম, যাতে সে তার কাজ সমাধা করতে পারে।’
আমাদের সমাজে ওয়াক্তিয়া নামাজের সময় মসজিদে শিশুদের সঙ্গে নিয়ে অভিভাবকরা খুব একটা আসেন না। কিন্তু জুমার দিন অনেক শিশু তাদের বাবা-দাদা কিংবা বড়দের হাত ধরে মসজিদে আসে। নবী কারিম ( সা.)-এর সময়েও এই রীতি ছিল। হজরত বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের খুতবা দিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় হাসান ও হুসাইন (রা.) চলে এলো। তাদের গায়ে ছিল দুটি লাল জামা, তারা হোঁচট খেতে খেতে চলছিল। রাসুল (সা.) মিম্বর থেকে নেমে তাদের উঠালেন এবং সামনে রাখলেন। এরপর বললেন, আল্লাহতায়ালা সত্য বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের সম্পদ ও সন্তান ফিতনা।’ আমি এ দুটি বাচ্চাকে দেখলাম তারা হাঁটছে আর হোঁচট খাচ্ছে। আমি আর ধৈর্যধারণ করতে পারলাম না।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১১০৯
উল্লিখিত ঘটনাগুলো মসজিদে নববিতে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গেই ঘটেছে। বর্ণিত ঘটনাগুলোর মাধ্যমে তিনি তার উম্মতকে এ বার্তা দিচ্ছেন যে, মসজিদ হলো তরবিয়াতের (শিক্ষা-দীক্ষা) অন্যতম পাঠশালা। এ মসজিদ থেকেই ছোটরা ঈমান-আমলের শিক্ষাগ্রহণ করবে। তারা বড়দের থেকে দেখে দেখে শিখবে। শৈশবে তারা মসজিদে এলে ইবাদতের প্রতি উৎসাহী ও অভ্যস্ত হবে। একজন আদর্শ মানুষ গঠনে মসজিদের বেশ গুরুত্ব রয়েছে। সুতরাং ছোটদের মসজিদে নিয়ে আসার বিষয়টি কেউ যাতে ভিন্ন চোখে না দেখে। এতে তাদের জন্য কল্যাণকর দিক রয়েছে।
তবে ইসলামি স্কলাররা বলেন, শিশু কিছুটা বুঝমান হওয়ার পরই মসজিদে আনা উত্তম।
বর্ণিত হাদিসগুলো থেকে এটাও বোঝা যায় যে, শিশুদের বহন করে নামাজ আদায় করা যাবে। এটি নামাজ ভঙ্গের অনুঘটক নয় বা এটি নামাজে নিষিদ্ধ কোনো বিষয়ও নয়। যদি না আমলে কাসিরের (এমন কাজ যা করলে মনে হয় তিনি নামাজ পড়ছেন না) পর্যায়ে না পৌঁছায়।
অনেকে মসজিদে ছোট বাচ্চারা দুষ্টুমি করলে তাদের রূঢ় ভাষায় ধমক দিয়ে থাকেন। তাদের বকাঝকা করেন। এটি শিশুর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাদের মসজিদ থেকে বিমুখ করে। এটি নবী কারিম (সা.)-এর আদর্শ ও সুন্নতের বিপরীত।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের বইমেলায় হিজরি প্রথম শতাব্দীতে লিখিত পবিত্র কোরআনের একটি পাণ্ডুলিপিসহ অন্যান্য দুর্লভ পাণ্ডুলিপি দেখতে ভিড় জমিয়েছেন দর্শনার্থীরা। রিয়াদ আন্তর্জাতিক বইমেলায় কিং ফাহাদ ন্যাশনাল লাইব্রেরির প্যাভিলিয়নের ছয়টি দুর্লভ ঐতিহাসিক পাণ্ডুলিপিই যেন এবারের মেলার মূল আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।
সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, প্রদর্শনীতে থাকা পুরোনো সংগ্রহের অন্যতম হলো- ১০০৯ হিজরিতে লিখিত কোরআন মাজিদের পাণ্ডুলিপি। ওই পাণ্ডুলিপির মার্জিনে ফার্সি ব্যাখ্যা রয়েছে।
অন্য দুর্লভ সংগ্রহগুলো হলো, হিব্রু ভাষায় রচিত ১২৭৪ হিজরির ইবনে আল-কাইয়িম আল-জাওজিয়ার ‘আল-কাফিয়াহ আশ-শাফিয়াহ’র একটি পাণ্ডুলিপি।
১৯৮৩ সালে কিং ফাহাদ ন্যাশনাল লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রন্থাগারটি পুরোনো পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ সংরক্ষণ এবং তা প্রচারে মনোনিবেশ করেছে। বর্তমানে এটি একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, যেখানে ৬ হাজারের বেশি বিরল মূল পাণ্ডুলিপি রয়েছে।
