হজ কবুল হওয়ার জন্য ঝগড়া না করা শর্ত



ড. মুফতি মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী, অতিথি লেখক, ইসলাম

  • Font increase
  • Font Decrease

১৪ জুলাই বাংলাদেশ থেকে শুরু হয়েছে হজ ফ্লাইট। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হজযাত্রীরাও হজপালনের নিমিত্তে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে পৌঁছেছেন। মক্কা, স্বপ্নের নগরী। সুতরাং মক্কায় নামার পর খুব আদবের সঙ্গে চলুন। এটি ইসলামের শহর, নিরাপদ শহর, বালাদে আমিন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে কাটিয়েছেন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ৫৩টি বছর।

আপনি যেখানে পা রাখছেন হতে পারে এখানেই বা আশপাশে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলাফেরা করেছেন। মক্কায় আপনাকে হোটেলে বা বাড়িতে থাকতে দেওয়া হবে। বর্তমানে প্রত্যেকের জন্য আলাদা সিটের ব্যবস্থা থাকে। তাই সিট নিয়ে টেনশন করার কিছুই নেই। অমুকের সিট ভালো হয়েছে আমারটা ভালো হলো না কেন? এ নিয়ে শয়তান মনে ঝগড়া তৈরি করাবে। মনে রাখবেন, হজের সফরে ঝগড়া করা যাবে না। হজ কবুল হওয়ার জন্য ঝগড়া না করা শর্ত।

হোটেলে সিট বুঝে নিয়ে দীর্ঘ ক্লান্তি দূর করার জন্য একটু বিশ্রাম নিতে পারেন। কাফেলার পক্ষ থেকে যখন উমরার তাওয়াফ করার কথা বলা হবে তখনই প্রস্তুত থাকবেন। প্রথম হজ-উমরা হলে অভিজ্ঞ আলেম বা কাফেলা প্রধানের নেতৃত্বে তাওয়াফ করতে যাওয়া ভালো।

উমরা আদায়
কিরান হজ হোক বা তামাত্তু হজ আদায় করার ইচ্ছা থাকুক প্রথমেই মক্কা পৌঁছে উমরা আদায় করতে হয়। উমরার ক্ষেত্রে চারটি জিনিস পালনীয়। ইহরাম বাঁধা, তাওয়াফ করা, সায়ি করা এবং মাথা মুণ্ডানো বা হলক করা। এ কয়েকটি কাজ শেষ হলেই উমরা পালন হয়ে যায়। উমরা শেষ হলে তামাত্তু হজ পালনকারীরা হালাল হয়ে যায়। অর্থাৎ ইহরাম অবস্থায় যা নিষিদ্ধ ছিল তা আর হারাম বা নিষিদ্ধ থাকবে না। তাই স্বাভাবিক জীবন শুরু হয়। সাধারণ জামা-কাপড় পরে নামাজ ও নফল তাওয়াফ ছাড়া হজের পূর্বে আর কোনো বিশেষ কাজ থাকে না।

কাবার দরজায়
কাবাঘর তাওয়াফ করার পূর্বে গোসল করে নেওয়া ভালো। কাবাঘরের চারপাশের বিল্ডিংগুলোই মাসজিদে হারাম। এ মসজিদে হারামে প্রবেশের সময় বাবুস সালাম দিয়ে প্রবেশ করা ভালো। এছাড়া অন্যান্য গেট দিয়েও প্রবেশ করা যায়। বাবুস সালাম বর্তমানে ১৭ নম্বর গেট যা আবু কুবাইস পাহাড়ের কাছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাড়ীর কাছে। কাবা ঘর দেখার সময় দোয়া করবেন। এ সময় দোয়া কবুল হয়।

মসজিদে হারামে প্রবেশের সময় দুই রাকাত দুখুলুল মসজিদ নামাজ পড়ে নেওয়া যায়। যদি জামাতে নামাজ হতে থাকে তাহলে আগে জামাতে নামাজ আদায় করে নিতে হবে।

