আশানুরূপ সাড়া নেই হজ নিবন্ধনে

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র কাবা, ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র কাবা, ছবি: সংগৃহীত

হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হলেও এখনো প্যাকেজ ঘোষণা না হওয়ায় হজ পালনেচ্ছুরা আছেন ধোঁয়াশায়। নিতে পারছেন না সিদ্ধান্ত, ফলে নিবন্ধনের গতি কম। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রায় দুই মাসে নিবন্ধন করেছেন মাত্র আট হাজার ২৮০ জন।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ-১ অধিশাখা থেকে দেওয়া বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৫ আগস্ট জারিকৃত বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে হজে গমনেচ্ছু প্রাক-নিবন্ধিতদের তিন লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে নিবন্ধন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে প্রাক-নিবন্ধন ও প্রাথমিক নিবন্ধন যুগপৎভাবে করা যাবে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, সরকারি ও বেসরকারি উভয় মাধ্যমের প্রাক-নিবন্ধন ফি ৩০ হাজার টাকা। যেকোনো সময় হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা এটি করতে পারেন। এ টাকা ফেরতযোগ্য। আর আগের বা নতুন প্রাক-নিবন্ধিত যেকোনো ব্যক্তি তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন করতে পারবেন। প্রাথমিক নিবন্ধনের এই টাকা ফেরতযোগ্য নয়। তবে হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তি যদি মারা যান অথবা গুরুতর অসুস্থ থাকেন তবে এই টাকায় অন্য কেউ বদলি হজ করতে পারেন।

কিন্তু প্রাথমিক নিবন্ধন শুরুর প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সাড়া না মেলার বিষয়ে কারণ হিসেবে হজ ব্যবস্থাপনার এজেন্সিগুলো বলছে, প্যাকেজ মূল্য ঘোষণা না করায় আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে নীড় ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মাওলানা আবদুল গাফফার খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘হজযাত্রীরা প্যাকেজের দিকে তাকিয়ে আছেন। হজযাত্রীরা বলছেন, আগে আমরা দেখি কত টাকার প্যাকেজ ঘোষণা হয়। তারপর প্রাথমিক নিবন্ধন করব। না হলে তিন লাখ টাকা দিয়ে নিবন্ধন করলাম। আর পরে বাকি টাকা জোগাড় করতে পারলাম না, তখন এই তিন লাখ টাকা তো ফেরত পাওয়া যাবে না। ফলে প্রাথমিক নিবন্ধন তেমন হচ্ছে না।’

অন্যদিকে প্রাথমিক নিবন্ধনের টাকা কমানোর দাবি জানিয়েছেন দি সিটি ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার হাফেজ নুর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘তিন লাখ টাকা যে সরকার চাচ্ছে, এটার একটা ব্যাখ্যা প্রয়োজন। কারণ আমাদের কাছে হাজিরা জানতে চান এত টাকা প্রাথমিক নিবন্ধনে কেন নেওয়া হচ্ছে। একদিকে আমরা প্যাকেজে কী থাকছে, প্যাকেজ কোন ধরনের হচ্ছে, কত টাকার হচ্ছে তার কিছুই বলতে পারছি না। অন্যদিকে তার কাছে তিন লাখ টাকা চাচ্ছি এটা কোনো যুক্তিতেই তারা মানেন না। ফলে প্যাকেজ ঘোষণার আগ পর্যন্ত আমরা হাজিদের নিবন্ধনে আগ্রহী করতে পারছি না।’ এ জন্য দ্রুত হজ প্যাকেজ ঘোষণা করার দাবি জানান তিনি।

হজ নিবন্ধনে এবার টাকার পরিমাণ বেশি কেন, এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা আগের বছরগুলোতে দেখেছি অনেকেই নিবন্ধন করে পরে বাকি টাকা জোগাড় করতে পারেন না। তাই এবার উড়োজাহাজ ভাড়াসহ কিছু খরচ যা আমাদের মাথাপিছু দিতেই হয়, সেই টাকা হিসাবে এই তিন লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কারণ হজ প্যাকেজের খরচ গতবারের তুলনায় কিছুটা হয়তো কমবে; কিন্তু তাকে তো তিন লাখ টাকার বেশিই দেওয়া লাগবে পুরো প্যাকেজের খরচ হিসাবে। তাই আমরা প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য তিন লাখ টাকা নির্ধারণ করেছি।’

হজের উড়োজাহাজ ভাড়া দিন দিন অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বার্তা২৪.কমকে মেইল করেছেন কয়েকজন প্রাক নিবন্ধনকারী। তারা বার্তা২৪.কমের মাধ্যমে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের কাছে আবেদনে হজযাত্রীদের উড়োজাহাজ ভাড়া জনপ্রতি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে বলেন। প্রয়োজনে হজযাত্রীদের উড়োজাহাজ ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে আনতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে থার্ড ক্যারিয়ার চালু করারও দাবি জানান তারা।

তাদের দাবি, ‘প্রতিবছর হজের খরচ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে হজ টিকিটের উড়োজাহাজ ভাড়া অনেক বেশি। দুই-তিনটি এয়ারলাইনসের মাধ্যমে হজযাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করায় প্যাকেজের মেয়াদ দীর্ঘ হয় ও ভাড়া বেড়ে যায়। মাত্রাতিরিক্ত উড়োজাহাজ ভাড়ার কারণে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নির্ধারিত হজ প্যাকেজ মূল্য প্রতিবছর বাড়ে। ফলে সাধারণ হজযাত্রীরা আর্থিক চাপের মুখে পড়ছেন। অনেকে হজে যাওয়ার সক্ষমতা হারাচ্ছেন।

এমতাবস্থায় হজযাত্রীদের পরিবহন ও সেবা প্রদানের জন্য দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসের অংশগ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা যেতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশে হজযাত্রীদের পরিবহন ও সেবা প্রদানে এই প্রচলন রয়েছে। এর ফলে দেশীয় এয়ারলাইনসের পাশাপাশি বহুজাতিক এয়ারলাইনসগুলোর অংশগ্রহণমূলক প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং হজযাত্রী পরিবহন ব্যয়ের তুলনামূলক মূল্য নির্ধারণ ও মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করা সহজ হবে বলে আমরা মনে করি।’

উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১ জুন পবিত্র হজ পালিত হওয়ার কথা। ২০২৫ সালের হজে বাংলাদেশ ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটা পেয়েছে। আগামী ১৩ জানুয়ারি সৌদি সরকারের সঙ্গে হজ চুক্তি সম্পন্ন হবে। আর ৩০ অক্টোবর চলতি বছরের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে।