‘গ্র্যান্ড মুফতির পদ সৃষ্টি সময়ের দাবি’



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি প্রসঙ্গে আলেমদের অভিমত, ছবি: বার্তা২৪.কম

বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি প্রসঙ্গে আলেমদের অভিমত, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি নিয়োগের দাবি’র প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রাজ্ঞ আলেম, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও ইসলামবিষয়ক জনপ্রিয় কয়েকজন লেখকের মতামত।

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ওমর গণি এম ই এস ডিগ্রি কলেজ, চট্টগ্রাম
বৈশ্বিক সঙ্কট ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরকার ও জনগণকে ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে মতামত ও পরামর্শ প্রদানের জন্য ‘গ্র্যান্ড মুফতি’র (Islamic Jurisconsult of a State) পদ সৃষ্টি করা সময়ের দাবি। মুফতি সাহেবদের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন ফতোয়া আসলে ভুল বুঝাবুঝি বা বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। গ্র্যান্ড মুফতির অধীনে আঞ্চলিক মুফতিগণ থাকবেন। তারা ইজতিহাদি বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতগুলোকে সমন্বয় করে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দেবেন। গ্র্যান্ড মুফতির পদ হবে হাইকোর্টের বিচারপতির অনুরূপ সাংবিধানিক। ভয়ভীতি ও চাপের উর্ধ্বে উঠে মতামত প্রদানে তারা স্বাধীন থাকবেন।

ষোড়শ শতাব্দীতে তুরস্কের উসমানীয় খেলাফতে সর্বপ্রথম গ্র্যান্ড মুফতির পদ সৃষ্টি করা হয়। পৃথিবীর বহু মুসলিম ও অমুসলিম দেশে গ্র্যান্ড মুফতি আছেন। মিসর, রাশিয়া, সিরিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোবিনা, ওমান, মালয়েশিয়া, দাগিস্তান, ব্রুনেই, আলবেনিয়া, ঘানা ও জর্দান অন্যতম।

মাওলানা মো. শহীদুল ইসলাম
নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ইসলামিক ল’ রিসার্চ এন্ড লিগ্যাল এইড সেন্টার
করোনাকালে মসজিদে জামাতে নামাজ এবং জুমার নামাজে মুসল্লিদের উপস্থিতি নিয়ে আলেমদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় একজন গ্র্যান্ড মুফতির প্রয়োজনীয়তা বেশি করে অনুভূত হচ্ছে। গ্র্যান্ড মুফতি এটর্নি জেনারেল, মহা হিসাবরক্ষক কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মতো সাংবিধানিক পদধারী হবেন। তিনি জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ শরিয়া সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। তার নেতৃত্বাধীন একটি সুপ্রিম কাউন্সিল থাকবে। যাদের সিদ্ধান্ত প্রতিপালন বাধ্যতামূলক হবে। এছাড়া প্রতিটি জেলা ও বিভাগ থেকে একজন করে প্রতিনিধি, ধর্ম ও আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় কাউন্সিল থাকবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে ধর্মীয় কোনো বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের জন্য এ পদ খুব জরুরি।

মুফতি সাঈদ আহমদ
মুদাররিস, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না থাকলেও এদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। ইসলাম বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকে কেন্দ্র করে এদেশে বিতর্কের শেষ নেই। আলেম সমাজ বিভক্ত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সিদ্ধান্ত ও শীর্ষ আলেমদের সিদ্ধান্ত হিসেবে নানা বিষয় মিডিয়া প্রকাশ পায়, তাতে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়।

আমি মনে করি, এদেশে মুসলমানদের সমস্যার সমাধানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে একটি মুফতি বোর্ড প্রয়োজন। আরও প্রয়োজন একজন গ্র্যান্ড মুফতি। যার সিদ্ধান্ত ধর্মীয় বিষয়ে চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।

মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী
শিক্ষাবিদ ও লেখক
পৃথিবী যত আগে বাড়বে নিত্যনতুন সমস্যা ও জিজ্ঞাসা সৃষ্টি হবে, এটাই স্বাভাবিক। নতুন সমস্যার শরয়ি সমাধানে প্রথমে গবেষকদের মতানৈক্য হবে, ধীরে ধীরে মতৈক্যে। যেমন, যখন লাউড স্পিকারে নামাজ শুরু হয় তখন উলামায়ে কেরামের মাঝে মতানৈক্য হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম মুফতি শফী (রহ.) জায়েজের ফতোয়া দেন। এখন বিষয়টিতে আর কারও মতানৈক্য নেই।

নতুন সমস্যা ছাড়াও পুরাতন কোনো বিষয়ে সুষ্ঠু এবং মতৈক্যপূর্ণ সমাধানে উপনীত হওয়ার জন্য একজন গ্র্যান্ড মুফতির প্রয়োজন। যিনি বড় বড় গবেষক ও মুফতিদের মতামত শুনে একটা নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত দেবেন। যেন ওই অঞ্চল বা দেশের সাধারণ জনগণ বিভ্রান্ত না হোন। বর্তমান করোনার কারণে মসজিদে ওয়াক্তিয়া, জুমা ও তারাবির নামাজে মুসল্লিদের উপস্থিতি ব্যাপক রাখা হবে, নাকি সীমিত করা হবে? একজন গ্র্যান্ড মুফতি থাকলে তার ফতোয়া অনুযায়ী সবাই চলতে পারতেন, তখন সমস্যা হতো না। অনাকাঙ্খিত বিতর্ক হতো না।

মাওলানা এহতেশামুল হক ক্বাসিমী
শায়খুল হাদিস, জামিয়া দারুল কুরআন সিলেট
সাধারণ মানুষ উলামায়ে কেরামের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আমাদের দেশের সরকার প্রধানও ধর্মীয় বিষয়ে আলেম-উলামাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। সুতরাং ধর্মীয় বিষয়ে বা নিত্যনতুন বৈশ্বিক বিষয়ের সমাধানে উলামায়ে কেরামের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিতান্ত দরকার। নতুবা সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। যা আমাদের সামনে দৃশ্যমান। সরকার বরেণ্য ও বর্ষীয়ান আলেমদের একাংশকে নিয়ে মহামারি করোনার সঙ্কট রোধে শরিয়তের আলোকে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে উলামায়ে কেরামের আরেকাংশ তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এর ফলে সাধারণ জনগণ বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। তার কোন দিকে যাবে, সরকারই বা কোন সিদ্ধান্ত দেবে। জনগণ কার কথা শুনবে? এর সমাধান রয়েছে একজন গণতান্ত্রিক পদ্ধতির গ্র্যান্ড মুফতির। এর প্রক্রিয়া অবশ্য ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। কিন্তু আমাদের তো গ্র্যান্ড মুফতিই নাই।

মাওলানা সাদ আবদুল্লাহ মামুন
মুদাররিস, মুসলিম বাজার মাদরাসা, মিরপুর, ঢাকা
কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা মুমিন বান্দাদের সম্বোধন করে আদেশ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করো এবং দ্বীনি ও দুনিয়াবি বিষয়ে দায়িত্বশীলদের আনুগত্য করো। এরপর কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে (যদি) বিবাদ-বিসংবাদ তৈরি হলে তা আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে পেশ করো। এটি কল্যাণকর এবং পরিণামের দিক থেকে উত্তম।’ -সূরা নিসা: ৫৯