তাওয়াফ
আল্লাহর ঘর কাবার চারদিকে নির্ধারিত নিয়মে সাত বার চক্কর দেওয়া বা ঘুরাকে তাওয়াফ বলে। উমরা আদায়ের ক্ষেত্রে তাওয়াফ ফরজ। যে শুধু হজ আদায় করে অর্থাৎ ইফরাদ হজ করে তার জন্যও আগমনী তাওয়াফ করা সুন্নত হিসেবে গণ্য হবে।

হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করতে হয়। তাওয়াফের জন্য মনে মনে নিয়ত করলেই হবে। হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর চুমু দিয়ে তাওয়াফ শুরু করতে হয়। ভিড়ের কারণে চুমু দেওয়া সম্ভব না হলে হাজরে আসওয়াদের সোজা সবুজ বাতি বা সবুজ দাগে দাঁড়িয়ে কাবার দিকে দুই হাত উঁচু করে তারপর দুই হাতে চুমু দিতে হয়। তখন নিজের মতো করে মনে মনে দোয়া করে নেবেন।

হাজরে আসওয়াদ চুমু দিয়ে বা হাতে ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করতে হবে। ৭ বার ঘুরার পর হাজরে আসওয়াদে এসেই তাওয়াফ শেষ হবে। তাওয়াফ করার সময় কাবা ঘরের সঙ্গে সংযুক্ত হাতিমে কাবাকেও তাওয়াফের অন্তর্ভুক্ত করে নিতে হবে। হাজরে আসওয়াদের কোণার পর হাতিমের কোণা পড়বে। তারপর পড়বে রুকনে ইয়ামানির দিক। প্রতি চক্করে এ রুকনে ইয়ামানি দুই হাতে বা শুধু ডান হাতে ছুঁয়ে দেওয়া সুন্নত। বেশি ভিড় হলে তা প্রতিবারে ছোঁয়ার চেষ্টা না করা। তা না ছুঁয়ে দিলেও তাওয়াফ আদায় হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন: হজের প্রস্তুতিতে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি

রুকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মাঝামাঝি স্থানে ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আযাবান নার’ এ দোয়া করেছেন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। -আবু দাউদ

ইবনে মাজায় বর্ণিত হাদিসে আছে, হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রুকনে ইয়ামানিতে সত্তর হাজার ফেরেশতা নিয়োজিত। যে ব্যক্তি রুকনে ইয়ামানিতে পৌঁছে এ দোয়া করে- আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরা, রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আযাবান নার’ তখন সকল ফেরেশতা আমিন বলে। -ইবনে মাজাহ

হাজরে আসওয়াদ থেকে চক্কর শুরু করে আবার হাজরে আসওয়াদে পৌঁছালে এক চক্কর তাওয়াফ হলো। এভাবে সাত চক্কর তাওয়াফ করলে একটি পরিপূর্ণ তাওয়াফ হয়।

প্রতি তাওয়াফে আলাদা কোনো দোয়া নেই। তাওয়াফ করার সময় এমন কোনো দোয়া বর্ণিত নেই যা পড়া ফরজ বা ওয়াজিব। তাওয়াফের সময় কোনো দোয়া না পড়লেও তাওয়াফ হয়ে যায়। তাওয়াফের সময় কোনো দোয়া করা নিষেধ নেই। কোনো বই দেখে বা শুনে দোয়া পড়লে তা জায়েজ। বিভিন্ন গ্রন্থে প্রতি চক্করে আলাদা আলাদা দোয়া লেখা আছে। এভাবে প্রতি চক্করের জন্য আলাদা আলাদা দোয়া পড়ার রেওয়াজ না করাই উচিত। এতে করে তাওয়াফের একাগ্রতা নষ্ট হয়।

তাওয়াফের সময় আল্লাহর ঘরকে কেন্দ্র করে চক্কর দিচ্ছি এ খেয়াল রাখবেন। মনে মনে আল্লাহর কাছে যা চাওয়ার চাইতে পারবেন। তাওয়াফের সময় কাবার দিকে বুক ও পিঠ করা অনুচিত।

