দেশের প্রাচীনতম কওমি শিক্ষা বোর্ড গওহরডাঙ্গাকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের আলেমসমাজ।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) গওহরডাঙ্গা মাদরাসায় বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশর ১৪৪৫ হিজরি সনের কেন্দ্রীয় পরীক্ষার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তারা এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে ১৩ শতাধিক মাদরাসার মুহতামিম, শিক্ষক, মাদরাসা প্রতিনিধি, পুরস্কার প্রাপ্তশিক্ষার্থীরা উপস্থিত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে মোট আট ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয়। ১. হাইআতুল উলয়ার পরীক্ষায় মেধাতালিকা ও মুমতাজপ্রাপ্ত, ২, ৩ গওহরডাঙ্গা বোর্ডের মেধাতালিকা ও মুমতাজপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী, ৪. মারহালাভিত্তিক মেধাতালিকায় শীর্ষ পাঁচ মাদরাসা, ৫. মারহালাভিত্তিক মুমতাজ সংখ্যায় শীর্ষ পাঁচ মাদরাসা, ৬. পরীক্ষার্থীর হার ও পাসের হারে শীর্ষ পাঁচ মাদরাসা, ৭. শতভাগ পাসকারী মাদরাসা, ৮ মারহালাভিত্তিক শতভাগ মুমতাজপ্রাপ্ত মাদরাসা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা কবিরুল ইসলাম, মাওলানা নুরুল হক, মুফতি নুরুল ইসলাম, মাওলানা আবদুস সালাম, মাওলানা অজিহুর রহমান, মাওলানা আব্দুল্লাহ, মাওলানা হাফিজুর রহমান, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, মুফতি রেজাউল ইসলাম, মাওলানা শেখ আব্দুল্লাহ, মাওলানা সাফায়াত হোসাইন, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা আশেকুর রহমান ও মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম।
মানুষ সামাজিক জীব। বলা হয়, সঙ্গী ছাড়া মানবজীবন অতিবাহিত করা সম্ভব নয়। ভালো সঙ্গী জীবনকে সাফল্যের দিকে পরিচালিত করে এবং কঠিন পরিস্থিতিতে সাহায্য করে।
অন্যদিকে খারাপ সঙ্গী মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও আচরণ নষ্ট করে। ফলে মানবজীবনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই ইসলাম বন্ধু নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। আর যারা এরূপ করবে, আল্লাহর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।’ -সুরা আলে ইমরান : ২৮
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ পাপে জড়ায় সঙ্গী নির্বাচনে অসর্তকতায়। সেই সঙ্গে যথাযথ দিকনির্দেশনার অভাব, দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা, ইসলামি জ্ঞানের স্বল্পতা ও পরিণাম সম্পর্কে অজ্ঞতাও রয়েছে।
ইসলাম মনে করে, প্রতিটি শিশু নিষ্পাপ অবস্থায় জন্ম নেয়। মা-বাবা, পরিবার ও পরিবেশের প্রভাবে ভালো-মন্দের পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা গড়ে ওঠে। একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শৈশব থেকে পরিবারের পক্ষ থেকে নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক সন্তান ইসলামি ফিতরাতের (স্বভাব) ওপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার মা-বাবা তাকে ইহুদি, নাসারা অথবা অগ্নিপূজক বানিয়ে ফেলে। -সহিহ বোখারি : ১৩৫৮
অন্য হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) শিশুদের প্রতি স্নেহ, ভালো ব্যবহার, সদাচরণ ও শিষ্টাচার শেখানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। অতএব, অভিভাবকদের উচিত শৈশব থেকেই শিশুদের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করা।
