দানবাক্স থেকে পাগলা মসজিদের দৈনিক আয় লাখ টাকা!



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের আটটি দানবাক্স আবারও খোলা হয়েছে। এবার দানবাক্স খুলে ৮৮ লাখ ২৯ হাজার ১৭ টাকা পাওয়া গেছে।

শনিবার (৭ জুলাই) জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তিন মাস সাতদিনের ব্যবধানে দানবাক্সগুলো খোলা হয়।

নিয়ম অনুযায়ী তিন মাস পরপর মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এবার তিন মাস সাতদিন পর খোলা হয়েছে। দানবাক্সে পাওয়া টাকা রূপালী ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে, আর যে স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে তা আগের পাওয়া স্বর্ণালঙ্কারের সঙ্গে যোগ করে সিন্দুকে রেখে দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ ৩১ মার্চ মসজিদের দানবাক্স খুলে গণনা করে ৮৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মসজিদের আটটি দানবাক্স থেকে ১ কোটি ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭১ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। যা ছিল পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে সর্বোচ্চ টাকাপ্রাপ্তির ঘটনা।

দানবাক্সের টাকা ছাড়াও দানে পাওয়া গরু-ছাগল, হাস-মুরগি প্রতি সপ্তাহের নির্ধারিত দিনে নিলামে বিক্রি করা হয়।

এক হিসেবে দেখা গেছে, নানা প্রকারের দান থেকে প্রতিদিন মসজিদটির আয় গড়ে প্রায় এক লাখ টাকা।

আরও পড়ুন: শ্রেষ্ঠ আমল হজ, বিনিময়ে জান্নাত

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে আনুমানিক চার একর জায়গায় ‘পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স’ অবস্থিত। প্রায় আড়াইশ’ বছর আগে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয় বলে ইতিহাস সূত্রে জানা যায়। এই মসজিদের প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে।

/uploads/files/PzoMLFslD8kLra2CNPxYoCOZMnJC9py7rWKVVHKk.jpeg

জনশ্রুতি আছে, পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদের কাছে এসে উপস্থিত হন এবং ধীরে ধীরে তাকে ঘিরে আশেপাশে অনেক ভক্ত সমবেত হন। ওই পাগলের মৃত্যুর পর তার সমাধির পাশে পরবর্তীতে এই মসজিদটি গড়ে উঠে। কালক্রমে মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’ নামে পরিচিতি পায়।

সাধারণ মানুষের বিশ্বাসমতে, এই মসজিদে যে কেউ পবিত্র নিয়তে কিছু দান-খয়রাত করলে বা নফল নামাজ আদায় করার পর ‘মানত’ করলে মনের আশা পূরণ হয়। এজন্য শত শত মানুষ প্রতিদিন এই মসজিদে আসেন। এমন বিশ্বাসের আলোকে পাগলা মসজিদে গরু-খাসি এবং প্রচুর স্বর্ণ অলংকারসহ প্রচুর টাকা দান-খয়রাত করেন সাধারণ মানুষ।

মসজিদের ব্যয়ে ২০০২ সালে মসজিদের পাশেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি হাফেজিয়া মাদরাসা। মসজিদটি পরিচালিত হয় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে। দানবাক্সের প্রাপ্ত অর্থে মসজিদ ও কমপ্লেক্সের অন্তর্ভুক্ত এতিমখানা, মাদরাসা, কবরস্থানের ব্যয় নির্বাহ ছাড়াও জেলার অন্যান্য মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং দুস্থ মানুষকে সহায়তা প্রদান করা হয়।

তিনতলা ও তিন গম্বুজবিশিষ্ট পাগলা মসজিদের সুউচ্চ মিনার বহুদূর থেকে নজরে আসে। অনেক পুরোনো না হলেও পাগলা মসজিদের ইমরাত খুবই সুন্দর এবং নির্মাণশৈলীও বেশ চমৎকার। আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত পাগলা মসজিদটি নানা ধরণের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে খ্যাত।

   