যেসব তাওয়াফের পর সায়ি করতে হয় সে সব তাওয়াফের প্রথম ৩ চক্করে রামল করতে হয়। আর পুরো ৭ চক্করে ইজতেবা করতে হয়।

রমল হলো- হেলেদুলে বীরের মতো চলা। ইজতেবা হলো- ইহরামের চাদরকে ডান বগলের নীচ দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের ওপর ফেলে রাখা।

তাওয়াফ শেষে দুই রাকাত নামাজ পড়া সুন্নত। তাওয়াফের নামাজ পড়ার জন্য কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, মাকামে ইবরাহিমে নামাজ আদায় করার জন্য। হজের মৌসুমে মাকামে ইবরাহিমে তাওয়াফ শেষের নামাজ পড়া অনেক কঠিন। তারপরও কিছু বান্দা কষ্ট স্বীকার করে- এখানেই নামাজ পড়ে থাকে। তবে মাকামে ইবরাহিমের সোজা পিছনে মাতাফের শেষপ্রান্তে অধিকাংশ লোক নামাজ আদায় করে থাকেন। এতে নামাজে মনোযোগ আনা সহজ হয়। তাওয়াফের নামাজ শেষে দোয়া করা জায়েজ। এ সময়ও দোয়া কবুল হয়।

জমজমের পানি
তাওয়াফের ক্লান্তি দূর করার জন্য অসাধারণ পানীয় হলো- জমজমের পানি। মসজিদে হারামের অসংখ্য স্থানে জমজমের পানি রাখা আছে। যারা ঠাণ্ডা পানি পান করতে চান তারা কোল্ড বা বারিদ ড্রামের পানি পান করতে পারেন। ঠাণ্ডা ছাড়া নরমাল পানিও আছে। ইচ্ছা করলে দু’টো মিলিয়েও পান করতে পারেন।

জমজমের পানি পান করলে ক্ষুধা দূর হয়। এতে খাদ্যগুণও আছে। জমজমের পানিতে রোগমুক্তিও আছে। এ বরকতি পানি হজের সফরে নিয়মিত পান করতে পারেন।

সায়ি
তাওয়াফ শেষ করার পর ফরজ তাওয়াফ হলে সায়ি করতে হয়। উমরা ও হজের জন্য সায়ি করা ওয়াজিব। সায়ি হলো- সাফা ও মারওয়া নামক দু’পাহাড়ের মাঝে হাঁটা ও দৌঁড়ানো। তাওয়াফ, নামাজ ও পানি পান শেষে এবার সায়ির পালা। সায়ি করার পূর্বে কাবা ঘরের হাজরে আসওয়াদে চুমু দিতে হয়। চুমু দেওয়া সম্ভব না হলে ইশারা করবেন। অন্তত দু’হাত উঁচু করে হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাতে চুমু দিবেন। তারপর বলবেন- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার।

আরও পড়ুন: হজের ইহরাম: দুই খণ্ড সাদা কাপড় যখন হজযাত্রীর সঙ্গী

অত:পর হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুসারে বাবুস সাফা দিয়ে সাফা পাহাড়ে উঠবেন। অন্য স্থান দিয়েও সাফা পাহাড়ে উঠলেও চলবে। পাহাড়ে দাঁড়িয়ে কাবাঘর দেখা যায়। সেটি হাজরে আসওয়াদের কোণা। সাফা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে কাবার দিকে মুখ করে দু’হাত তুলে হাজরে আসওয়াদকে ইশারা করাকে ইসতেলাম বলে। ইসতেলামের মাধ্যমে শুরু হবে সায়ি। সাফা থেকে মারওয়া পৌঁছালে একবার সায়ি হলো। মারওয়া থেকে সাফা পৌঁছালে দুইবার হলো। এভাবে ৭ বার দৌঁড়ানো শেষ হবে মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছানোর পর। দুই পাহাড়ের মাঝে এ সাতবার হাঁটা ও দৌঁড়ানোর মাধ্যমে সম্পন্ন হবে সায়ি।