আল্লাহতায়ালা মানব জীবনের প্রয়োজনীয় সব কথা ও কাজের মূলনীতি জানিয়ে দিয়েছেন। মুমিন তার জীবনের সব কাজ আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের আনুগত্যের মধ্য দিয়ে করবে এবং দ্বীনি ক্ষেত্রে ও দুনিয়াবি বিষয়ে আল্লাহতায়ালা যাদের দায়িত্বশীল বানিয়েছেন তাদের আনুগত্য করবে। এরপর কোনো বিষয়ে তাদের মাঝে বিবাদ তৈরি হলে তা আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে পেশ করবে। ওখান থেকে যে ফয়সালা আসে তা সর্বান্তকরণে মেনে নেবে। মুসলিম জীবনের এই আনুগত্য সর্বাবস্থার। এই আনুগত্য ও অনুসরণ শান্তিময় ও বিবাদময় সব অবস্থার জন্য নির্ধারিত। আল্লাহতায়ালার এই হুকুমের সামনে মুমিনের পুরো জীবন নিবেদিত ও সমর্পিত। আল্লাহতায়ালার নির্দেশ, মুমিনের জীবন হবে আল্লাহ ও তার রাসূলের হুকুমের অধীন এবং দ্বীনি ও দুনিয়াবি বিষয়ের দায়িত্বশীলদের অনুসরণের মাঝে সমর্পিত। তা হলে তাদের দুনিয়াবি জীবন সুন্দর হবে, শৃঙ্খলাপূর্ণ হবে। আখেরাতের জীবন শান্তিময় হবে। তেমনিভাবে দায়িত্বশীলদের আনুগত্যহীন জীবন দুনিয়া ও আখেরাতে তার বিপরীত হবে, এটাই স্বাভাবিক।

দায়িত্বশীল ব্যক্তির আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহতায়ালা নিজেই। সেই সঙ্গে এর দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণকর দিকগুলোও বলে দিয়েছেন বোধগম্যময় স্পষ্ট শব্দে। কোরআনি নির্দেশ তাফাক্কু ফিদ্দীন- দ্বীনের গভীর ইলম অর্জনকে উপেক্ষা করা আজকের এই ভাসা ভাসা পণ্ডিতি ফলানো বিশৃঙ্খলাকালে দায়িত্বশীল ফকিহ তথা প্রাজ্ঞ মুফতির কথা মান্যের কোনো বিকল্প আছে বলে জানা নেই। তার ওপর যেখানে রয়েছে আল্লাহতায়ালার সুস্পষ্ট নির্দেশ- দ্বীন ও দুনিয়ার বিষয়ে দায়িত্বশীলের আনুগত্য করো।

নোমান বিন আরমান
লেখক ও সাংবাদিক
জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় বিষয়ে ফিকহি নির্দেশনা প্রদানের জন্য একটি সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ থাকা জরুরি। করোনাকালে মসজিদে জামাত আদায় ও লোকসংখ্যা নিয়ে আলেমদের মতবিরোধের পর এই প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। একক কর্তৃপক্ষ বা গ্র্যান্ড মুফতি ছাড়া যে একটি অঞ্চলে প্রায়োগিক ফিকহি সৌন্দর্য ও একতা প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব- এই মতবিরোধ তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। ফলে লোকজন এখন বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন। সমাজ ও রাষ্ট্রে অন্তত জরুরি মুহূর্তে শৃঙ্খলা বজায়ের স্বার্থে জাতীয় ফিকহি বোর্ড বা গ্র্যান্ড মুফতির কোনো বিকল্প নেই।

এহসান সিরাজ
সিএসআর এক্সিকিউটিভ, অন্যরকম গ্রুপ
বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম দেশে একজন গ্র্যান্ড মুফতি আছেন। তিনি রাষ্ট্রের ধর্মীয় বিষয়ে সর্বশেষ শরয়ি দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। খেলাফতের সময়ও এমনটা ছিলো। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও এমন একজন গ্র্যান্ড মুফতি প্রয়োজন। যিনি সরকার ও দেশবাসীকে সম-সাময়িক বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেবেন।

মুফতি রেজাউল করিম আবরার
ফিকহ বিভাগীয় প্রধান, মাদরাসা আবুবকর সিদ্দিক রা. যাত্রাবাড়ি, ঢাকা
আমার ক্ষুদ্রমতে দেশে একজন গ্র্যান্ড মুফতির প্রয়োজন আছে৷ তবে কোনো বিষয়ে ফতোয়া প্রদানের ক্ষেত্রে দেশের শীর্ষস্থানীয় মুফতিদের সমন্বয়ে একটি বোর্ড থাকবে৷ বোর্ডে পর্যালোচনার পর গ্র্যান্ড মুফতির নামে ফতোয়া প্রকাশিত হবে৷ তাহলে জনসাধারণের জন্য সেটা বুঝতে সহজ হবে৷

