অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. সাইফুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন পরিচালক মো. তৌহিদুল আনোয়ার।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুফাসসিরে কুরআন শাইখুল হাদীস আল্লামা জুনাইদ আল হাবীব দা. বা. এবং লালমাটিয়ার মসজিদে বায়তুল হারামের খতিব মাওলানা কাজী আবু হোরায়রা। এছাড়া অনুষ্ঠানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালকবৃন্দ ও কর্মকর্তা কর্মচারিগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ১৪৪৬ হিজরি উপলক্ষ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল ১৫ দিনব্যাপী ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, বাংলাদেশ বেতারের সাথে যৌথ প্রযোজনায় সেমিনার, ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুতবা লিখন প্রতিযোগিতা, ক্বিরাত মাহফিল, হামদ-না’ত, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, বিশেষ স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ।
এছাড়া পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ১৪৪৬ হিজরি উদযাপন উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫৪ টি ইসলামিক মিশন ও ৮ টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
সুফি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত বেকতাশিদের জন্য আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এডি রামা একটি সার্বভৌম ক্ষুদ্ররাষ্ট্র গঠন করতে চান। বেকতাশিরা তার এই চাওয়াকে স্বাগত জানালেও অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন।
২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় এডি রামা বলেন, আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানায় ভ্যাটিকান সিটির আদলে এটি প্রতিষ্ঠা করা হবে, যার নাম হবে ‘দ্য সভরেন স্টেট অব বেকতাশি অর্ডার।’
তের শ শতাব্দীতে অটোম্যান সাম্রাজ্যের সময় বিকশিত হয় সুফিবাদ ও বেকতাশি আদর্শ। ১৯২৯ সালে আলবেনিয়ায় বেকতাশি আদর্শের প্রধান কার্যালয় বেকতাশি ওয়ার্ল্ড সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়। তিরানার ২৭ একর জায়গাজুড়ে ক্ষুদ্ররাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে আলবেনিয়ার সরকার। এই রাষ্ট্রের নিজস্ব সীমানা, পাসপোর্ট ও প্রশাসন থাকবে।
বেকতাশিদের নেতা এডমন্ড ব্রাহিমাজ ভক্তদের কাছে বাবা মণ্ডি নামে পরিচিত। তিনি বলেন, ‘এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ।’ এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্বে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও শান্তি বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বেকতাশি অর্ডার শান্তি, সহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় সম্প্রীতির কারণে সমাদৃত। ভ্যাটিকানের মতো সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে তা আমাদের ধর্মীয় ও প্রশাসনিক কাজের জন্য সহায়ক হবে।’
আলবেনিয়া সরকারের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে দেশটির জনগণ ও সেখানকার নীতিনির্ধারকদের অনেকেই কিছু জানত না। এই সিদ্ধান্তে অনেকেই তাই বেশ অবাক হয়েছেন।
জার্মানির টুবিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম ধর্মতত্ত্বের গবেষক বেজনিক জিনানি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘সমসাময়িক ধর্মীয় কার্যক্রমের মধ্যে এটি অকল্পনীয় ছিল।’
আলবেনিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতার জন্য বেশ পরিচিত। দেশটিতে খুব কাছাকাছি দূরত্বেই গির্জা ও মসজিদের উপস্থিতি চোখে পরে। দেশটিতে আন্তঃধর্মীয় বিয়েকেও বেশ সাদরে গ্রহণ করা হয়।