সায়ি করার সময় অল্প একটু জায়গায় বর্তমানে সবুজ লাইট দেওয়া আছে। এ নীচু জায়গায় দৌঁড়াতে হয়। অন্যান্য জায়গায় হেঁটে চললেই হয়। নারীরা সবুজ বাতির জায়গায় দৌঁড়াবে না বরং স্বাভাবিকভাবে হেঁটে যাবে। এ সময় নারী পুরুষ সবাই এ দোয়া করবে- রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতাল আয়ায্যুল আকরাম।

সায়ি করার সময় অজু থাকা মুস্তাহাব। কোনো কারণে অজু ছাড়া সায়ি করলে এতে কোনো দম দিতে হবে না। অজু ছাড়াও সায়ি আদায় হয়ে যায়।

সায়ির পর আবার তাওয়াফ করার স্থানের পাশে এসে দুই রাকাত নামাজ পড়া সুন্নত। অন্য জায়গাতেও এ নামাজ পড়া যায়। মারওয়া পাহাড়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ার কোনো বিধান নেই। সেখানে নামাজ পড়া মাকরূহ।

সায়ি করার সময় দোয়া কবুল হয়। এ সময় নির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। যেকোনো দোয়া করা যেতে পারে। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সময় বলেছিলেন, হে আল্লাহ! তুমি তো বলেছো, আমাকে ডাকো, আমি সাড়া দেবো। (দোয়া করো, আমি কবুল করবো) তুমি তো ওয়াদা খেলাফ করো না। আমি তোমার কাছে চাচ্ছি, তুমি যেমনিভাবে আমাকে ইসলামের পথ দেখিয়েছো তা কখনো ছিনিয়ে নিয়ো না। আমাকে মুসলমান অবস্থায় মৃত্যু দিও। -আহকামে হজ: পৃ. ৫৮

এছাড়া অন্য যেকোনো দোয়া করা যেতে পারে।

সায়ি করা অবস্থায় জামাত শুরু হয়ে গেলে সেখানেই জামাতে দাঁড়িয়ে যাবেন। নামাজ শেষে সেখান থেকেই সায়ি পূর্ণ করবেন।

মাসয়ালা: সায়ি সব সময় তাওয়াফের পরে করতে হয়। তাওয়াফ ছাড়া সায়ি হয় না।

মাসয়ালা: তাওয়াফ পবিত্র অবস্থায় করার পর কোনো নারী সায়ি করার সময় অপবিত্র হয়ে পড়লেও সায়ি শেষ করতে পারবে। অপবিত্র অবস্থায় সায়ি করা জায়েজ হবে।

মাসয়ালা: হুইল চেয়ারে বসে বিনাওজরে সায়ি করা নাজায়েজ। ওজর থাকলে হুইল চেয়ারে করে সায়ি করতে পারবে। সবুজ বাতির জায়গায় চেয়ারের গতি বাড়িয়ে দিতে হবে। তবে ভিড় থাকলে অন্যকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।

মাথার চুল কাটা
হজ তিন ধরণের হয়। ১. যারা শুধু হজ করে, তা ইফরাদ হজ। ২. যারা হজ ও উমরা একসঙ্গে করে, কিরান হজ। এ দু’শ্রেণির ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ হজ না করে ইহরাম শেষ করতে পারবে না। অন্যান্য যারা আছেন যেমন শুধু উমরাকারী কিংবা তামাত্তু হজকারী তারা সায়ি করার পর মাথার চুল ন্যাড়া করে ফেলবে কিংবা এক আঙুল পরিমাণ চুল কাটিয়ে নেবে।

নিজে নিজে কাটা যাবে না। যিনি ইহরাম অবস্থায় আছেন তিনিও চুল কাটতে পারবেন না। যিনি ইহরাম শেষ করেছেন তার মাধ্যমে অথবা স্থানীয় কারো মাধ্যমে মাথা মুণ্ডাবেন।