মুফতি সাঈদ কাদির
খতিব, মসজিদুল আকসা, ১০ নং ওয়ার্ড, গাজীপুর মহানগর
ইসলাম সর্বকালীন ধর্ম। কালের পরিক্রমায় মানুষের সামনে আসে নতুন নতুন সমস্যা। ইসলাম কোরআন-হাদিসের মূলনীতির আলোকে সব যুগের সব সমস্যার সমাধান দেয়। কিন্তু নতুন সমস্যা বা সমকালের উদ্ভুত পরিস্থিতির ইসলামি সমাধান দেওয়ার জন্য প্রত্যেক রাষ্ট্রে একজন ‘আল মুফতি আল আম’ বা গ্র্যান্ড মুফতি থাকা দরকার। যাতে করে তিনি উদ্ভুত সব জিজ্ঞাসা ও সমস্যার ইসলামি সমাধান দিতে পারেন। যেহেতু গ্র্যান্ড মুফতি হবেন সব মত ও চিন্তাধারার লোকের পছন্দের ব্যক্তি, সেহেতু মতপার্থক্য ও মতবিরোধের বিষয়গুলোর সমাধান তার পক্ষ থেকে আসলে তা হবে সর্বজন গৃহীত।

রাষ্ট্রের নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। সুতরাং রাষ্ট্রপ্রধান নিরপেক্ষ, যোগ্য ও জ্যেষ্ঠ একজন মুফতিকে ‘গ্র্যান্ড মুফতি’ হিসেবে নিয়োগ দেবেন। আধুনিক মাসয়ালা, বিভিন্ন পরিস্থিতে ধর্মীয় ব্যাখা ও ফতোয়া প্রদানের ক্ষেত্রে একমাত্র কার্যকরী হবে- গ্র্যান্ড মুফতির সিদ্ধান্ত।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে গ্র্যান্ড মুফতি নিয়োগের দাবি জোরালো হচ্ছে

   

রোজার প্রথম সপ্তাহে মসজিদে নববিতে ৫২ লাখ মুসল্লি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ আদায়ের দৃশ্য, ছবি : সংগৃহীত

মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ আদায়ের দৃশ্য, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে। এ সময়ে মদিনার মসজিদে নববিতে ৫২ লাখের বেশি মুসল্লি উপস্থিত হয়েছে। তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগিতে অংশ নিয়েছেন।

মসজিদে নববি তত্ত্বাবধানকারী জেনারেল অথরিটি বিভাগ রমজান মাসে মুসল্লিদের পরিষেবাবিষয়ক এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, রমজানের প্রথম সপ্তাহে ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৮ জন পবিত্র রওজা শরিফে নবী কারিম (সা.)-কে সালাম নিবেদন করেছে। একই সময়ে রওজা শরিফে নামাজ পড়েছেন ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৭ জন পুরুষ ও ১০ লাখ সাত হাজার ৬৯৭ জন নারী। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানে শৃঙ্খলাপূর্ণ ব্যবস্থাপনা নারী-পুরুষ সব মুসল্লির যাতায়াত সুনিশ্চিত করা হয়।

তাতে আরও বলা হয়, গত সপ্তাহে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ১০ হাজার ৪৮২ জন বিশেষ পরিষেবা পেয়েছেন।