কাবা দেখার আনন্দ বর্ণনাতীত: মুহাম্মদ ফারাহ



ইসলাম ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘আমি যখন প্রথম মক্কায় প্রবেশ করি এবং মসজিদে হারামে পৌঁছে পবিত্র কাবার সামনে হাজির হই, তখন আমি কাঁপতে শুরু করি। এটা আমার কাছে এক অপূর্ব আনন্দের অনুভূতি ছিল, যা বলে বোঝানো যাবে না।’

হজ পালন শেষে জীবনে প্রথমবার পবিত্র কাবা দেখার আনন্দ ও অনুভূতির কথা এভাবেই ব্যক্ত করছিলেন ব্রিটিশ অ্যাথলেট মুহাম্মদ ফারাহ।


সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মেহমান হিসেবে বিশ্ববরেণ্য এই ক্রীড়াবিদ এবার হজ পালন করেন। রাষ্ট্রীয় মেহমান হিসেবে হজের সুযোগ দেওয়ায় তিনি দেশটির ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী ডক্টর আব্দুল লতিফ আলে শায়খের কাছে কৃতজ্ঞ বলে জানান।

তিনি বলেন, এত বিপুল সংখ্যক হজযাত্রীদের আয়োজনের জন্য আমি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ, ক্রাউন প্রিন্স এবং সৌদি কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। এত বিপুল সংখ্যক হজযাত্রীদের সেবা দেওয়া এবং তাদের সব কিছু দেখাশোনা ও যত্ন নেওয়া রীতিমতো আশ্চর্যজনক। হজযাত্রীদের সেবা ও ব্যবস্থা প্রশংসনীয়।

তিনি বলেন, হজের সময় স্বাস্থ্য, পানি ও অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রয়োজনের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত ধৈর্যশীল ও শ্রমসাধ্য কাজ। সমস্ত মানুষের প্রচেষ্টার প্রশংসা করা উচিত।


হজ শেষে আরব নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ ফারাহ বলেন, ‘আমি এখানে প্রথম এসেছি এবং হজ করতে এসেছি। আমি প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার সুযোগ পাওয়ার জন্য মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই।’

মুহাম্মদ ফারাহ আরও বলেন, এবারের সফর হজে অংশ নিতে পেরে আমি খুশি এবং নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। তার মতে হজের আয়োজন একটি অত্যন্ত ধৈর্যশীল ও শ্রমসাধ্য কাজ।

অ্যাথলেটিক্স বিশ্বে এক নামেই পরিচিত ফারাহ। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে দুর্দান্ত অবদানের স্বীকৃতির পর তার নামের আগে যোগ হয়েছে ‘স্যার’ উপাধি।

অলিম্পিকসে চারটি ও বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপসে ছয়টি সোনা জিতে দূরপাল্লার দৌড়ের ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তিনি।

;

উট দিবস পালন করলো সৌদি আরব



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌদি আরবে আনুমানিক ১৮ লাখ উট রয়েছে, ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে আনুমানিক ১৮ লাখ উট রয়েছে, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

উট সৌদি আরবসহ আরব উপদ্বীপের বিস্তীর্ণ মরুভূমির সংস্কৃতি ও ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিভিন্ন প্রজাতির উট সংরক্ষণে দেশটি নানাবিধ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে শনিবার (২২ জুন) বিশ্ব উট দিবস উদযাপন করেছে সৌদি আরব।

উট দিবস পালন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকায় উট দৌড় ও মেলার আয়োজন করা হয়।

এর আগে ২০২৪ সালকে উটের বছর হিসেবে ঘোষণা দেয় দেশটি। আরব উপদ্বীপের মানুষের জীবনযাত্রায় উটের আর্থ-সামাজিক গুরুত্ব তুলে ধরতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। গত বছরের শেষ দিকে দেশটির মন্ত্রীদের কাউন্সিলে তা অনুমোদন পায়। গত ৩ জানুয়ারি সৌদি আরবের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নতুন বছরের লোগো, উটের ভিজ্যুয়াল ছবিসহ ব্র্যান্ড নির্দেশিকা ম্যানুয়াল প্রকাশ করে।