আলেমরা বলেন, দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা সব পাপের মূল। মানুষের মনে দুনিয়ার মোহ আল্লাহকে ভুলিয়ে দেয় এবং তাকে পাপ কাজে লিপ্ত করে। তাই মুমিন ব্যক্তির দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্ত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, টাকা-পয়সার পূজারিরা ধ্বংস হোক। পোশাকবিলাসী ধ্বংস হোক। তাকে দিতে পারলে খুশি হয়, দিতে না পারলে রাগান্বিত হয়। -মিশকাত : ৫১৬১
আরেকটি কথা, ইসলামি শিক্ষা মানুষের মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও মানবিক গুণাবলি জাগিয়ে তোলে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকের সমাজে আমরা ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েছি। দুনিয়াবি শিক্ষার জন্য আমরা যত অর্থ ও সময় ব্যয় করি, ইসলামি শিক্ষার ক্ষেত্রে তার সামান্যতম করি না। এ কারণে আমাদের ছেলে-মেয়ে ও ভাই-বোন পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ছে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। -সহিহ বোখারি : ৬৬৫৩
প্রবৃত্তির অনুসরণে অস্থায়ী এই দুনিয়ায় ক্ষণস্থায়ী লাভবান হওয়া যায়, কিন্তু এর পরিণাম অত্যন্ত ভয়ংকর। প্রবৃত্তির অনুসরণে হাশরের ময়দানে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ওই ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে, যে ইসলাম গ্রহণ করল এবং তাকে প্রয়োজনমাফিক রিজিক প্রদান করা হলো এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট রেখেছেন। -মিশকাত : ৫১৬৫
মক্কার মসজিদে হারামে বিশ্বের বৃহত্তম সাউন্ড সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে। এর যার মাধ্যমে পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণের আজান, ইকামত, জুমার খুতবা এবং নামাজের সময় আওয়াজ মাতাফ, মসজিদে হারামের বিভিন্ন তলা, ছাদ, আঙ্গিনা, সম্প্রসারিত নতুন ভবন এবং আশেপাশের এলাকাসহ পাশ্ববর্তী সড়কগুলোতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
আরব নিউজের খবরে বলা হয়েছে, মসজিদে হারামে যে সাউন্ড সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে- তা আধুনিক সমসাময়িক চাহিদা অনুযায়ী।
১২০ জন প্রযুক্তিবিদ এই সাউন্ড সিস্টেম পরিচালনার জন্য কাজ করেন। এর বাইরে শব্দ নিয়ন্ত্রণে ৫০ জন, সংযোগ ও সরঞ্জামাদি দেখাশোনা এবং রক্ষণাবেক্ষেণের জন্য শতাধিক কর্মী রয়েছে। এর ফলে প্রতি ওয়াক্তের আজান, ইকামত, নামাজ এবং খুতবা শ্রুতিমধুরভাবে একটি প্রমিত পদ্ধতিতে মসজিদে হারামের প্রতিটি স্থানে পৌঁছে যায়। আওয়াজের জন্য কারো কোনো কষ্ট হয় না, আবার সব জায়গা থেকে সমানভাবে শোনা যায়।
মসজিদে হারাম এবং এর আঙ্গিনায় স্থাপন করা হয়েছে বিশেষ পদ্ধতির ৮ হাজার স্পিকার, এগুলো ৬৫০ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে স্থাপিত। যা মসজিদে হারামের সাউন্ড সিস্টেমকে বিশ্বের বৃহত্তম সাউন্ড সিস্টেমগুলোর একটিতে পরিণত করেছে।
পুরো কার্যক্রমে ২১টি ইউনিট রয়েছে, যার মাধ্যমে মসজিদের প্রতিটি অংশ আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ কারণে মসজিদের বিভিন্ন এলাকায় শব্দ আরও ভালো এবং স্পষ্টভাবে শোনা যায়।
মসজিদে হারামে শতাধিক মাইক্রোফোন রয়েছে। এগুলো ইমাম-মোয়াজ্জিন এবং ঘোষণার কাজে ব্যবহৃত হয়। এসব মাইক্রোফোনে অত্যাধুনিক সংবেদনশীল প্রোগ্রাম রয়েছে, যা শব্দের নির্ভুলতা এবং নিখুঁত অডিও ভারসাম্য নিশ্চিত করে৷
