‘সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড গঠন জরুরি’



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি প্রসঙ্গে আলেমদের অভিমত, ছবি: বার্তা২৪.কম

বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি প্রসঙ্গে আলেমদের অভিমত, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি নিয়োগের দাবি’র প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রাজ্ঞ আলেম, শিক্ষাবিদ, গবেষক, আলেম-উলামা ও ইসলামবিষয়ক জনপ্রিয় কয়েকজন লেখকের মতামত। এসব মতামতে ওঠে এসেছে ‘ফিকহে ইসলামিতে বিশেষজ্ঞ মুফতিদের নিয়ে কেন্দ্রীয় ফতোয়া বোর্ড গঠন এবং ইলম ও আমলে জ্যেষ্ঠ মনীষীকে ‘প্রধান মুফতি’ মনোনয়ন করা।

ড. মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক
চেয়ারম্যান, আবহাস এডুকেশনাল এন্ড রিসার্চ সোসাইটি
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি সুপ্রিম ফতোয়া বোর্ড এবং একজন গ্র্যান্ড মুফতির নিয়োগ অপরিহার্য হয়ে ওঠেছে।

কোনো বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক হতে পারে, হওয়া স্বাভাবিক। মানুষের বুদ্ধি-বিবেচনা, অভিজ্ঞতা, পরিবেশ-পরিস্থিতি, ব্যক্তিমানসের বিভিন্নতা ইত্যাদি তর্ক-বিতর্ক জিইয়ে রাখার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। বুদ্ধির উৎকর্ষ সাধনের জন্যও চিন্তার স্বাধীনতা তথা তর্ক-বিতর্কের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকা প্রয়োজন। তবে তর্ক-বিতর্কের বিষয়টি একাডেমিক পর্যায়ে সীমিত রাখা বাঞ্ছনীয়। বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়ের বির্তক সর্বসাধারণের পর্যায়ে নিয়ে এলে ধর্ম বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। এমনকি অনেকের অন্তরে ধর্ম বিষয়ে অনীহা ও বিতৃষ্ণা তৈরি হতে শুরু করে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই বিভিন্ন দেশে গ্র্যান্ড মুফতির পদ তৈরি করা হয়েছে। মন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন এই পদটি ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে মতানৈক্য নিরোধ করে সাধারণ মানুষের ধর্মচর্চা অনেক সহজ করে দিয়েছে।

যেমন বর্তমান প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আবদুল আজিজ আবদুল্লাহ আলে শায়খ, মিসরের গ্র্যান্ড মুফতি শাওকি ইবরাহিম আবদুল কারিম আল্লাম- জুমা, জামাত, তারাবি ও ঈদের নামাজ ঘরে পড়া হবে নাকি মসজিদে পড়া হবে, মসজিদ খোলা কি বন্ধ থাকবে- এ ব্যাপারে তাদের কথাই চূড়ান্ত।

অবশ্য গ্র্যান্ড মুফতিকে সহায়তার জন্য একটি সুপ্রিম ফতোয়া বোর্ড রয়েছে। এই বোর্ডের সদস্যদের পরামর্শক্রমেই গ্র্যান্ড মুফতি ফতোয়া চূড়ান্ত করেন। মিসরের সুপ্রিম ফতোয়া বোর্ডটি ‘দারুল ইফতা আল মিসরিয়াহ’ নামে ১৮৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রথম গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে নিয়োগ পান শায়খ হাসসুনা আন নাওয়াবি। আর সৌদি আরবের সুপ্রিম ফতোয়া বোর্ডটি ‘আল লাজনা আল ইলমিইয়্যা লিলবুহুস ওয়াল ইফতা’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে। সৌদিতে প্রথম গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে নিয়োগ পান- শায়খ মুহাম্মদ বিন ইবরাহিম আলে শায়খ।

ফতোয়া বিষয়ে আমাদের দেশে যে নৈরাজ্য ও উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ চলছে, এ অবস্থায় সরকারিভাবে একটি সুপ্রিম ফতোয়া বোর্ড এবং মন্ত্রীর পদমর্যায় একজন গ্র্যান্ড মুফতি নিয়োগ দেওয়া অপরিহার্য হয়ে ওঠেছে।