২০২০ সালে জাতিসংঘ এ বছরকে আন্তর্জাতিক উটের বছর হিসেবে নির্ধারণ করে। বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা, মরুকরণ প্রতিরোধ, ভূমির অবক্ষয় ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি বন্ধ করা, খাদ্য নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সুপারিশে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ উটের বছর উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

সৌদি আরবের সংস্কৃতি মন্ত্রী প্রিন্স বদর বিন আবদুল্লাহ বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন উদ্যোগ ও আয়োজনের মাধ্যমে ২০২৪ সালকে উটের বছর হিসেবে উদযাপন করা হবে। সৌদি আরবের আত্মপরিচয়ের সঙ্গে উটের গভীর সংযোগ তুলে ধরে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই প্রাণীর গুরুত্ব তুলে ধরা হবে।

ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউর তথ্য অনুসারে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক উট থাকা দেশগুলো হলো পাকিস্তান, আমিরাত ও সৌদি আরব। সৌদি আরবের পরিবেশ, পানি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান মতে, দেশটিতে আনুমানিক ১৮ লাখ উট রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৫০ বিলিয়ন রিয়াল। অবশ্য এই পরিসংখ্যানের বাইরেও ছয় থেকে সাত লাখ উট রয়েছে।

বিনোদন, খেলাধুলা, খাবারসহ জীবনযাত্রার সব ক্ষেত্রে এই প্রাণীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সভ্যতা নির্মাণে উট অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ভূমিকা রাখছে।

;

হিজাব নিষিদ্ধ ও ঈদের ছুটি বাতিল তাজিকিস্তানে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবের রাস্তার মুসলিম নারীরা হেঁটে যাচ্ছেন, ছবি: সংগৃহীত

তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবের রাস্তার মুসলিম নারীরা হেঁটে যাচ্ছেন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হিজাব নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিল পাস করেছে মধ্য এশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত দেশ এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম অঙ্গরাজ্য তাজিকিস্তানের পার্লামেন্ট। সম্প্রতি দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ মজলিশি মিলিতে পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটে বিলটি পাস হয়।

নারীদের হিজাব নিষিদ্ধের পাশাপাশি ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দুই ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহায় স্কুল-কলেজ ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাতিলের বিষয়টিও রয়েছে বিলটিতে।

এর আগে গত ৮ মে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ মজলিশি নামোইয়ানদাগনে পাস হয়েছিল বিলটি। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) পার্লামেন্টের বিলটি পাসের পর এক মজলিশি মিলির প্রেস সেন্টার থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘হিজাব বা এই জাতীয় মস্তকাবরণর পরিধানের সংস্কৃতি মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি হয়েছে। এটি তাজিকিস্তানের নিজস্ব সংস্কৃতি নয়। তা ছাড়া এই পোশাকটির সঙ্গে কট্টরপন্থার সম্পর্ক রয়েছে।’

তাজিকিস্তানের জনসংখ্যার ৯৬ শতাংশ মুসলিম। হিজাবকে ‘বিজাতীয় পোশাক’ অভিহিত করে দেশটির সরকার এটি নিষিদ্ধ করেছে। আইন ভঙ্গকারীদের জন্য ৬৫ হাজার তাজিক সোমনি জরিমানার বিধান করা হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যা ৫ লক্ষাধিক। হিজাবের পাশাপাশি দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রাহমন ঈদের দিনের ‘ঈদি’ প্রথার ওপরও কড়াকড়ি আরোপ করেছে।

২০০৭ সাল থেকে হিজাব, ইসলামি ও পশ্চিমা পোশাকের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান শুরু হয় তাজিকিস্তানে। ওই বছর তাজিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলামিক পোশাক এবং পশ্চিমা ধাঁচের মিনিস্কার্ট উভয়ই নিষিদ্ধ করে। পরে সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে এটি কার্যকর করা হয়।

তার পরের বছরগুলোতে হিজাবের ওপর একপ্রকার অলিখিত নিষেধাজ্ঞা কাজ করছিল দেশটিতে। স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি পর্যন্ত করেছিলেন।

মূলত তাজিকিস্তানের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও পোষাকরীতিকে বাঁচিয়ে রাখতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে তাজিকিস্তানের জাতীয় দিবসে সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির নারীদের মোবাইলে হিজাব এবং পশ্চিমা পোশাক পরিহার করে তাজিকিস্তানের নিজস্ব সংস্কৃতির পোশাক পরার আহ্বানও জানানো হয়েছিল।

;

ইশারা ও চাহনি যেখানে ভেঙে দেয় ভাষার বাধা



আবু ইফফাত
বিদেশি হাজিদের বরণ করে নিচ্ছেন স্থানীয়রা, ছবি: সংগৃহীত

বিদেশি হাজিদের বরণ করে নিচ্ছেন স্থানীয়রা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অঙ্গ-ভঙ্গি, আকার-আকৃতি ও ইশারা-ইঙ্গিতে চোখ ধাঁধানো শপিং মল, স্বর্ণের দোকান, খাবারের হোটেল থেকে শুরু করে ফুটপাতের দোকানে চলে দরদাম এবং বেচাকেনা। গাড়ি ভাড়া করা কিংবা ঠিকানা জানার ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি। এভাবে মক্কার বাসিন্দারা ভিনদেশি হজযাত্রীদের সঙ্গে বছরের পর বছর ভাষার দূরত্ব কাটিয়ে যোগাযোগ করছেন। অনেকে আবার নিজ আগ্রহে একটু একটু করে শিখে নিচ্ছে ভিনদেশি কোনো ভাষা।

ফলে হজের সফরে এক মাসের বেশি ও উমরায় প্রায় ১৫ দিন মক্কা-মদিনায় থাকলেও একেবারে অশিক্ষিতরাও সেখানে উল্লেখযোগ্যভাবে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হন না। সারা বছর মক্কা-মদিনায় বিভিন্ন দেশের মানুষজনের আনাগোনা লেগে থাকে। তবে হজের সময় প্রায় দুই মাস থাকে বেশি জনসমাগম।

মক্কার স্থানীয়রা বিভিন্ন ভাষাভাষী লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ ও কথাবার্তার সাবলীলতার জন্য দারুণভাবে প্রশংসিত। ভিনদেশিদের সঙ্গে আচার-আচরণ দ্বারা সম্পর্ক স্থাপন এ অঞ্চলের লোকদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। মক্কা-মদিনার বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরতদের জন্য এমন যোগ্যতা তাদেরকে মৌসুমি চাকরি নিশ্চিত এবং হজ সম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিয়োগ পেতে সহায়তা করে। এটা হজযাত্রীদের সেবা, তাদের চাহিদা মেটানো এবং তাদের বিশ্বাস অটুট রাখার নিশ্চয়তা দেয়।

মক্কার বাসিন্দা আনাস আল-হারিথি। প্রতি বছর হজের সময় অস্থায়ীভাবে শপিংমলে কাজ করেন।

হজযাত্রীদের সেবায় স্বেচ্ছাসেবকরা

তিনি এটাকে একটি দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হারিথি নিজ আগ্রহে ইন্দোনেশিয়ান ভাষা কিছুটা রপ্ত করেছেন। প্রতি বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি হজযাত্রী হজ পালনে মক্কায় আসেন।

আল-হারিথি বলেন, কীভাবে যেন ভাষাগত বাধা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, কারণ মক্কার অনেক লোক দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ভাষায় সাবলীল।

হজের সময় বছরের পর বছর কাজ করার মাধ্যমে, আল হারিথি হজযাত্রা সম্পর্কিত বিস্তৃত জ্ঞান অর্জন করেছেন। এটা তার কর্মক্ষেত্রকে সহজ ও মসৃণ করে তুলেছে।