তা ছাড়া বিভিন্ন দেশের ১০ লাখ ১০ হাজার ৪১২ জনকে একাধিক ভাষায় যোগাযোগ সেবা দেওয়া হয়। আর মসজিদের লাইব্রেরিতে শিক্ষামূলক পরিষেবা থেকে উপকৃত হয়েছেন ১২ হাজার ২৭৯ জন এবং মিউজিয়ামে চার হাজার ৫৬৭ জন পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে মসজিদে আসা এক লাখ ৪৯ হাজার ১৪৯ জন দর্শনার্থীকে নানা রকম উপহারসামগ্রী দেওয়া হয় এবং মসজিদের সমন্বিত পরিষেবার মাধ্যমে ছয় লাখ ৪৮ হাজার ৪১১ জনকে সেবা দেওয়া হয়। তা ছাড়া এক লাখ ৪৪ হাজার জমজম পানির বোতল বিতরণ করা হয় এবং রোজাদারদের মধ্যে ১৫ হাজার ২৪৩টি ইফতারির খাবার বিতরণ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ২৮ কোটির বেশি মুসল্লি পবিত্র মসজিদে নববিতে আগমন করে। একই বছর এক কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মুসলিম ওমরাহ পালন করে, যা ছিল সৌদি আরবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যা। আগামী হজ মৌসুম শুরুর আগেই দুই কোটির বেশি মুসল্লি ওমরাহ পালন করবে বলে আশা করছে সৌদি আরব।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয়ে যায়



মুফতি মো. আবদুল্লাহ
রোজার মাসয়ালা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন, ছবি : সংগৃহীত

রোজার মাসয়ালা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র মাহে রমজানের ফরজ রোজা আদায় করছেন। কিন্তু কি কারণে রোজার পবিত্রতা নষ্ট হয়, কি কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এবং কি কারণে ভঙ্গ হয় না, তা অনেকের কাছে অজানা। আজকে এ জাতীয় মাসয়ালা নিয়ে আলোচনা করা হলো-

রোজা নষ্ট হওয়ার কারণসমূহ
১. কানে ও নাকে ঔষধ ঢেলে দেওয়া।
২. ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করা।
৩. কুলি করার সময় গলার ভেতরে পানি চলে যাওয়া।
৪. কোনো নারীর সঙ্গে আলিঙ্গন বা মাখামাখিতে বীর্যপাত হয়ে যাওয়া।
৫. এমন কোনো বস্তু গিলে ফেলা যা সাধারণত খাওয়া হয় না। যেমন কাঠ, লোহা, কাঁচা গম ইত্যাদি।
৬. লোবান বা উদ কাষ্ঠ ইত্যাদির ধোঁয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নাক দিয়ে বা কণ্ঠনালীর ভেতরে টেনে নেওয়া; বিড়ি, সিগারেট ও হোক্কা পান করারও একই বিধান।
৭. ভুলে পানাহার করার পর এমনটি ধারণা করে যে, আমার রোজা নষ্ট হয়ে গেছে; অতপর পানাহার করা।
৮. রাত বাকী আছে মনে করে সুবহে সাদেকের পর পানাহার করা।
৯. সূর্য ডুবে গেছে মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করা। উল্লেখ্য, এসব ক্ষেত্রে রোজা ভেঙে যায় এবং শুধু রোজা কাজা করতে হয়; কাফফারা আবশ্যক হয় না।
১০. ভুলে নয়, জেনে-বুঝে সুস্থ-সবল অবস্থায়, কোনো ওজর-সমস্যা ব্যতীত দিনের বেলায় পানাহার করলে অথবা স্ত্রী-সঙ্গম করলে, সেই রোজার কাজাও করতে হয় এবং কাফফারাও প্রদান করতে হয়। ‘কাফফারা’ হলো, একটি ক্রীতদাস মুক্তকরণ; অথবা একাধারে ৬০টি রোজা পালন করা। আর যদি রোজা রাখার শক্তি না থাকে, সেক্ষেত্রে ৬০জন মিসকিনকে দু’বেলা পেটপুরে খাবার খাওয়াতে হবে। এ যুগে যেহেতু শরিয়তসম্মত ক্রীতদাস বাস্তবে নেই, সে কারণে কাফফারার ক্ষেত্রে শেষোক্ত দু’টির যেকোনো একটি পালন করতে হবে।