রশীদ জামীল
কলাম লেখক ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা
গ্র্যান্ড মুফতির প্রয়োজন আছে কি না- তারও আগে যে প্রশ্নটি সামনে আসবে এবং অমীমাংসিত থেকে যাবে, তা হলো- তিনি কীভাবে বা কাদের দ্বারা নির্ধারিত হবেন! আমার ধারণা, তার নিয়োগ-বিধি বা মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়েই কিয়ামতের আগে একমত হওয়া যাবে না।

একজন গ্র্যান্ড মুফতি অথবা একটি জাতীয় ফতওয়া বোর্ড থাকা দরকার; নীতিগতভাবে এই পয়েন্টে কারোই দ্বিমত আছে বলে মনে হয় না। তেমন কিছু একটা থাকলে শরয়ি বিষয়ে অবিভক্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যেত। অন্তত সাম্প্রতিক পনেরো, সত্তর এবং তিনশ তেরো’র অস্বস্থিকর বিবৃতি পাল্টা বিবৃতির পর কেউ যদি ফতওয়া বোর্ড বা গ্র্যান্ড মুফতির ব্যাপারটাকে জরুরতে মুয়াক্কেদা আলাল কেফায়া বলে ফতওয়া দেন, আমি সেটাকে চোখ বন্ধ করে সমর্থন জানাবো।

আমাদের জাতিগত একটি সমস্যা হলো- আমরা সবসময় সমাধানের মধ্যেই নতুন করে সমস্যা তৈরি করি। যিনি বড়, ভাবি সব বিষয়ে তিনি বলবেন এবং তিনি যা বলবেন- সেটাই হবে শেষ কথা। অথচ উচিত ছিল যেটা যার বিষয়, তিনিই সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন। এখানে সিনিয়রিটি-জুনিয়রিটির সূত্র প্রয়োগ করা হবে না। কেউ দেশের প্রসিদ্ধ শায়খুল হাদিস। তার মানে এই নয় যে, ‘ত্রিভূজের তিন কোণের সমষ্টি দু সমকোণ’- জ্যামিতির এই সূত্রটিও তাকে ব্যাখ্যা করতে হবে এবং এ ব্যাপারে তাকেই ফতওয়া দিতে হবে!

যে কথাটি বললে অনেকেই কপালে ভাঁজ ফেলে আমার দিকে তাকাবেন, আমরা আমাদের মাথায় একটি বিষয় সেট করে বসে আছি, যিনি যতবড় বুজুর্গ, তার ফতোয়া ততোবেশি মজবুত হবে। দেশের শীর্ষ কিছু আলেম যদি কোনো ফতোয়া দেন, তাহলে সেটার ওপরে আর কোনো কথা থাকবে না! কেউ আমাদের বুঝিয়ে বলে না- বড় মুহাদ্দিস, বড় মুফাসসির বা বড় বুজুর্গ হওয়া এক জিনিস, আর মুফতি হওয়া অন্য জিনিস। যার কাজ তারই সাজে, অন্যে করলে ভেজাল বাড়ে!

শীর্ষ আলেমরা জাতীয় ব্যাপারে কথা বলবেন। শরয়ি মাসয়ালা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে ফতোয়া বোর্ড সিদ্ধান্ত দেবে। অন্যরা তার আলোকে কথা বলবেন। এমনটাই তো হওয়া উচিত ছিল। তাহলে অন্তত সময় সময় জাতিকে বিব্রত হতে হতো না।

ড. মুহাম্মদ রুহুল আমিন রব্বানী
সহকারী অধ্যাপক, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
প্রধান মুফতির পদটি মুসলিম রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। সর্বশেষ ইসলামি খিলাফত ওসমানী আমলে রাষ্ট্রীয়ভাবে এ পদ সৃষ্টি করা হয়। ভারত উপমহাদেশে মুঘল আমল পর্যন্ত গ্র্যান্ড মুফতির পদ বহাল ছিলো। সর্বশেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর শাহ ফযলে রাসূল কাদরি বাদাউনিকে (১৭৯৮-১৮৭২) মুঘল সম্র্রাজ্যের প্রধান মুফতি হিসেবে নিয়োগ দেন।

বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্র্যান্ড মুফতি রয়েছেন। এমনকি অনেক অমুসলিম দেশেও এ পদ রয়েছে। আমরা মুফতি ইসমাঈল মেনকের নাম উল্লেখ করতে পারি। তিনি জিম্বাবুয়ের গ্র্যান্ড মুফতি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন কারণে সর্বমহলে নির্ভরযোগ্য একজন গ্র্যান্ড মুফতির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বিশেষত তিনি উলামায়ে কেরামের ঐক্যসহ সর্বাবস্থায় ইসলামের পক্ষে একজন দায়িত্বশীল অভিভাবক হিসেবে কাজ করবেন। ইসলাম সম্পর্কে অপপ্রচার, ভুল ধারণা ও বিষোদগারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মোকাবেলা করতে কাজ করেবেন। রাজনৈতিক মতপার্থক্যকে ঊর্ধ্বে রেখে সকলের নির্ভরতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারবেন।

অতএব যথাযথ নিয়োগ প্রক্রিয়া, যোগ্যতা, দক্ষতা, গ্রহণযোগ্যতা সবকিছু ঠিক রেখে এমন একটি দায়িত্বশীল পদ সৃষ্টি করতে পারলে এদেশের মুসলিম জনসাধারণ তো বটেই- আলেম-উলামা ও সরকারের জন্য তা ইতিবাচক হবে।

মাওলানা জামীল আহমাদ
মুহাদ্দিস, দারুল উলুম রামপুরা বনশ্রী মাদরাসা ঢাকা
বাংলাদেশ। আমাদের প্রিয় এ ভূখণ্ডটি অনেক দেশের তুলনায় ছোট, যদিও লোকসংখ্যা বেশি। এদেশের অধিকাংশ মানুষ ইসলামের প্রতি দুর্বল। এ অঞ্চলের মানুষকে দ্বীন বুঝানো অনেক সহজ। তথাপি এদেশের উলামায়ে কেরাম সার্বজনীন ও দ্বীনের কল্যাণমুখী সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বরাবরই দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পিছিয়ে থাকেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও মুসলিম সোসাইটিতে একজন থাকেন সর্বজন বরিত, তার কথাই শিরোধার্য হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও কখনও সাহাবি হজরত সাদ বিন মুয়ায (রা.)-এর পরামর্শ মেনে নিয়েছেন। হজরত উমর (রা.) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) কে ডানে বসিয়ে দেশ পরিচালনা করেছেন। হজরত যায়েদ বিন হারেসা (রা.)-এর ফতোয়াকে মাথা পেতে নিয়েছেন। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) খালকে কোরআনের মাসয়ালায় দিয়েছেন নেতৃত্ব।

আমরা কেন পারি না এমন একজনকে গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে মেনে নিতে? আমরা সবাই যেন এ ব্যাপারে একমত হয়ে গেছি যে, আর যাই হোক কোনোভাবেই ঐক্যমত পোষণ করা যাবে না, এক প্লাটফর্মে আসা যাবে না। জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে বড়োই প্রয়োজন একজন দূরদর্শী রাহবারের। যার মেধা, পাণ্ডিত্য, দূরদর্শিতা ও কৌশলী সিদ্ধান্ত জাতির আস্থা জোগাবে। ছোটখাটো মতভেদ ভুলে তাকেই আপন করে নেবে। সবাই একসুরে গাইবে সাম্যের গান।

মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী
খতিব, বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মিরপুর, ঢাকা
সৌদি আরবসহ বিশ্বের বহু মুসলিম দেশে গ্র্যান্ড মুফতি রয়েছে। বিভিন্ন অস্থিরতা ও সঙ্কটকালীন মুহূর্তে তাদের একটি ফতোয়ায় পাল্টে যায় গোটা দেশের দৃশ্যপট। সমকালীন ধর্মীয় বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের দেশের মান্যবর মুফতিদের মতপার্থক্যপূর্ণ ফতোয়ায় বেশি বিপাকে পড়ছে সাধারণ মানুষ। তারা আলেমদের মত পার্থক্য দেখে সিদ্ধান্তহীনতার রোগে ভোগেন। এগুলো নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচুর সমালোচনা হয়। পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুফান বইতে থাকে। দিন দিন এসব কারণে এলিট সোসাইটি থেকে শুরু করে নিম্নমহল পর্যন্ত আলেমদের ব্যাপারে ভুল বার্তা যায়।