বর্তমানে প্রচুর সেলুন পাওয়া যায়, তাদের দ্বারা তা করাতে পারেন। কাফেলার কেউ ইহরাম শেষ করে থাকলে তার দ্বারাও মাথার চুল চেছে ফেলা যায়।

উমরার সমাপ্তি
ইহরাম, তাওয়াফ, সায়ি ও মাথা মুণ্ডানোর মাধ্যমে উমরা পালন হয়ে গেল। এবার ইহরামের কাপড় খুলে ফেলুন। এখন থেকে ইহরাম অবস্থায় যা নিষিদ্ধ ছিল, তা আর নিষিদ্ধ থাকবে না। গোসল করে সেলাই করা সাধারণ কাপড় পরিধান করুন। তখন খুশবু ব্যবহার করা জায়েজ। স্ত্রীর সঙ্গেও স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যাবে তখন থেকে।

লেখক: অধ্যাপক, উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

   

সৌদিতে আরও এক বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি মৌসুমে হজ পালন করতে গিয়ে মো. মোস্তফা (৮৯) নামে আরও এক হজ যাত্রী মারা গেছেন। শনিবার (১৮ মে) মক্কায় মারা যান তিনি।

রোববার (১৯ মে) রাত ২টার হজ পোর্টালের আইটি হেল্প ডেস্কের প্রতিদিনের বুলেটিন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে, গত বুধবার (১৫ মে) চলতি হজ মৌসুমে সৌদি আরবের প্রথম বাংলাদেশি এক হজযাত্রী মারা যান। মো. আসাদুজ্জামান নামের ওই ব্যক্তি মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন।

এ দিকে পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত (১৮ মে রাত ১টা ৫৯ মিনিট) সৌদি পৌঁছেছেন ২৮ হাজার ৭৬০ জন হজযাত্রী। মোট ৭২টি ফ্লাইটে তারা সৌদিতে পৌঁছান। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার ৭৪৭ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী ২৫ হাজার ১৩ জন। এখন পর্যন্ত ৮১ হাজার ৮৬২টি ভিসা ইস্যু করা হয়েছে।

হজ সম্পর্কিত সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এয়ারলাইন্স, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হজ অফিস ঢাকা এবং সৌদি আরব সূত্রে এ তথ্য জানিয়েছে হেল্পডেস্ক।

হেল্প ডেস্কের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত মোট ৭২টি ফ্লাইটের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ২৮টি, সৌদি এয়ারলাইনসের ২৬টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।

হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর গত মধ্যরাত পর্যন্ত ৮১ হাজার ৮৬২ জন হজযাত্রীর ভিসা ইস্যু হয়েছে। সে হিসেবে এখনো ৩ হাজার ৩৯৫ জন হজযাত্রীর ভিসা হয়নি। সর্বশেষ শনিবার (১৮ মে) মো. মোস্তফা নামের ৮৯ বছর বয়সী হজযাত্রী মক্কায় মারা যান।

;

নিবন্ধিত কোনো হজযাত্রী হজপালনে বঞ্চিত হবেন না



মুফতি এনায়েতুল্লাহ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
হজ ক্যাম্পে হজযাত্রীদের একাংশ, ছবি: বার্তা২৪.কম

হজ ক্যাম্পে হজযাত্রীদের একাংশ, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নিবন্ধিত কোনো হজযাত্রী হজপালনে বঞ্চিত হবেন না বলে আশাবাদী বাংলাদেশ হজ অফিসের পরিচালক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান।

ভিসা না হওয়া হজযাত্রীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। তবে বাংলাদেশ হজ অফিসের পরিচালক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, চলতি হজ মৌসুমে নিবন্ধিত সবার ভিসা হবে বলে আমি আশাবাদী। কয়েকটি এজেন্সির হজযাত্রী নিয়ে জটিলতা হচ্ছে, তার অর্ধেকই ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে। বাকি কাজ সমাধানের পথে।