বিপুলসংখ্যক পাঠক-দর্শকের উপস্থিতি ও নানা বৈচিত্র্যের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য রিয়াদ বইমেলার বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। এখানে আরবি ভাষাভাষী ছাড়াও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অনেক প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহণ করে থাকে।
সৌদি আরবের কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে, চলবে আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এবারের মেলায় ৩০টিরও বেশি দেশ থেকে ২ হাজারের বেশি প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহণ করছে। পুরো মেলায় রয়েছে ৮০০টিরও বেশি প্যাভিলিয়ন।
রিয়াদ আন্তর্জাতিক বইমেলা সাহিত্য, প্রকাশনা ও অনুবাদের সঙ্গে যুক্ত পেশাজীবীদের জন্য একটি সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এখানে এসে নিজেদের চিন্তাভাবনা ও সংস্কৃতির বিনিময় করেন গুণীজনেরা, সমর্থন জানান প্রকাশনাশিল্পের প্রতি, উৎসাহ জোগান পাঠাভ্যাসে। পাঠক ও উৎসুকজনের মধ্যে সাম্প্রতিকতম সাহিত্যকর্ম ও বইয়ের পরিচিতি তুলে ধরারও এক সুযোগ এ বইমেলা।
এ বছর বইমেলার ‘সম্মানীয় অতিথি’ দেশ কাতার। সৌদি সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় বলেছে, কাতারকে এ বইমেলার ‘সম্মানীয় অতিথি’ রাষ্ট্র করার বিষয়টি বন্ধুপ্রতিম এ দুই দেশের মধ্যকার শক্তিশালী ভ্রাতৃত্বের বন্ধনেরই প্রতিফলন। এটি সৌদি আরব ও কাতারের মধ্যে ঐতিহাসিক যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতার ওপরও গুরুত্বারোপ করছে।
মুসলিম বান্ধবীদের আচরণে মুগ্ধ কলম্বিয়ান তরুণী মারিয়া মেডিনার ইসলাম গ্রহণ তুরস্কে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ২০২২ সালের অক্টোবরে মারিয়া মেডিনা ইসলাম গ্রহণের পর জায়নাব নাম গ্রহণ করেন। এভাবে প্রায়ই দেশে-বিদেশে কলম্বিয়ার নাগরিকরা ইসলাম গ্রহণ করে থাকেন।
কলম্বিয়া প্রজাতন্ত্র দক্ষিণ আমেরিকার দেশ। যার একদিকে রয়েছে ক্যারিবীয় সাগর এবং অন্যদিকে প্রশান্ত মহাসাগর। দেশটির পূর্বে ভেনিজুয়েলা ও ব্রাজিল, দক্ষিণে ইকুয়েডর ও পেরু এবং উত্তর-পশ্চিমে পানামা অবস্থিত। বোগোটা কলম্বিয়ার সর্ববৃহৎ শহর ও রাজধানী।
চির সবুজের দেশ কলম্বিয়ার অর্থনীতি অনেকটাই কৃষিনির্ভর। কফি, অ্যাবোকাডো, পামঅয়েল, আখ, কলা ও আনারস উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি কলম্বিয়া। তবে কয়লা ও খনিজ তেল রপ্তানি করেও দেশটি উল্লেখযোগ্য অর্থ উপার্জন করে থাকে। কলম্বিয়ার মোট আয়তন ১১ লাখ ৪১ হাজার ৭৪৮ বর্গকিলোমিটার।
২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে মোট জনসংখ্যা পাঁচ কোটি ২৬ লাখ ৯৫ হাজার ৯৫২ জন, যাদের বেশির ভাগ খ্রিস্টধর্মের অনুসারী। ধারণা করা হয়, কলম্বিয়ায় মুসলমানের সংখ্যা ৮০ হাজার থেকে এক লাখ। তবে সরকারি পরিসংখ্যানে মুসলমানের সংখ্যা দেখানো হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার মাত্র।
গবেষকদের দাবি, খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০০-১২০০০ অব্দে কলম্বিয়ায় মানুষের বসবাস শুরু হয়। কেননা সেখানে খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ অব্দের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। খ্রিস্টীয় ১৬ শতকে কলম্বিয়ায় ইউরোপিয়ানদের আগমন ঘটে। ১৬ থেকে ১৯ শতক পর্যন্ত কলম্বিয়া স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৮১৯ সালে কলম্বিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।
কলম্বিয়ার মানুষ স্প্যানিশ উপনিবেশের মাধ্যমের ইসলামের সঙ্গে পরিচিত হয়। স্পেন থেকে বাধ্যতামূলক নির্বাসনে পাঠানো মুসলিমদের কারো কারো কলম্বিয়ায় ঠাঁই হয়েছিল। এ ছাড়া দীর্ঘকাল মুসলিম শাসনাধীন থাকার কারণে স্পেনের সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে ইসলাম ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল।
মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি কলম্বিয়ানদের বিশেষ আগ্রহ ছিল। লেখক, কবি ও সাহিত্যিকদের কেউ কেউ ইসলামি সংস্কৃতির প্রতি নিজেদের আগ্রহও প্রকাশ করেন। যেমন ডন অ্যাজুকিয়াল ও অ্যারিকোশা। স্প্যানিশ উপনিবেশ শেষ হলে সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর চার্চের প্রভাব কমে। তখন লেখক, কবি ও সাহিত্যিকদের অনেকেই ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতির উচ্চ প্রশংসাও করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আরবিতে কথাও বলতেন। যেমন ডন অ্যাজুকিয়াল, ফিনো, জোসে কারভো প্রমুখ।
তবে ধর্ম হিসেবে ইসলামের বিস্তার ঘটে গত শতাব্দীর মধ্যভাগে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বাস্তুচ্যুত বহু আরব লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশের মতো কলম্বিয়ায়ও আশ্রয় নেয়। তাদের বেশির ভাগ ছিল সিরিয়ার অধিবাসী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫১ সালে সিরিয়া, লিবিয়া ও ফিলিস্তিনের আরো একদল মুসলিম কলম্বিয়ায় আশ্রয় নেয়। আবার কলম্বিয়ানদের অনেকেও ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছে।
কলম্বিয়ান মুসলিমদের বেশির ভাগ রাজধানী বোগোটা, মাইকাও, বানকিনা, কালি, সান অ্যান্ড্রিস দ্বীপ ও সান্তামারতায় বসবাস করে। রাজধানী বোগোটার পর সবচেয়ে বেশি মুসলিম বসবাস করে মাইকাও শহরে। এখানে এক হাজারেরও বেশি মুসলিম বসবাস করে।
কলম্বিয়ান মুসলিমদের একদল আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। তাদেরকে স্পেন কাজের জন্য দাস হিসেবে এ দেশে নিয়ে এসেছিল। তাদের বেশির ভাগ বুবোনা বন্দরে বসবাস করে। কলম্বিয়ায় ইসলাম প্রচারে এসব আফ্রিকান দাসের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কলম্বিয়ান মুসলিমদের বেশির ভাগ ব্যবসা ও হালকা শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তাই তাদের আর্থিক অবস্থাও ভালো।
কলম্বিয়ায় ইসলাম আগমনের প্রায় ১০০ বছর অতিবাহিত হলেও সেখানে খুব বেশিদিন ইসলামি সংস্থা, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। গত শতকের আশির দশকে কলম্বিয়ায় আরব বিশ্বসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন মিশনারি দল, রাষ্ট্রদূত ও আলেমদের আগমন শুরু হয়। তাদের অনুপ্রেরণায় কলম্বিয়ান মুসলিমরা সংঘবদ্ধ হতে আরম্ভ করে। তারই ধারাবাহিকতায় মাইকাও শহরে ১৯৯০ সালে একটি মসজিদ ও মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।
দারুল আরকাম নামের এই স্কুলে বর্তমানে এক হাজার ২০০ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। মুসলিম শিক্ষকের অভাবে সেখানে অমুসলিম শিক্ষকও নিয়োগ দিতে হয়েছে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো, সেখানে আরবি ভাষা এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি শিক্ষা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত লোক নেই।
ইসলামিক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামক ইসলামি সেবা সংস্থার সদর দপ্তর মাইকাও শহরেই অবস্থিত। সংস্থাটি ১৪১০ হিজরি থেকে রমজানে একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে। শহরে একটি মুসলিম কবরস্থানও আছে। মাইকাওয়ে অবস্থিত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) মসজিদ লাতিন আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ।