ইসলাম ফোবিয়ায় ভুগতে থাকা মানুষেরা আলেমদের নিয়ে ট্রল করে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দেশে একজন প্রধান মুফতি বা গ্র্যান্ড মুফতি প্রয়োজন। যিনি ধর্মীয় ক্ষেত্রে আপামর জনসাধারণের আস্থার প্রতীক হবেন, দেশসেরা মুফতিদের মেধা, মনন ও প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে বাস্তবতার নিরিখে বিবাদমান ইস্যুগুলোর সঠিক সমাধান দেবেন। সুতরাং সরকারের উচিত গ্রহণযোগ্য একজন মুফতিকে গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া।

এক্ষেত্রে সরকারকেও ভিন্নমত গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে। ‘সব ফতোয়া সরকারের প্রেসক্রিপশন অনুসারে হতে হবে’ এমন মনোভাব সরকারের থাকলে গ্র্যান্ড মুফতির পদটি হাস্যকর পদে পরিণত হয়ে আস্থার শূন্যতা সৃষ্টি হবে। সুতরাং সার্বিক কল্যাণের জন্য গ্র্যান্ড মুফতি নিয়োগ দিয়ে সরকারকেই গ্র্যান্ড মুফতির সম্মান ও আস্থা রক্ষায় বদ্ধপরিকর হতে হবে।

শফকত হোসাইন চাটগামী
পরিচালক, দারুল কারীম মাদরাসা বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
বাংলাদেশে ধর্মীয় বিষয়গুলো সমাধানে যেভাবে সিদ্ধান্তহীনতা দেখা যায়, তা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিভিন্ন ইসলামি রাষ্ট্র ও দেশে একজন গ্র্যান্ড মুফতি তথা ধর্মীয় বিষয় সমাধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি থাকেন। বাংলাদেশেও একজন গ্র্যান্ড মুফতি এই মুহূর্তে বেশি প্রয়োজন। সরকার উদ্যোগ নিয়ে আলেমদের সঙ্গে পরামর্শ করে বিষয়টি সুরাহা করতে পারেন। এতে করে আগামীতে ধর্মীয় ইস্যুতে তার নেতৃত্বেই সব কিছুর চূড়ান্ত ফায়সালা হবে।

মুফতি মুনীরুল ইসলাম
সহকারী পরিচালক, মাদরাসা কাসিমুল উলুম গাজীপুর
গ্র্যান্ড মুফতি হলে ইখতিলাফ কমে আসবে। আমাদের বহু-বিভক্তের দেশে এর চেয়ে উত্তম কাজ আর হতে পারে না। এটা হওয়া জরুরি। তার আগে অনৈক্যের দেশে গ্র্যান্ড মুফতি বানাতে আবার ঐক্য দরকার। এটা এমন হতে পারে- সব মতের আলেমদের নিয়ে নির্বাচিত ব্যক্তিকে সরকারিভাবে অনুমোদন দেওয়া। তাতে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ধর্মীয় বিষয়াদী সম্পর্কে মেনে নিতে সহজ হবে।

মাওলানা মুইনুল ইসলাম
শিক্ষক, জামিয়াতুস সুন্নাহ, শিবচর, মাদারীপুর
পৃথিবী ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। মানুষের মাঝে বাড়ছে অনৈক্য, বিভেদ- বিদ্বেষও। ‘ঐক্য’ ইসলামের মূল বক্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। ‘বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ কোরআনের অমোঘ আহবান। মানুষের মাঝে বিভেদ কমাতে, ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দুতে মানুষকে একত্রিত করতে সর্বজনমান্য একক ব্যক্তিত্বের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও প্রতিষ্ঠা একটি সুন্দর পন্থা। ধর্মীয় সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষেত্রেও দেশভিত্তিক এই পন্থা কার্যকর করা গেলে মানুষ বহু বিষয়ে অস্পষ্টতা ও সিদ্ধান্তহীনতা- ফলত নানা অস্থিরতা থেকে বেঁচে যাবেন। এজন্য আমাদের দেশে যদি ইসলামি সকল ঘরানার সমন্বিত উদ্যোগে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় একজন মুফতিয়ে আজম বা গ্র্যান্ড মুফতি নির্বাচন করা যেতো, তাহলে এ জাতির বড়ই উপকার হতো।

আরও পড়ুন:

বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি নিয়োগের দাবি জোরালো হচ্ছে

‘গ্র্যান্ড মুফতির পদ সৃষ্টি সময়ের দাবি’

   

রিজিক বৃদ্ধির ৪ আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন যে, তার আয়-উপার্জন, জীবন-মৃত্যু এবং সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায়; যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো- হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তার নিকটই পুনরুত্থান।’ -সুরা আল মুলক : ১৫

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমল ও উপায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে ৪টি আমলের কথা উল্লেখ করা হলো-

তওবা-ইস্তেগফার : তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তেগফার করবে; আল্লাহতায়ালা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮

পরহেজগারি অবলম্বন এবং আল্লার ওপর ভরসা : যেসব আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে, তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ -সুরা সাদ : ৩৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ -জামে তিরমিজি : ২৩৪৪

সময়মতো নামাজ আদায় এবং ইবাদতের জন্য নিজেকে মুক্ত করা : সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ -সুরা ত্বহা : ১৩২

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দরিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো, আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ -জামে তিরমিজি : ২৪৬৬

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ -সুরা জুমা : ১০

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ১৪৮০

;

গরমে মুমিনের আমল



মুফতি উমর ফারুক আশিকী
গরমে পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ কাম্য, ছবি : সংগৃহীত

গরমে পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ কাম্য, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলে, হে রব! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। আল্লাহতায়ালা তখন তাকে দুইটি নিশ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি নিশ্বাস শীতকালে আরেকটি গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাকো।’ -সহিহ বোখারি : ৩২৬০

মুমিন বান্দারা দয়াময় আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হয়ে গ্রীষ্মের এই গরম সময়ে অফুরন্ত সওয়াব লাভের জন্য বেশ কিছু আমল করতে পারেন। আশা করা যায়, মহান আল্লাহর দয়ায় পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে- ইনশাআল্লাহ।

তওবা করা : মানুষের পাপের কারণে মানুষের ওপর নানা ধরনের বিপদাপদ আসে, তাই প্রতিকূল অবস্থাকে অনুকূলে আনতে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করার কোনো বিকল্প নেই।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘আর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

ইবাদতে গাফিলতি না করা : গরমের কারণে ইবাদত-বন্দেগিতে গাফিলতি না করা। কারণ জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার গরমের চেয়ে বহুগুণে উত্তপ্ত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘পেছনে থাকা লোকগুলো আল্লাহর রাসুলের বিপক্ষে বসে থাকতে পেরে খুশি হলো। আর তারা অপছন্দ করল তাদের মাল ও জান নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করতে এবং তারা বলল, ‘তোমরা গরমের মধ্যে বের হয়ো না।’ বলো, জাহান্নামের আগুন অধিকতর গরম, যদি তারা বুঝত।’ -সুরা তওবা : ৮১

পিপাসার্তকে পানি পান করানো : হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত সাদ ইবনে উবাদা (রা.) বলেন, (এক দিন) আমি (নবীজিকে) বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন সদকা উত্তম? তিনি বলেন, পানি পান করানো। -সুনানে নাসায়ি : ৩৬৬৫

চলমান গরমের সময় শহরেরে বিভিন্ন স্থানে পথচারীদের জন্য ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা রাখা হয় বিভিন্ন অফিস, দাতব্য সংগঠন কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে। এটা অত্যন্ত ভালো কাজ, সওয়াবের কাজ।

কেউ পানি চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে নিষেধ করেছেন নবী কারিম (সা.)। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এমন কী জিনিস আছে, যা কেউ চাইলে না দিয়ে তাকে বিদায় দেওয়াটা ঠিক নয়?