এ ছাড়া অডিও সিস্টেমটি টেলিভিশন এবং মিডিয়া স্টেশনগুলোর লাইভ ট্রান্সমিশন সিস্টেমের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। ফলে আজান, খুতবা এবং নামাজ সরাসরি সম্প্রচার করা সহজ হয়৷
সাউন্ড সিস্টেমের জন্য মসজিদে হারামে ছয়টি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ রয়েছে। এর মাধ্যমে মসজিদ, বহিরাঙ্গন এবং সম্প্রসারিত নতুন হারামে সাউন্ড সংযোগ দেওয়া হয়। লোক সমাগমের সঙ্গে মিল রেখে দক্ষতার সঙ্গে সাউন্ড সিস্টেম পরিচালনা করা হয়। এমন নয়, লোক নেই অথচ সাউন্ড সিস্টেম চলছে, আবার সাউন্ড নেই কিন্তু লোক রয়েছে।
একইভাবে, ব্যাকআপ মাইক্রোফোন ব্যবহার করা হয় সর্বত্র। যা প্রধান মাইক্রোফোন বিকল হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করে নিরবচ্ছিন্ন শব্দের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে। ফলে মুসল্লিরা কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তি ছাড়াই তাদের নামাজ সম্পন্ন করতে পারেন।
নামাজের সময় ইমামকে অনুসরণ করার জন্য একটি অত্যাধুনিক ক্যামেরা সিস্টেমও রয়েছে। যা অডিও সিস্টেমের কার্যকারিতা সম্পূর্ণরূপে নিরীক্ষণ করে এবং এটিকে সামঞ্জস্য করতে সহায়তা করে।
বিশেষ প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে প্রতিটি ইমাম এবং মুয়াজ্জিনের কন্ঠ এবং সুর অনুযায়ী শব্দ সেটিং করা আছে, যা আওয়াজের স্বচ্ছতা এবং ভারসাম্য নিশ্চিত করে।
এই সাউন্ড সিস্টেম ছাড়াও মসজিদে হারামে একটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত অডিও স্টুডিও রয়েছে। এর মাধ্যমে মসজিদে হারামের ইমামদের দৈনন্দিন নামাজের কোরআন তেলাওয়াত রেকর্ড রাখা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. সাইফুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন পরিচালক মো. তৌহিদুল আনোয়ার।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুফাসসিরে কুরআন শাইখুল হাদীস আল্লামা জুনাইদ আল হাবীব দা. বা. এবং লালমাটিয়ার মসজিদে বায়তুল হারামের খতিব মাওলানা কাজী আবু হোরায়রা। এছাড়া অনুষ্ঠানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালকবৃন্দ ও কর্মকর্তা কর্মচারিগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ১৪৪৬ হিজরি উপলক্ষ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল ১৫ দিনব্যাপী ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, বাংলাদেশ বেতারের সাথে যৌথ প্রযোজনায় সেমিনার, ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুতবা লিখন প্রতিযোগিতা, ক্বিরাত মাহফিল, হামদ-না’ত, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, বিশেষ স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ।
এছাড়া পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ১৪৪৬ হিজরি উদযাপন উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫৪ টি ইসলামিক মিশন ও ৮ টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
সুফি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত বেকতাশিদের জন্য আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এডি রামা একটি সার্বভৌম ক্ষুদ্ররাষ্ট্র গঠন করতে চান। বেকতাশিরা তার এই চাওয়াকে স্বাগত জানালেও অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন।
২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় এডি রামা বলেন, আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানায় ভ্যাটিকান সিটির আদলে এটি প্রতিষ্ঠা করা হবে, যার নাম হবে ‘দ্য সভরেন স্টেট অব বেকতাশি অর্ডার।’