জিলহজ মাসে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে ৯ মে শুরু হওয়া হজফ্লাইট শেষ হবে ১০ জুন। এই সময়ের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গাইডসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ১১৭ জন। ইতোমধ্যে ২৮ হাজার ৪ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। ৮২ হাজার ১০০ জনের ভিসা ভিসা হয়েছে। এখনও বেসরকারিভাবে নিবন্ধিত ৩ হাজার ৩৩৬ জনের ভিসা হয়নি।

মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, পরিচালক, হজ অফিস, ছবি: বার্তা২৪.কম

জানা গেছে, যথাসময়ে ভিসার আবেদন না করায় ওয়ার্ল্ডলিঙ্ক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (লাইসেন্স ৫৭০, যাত্রী সংখ্যা ২৮৬), আনসারি ওভারসিস (লাইসেন্স ৬০১, যাত্রী সংখ্যা ২৬০), আল রিসান ট্রাভেল এজেন্সি (লাইসেন্স ৬৭২, যাত্রী সংখ্যা ৪৪৪), মিকাত ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস (লাইসেন্স ১০২৫, যাত্রী সংখ্যা ৩৭৫), নর্থ বাংলা হজ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (লাইসেন্স ১০৮৬, যাত্রী সংখ্যা ২৬০), হলি দারুন নাজাত হজ ওভারসিস (লাইসেন্স ১৪৬২, যাত্রী সংখ্যা ২৫০) কে ধর্ম মন্ত্রণালয় শোকজ করে। এসব এজেন্সির মাধ্যমে ১ হাজার ৮৭৫ জনের চলতি বছর হজে যাওয়ার কথা রয়েছে।

আর আল রিসান ট্রাভেলস এজেন্সির নিবন্ধিত হজযাত্রীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কারও ভিসা না করায় বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুস সালাম মিয়ার দেশত্যাগ স্থগিত ও তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আল রিসান ট্রাভেলস এজেন্সিসহ অভিযুক্ত এজেন্সির মালিকদের নিয়ে আমরা বসে, পয়েন্ট পয়েন্ট ধরে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করেছি। ইতোমধ্যে হলি দারুন নাজাত হজ ওভারসিস, ওয়ার্ল্ডলিঙ্ক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এবং মিকাত ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের হজযাত্রীদের ভিসা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অন্যদেরও হয়ে যাবে। নিবন্ধিত কোনো হজযাত্রী হজপালন থেকে বঞ্চিত হবেন না বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এমন আশাবাদী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে হাব সভাপতি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব অংশে যে পরিমাণ অর্থ প্রেরণ করা দরকার এজেন্সিগুলো তা পাঠিয়েছে। আর যতটুকু সমস্যা রয়েছে, আশা করি তা সমাধান করা যাবে।

এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম, ছবি: বার্তা২৪.কম

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আল রিসান ট্রাভেলস এজেন্সি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুস সালাম মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি এবার হজে কোনো লোক পাঠাইনি। আকবর হজ গ্রুপের মুফতি লুৎফর রহমান ফারুকী তার লাইসেন্সে সমস্যা হওয়ায় আমার লাইসেন্স ব্যবহার করে ৪৪৮ জন হজযাত্রী পাঠাচ্ছে। চলতি সমস্যা নিয়ে হাব সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে মুফতি লুৎফর রহমান সৌদি থেকে ফোনে কথা বলেছেন, তিনি আশ্বস্থ করেছেন; আজকালের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ জনের ভিসা হয়ে যাবে। আর আগামীকাল বা পরশুর মধ্যে সবার ভিসা হয়ে যাবে। তিনি মদিনার বাড়ি ভাড়া করেছেন, মক্কার বাড়িও ভাড়া হওয়ার পথে।’

;

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগমুহূর্তে ছেলের খুনিকে ক্ষমা করলেন বাবা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আল হুমাইদি আল হারবি, ছবি: সংগৃহীত

আল হুমাইদি আল হারবি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মৃত্যদণ্ড কার্যকরের আগ মুহূর্তে ছেলের খুনিকে ক্ষমা করে দিলেন বাবা। শেষ সময়ে জন্মদাদা বাবার এমন উদারতা দেখে উপস্থিত কর্মকর্তারা হতবাক হয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে সৌদি আরবে। খবর গালফ নিউজের।

