যাদের ওপর জাকাত ফরজ
জাকাত ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রোকন। ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হলো- নামাজ ও জাকাত। কোরআরে কারিমের বহু স্থানে নামাজ-জাকাতের আদেশ করা হয়েছে এবং আল্লাহর অনুগত বান্দাদের জন্য অশেষ সওয়াব, রহমত ও মাগফিরাতের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ আদায় করো এবং জাকাত প্রদান করো। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা করো আল্লাহ তা দেখছেন। - সূরা বাকারা: ১১০
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ আদায় করো, জাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য করো যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পারো।’ -সূরা নূর: ৫৬
জাকাত ইসলামি শরিয়তের এমন এক অকাট্য বিধান, যে সম্পর্কে দলিল-প্রমাণের আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। জাকাত সংক্রান্ত কিছু কিছু মাসয়ালায় ইমামদের মধ্যে মতভিন্নতা থাকলেও মূল বিষয়ে অর্থাৎ জাকাত ফরজ হওয়া সম্পর্কে কোনো মতভেদ নেই। জাকাতের ফরজিয়তকে যে অস্বীকার করে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়।’ -ফাতহুল বারি: ৩/৩০৯
এই গুরুত্বপূর্ণ ফরজ আদায়ের জন্য কর্তব্য হলো- এ বিষয়ের শরয়ি মাসয়ালাগুলোর যথাযথ জ্ঞান লাভ করা। এ উদ্দেশ্যে জাকাতের মৌলিক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মাসায়ালা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আজ আলোচনা করা হবে যাদের ওপর জাকাত ফরজ হয় তাদের নিয়ে।
১. আগেই বলা হয়েছে, জাকাত ইসলামের একটি অপরিহার্য ইবাদত। এজন্য শুধু মুসলিমরা জাকাত আদায়ের জন্য সম্বোধিত হন। সুস্থ মস্তিষ্ক, স্বাধীন, প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে জাকাত আদায় করা তার ওপর ফরজ হয়ে যায়। -আদ দুররুল মুখতার: ২/২৫৯
কোনো অমুসলিম-কাফের যেহেতু ইবাদতের যোগ্যতা রাখে না তাই তাদের ওপর জাকাত আসে না।
এ ছাড়া অসুস্থ মস্তিষ্ক মুসলিমের ওপর এবং নাবালেগ শিশু-কিশোরের ওপরও জাকাত ফরজ নয়। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৬/৪৬১-৪৬২
যেসব জিনিসের ওপর জাকাত ফরজ হয়
২. সব ধরনের সম্পদ ও সামগ্রীর ওপর জাকাত ফরজ হয় না। শুধু সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, পালিত পশু (নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী) এবং ব্যবসার পণ্যে জাকাত ফরজ হয়।
৩. সোনা-রুপার অলংকার সর্বদা বা কালেভদ্রে ব্যবহৃত হোক কিংবা একেবারেই ব্যবহার না করা হোক সর্বাবস্থাতেই তার জাকাত দিতে হবে। -সুনানে আবু দাউদ: ১/২৫৫
৪. অলংকার ছাড়া সোনা-রুপার অন্যান্য সামগ্রীর ওপরও জাকাত ফরজ হয়। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭০৬১
৫. জামা-কাপড় কিংবা অন্য কোনো সামগ্রীতে সোনা-রুপার কারুকাজ করা থাকলে তা-ও জাকাতের হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং যে পরিমাণ সোনা-রুপা কারুকাজে লেগেছে অন্যান্য জাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে তারও জাকাত দিতে হবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১০৬৪৮
সোনা-রুপা ছাড়া অন্য কোনো ধাতুর অলংকার ইত্যাদির ওপর জাকাত ফরজ নয়। তদ্রূপ হিরা, মণি-মুক্তা ইত্যাদি মূল্যবান পাথর ব্যবসাপণ্য না হলে সেগুলোতেও জাকাত ফরজ নয়। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৬/৪৪৭-৪৪৮
৬. মৌলিক প্রয়োজন থেকে উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা নেসাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর স্থায়ী হলে বছর শেষে তার জাকাত আদায় করা ফরজ হয়। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭০৯১
আরও পড়ুন:
জাকাত আদায়ের জন্য যা জানা জরুরি
জাকাত অনাদায়ের পরিণতি
তদ্রূপ ব্যাংক ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, সার্টিফিকেট ইত্যাদিও নগদ টাকা-পয়সার মতোই। এসবের ওপরও জাকাত ফরজ হয়।
৭. টাকা-পয়সা ব্যবসায় না খাটিয়ে এমনি রেখে দিলেও তাতে জাকাত ফরজ হয়। -আদ্দুররুল মুখতার: ২/২৬৭
৮. হজের উদ্দেশ্যে কিংবা ঘর-বাড়ি নির্মাণ, ছেলে-মেয়ের বিয়ে-শাদি ইত্যাদি প্রয়োজনের জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করা হচ্ছে তা-ও এর ব্যতিক্রম নয়। সঞ্চিত অর্থ পৃথকভাবে কিংবা অন্যান্য জাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিসাব পরিমাণ হলে এবং নেসাবের ওপর এক বছর অতিবাহিত হলে জাকাত ফরজ হবে। বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তা যদি খরচ হয়ে যায় তাহলে জাকাত ফরজ হবে না। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭০৩২
৯. দোকান-পাটে যা কিছু বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রাখা থাকে তা বাণিজ্য-দ্রব্য। এর মূল্য নেসাব পরিমাণ হলে জাকাত আদায় করা ফরজ। -সুনানে আবু দাউদ: ১/২১৮
১০. ব্যবসার নিয়তে কোনো কিছু ক্রয় করলে তা স্থাবর সম্পত্তি হোক যেমন জমি-জমা, ফ্ল্যাট কিংবা অস্থাবর যেমন মুদি সামগ্রী, কাপড়-চোপড়, অলংকার, নির্মাণ সামগ্রী, গাড়ি, ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, হার্ডওয়ার সামগ্রী, বইপুস্তক ইত্যাদি, তা বাণিজ্য-দ্রব্য বলে গণ্য হবে এবং মূল্য নেসাব পরিমাণ হলে জাকাত দেওয়া ফরজ হবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭১০৩