ঝুঁকির মুখে হজ এজেন্সি ব্যবসা
সারাবছর ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েও ১০৯টি হজ এজেন্সি কোনো হজযাত্রীর প্রাক-নিবন্ধন করতে পারেনি। কেন তারা কোনো প্রাক-নিবন্ধন করতে পারেননি, তার ব্যাখ্যা চেয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া চিঠির মাধ্যমে তাদের কাছে এ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ২০২৫ সালের হজের জন্য ইতোমধ্যে সর্বমোট ৯৩৭টি হজ এজেন্সির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু অনুমোদিত তালিকায় প্রকাশিত হজ এজেন্সির মধ্যে ১০৯টি হজ এজেন্সির কোনো প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রী নেই। এমতাবস্থায় এসব এজেন্সিসে প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধন না করার জন্য কেন হজ ২০২৫ মৌসুমের যোগ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে না, তার ব্যাখ্যা ২৮ নভেম্বর মধ্যে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এমনিতেই হজযাত্রী মিলেনি, তার ওপর অনুমোদিত তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে, অনেক হজ এজেন্সিকে প্রতিষ্ঠানে তালা দিতে হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে, ধর্ম মন্ত্রণালয় ১২৪টি হজ এজেন্সিকে দ্রুত হজযাত্রী প্রাক-নিবন্ধন ও প্রাথমিক নিবন্ধন করার জন্য অনুরোধ করে চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, ২০২৫ মৌসুমে যৌক্তিক কারণ ছাড়া হজযাত্রী নিবন্ধন না করলে সেই এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হজ এজেন্সি ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এমন চিঠি চালাচালিতে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি হজ সংশ্লিষ্ট ব্যবসাখাত হুমকির মুখে? এভাবে বছরের পর বছর হজযাত্রী না পেলে অনেক এজেন্সির টিকে থাকা কষ্ট হয়ে যাবে।
পল্টনের এক এজেন্সির মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, তার একটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে ১১ জন কর্মচারী রয়েছেন, সেই সঙ্গে আছে অফিসসহ অন্যান্য খরচ। কর্মচারী কমাতে কমাতে এখন অফিস প্রায় ফাঁকা। ফলে ব্যবসার পরিধিও কমছে।
জানা গেছে, হজ ভিসা থেকে শুরু করে উড়োজাহাজের টিকিটি, মক্কা-মদিনায় বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়া, হজযাত্রীদের খাওয়া অর্থাৎ সার্বিক ব্যবস্থাপনা থেকে এজেন্সিগুলো আয় করে। কিন্তু রিয়ালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সেটা এখন অনেকটাই অনিশ্চিত। আর হজকোটা পূরণ না হওয়ায় এজেন্সিগুলোকে সৌদি আরবের দেওয়া নানা শর্তের বেড়াজালে থেকে হজ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। এর ফলে প্রায় সব হজ এজেন্সিই ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ২০১২ সাল থেকে সুনামের সঙ্গে হজ এবং উমরা সেবা দিয়ে আসা রাজধানীর একটি এজেন্সির মালিক বার্তা২৪.কমকে বলেন, করোনার পর থেকে আমরা আর সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। অথচ সবাই মনে করে, এ ব্যবসায় শুধু লাভ আর লাভ।
তিনি বলেন, করোনার আগে আমাদের এজেন্সির মাধ্যমে প্রতি বছর ২০০ থেকে ৪০০ হজযাত্রী হজ করতে যেতেন। কিন্তু করোনার পর গত বছর অনেক কায়দা করে ৭০ জন হজযাত্রীকে সৌদি আরবে পাঠাই।
হজের খরচ বৃদ্ধির কারণে মানুষ এখন উমরার দিকে ঝুঁকছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এবার নতুন করে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক পট-পরিপবর্তন। গত বছর ৪০ হাজারের বেশি হজকোটা ফাঁকা ছিল, এবার যে কি হবে- আল্লাহই ভালো জানেন।
২০১৮ ও ২০২৯ সালে বাংলাদেশি হাজিদের জন্য কোটা নির্ধারিত এক লাখ ২৭ হাজার ছাড়িয়ে অপেক্ষমান ছিলেন আরও এক লাখ হজযাত্রী। এর ফলে বাংলাদেশ সৌদি আরবের কাছে হজের কোটা বাড়ানোর আলোচনা করে। ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯১ জনের হজে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার সময় বিদেশিদের হজ বন্ধ থাকা, পরে সীমিত যাত্রীদের হজের সুযোগ দেওয়া এবং হজের খরচ বাড়ার কারণে বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত কোটা আর পূরণ হয়নি।
জানা গেছে, দেশে ১ হাজার ২৩৮টি হজ এজেন্সি রয়েছে। এর মধ্যে ৯৩৭টি হজ এজেন্সিকে এখন পর্যন্ত কার্যক্রম চালানোর অনুমোদন দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এজেন্সির মালিকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজারের মতো। এছাড়া এ পেশার সঙ্গে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশে ও সৌদি আরবে আরও প্রায় এক লাখ লোক নিয়োজিত।