২০২৩ সালের আদমশুমারি অনুসারে আলবেনিয়ার জনসংখ্যা ২৪ লাখ। যার মধ্যে অর্ধেকই মুসলিম ধর্মের অনুসারী। মুসলিম জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই সুন্নি মতাদর্শের অনুসারী, যার মধ্যে আনুমানিক ১০ শতাংশ মুসলিম বেতাকশি সম্প্রদায়ের। বাকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে রোমান ক্যাথলিক ও অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী রয়েছেন। আলবেনিয়ায় ঐতিহাসিকভাবে বেতাকশি সম্প্রদায়ের লোকদের মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সেতুবন্ধনকারী হিসেবেই দেখা হয়।
কি থাকবে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে? ভ্যাটিকানের অনুসরণে সম্ভাব্য এই রাষ্ট্রটি শুধুমাত্র বেকতাশি ধর্মাবলম্বী এবং সরকারের কর্মকর্তাদের নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে। নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। আলবেনিয়ার পার্লামেন্টের অনুমোদন পেলে তা কার্যকর হবে।
যে রাষ্ট্র কোনও সেনাবাহিনী, সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ও আদালত থাকবে না। রাষ্ট্রটি পরিকল্পিতভাবে অ্যালকোহল পান করার অনুমতি দেবে এবং নারীদের নিজেদের ইচ্ছামতো পোশাক পরার স্বাধীনতা দেবে। পাসপোর্ট হবে সবুজ, ইসলামে গভীরভাবে প্রতীকী একটি রঙ।
বেকতাশি আদর্শ কী? ত্রয়োদশ শতাব্দীতে অটোম্যান সাম্রাজ্যের সময় বিকশিত হয় বেকতাশি আদর্শ। ১৯২৯ সালে আলবেনিয়াতে বেকতাশি আদর্শের প্রধান কার্যালয় বেকতাশি ওয়ার্ল্ড সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়।
বেকতাশিরা মূলতঃ শিয়াদের থেকে উদ্ভুত একটি উপদল। ধর্মের ‘সুবিধামতো ব্যবহারের ধারণা’ দিয়ে অটোম্যান রাজনীতিতে প্রভাবশালী জেনিসারিরা বেকতাশিবাদকে ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করে। ফলে তারা রক্ষণশীল শিয়া এবং সুন্নিদের নিপীড়নের সম্মুখীন হন।
ইসলামের স্বাধীন ব্যাখ্যার জন্য তাদেরকে ভ্রান্ত মনে করা হয়। বাকতাশি ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করে যে, ইসলামকে শান্তিপূর্ণ ও মুক্ত পদ্ধতির সঙ্গে অনুসরণ করা উচিত এবং কঠোর বিশ্বাস ও নিয়ম আরোপ করা এড়ানো উচিত।
উসমানীয় সামরিক ও সাংস্কৃতিক অভিজাতদের সঙ্গে সংযোগের কারণে এই ধর্ম দ্রুত বলকান এবং ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
তখন থেকেই শিয়া এবং সুন্নিরা বেকতাশিদের ধর্মদ্রোহী বলে মনে করে। ১৮২৬ সালে সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ বেকতাশিদের নিষিদ্ধ করার জন্য একটি ফতোয়া জারি করেন।
অটোম্যান সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি এবং তুরস্ক প্রজাতন্ত্র গঠনের পর মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক ১৯২৫ সালে বেকতাশিদের নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার করেন। পরে বেকতাশি নেতৃত্ব তাদের সদর দপ্তর তুরস্ক থেকে তিরানায় স্থানান্তরিত করে। বর্তমানের তুরস্কে বেকতাশিরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিসেবে স্বীকৃত নয়।
সাবেক আলবেনিয়ান কমিউনিস্ট নেতা এনভার হোক্সার অধীনে বেকতাশিদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়, তিনি ১৯৬৭ সালে ধর্মকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। দেশটিতে কমিউনিজমের পতনের পর বিনা অনুমতিতে বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে থাকে।
২০২৩ সালের পরিসংখ্যান মতে, বেকতাশিরা আলবেনিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ বলে অনুমান করা হয়।
বেকতাশি নেতা বাবা মণ্ডির আশা আলাদা রাষ্ট্র ঘোষণার পর এক সাক্ষাৎকারে বাবা মন্ডি জানিয়েছেন, সার্বভৌম মর্যাদা নিশ্চিত করা বেকতাশি আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং উগ্র মতাদর্শের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, যা মুসলিম বিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করতে ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, বিশেষভাবে ধর্মীয় উগ্রবাদের মুখোমুখি থাকা দেশগুলো, বেকতাশি আদর্শের মতো শান্তিপূর্ণ এবং পরিমার্জিত ধর্মীয় আন্দোলনকে সমর্থন করতে পারে।