যেসব কারণে রোজা মাকরূহ হয়
১. রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় অপ্রয়োজনে কোনো বস্তু চিবানো অথবা লবণ ইত্যাদি জিহবায় দিয়ে থু থু ফেলে দেওয়া; টুথপেস্ট বা মাজন বা কয়লা দ্বারা দাঁত মাজা বা পরিস্কার করা।
২. সারাদিন গোসল ফরজ অবস্থায় অপবিত্র কাটিয়ে দেওয়া।
৩. একান্ত প্রয়োজন ছাড়া শিঙ্গা লাগানো এবং দূর্বল হয়ে পড়ার ভয় থাকলে নিজ শরীর থেকে অন্যের জন্য রক্তদান করা মাকরূহ; কিন্তু তাতে রোজা নষ্ট হয় না।
৪. রোজা অবস্থায় গীবত করা তথা কারও অবর্তমানে তার দোষ বর্ণনা করা রোজার ক্ষেত্রে মাকরূহ বটে; কিন্তু এ গীবত কর্মটি অন্যতম একটি হারাম কাজ ও কবিরা গোনাহ বটে। মাহে রমজানে এর পাপ আরও অনেক গুণ বেড়ে যায়।
৫. রোজা অবস্থায় ঝগড়া-বিবাদ, গালি-গালাজ করা; হোক তা কোনো মানুষের সঙ্গে বা কোনো জীবজন্তুকে বা কোনো প্রাণহীন জড় বস্তুকে; এসব কারণেও রোজা মাকরূহ হয়ে যায়।

যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয় না, মাকরূহও হয় না
১. মিসওয়া করা।
২. মাথায় বা মোচ-দাড়িতে তেল ব্যবহার করা।
৩. চোখে ঔষধ বা সুরমা দেওয়া।
৪. আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৫. গরম ও পিপাসার কারণে গোসল করা।
৬. যেকোনো রকম ইনজেকশন বা টিকা দেওয়া।
৭. ভুলবশত পানাহার করা।
৮. অনিচ্ছাবশত গলায় ধোঁয়া বা ধুলোবালি বা মাছি ইত্যাদি প্রবেশ করা।
৯. কানে পানি দেওয়া (২/১ ফোটা) অথবা অনিচ্ছাকৃত প্রবেশ করা।
১০. অনিচ্ছাকৃত বমি হওয়া।
১১. শোয়া অবস্থায় স্বপ্নদোষ হয়ে যাওয়া।
১২. দাঁত হতে রক্ত বের হওয়া এবং তা গলা অতিক্রম না করা।
১৩. ঘুমের মধ্যে বা সহবাসের কারণে রাতে গোসল ফরজ হয়েছিল, অথচ সুবহে সাদেকের পূর্বে গোসল করা হয়নি; আর এমতাবস্থায় রোজার নিয়ত করে নেওয়া হয়েছে; তাতেও রোজার কোনো ক্ষতি নেই।

লেখক : মুফতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, গবেষণা বিভাগ।

;

অশ্লীলতামুক্ত সাইবার গঠনে ১৯ বছর বয়সী আবদুল রহমানের স্বপ্ন



ফাতেমা বিনতে আশরাফ
রাইডার্স ক্রিয়েশন ও রাইডার্স মার্টের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল রহমান, ছবি : সংগৃহীত

রাইডার্স ক্রিয়েশন ও রাইডার্স মার্টের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল রহমান, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমাদের জীবন এখন অনলাইননির্ভর। ছোট থেকে বড় সবধরনের কাজ এখন অনলাইনে করা যায়। এ জন্য আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতিনিয়ত নানা সেবা নিচ্ছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে বিব্রতকর বিষয় হলো- অনলাইনের বিস্তৃত অঙ্গনজুড়ে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। তাই মাদরাসাশিক্ষার্থী আবদুল রহমান (Abdul Rahman) স্বপ্ন দেখেন এ অঙ্গনকে অশ্লীলতামুক্ত করে গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে তিনি কাজও শুরু করেছেন।