তিনি বলেন, পানি, লবণ ও আগুন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই পানি সম্পর্কে তো আমরা জানি, কিন্তু লবণ ও আগুনের ব্যাপারে কেন বাধা দেওয়া যাবে না? তিনি বলেন, হে হুমায়রা! যে ব্যক্তি আগুন দান করল, সে যেন ওই আগুন দিয়ে রান্না করা যাবতীয় খাদ্যই দান করল।
যে ব্যক্তি লবণ দান করল, ওই লবণে খাদ্য যতটা সুস্বাদু হলো তা সবই যেন সে দান করল। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা সহজলভ্য, সে যেন একটি গোলামকে দাসত্বমুক্ত করল এবং যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা দুষ্প্রাপ্য, সে যেন তাকে জীবন দান করল। -সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪৭৪

অন্যের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানো : তীব্র গরমে অনেক সময় মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। বয়োবৃদ্ধরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজের জন্য বাইরে যেতে পারেন না, তখন তাদের সাহায্য করার মাধ্যমে সদকার সওয়াব মেলে।

হজরত আবু জার (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথ থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। -জামে তিরমিজি : ১৯৫৬

পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া : গরমে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিও কষ্টে পড়ে। তাই মানুষের উচিত তাদের পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়; সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল, কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, পানির পিপাসা কুকুরটাকে মুমূর্ষ করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ হতে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করালো), এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো। -সহিহ বোখারি : ৩৩২১

গরমের কারণে দুনিয়ার এই হাহাকার পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে, মহান রবের সন্তুষ্টি পেতে বর্ণিত আমলগুলো বেশি বেশি করা জরুরি।

 

;

আগামীতে হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট: ধর্মমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ অনুসারে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে হজ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে।

তিনি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত যে পোর্টালটি রয়েছে সেখানে আমরা নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করছি। আগামী দিনে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট হজ ব্যবস্থাপনা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে ঢাকা হজ অফিসের সম্মেলন কক্ষে হজযাত্রী প্রশিক্ষণ ২০২৪ ’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্মমন্ত্রী এ কথা বলেন।

ফরিদুল হক খান বলেন, আপনারা সকলেই যাতে সহী-শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে পারেন সেজন্যই মূলত আজকের এই প্রশিক্ষণ। আমরা প্রশিক্ষণের জন্য অত্যন্ত দক্ষ প্রশিক্ষক নির্বাচন করেছি। আপনারা যদি প্রশিক্ষণের প্রতি মনযোগী হতে পারেন তাহলে আপনারা হজের নিয়ম-কানুন, হুকুম-আহকাম, ধারাবাহিক আনুষ্ঠানিকতা- সবকিছু আয়ত্তে আনতে পারবেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই প্রবণতা হলো জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হজ পালন করা। হজ অনেক পরিশ্রমসাধ্য ইবাদত, এর জন্য শারীরিক সামর্থ্য থাকা বাঞ্চনীয়। অনেকেরই সেই শারীরিক সামর্থ্য থাকে না। যার কারণে তাদের পক্ষে হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদন করা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়।

তিনি বলেন, অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে জমানো সঞ্চয় দিয়েই হজব্রত পালন করতে যান। এদেশের অধিকাংশ মানুষেরই দ্বিতীয় বার হজ করার মতো আর্থিক সঙ্গতি থাকে না। সে কারণে আপনার পরিশ্রম ও অর্থ যেন বিফলে না যায় সেজন্য অবশ্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)’র নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে হজ সম্পাদন করতে হবে। সহী ও শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে হবে।

ফরিদুল হক খান বলেন, সৌদি আরবে আপনার পরিচয় শুধু একজন হজযাত্রী নয়, আপনার পরিচয়-আপনি একজন বাংলাদেশি। আপনার আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চালচলনের মাধ্যমেই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রকাশ পাবে।

তিনি সৌদি আরবের আইন-কানুন, নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিপালনে কোনরূপ বিচ্যুতি না ঘটে সেদিকে যত্নবান থাকার আহ্বান জানান।

এছাড়া, কারো জন্য দেশের ভাবমূর্তি ও সম্মান যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে বিশেষভাবে সর্তক থাকার জন্য হজযাত্রীদেরকে অনুরোধ জানান তিনি।