এ সময় তিনি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতারের মতো দেশগুলোকে বেকতাশি আদর্শের শান্তিপূর্ণ মতবাদকে সমর্থনের কথা বলেন। তার দাবি, এর মাধ্যমে ইসলামের পরিমার্জিত ব্যাখ্যা শক্তিশালী হবে।
বাবা মণ্ডি উল্লেখ করেন যে, চীনসহ যেসব রাষ্ট্র মিলিটেন্ট ইসলাম নিয়ে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তারা বিভাজন সৃষ্টি না করে উগ্রবাদ প্রতিহত করার জন্য বেকতাশি আদর্শের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। আমাদের বিশ্বাস, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিমার্জিত কণ্ঠস্বরগুলোকে সমর্থন করার উপকারিতা স্বীকার করবে এবং বেকতাশি আদর্শের সার্বভৌম রাষ্ট্রকে শান্তি, সহিষ্ণুতা প্রচারের বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় একটি মূল্যবান অংশীদার হিসেবে দেখবে।
হজরত শাদ্দাদ ইবনে আউস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন এশার নামাজের সময় হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের দিকে বের হয়ে এলেন। তখন তিনি হজরত হাসান অথবা হুসাইন (রা.)-কে বহন করে আনছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) সামনে অগ্রসর হয়ে তাকে রেখে দিলেন। এরপর নামাজের জন্য তাকবির বললেন ও নামাজ শুরু করলেন। নামাজের মধ্যে একটি সিজদা দীর্ঘ করলেন। (হাদিস বর্ণনানাকারী বলেন) আমার পিতা (শাদ্দাদ) বলেন, আমি আমার মাথা তুললাম এবং দেখলাম, ওই ছেলেটা রাসুল (সা.)-এর পিঠের ওপর রয়েছেন। আর তিনি সিজদারত অবস্থায় আছেন।
অতঃপর আমি আমার সিজদায় গেলাম। রাসুল (সা.) নামাজ শেষ করলে লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আপনার নামাজের মধ্যে একটি সিজদা এত দীর্ঘ করলেন এতে আমরা মনে করলাম, হয়তো কোনো ব্যাপার ঘটে থাকবে। অথবা আপনার ওপর অহি নাজিল হচ্ছে। তিনি বললেন, এর কোনোটাই ঘটেনি, বরং আমার ওই (অধস্তন) সন্তান আমাকে সাওয়ারি (বাহন) বানিয়েছিল। আমি তাড়াতাড়ি উঠতে অপছন্দ করলাম, যাতে সে তার কাজ সমাধা করতে পারে। -সুনানে নাসায়ি : ১১৪১
আল্লাহর রাসুল (সা.) এভাবেই মসজিদে শিশুসুলভ আচরণ সহ্য করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদা আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে এশার নামাজ পড়ছিলাম। রাসুল (সা.) যখন সিজদা দিতেন তখন হাসান-হুসাইন (রা.) লাফ দিয়ে রাসুল (সা.)-এর পিঠে উঠতেন। আর রাসুল (সা.) সিজদা থেকে মাথা তোলার সময় পেছন থেকে হাত দিয়ে তাদের নামিয়ে দিতেন। এভাবে রাসুল আবার সিজদা দিলে তারাও (হাসান-হুসাইন) আবার রাসুল (সা.)-এর পিঠে চড়তেন। এভাবে রাসুল (সা.) নামাজ শেষ করতেন। -মুসনাদে আহমদ : ১০৬৫৯
অন্য বর্ণনায় আছে, রাসুল (সা.) যখন সিজদা দিতেন তখন হাসান-হুসাইন (রা.) লাফ দিয়ে রাসুল (সা.)-এর পিঠে উঠতেন। তখন সাহাবারা তাদের নিষেধ করতে চাইলে রাসুল (সা.) সাহাবাদের হাতের ইশারায় বোঝালেন তারা যেন তাদের (হাসান হুসাইন)-কে ছেড়ে দেয়। এভাবে তিনি নামাজ শেষ করলেন। -সহিহ ইবনে খুজাইমা : ৮৮৭
উল্লিখিত হাদিস দুটি আমাদের সামনে মসজিদে নববির দুটি চিত্র বর্ণনা করছে। ফুঠে উঠেছে মসজিদে নববিতে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে শিশুদের এক মধুর মুহূর্ত। প্রথম হাদিসে দেখা যায়, হাসান অথবা হুসাইন (রা.) কেউ একজন রাসুল (সা.)-এর পিঠে চড়ার কারণে তিনি নামাজে সিজদাকে দীর্ঘ করলেন। আর বললেন, ‘আমি তাড়াতাড়ি উঠতে অপছন্দ করলাম, যাতে সে তার কাজ সমাধা করতে পারে।’
আমাদের সমাজে ওয়াক্তিয়া নামাজের সময় মসজিদে শিশুদের সঙ্গে নিয়ে অভিভাবকরা খুব একটা আসেন না। কিন্তু জুমার দিন অনেক শিশু তাদের বাবা-দাদা কিংবা বড়দের হাত ধরে মসজিদে আসে। নবী কারিম ( সা.)-এর সময়েও এই রীতি ছিল। হজরত বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের খুতবা দিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় হাসান ও হুসাইন (রা.) চলে এলো। তাদের গায়ে ছিল দুটি লাল জামা, তারা হোঁচট খেতে খেতে চলছিল। রাসুল (সা.) মিম্বর থেকে নেমে তাদের উঠালেন এবং সামনে রাখলেন। এরপর বললেন, আল্লাহতায়ালা সত্য বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের সম্পদ ও সন্তান ফিতনা।’ আমি এ দুটি বাচ্চাকে দেখলাম তারা হাঁটছে আর হোঁচট খাচ্ছে। আমি আর ধৈর্যধারণ করতে পারলাম না।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১১০৯
উল্লিখিত ঘটনাগুলো মসজিদে নববিতে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গেই ঘটেছে। বর্ণিত ঘটনাগুলোর মাধ্যমে তিনি তার উম্মতকে এ বার্তা দিচ্ছেন যে, মসজিদ হলো তরবিয়াতের (শিক্ষা-দীক্ষা) অন্যতম পাঠশালা। এ মসজিদ থেকেই ছোটরা ঈমান-আমলের শিক্ষাগ্রহণ করবে। তারা বড়দের থেকে দেখে দেখে শিখবে। শৈশবে তারা মসজিদে এলে ইবাদতের প্রতি উৎসাহী ও অভ্যস্ত হবে। একজন আদর্শ মানুষ গঠনে মসজিদের বেশ গুরুত্ব রয়েছে। সুতরাং ছোটদের মসজিদে নিয়ে আসার বিষয়টি কেউ যাতে ভিন্ন চোখে না দেখে। এতে তাদের জন্য কল্যাণকর দিক রয়েছে।
তবে ইসলামি স্কলাররা বলেন, শিশু কিছুটা বুঝমান হওয়ার পরই মসজিদে আনা উত্তম।
বর্ণিত হাদিসগুলো থেকে এটাও বোঝা যায় যে, শিশুদের বহন করে নামাজ আদায় করা যাবে। এটি নামাজ ভঙ্গের অনুঘটক নয় বা এটি নামাজে নিষিদ্ধ কোনো বিষয়ও নয়। যদি না আমলে কাসিরের (এমন কাজ যা করলে মনে হয় তিনি নামাজ পড়ছেন না) পর্যায়ে না পৌঁছায়।
অনেকে মসজিদে ছোট বাচ্চারা দুষ্টুমি করলে তাদের রূঢ় ভাষায় ধমক দিয়ে থাকেন। তাদের বকাঝকা করেন। এটি শিশুর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাদের মসজিদ থেকে বিমুখ করে। এটি নবী কারিম (সা.)-এর আদর্শ ও সুন্নতের বিপরীত।
নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মসজিদে নববিতে শিশুরা মসজিদে আসত, খেলত এবং আনন্দ করত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের কখনো বাধা দেননি, তাদের ধমকও দেননি; বরং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে তাদের মধুর স্মৃতি রয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জন্য নামাজ সংক্ষিপ্ত করেছেন।
অথচ আমাদের সমাজের কেউ কেউ মসজিদে শিশুদের আগমন বা তাদের উপস্থিতিকে ভিন্ন চোখে দেখে। কেউ কেউ ভালো চোখে দেখলেও অনেকে বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে দেখে থাকে। তবে নিরপেক্ষভাবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করলে ভিন্ন ফলাফল সামনে আসে।
সম্প্রতি ‘ইনসাইড দ্য হারামাইন’ নামের এক ফেসবুক পেইজে দ্য মোস্ট লাক্সারিয়াস স্কুল ট্রিপ! (সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্কুল সফর) শিরোনামে কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একদল স্কুল শিক্ষার্থী হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা জিয়ারত ও রিয়াজুল জান্নাতে নামাজ আদায় করছে। হাজার হাজার মানুষ ছবিটি শেয়ার করেছেন ও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তবে ছবিটি মদিনার কোন স্কুলের বা কবে তারা মসজিদে নববিতে এসেছিলেন, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারীরা শিক্ষার্থীদের সৌভাগ্যবান উল্লেখ করে তাদের জন্য দোয়া করেছেন। অনেকেই বলছেন, ‘আহ! আমি যদি ওই দলের ছাত্র হিসেবে থাকতাম।’
একজন লিখেছেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মসজিদমুখী করে গড়ে তোলা, তাদের অন্তরে রাসুলের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে- এমন কাজ করা প্রত্যেক অভিভাবকের একান্ত দায়িত্ব। এমন শিক্ষা সফর সত্যিই আকর্ষণীয়।’
অনেকের মতে, ‘এটা সত্যিই আশীর্বাদ ভ্রমণ! একদিন এই শিশুরা বুঝতে পারবে, এই অভিজ্ঞতাটি কতটা মূল্যবান ছিল!’