তিনি বলেন, বেশিরভাগ মক্কার বাসিন্দা আনুষ্ঠানিক কোনো শিক্ষার মাধ্যমে নয় বরং হজযাত্রীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন, যা তাদেরকে কার্যকরভাবে হাজিদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম করে।

ভারত থেকে আগত হজযাত্রীদের গাইড রাফি চৌধুরী বলেন, হজ-উমরা মক্কাবাসীদের জন্য কাজ করার, সেবা করার এবং এই মহৎ পেশার সম্মান উপভোগ করার একটি বড় সুযোগ।

হজযাত্রীদের স্বাগত জানানো, তাদের প্রয়োজন মেটানো এবং তাদের যাত্রাপথ যতটা সম্ভব মসৃণ এবং আরামদায়ক করার ক্ষেত্রে মক্কার অনেকেই উর্দুতে যোগাযোগ করা শিখে গেছে।

চৌধুরী বলেন, যেসব দেশে থেকে কম মানুষ আসেন, তাদের জন্য যেমন আকার-ইশারা, ভাঙা ইংরেজি দিয়ে ভাব বিনিময় করা হয়, তেমনি যেসব দেশের মানুষ বেশি আসেন ওই সব দেশের কিছু শব্দ তারা নিজ আগ্রহে শিখে নেন। তাদের এই আগ্রহ হজযাত্রীদের সেবা করার, তাদের আতিথেয়তার, তাদের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার এবং হজের সময় তাদের আচার-অনুষ্ঠান পালনে দারুণভাবে সহায়তা করে।

চৌধুরী যোগ করেছেন, স্থানীয় পুলিশ থেকে শুরু করে সরকারি স্বেচ্ছাসেবকরা হজযাত্রীদের মক্কায় পৌঁছানোর সময় থেকে, মসজিদে হারামে নামাজের সময়, হজ-উমরার বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালনের সময় ভাষাগত বাধা অতিক্রম করে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। যা হজযাত্রীদের ইবাদত-বন্দেগি পালনে সহায়ক। এ সম্পর্ক অনেকটা মানবিক ও আধ্যাত্মিক। যা ধর্মীয় সম্পর্ক দ্বারা চালিত।

স্থানীয় চিকিৎসক রায়হান মোশাহিদ বলেন, ‘এটি আল্লাহর সামনে পালন করা একটি বাধ্যবাধকতা ও সৌভাগ্য। যারা আল্লাহর মেহমান হিসেবে মক্কায় এসেছেন, তাদের চাহিদা বোঝা এবং তাদের ভাষায় যোগাযোগ করা জরুরি কিছু নয়। আপনি হৃদয় খুলে তার মুখের দিকে তাকান, আপনি বুঝে যাবেন তার কি দরকার। বলতে পারেন, এটা মক্কার বরকত।’

মিসফালার রাস্তা

মদিনা ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ভাষাবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আওয়াদ আল-মালিকি বলেন, সারা বিশ্ব থেকে মক্কায় আগত হজযাত্রীদের এই সমাজকে জানার, এর সংস্কৃতি এবং সামাজিক জীবন অনুভব করার, সৌদি ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রক্ষার প্রবল ইচ্ছা রয়েছে। এর সঙ্গে জ্ঞান বিনিময় এবং গঠনমূলক সাংস্কৃতিক অংশীদারিত্বে জড়িত। ফলে চোখের ভাষায় যোগাযোগটা হয়ে যায়।

তিনি বলেন, হজযাত্রীরা সৌদি আরবকে শুধু ইসলামিক বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র হিসেবেই দেখেন না বরং একটি স্বতন্ত্র ও উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে দেখেন, যা সমগ্র ইসলামিক বিশ্বকে একত্রিত করে।

সৌদির বাসিন্দারা হজযাত্রীদের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির জন্য ভাষাগত যোগাযোগের বিষয়ে উত্সাহী। ফলে তারা ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, উর্দু, মালয়, বাংলা এবং হাউসাসহ বিভিন্ন ভাষায় ধীরে ধীরে পারদর্শী হয়ে যায়।

আরব নিউজ অবলম্বনে

;