তের শ শতাব্দীতে অটোম্যান সাম্রাজ্যের সময় বিকশিত হয় সুফিবাদ ও বেকতাশি আদর্শ। ১৯২৯ সালে আলবেনিয়ায় বেকতাশি আদর্শের প্রধান কার্যালয় বেকতাশি ওয়ার্ল্ড সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়। তিরানার ২৭ একর জায়গাজুড়ে ক্ষুদ্ররাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে আলবেনিয়ার সরকার। এই রাষ্ট্রের নিজস্ব সীমানা, পাসপোর্ট ও প্রশাসন থাকবে।
বেকতাশিদের নেতা এডমন্ড ব্রাহিমাজ ভক্তদের কাছে বাবা মণ্ডি নামে পরিচিত। তিনি বলেন, ‘এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ।’ এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্বে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও শান্তি বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বেকতাশি অর্ডার শান্তি, সহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় সম্প্রীতির কারণে সমাদৃত। ভ্যাটিকানের মতো সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে তা আমাদের ধর্মীয় ও প্রশাসনিক কাজের জন্য সহায়ক হবে।’
আলবেনিয়া সরকারের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে দেশটির জনগণ ও সেখানকার নীতিনির্ধারকদের অনেকেই কিছু জানত না। এই সিদ্ধান্তে অনেকেই তাই বেশ অবাক হয়েছেন।
জার্মানির টুবিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম ধর্মতত্ত্বের গবেষক বেজনিক জিনানি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘সমসাময়িক ধর্মীয় কার্যক্রমের মধ্যে এটি অকল্পনীয় ছিল।’
আলবেনিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতার জন্য বেশ পরিচিত। দেশটিতে খুব কাছাকাছি দূরত্বেই গির্জা ও মসজিদের উপস্থিতি চোখে পরে। দেশটিতে আন্তঃধর্মীয় বিয়েকেও বেশ সাদরে গ্রহণ করা হয়।
২০২৩ সালের আদমশুমারি অনুসারে আলবেনিয়ার জনসংখ্যা ২৪ লাখ। যার মধ্যে অর্ধেকই মুসলিম ধর্মের অনুসারী। মুসলিম জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই সুন্নি মতাদর্শের অনুসারী, যার মধ্যে আনুমানিক ১০ শতাংশ মুসলিম বেতাকশি সম্প্রদায়ের। বাকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে রোমান ক্যাথলিক ও অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী রয়েছেন। আলবেনিয়ায় ঐতিহাসিকভাবে বেতাকশি সম্প্রদায়ের লোকদের মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সেতুবন্ধনকারী হিসেবেই দেখা হয়।
কি থাকবে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে? ভ্যাটিকানের অনুসরণে সম্ভাব্য এই রাষ্ট্রটি শুধুমাত্র বেকতাশি ধর্মাবলম্বী এবং সরকারের কর্মকর্তাদের নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে। নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। আলবেনিয়ার পার্লামেন্টের অনুমোদন পেলে তা কার্যকর হবে।
যে রাষ্ট্র কোনও সেনাবাহিনী, সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ও আদালত থাকবে না। রাষ্ট্রটি পরিকল্পিতভাবে অ্যালকোহল পান করার অনুমতি দেবে এবং নারীদের নিজেদের ইচ্ছামতো পোশাক পরার স্বাধীনতা দেবে। পাসপোর্ট হবে সবুজ, ইসলামে গভীরভাবে প্রতীকী একটি রঙ।
বেকতাশি আদর্শ কী? ত্রয়োদশ শতাব্দীতে অটোম্যান সাম্রাজ্যের সময় বিকশিত হয় বেকতাশি আদর্শ। ১৯২৯ সালে আলবেনিয়াতে বেকতাশি আদর্শের প্রধান কার্যালয় বেকতাশি ওয়ার্ল্ড সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়।
বেকতাশিরা মূলতঃ শিয়াদের থেকে উদ্ভুত একটি উপদল। ধর্মের ‘সুবিধামতো ব্যবহারের ধারণা’ দিয়ে অটোম্যান রাজনীতিতে প্রভাবশালী জেনিসারিরা বেকতাশিবাদকে ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করে। ফলে তারা রক্ষণশীল শিয়া এবং সুন্নিদের নিপীড়নের সম্মুখীন হন।
ইসলামের স্বাধীন ব্যাখ্যার জন্য তাদেরকে ভ্রান্ত মনে করা হয়। বাকতাশি ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করে যে, ইসলামকে শান্তিপূর্ণ ও মুক্ত পদ্ধতির সঙ্গে অনুসরণ করা উচিত এবং কঠোর বিশ্বাস ও নিয়ম আরোপ করা এড়ানো উচিত।
উসমানীয় সামরিক ও সাংস্কৃতিক অভিজাতদের সঙ্গে সংযোগের কারণে এই ধর্ম দ্রুত বলকান এবং ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
তখন থেকেই শিয়া এবং সুন্নিরা বেকতাশিদের ধর্মদ্রোহী বলে মনে করে। ১৮২৬ সালে সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ বেকতাশিদের নিষিদ্ধ করার জন্য একটি ফতোয়া জারি করেন।
অটোম্যান সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি এবং তুরস্ক প্রজাতন্ত্র গঠনের পর মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক ১৯২৫ সালে বেকতাশিদের নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার করেন। পরে বেকতাশি নেতৃত্ব তাদের সদর দপ্তর তুরস্ক থেকে তিরানায় স্থানান্তরিত করে। বর্তমানের তুরস্কে বেকতাশিরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিসেবে স্বীকৃত নয়।
সাবেক আলবেনিয়ান কমিউনিস্ট নেতা এনভার হোক্সার অধীনে বেকতাশিদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়, তিনি ১৯৬৭ সালে ধর্মকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। দেশটিতে কমিউনিজমের পতনের পর বিনা অনুমতিতে বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে থাকে।
২০২৩ সালের পরিসংখ্যান মতে, বেকতাশিরা আলবেনিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ বলে অনুমান করা হয়।
বেকতাশি নেতা বাবা মণ্ডির আশা আলাদা রাষ্ট্র ঘোষণার পর এক সাক্ষাৎকারে বাবা মন্ডি জানিয়েছেন, সার্বভৌম মর্যাদা নিশ্চিত করা বেকতাশি আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং উগ্র মতাদর্শের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, যা মুসলিম বিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করতে ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, বিশেষভাবে ধর্মীয় উগ্রবাদের মুখোমুখি থাকা দেশগুলো, বেকতাশি আদর্শের মতো শান্তিপূর্ণ এবং পরিমার্জিত ধর্মীয় আন্দোলনকে সমর্থন করতে পারে।
এ সময় তিনি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতারের মতো দেশগুলোকে বেকতাশি আদর্শের শান্তিপূর্ণ মতবাদকে সমর্থনের কথা বলেন। তার দাবি, এর মাধ্যমে ইসলামের পরিমার্জিত ব্যাখ্যা শক্তিশালী হবে।
বাবা মণ্ডি উল্লেখ করেন যে, চীনসহ যেসব রাষ্ট্র মিলিটেন্ট ইসলাম নিয়ে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তারা বিভাজন সৃষ্টি না করে উগ্রবাদ প্রতিহত করার জন্য বেকতাশি আদর্শের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। আমাদের বিশ্বাস, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিমার্জিত কণ্ঠস্বরগুলোকে সমর্থন করার উপকারিতা স্বীকার করবে এবং বেকতাশি আদর্শের সার্বভৌম রাষ্ট্রকে শান্তি, সহিষ্ণুতা প্রচারের বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় একটি মূল্যবান অংশীদার হিসেবে দেখবে।