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের বইমেলায় হিজরি প্রথম শতাব্দীতে লিখিত পবিত্র কোরআনের একটি পাণ্ডুলিপিসহ অন্যান্য দুর্লভ পাণ্ডুলিপি দেখতে ভিড় জমিয়েছেন দর্শনার্থীরা। রিয়াদ আন্তর্জাতিক বইমেলায় কিং ফাহাদ ন্যাশনাল লাইব্রেরির প্যাভিলিয়নের ছয়টি দুর্লভ ঐতিহাসিক পাণ্ডুলিপিই যেন এবারের মেলার মূল আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।
সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, প্রদর্শনীতে থাকা পুরোনো সংগ্রহের অন্যতম হলো- ১০০৯ হিজরিতে লিখিত কোরআন মাজিদের পাণ্ডুলিপি। ওই পাণ্ডুলিপির মার্জিনে ফার্সি ব্যাখ্যা রয়েছে।
অন্য দুর্লভ সংগ্রহগুলো হলো, হিব্রু ভাষায় রচিত ১২৭৪ হিজরির ইবনে আল-কাইয়িম আল-জাওজিয়ার ‘আল-কাফিয়াহ আশ-শাফিয়াহ’র একটি পাণ্ডুলিপি।
১৯৮৩ সালে কিং ফাহাদ ন্যাশনাল লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রন্থাগারটি পুরোনো পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ সংরক্ষণ এবং তা প্রচারে মনোনিবেশ করেছে। বর্তমানে এটি একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, যেখানে ৬ হাজারের বেশি বিরল মূল পাণ্ডুলিপি রয়েছে।
বিপুলসংখ্যক পাঠক-দর্শকের উপস্থিতি ও নানা বৈচিত্র্যের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য রিয়াদ বইমেলার বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। এখানে আরবি ভাষাভাষী ছাড়াও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অনেক প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহণ করে থাকে।
সৌদি আরবের কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে, চলবে আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এবারের মেলায় ৩০টিরও বেশি দেশ থেকে ২ হাজারের বেশি প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহণ করছে। পুরো মেলায় রয়েছে ৮০০টিরও বেশি প্যাভিলিয়ন।
রিয়াদ আন্তর্জাতিক বইমেলা সাহিত্য, প্রকাশনা ও অনুবাদের সঙ্গে যুক্ত পেশাজীবীদের জন্য একটি সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এখানে এসে নিজেদের চিন্তাভাবনা ও সংস্কৃতির বিনিময় করেন গুণীজনেরা, সমর্থন জানান প্রকাশনাশিল্পের প্রতি, উৎসাহ জোগান পাঠাভ্যাসে। পাঠক ও উৎসুকজনের মধ্যে সাম্প্রতিকতম সাহিত্যকর্ম ও বইয়ের পরিচিতি তুলে ধরারও এক সুযোগ এ বইমেলা।
এ বছর বইমেলার ‘সম্মানীয় অতিথি’ দেশ কাতার। সৌদি সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় বলেছে, কাতারকে এ বইমেলার ‘সম্মানীয় অতিথি’ রাষ্ট্র করার বিষয়টি বন্ধুপ্রতিম এ দুই দেশের মধ্যকার শক্তিশালী ভ্রাতৃত্বের বন্ধনেরই প্রতিফলন। এটি সৌদি আরব ও কাতারের মধ্যে ঐতিহাসিক যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতার ওপরও গুরুত্বারোপ করছে।