২৪৫ এজেন্সি উমরায় লোক পাঠানোর অনুমতি পেলো

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র মক্কা শরিফ, ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র মক্কা শরিফ, ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছর হজের পর ৫ মহররম থেকে সৌদি আরবে উমরা যাত্রী যাওয়া শুরু করেছে। মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা উমরা পালনের জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন। বাংলাদেশের এজেন্সিগুলো উমরার প্রস্তুতি ও প্রচারণা চালালেও কবে থেকে বাংলাদেশের উমরা যাত্রীরা সৌদি আরব যাওয়া শুরু করবেন, সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে উমরা যাত্রী পাঠানো শুরু করা হবে। এ লক্ষে ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ইতোমধ্যে ৩ অক্টোবর ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রথম দফায় ২৪৫ বৈধ উমরা এজেন্সির তালিকা প্রকাশ করেছে। এখন এজেন্সিগুলো বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অফিস ও সংস্থার প্রয়োজনীয় অনুমোদনপত্র গ্রহণ করে সৌদি আরবের উমরা পরিচালনা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে উমরা যাত্রীদের ভিসার আবেদন ও উমরাহ যাত্রী পাঠাতে পারবে।

বিজ্ঞাপন

তবে উমরা যাত্রীদের জন্য বাড়তি ফি নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে তা এখনও সৌদি সরকারের কাছ থেকে পরিষ্কার ঘোষণা না আসায় এজেন্সিগুলো সুনির্দিষ্ট প্যাকেজ মূল্য ঘোষণা করতে পারছে না। এটা নিয়ে এক ধরনের অসন্তোষ দেখা দিয়েছে এজেন্সিগুলোর মাঝে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সাতটি শর্তে উমরা এজেন্সিগুলোকে উমরা যাত্রী পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে। এই শর্তগুলোর কোনো একটি ভঙ্গ করলেই লাইসেন্স বাতিল, জরিমানাসহ অন্যান্য শাস্তি আরোপের কথা বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শর্তগুলোর অন্যতম হচ্ছে- উমরা যাত্রীদের সৌদি আরবের ব্যয়ের টাকা আন্তর্জাতিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অর্থাৎ ‘আইবিএএন (IBAN)’ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাঠাতে হবে এবং বিষয়টি ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে। এ ছাড়া উমরা যাত্রীদের যথাসময়ে পাঠানো ও ফেরত আনা এবং যথাযথ সেবা প্রদান করতে হবে এবং উমরা যাত্রীদের যাবতীয় তথ্য ১৫ শাওয়ালের মধ্যে আশকোনা হজ অফিসের পরিচালককে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে। নির্ধারিত ১ হাজার জনের কোটার অতিরিক্ত কোনো উমরাহ যাত্রী কোনো এজেন্সি প্রেরণ করতে পারবে না। কোনো উমরা যাত্রী কোনো কারণে দেশে ফেরত না এলে নির্ধারিত তারিখের ১ মাসের মধ্যে তার বিস্তারিত হজ অফিসকে জানাতে হবে। এজেন্সিকে উমরা পালনের ব্যয় বিবরণী নির্ধারণ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে। এছাড়া বিগত বছর উমরা যাত্রী পাঠানোর ক্ষেত্রে ১০০০ জনের কোটা অতিক্রম করেনি এবং সবাই ফেরত এসেছে মর্মে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে।

বৈধ এজেন্সির তালিকা প্রকাশের পর উমরা যাত্রী পাঠানোর ক্ষেত্রে এখন এজেন্সিগুলোকে এফবিসিসিআই, সিভিল এভিয়েশন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কিছু দফতরের ছাড়পত্র নিয়ে সৌদি আরবের সরকার অনুমোদিত উমরা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে।

এদিতে উমরার জন্য এজেন্সিগুলো প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলেও সৌদি সরকার এখনও উমরার ফির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি। আগে তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার উমরা করার ক্ষেত্রে যে অতিরিক্ত ২০০০ রিয়াল নেওয়ার বিধান ছিল তা রহিত করা হয়েছে। এখন উমরার জন্য আলাদা ৩০০ রিয়াল ফি নির্ধারণ করার কথা শোনা যাচ্ছে, সব মিলিয়ে সেটা ৫০০ রিয়াল হতে পারে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। আসলে ঘোষণা আসার আগ পর্যন্ত নিশ্চিত কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে সৌদি আরবের নতুন শর্ত এবং কড়াকড়ির কারণে উমরার ব্যয় কয়েক হাজর টাকা বেড়ে যাবে।

উমরা কার্যক্রমে আগ্রহী এজেন্সিগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের লাইসেন্স নবায়ন ও অন্যান্য শর্ত বিদ্যমান থাকাসাপেক্ষে প্রথম দফায় ২৪৫টি এজেন্সিকে উমরাহ কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়বে। আর এই এজেন্সিগুলোর প্রত্যেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার জন করে উমরা যাত্রী পাঠাতে পারবেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতঃপূর্বে উমরার নামে মানব পাচারের কারণে বাংলাদেশিদের জন্য উমরা বন্ধ রেখেছিল সৌদি আরব। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় সতর্ক। তাই হজের মতো উমরাকে ধীরে ধীরে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মনিটরিংয়ের আওতায় আনার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ বছর কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উমরা এজেন্সির মালিক বলেন, উমরা কার্যক্রম গত বছরও অনেক সহজ ছিল। কিন্তু এবার আন্তর্জাতিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্যয়ের অর্থ প্রেরণ, হোটেল অনলাইন আবেদনের হোটেল বুকিংয়ের ডকুমেন্ট প্রদান এবং পরিবহনের ব্যয় পরিশোধের মতো কিছু বিষয় বাধ্যতামূলক করায় উমরা প্যাকেজমূল্য আগের তুলনায় বাড়বে। এজন্য অনেক এজেন্সি উমরার প্যাকেজ ঘোষণা করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ থেকে গত বছর প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার জন উমরা পালন করেছেন। প্রতি বছরই হজযাত্রীর পাশাপাশি উমরা যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে চলতি বছর ১ লাখ ২৭ হাজার ১৫২ জন হজপালন করেছেন। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হজ এজেন্সির সংখ্যা ছিল ৫৯৮টি।

বৈধ এজেন্সিগুলোর তালিকা দেখতে এখানে ক্লিক করুন