আবদুল রহমান (Abdul Rahman) রাইডার ভাউ অফিসিয়াল, রাইডার্স ক্রিয়েশন এবং রাইডার্স মার্টের প্রতিষ্ঠাতা। এটি বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত আইটি সলিউশন কোম্পানি। তার তীক্ষ্ণ ব্যবসায়িক দক্ষতা এবং উচ্চমানের পরিষেবা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে, তিনি সফলভাবে কোম্পানিটিকে আইটি সমাধান এবং পরিষেবা প্রদানকারী একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলেছেন।

পাশাপাশি তিনি আরও একটি নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। নাম রাইডার্স ফাউন্ডেশন। খুব শিগগির-ই এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আবদুল রহমান। তার উদ্দেশ্য, এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজের অসহায় ও দুস্থ মানুষের সেবা করা। অভাবে কেউ কষ্ট না পাক এবং সবার মুখে হাসি থাকুন- এই প্রত্যাশা থেকেই তিনি এটি গড়ে তুলেছেন।

আবদুল রহমান (Abdul Rahman) বেশ কয়েকটি অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন, ছবি : সংগৃহীত

উদ্যোক্তা প্রচেষ্টার পাশাপাশি, আবদুল রহমান (Abdul Rahman) সোশ্যাল মিডিয়া এবং সাইবার নিরাপত্তায় দক্ষতার জন্যও স্বীকৃত। তিনি পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই সেক্টরে কাজ করছেন এবং তার অশ্লীলতামুক্ত অনলাইন গড়ার বিষয়টিসহ তার এসব কাজকর্ম নিয়ে জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে আবদুল রহমানের সুগভীর জ্ঞান তাকে বিশ্বব্যাপী সাইবার অঙ্গনে কাঙ্ক্ষিত স্পিকার হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে।

ব্যবসায়িক উদ্যোগের পাশাপাশি আবদুল রহমান তার এ অঙ্গনের মানুষদের সহযোগিতার জন্যও নিবেদিত। তিনি বেশ কয়েকটি অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন এবং অন্যদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে তার দক্ষতা এবং জ্ঞান ব্যবহার করে প্রশংসিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

আবদুল রহমান একজন বাংলাদেশী উদ্যোক্তা, সোশ্যাল মিডিয়া সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ। পিরোজপুরে তার জন্ম। তিনি তার কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্ভাবনের প্রতি আবেগের মাধ্যমে আইটি এবং সোশ্যাল মিডিয়া শিল্পে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

আবদুল রহমানের কে.এম. লতীফ ইনস্টিটিউশন থেকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট রয়েছে। একই স্কুল থেকে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট, যেখানে তিনি বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত করেছেন। বর্তমানে তিনি মাদারীপুর ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার থেকে কোরআন-হাদিসে স্নাতকোত্তর করছেন।

সামগ্রিকভাবে আবদুল রহমান তার বুদ্ধিমত্তা, দৃঢ়তা এবং উদ্ভাবনের প্রতি তার যে আবেগ, তা দিয়ে সমাজে অবদান রাখতে চান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি; অশ্লীলতামুক্ত অনলাইন গড়ে আগামী দিনগুলোতে সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার স্বপ্ন দেখেন।

;

রমজানে দশ কাজ থেকে বিরত থাকা



আহমদ যাকারিয়া, অতিথি লেখক, ইসলাম
রোজা একটি ফরজ ইবাদত, ছবি : সংগৃহীত

রোজা একটি ফরজ ইবাদত, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের মুসলমানরা পবিত্র রমজান মাস পালন করছেন। রোজা একটি ফরজ ইবাদত। এই ইবাদতটি যেনো সুন্দরভাবে আদায় করা যায়, এ জন্য সবার সর্বাত্মক চেষ্টা করা দরকার। ইসলামি স্কলারদের মতে, রমজানের ১০টি কাজ থেকে বিরত থাকা দরকার; তাহলে রোজা হবে পরিপূর্ণ। ওই দশ কাজ হলো-