আল হুমাইদি আল হারবি নামের ওই বাবা হঠাৎ করে দণ্ড কার্যকরের স্থানে যান। সেখানে গিয়ে ঘোষণা দেন, ছেলের হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন তিনি। ওই হত্যাকারীর দণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি নেওয়ার আগে আল হুমাইদি আল হারবির কাছে একাধিকবার গিয়েছিলেন সরকারি কর্মকর্তারা।

কিন্তু ওই সময় তিনি ছেলের হত্যাকারীকে ক্ষমা করতে চাননি। কিন্তু পরে নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। নিজ ছেলের হত্যাকারীকে ক্ষমা করার একমাত্র অধিকারী ব্যক্তি ছিলেন ওই বাবা। সে অনুযায়ী, বিনা শর্তে তিনি হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেন। এতে করে সেখানে থাকা সবাই বেশ অবাক হন।

আল হারবি জানিয়েছেন, ধর্মীয় দিক বিবেচনা করে তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও প্রথমে হত্যাকারীকে ক্ষমা করতে চাননি। কিন্তু পরে নিজের মন পরিবর্তন করেন। ছেলের হত্যারকারীকে ক্ষমা করা ওই বাবার এমন উদারতার প্রশংসা করেছেন সাধারণ মানুষ। তারা এটিকে ক্ষমার একটি অনন্য উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

খবরে প্রকাশ, নিজ গোত্রের প্রতিবেশীর বন্ধুর ছেলের হাতে তার ছেলে খুন হন। দেশটির আইন অনুযায়ী বিচার শেষে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়। সৌদি আরবের আইনে রক্তপণ নিয়ে কিংবা অভিভাবক হিসেবে খুনিকে ক্ষমা করে দেওয়ার বিধান রয়েছে।

সে হিসেবে তিনি ছেলের খুনিকে ক্ষমা করে বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক আজও আগের মতো।’

তার স্পষ্ট কথা, আমি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ছেলের হত্যাকারীকে ক্ষমা করেছি। এ বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তারা ক্ষমার কথা বললেও তার পরিবার ক্ষমা প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর আমাদের সম্পর্ক গত ছয় দশকের মতোই আজও আছে। ছেলের খুনের পর যেমন ছিল, এখনও সম্পর্ক তেমনি আছে।

হত্যাকারীর বাবা আবদুল মাজিদ আল হারবি বলেন, আমি নিহতের বাবাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা করি এবং সম্মান করি, তিনি আমার ভাইয়ের চেয়েও বেশি।

;

সৌদিতে বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছরের হজ মৌসুমে সৌদি আরবে মো. আসাদুজ্জামান নামের এক বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এটিই এবারের হজে প্রথম কোনো বাংলাদেশির মৃত্যু।

শনিবার (১৮ মে) হজ পোর্টালের আইটি হেল্পডেস্কের প্রতিদিনের বুলেটিন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এতে বলা হয়, ১৫ মে আসাদুজ্জামান মদিনায় মসজিদে নববীতে থাকা অবস্থায় হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পরেন। পরে তাকে কিং সালমান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। জানা গেছে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার ৭ নম্বর মাসকা ইউনিয়নের সাতাশী গ্রামের বাসিন্দা মো. আসাদুজ্জামান।

এদিকে শুক্রবার (১৭ মে) রাত ৩টা পর্যন্ত ২৭ হাজার ১১১ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। অন্যদিকে এখনো ৪ হাজার ২৫৬ জন হজযাত্রীর ভিসা হয়নি।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন এবারের হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাওয়ার ফ্লাইট শুরু হয় গত ৯ মে। আগামী ১০ জুন পর্যন্ত যাওয়ার ফ্লাইট চলবে। হজ শেষে ২০ জুন ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে। দেশে ফেরার ফ্লাইট শেষ হবে আগামী ২২ জুলাই।

;