কলম্বিয়ায় মুসলিমরা স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চা করে থাকে। রাজধানীর বাইরেও শহরে মসজিদ ও পৃথক মুসলিম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
দেশের বিভিন্ন মেডিকেলে অধ্যয়নরত ৭৭ জন কোরআনের হাফেজকে সংবর্ধনা দিয়েছে মেডিকেল দাওয়াহ সোসাইটি অব বাংলাদেশ। একইসঙ্গে তাদের মধ্য থেকে সিরাত পাঠ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদেরও পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বাংলামোটর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা তুলে ধরার পাশাপাশি মানসম্মত চিকিৎসা প্রদানে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বৈশিষ্ট্যগুলো পূর্ণ অনুসরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিশিষ্ট ধর্মীয় আলোচক মাওলানা আব্দুল হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের প্রতিটি পদচারণা, তার প্রতিটি বাণী হেদায়েতের স্নিগ্ধ কিরণ হয়ে আমাদের আলোকিত করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বেশি করে ছড়িয়ে দিতে হবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শকে।
ডা. এ বি এম আল আমিনের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রফেসর ডা. সাজেদ আবদুল খালেক, ডা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ডা. নুরুল্লাহ, ডা. হাফেজ রেজুয়ানুল হক ও ডা. হাফেজ মাহমুদুল বাশার।
অনুষ্ঠানে মেডিকেল ফিকহের গুরুত্ব, ডাক্তারদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা-বাস্তবতা এবং হাসপাতালে মুসলিম রোগীদের ইসলামি কনসেপ্টসহ নানা বিষয়ে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সাবেক ডিন ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সাধারণত সমাজে খুব সাধারণ একটি বিষয়, কিন্তু ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একজন মৃত্যু পথযাত্রী মুসলিম রোগীকে তালকিন (পাশে বসে তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ) করা। অথচ আইসিইউ বা সিসিইউ বা জেনারেল বেডের কোনো রোগীকে কেউ তালকিন করার নেই। এসব বিষয়ে ডাক্তার নার্স বা ব্রাদারদের কোনো প্রশিক্ষণ বা কোনো হাসপাতালে ধর্মীয় প্রতিনিধি কী আছেন? নেই।
তারা বলেন, ক্যাপসুলে জেলোটিন ব্যবহার হয় এমনকি নানা ধরনের হালাল-হারামের মিশ্রণ হয়। এসব বিষয়ে কি আমাদের কোনো ধারণা আছে? আমরা এই বিষয়গুলো কতটুকু গুরুত্ব দেই? আমার মনে হয় আমাদের কাজ করার অসংখ্য জায়গা এবং প্রয়োজনীয়তা আছে।
অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা বলেন, কোরআন ও চিকিৎসা বিজ্ঞান অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। কোরআন মাজিদ যথাযথভাবে অনুসরণ করলে এখানে নির্দেশনা পাওয়া যাবে।
অনুষ্ঠানে ইসলামি অনুশাসন অনুসরণে চিকিৎসা প্রদানের একটি রূপরেখাও তুলে ধরা হয়। এসময় একজন কোরআনের হাফেজ হিসেবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অধ্যয়নের পাশাপাশি কোরআনের সার্বজনীন শিক্ষা সবার পৌঁছে দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।
পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের প্রবর্তক হিসেবে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা মেডিকেল পড়াশোনায় চির প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে এ ধরনের আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন মেডিকেলে অধ্যয়নরত ৭৭ জন হাফেজে কোরআন সংবর্ধনা ও সিরাত পাঠ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের নগদ অর্থ ও উপহার তুলে দেওয়া হয়।