সেহরি না খাওয়া : অনেকে সেহরি খান না, অনেকে আবার আগ রাতে খেয়েই শুয়ে পড়েন। এটা সুন্নতের পরিপন্থী। ইসলামে সেহরি খাওয়ার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে, কারণ ইহুদি ও খ্রিস্টানরা সেহরি খায় না। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাদের ও আহলে কিতাবিদের (ইহুদি ও খ্রিস্টান) রোজার মাঝে পার্থক্য হলো- সেহরি গ্রহণ।’ -সহিহ মুসলিম : ২৬০৪

বিলম্বে ইফতার করা : রোজার পূর্ণ সওয়াব পাওয়ার জন্য বিলম্বে ইফতার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সাহাবি হজরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, হরজত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দীন বিজয়ী হবে, যে যাবৎ মানুষ দ্রুত ইফতার করবে। কারণ, ইহুদি-নাসারারা তা বিলম্বে করে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২৩৫৫

লাইলাতুল কদর তালাশ না করা : পবিত্র রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ -সুরা কদর : ৪

হরজত রাসুলুল্লাহ (সা.) (রমজানের) শেষ দশদিন লাইলাতুল কদর তালাশ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ।’ -সহিহ বোখারি : ২০২০

মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা : একজন রোজাদার মিথ্যা কথা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না, তার রোজা রেখে শুধু পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ -সহিহ বোখারি : ৬০৫৭

সুন্নত ত্যাগ করা : আমাদের প্রত্যেকটি আমল হবে সুন্নত মোতাবেক। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমন অনেক রোজাদার আছে, যার রোজা থেকে প্রাপ্তি হচ্ছে শুধু ক্ষুধা ও তৃষ্ণা। তেমনি কিছু নামাজি আছে যাদের নামাজ কোনো নামাজই হচ্ছে না। শুধু যেন রাত জাগছে।’ -মুসনাদে আহমাদ : ৮৮৪৩

দান-সদকা না করা : পুণ্য অর্জনের মাস রমজান। এ মাসে রোজা-নামাজ ইত্যাদির পাশাপাশি দান-সদকার মাধ্যমেও ফজিলত অর্জন করতে হবে। বেশি বেশি দান-সদকা করার চেষ্টা করতে হবে। এতিম, বিধবা ও গরীব-মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তাদের জন্য হিসাব করে এ মাসে জাকাত দেওয়া উত্তম। কেননা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এ মাসে বেশি বেশি দান-খয়রাত করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল, আর রমজানে তার এ দানশীলতা আরও বেড়ে যেত।’ -সহিহ বোখারি : ১৯০২

অপচয় ও অপব্যয় করা : প্রয়োজনের অতিরিক্ত অপচয় করা থেকে বিরত থাকা। অনেকে রমজান মাসে ইফতার ও সেহরিতে এমন খরচ করেন- যার প্রয়োজন নেই। কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘হে বনী আদম! তোমরা প্রতি নামাজে তোমাদের সাজসজ্জা পরিধান করো এবং খাও, পান করো ও অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ -সুরা আরাফ : ৩১

তাড়াহুড়ো করে কোরআন খতম করা : শুধু খতম দেওয়া বা পড়া শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন মাজিদ তেলাওয়াতা করলে কোরআনের হক আদায় হয় না। বিশেষ করে খতম তারাবিতে খতম শেষ করা বা ২০ রাকাত তারাবি শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন পড়া। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোরআন সুন্দর উচ্চারণে পড়ে না, সে আমার উম্মতের মধ্যে শামিল নয়।’ -সহিহ বোখারি : ৭৫২৭

ফরজ নামাজ আদায়ে অলসতা করা : রোজা পালনের সঙ্গে সঙ্গে ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। অনেকে ফরজ নামাজ আদায়ে উদাসীন থাকেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

দুনিয়ার ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা: ইবাদত-বন্দেগি মাস রমজানে বেশি বেশি আমলের কথা রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই ব্যস্ত থাকি দুনিয়ার নানা কাজে। এটা কাম্য নয়। এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া-দরুদ ও তওবা-ইস্তেগফার করা উচিত।

;