ধর্মসচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম, যুগ্মসচিব ড. মো. মঞ্জরুল হক ও ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।

প্রশিক্ষণে সরকারি মাধ্যমে নিবন্ধিত ঢাকার হজযাত্রীরা অংশগ্রহণ করছেন।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আশঙ্কা এজেন্সি মালিকদের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হজ এজেন্সির মালিকেরা। তাই সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দ্রুত সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এজেন্সি মালিকেরা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান অপারেটিং হজ এজেন্সির মালিকরা।

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে হাবিবুল্লাহ মুহাম্মদ কুতুবুদ্দীন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কিছু ঊর্ধতন কর্মকর্তা এবং মক্কা হজ মিশনের কিছু কর্মকর্তাদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, গত ১৮ এপ্রিল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ ১ শাখা থেকে সৌদি সরকারের একটি চিঠির বরাতে জানানো হয়- আগামী ২৯ এপ্রিল হজ যাত্রীদের ভিসা ইস্যু বন্ধ হয়ে যাবে।

চিঠিতে আরও জানানো হয়, ২৯ এপ্রিলের মধ্যে আবশ্যিকভাবে হজযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন করতে হবে। এজেন্সীর অবহেলার কারণে হজযাত্রীদের হজে গমন অনিশ্চিত হলে সে এজেন্সীর বিরুদ্ধে হজ ও উমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন ২০২১ অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে, গত ১০ ফ্রেব্রুয়ারি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে জানানো হয়, সৌদি সরকারের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের আবাসন, ক্যাটারিং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল প্রকার অনলাইন চুক্তি (সার্ভিস কোম্পানি, পরিবহান, ইত্যাদি) সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ এখনো অনেক এজেন্সির ৮০ শতাংশ কার্যক্রম বাকি।

এমন অবস্থায় সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এবং সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে হজ এজেন্সি মালিকেরা অনুরোধ করেন।

এছাড়াও কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেন তারা। সেগুলো হলো- দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল হাজির মিনার জোন নির্ধারণ করে ই হজ সিস্টেম আপডেট করতে হবে। ফাইনাল ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা ও সকল এজেন্সির হজযাত্রী অনুপাতে টিকেট নিশ্চিত করতে হবে। মোয়াজ্জেমদের জন্য বারকোড ভিসার বিষয়টি নিশ্চিত করা। যাদের সৌদি একাউন্টে এখনো রিয়াল জমা হয়নি তাদের একাউন্টে দ্রুত রিয়াল জমার ব্যবস্থা করা।

তারা বলেন, বর্তমানে সৌদি একাউন্টে টাকা ঢুকতে দেড় মাস সময় লাগে। যদি কারো একাউন্টে ১ পয়সাও কম থাকে তাহলে তার হজে যাওয়া সম্ভব হবে না। এবং বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন চার্জ একবারে হিসাব করে পাঠানো অনেকটা অসম্ভব। এছাড়া যাদের এখনো মেননজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা হয়নি তাদের জন্য দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়াও ভিসা ইস্যু কার্যক্রম অন্যান্য বছরের মতো সর্বশেষ ফ্লাইটের এক সপ্তাহ পূর্ব পর্যন্ত চালু রাখার দাবি জানান তারা। আরও বলেন, অতীতে দেখা গেছে অনেকে হজ করতে যাওয়ার ইচ্ছে করলেও সকল প্রস্তুতির পর মারা গেছেন। আবার কেউ মারাত্মক রোগাক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে যেতে পারেন না। তাই সেই হজযাত্রীর পরিবর্তে তার পরিবারের অন্য কোন সদস্যদের যাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে জমাকৃত টাকা গচ্চা যেতো না। বর্তমানে যে অবস্থা আছে তাতে ভিসা ইস্যু এতো আগে বন্ধ হয়ে গেলে অহেতুক প্রচুর টাকা সৌদি আরবে চলে যাবে। এতে দেশের ক্ষতি হবে। যদি বিষয়টি সৌদি সরকারকে বুঝাতে আমরা সক্ষম হই তাহলে আমাদের বিশ্বাস সৌদি সরকার বাস্তবতা বুঝে অবশ্যই বিবেচনা করবেন।

;