চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বায়তুশ শরফ দরবারের প্রধান দায়িত্বশীল (পীর) হিসেবে মনোনীত হয়েছেন মাওলানা আব্দুল হাই নদভী। তিনি সদ্যপ্রয়াত পীর মাওলানা শাহ মোহাম্মদ কুতুব উদ্দীনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।
শনিবার (২৩ মে) আসরের নামাজের পর চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট ধনিয়ালাপাড়ায় কেন্দ্রীয় বায়তুশ শরফ মসজিদে তাকে পীর হিসেবে ঘোষণা দেন বায়তুশ শরফ দরবারের অঙ্গ সংগঠন মজলিশে ওলামা বাংলাদেশ। তিনি বায়তুশ শরফ দরবারের চতুর্থ পীর।
বিজ্ঞাপন
পীর মাওলানা শাহ মোহাম্মদ কুতুব উদ্দীনের ওফাতের পর বায়তুশ শরফের পীর হিসেবে মজলিশে ওলামা মাওলানা আব্দুল হাই নদভীকে পীর হিসেবে মনোনীত করেছেন। বাদ আসর তাকে দ্বায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, শোকাহত দরবারের ভক্তবৃন্দের উপস্থিতিতে বাদ আসর দোয়া মাহফিল শুরু হয়। মাহফিল উপস্থাপনা করেন মাজলিসুল উলামা বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা মামুনুর রশীদ নূরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী, বায়তুশ শরফ আঞ্জুমানে ইত্তেহাদ বাংলাদেশের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আহসান উল্লাহ, পটিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইদ্রিস।
বিজ্ঞাপন
দোয়া মাহফিলে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য দেন সদ্যপ্রয়াত পীর মাওলানা শাহ মোহাম্মদ কুতুব উদ্দীনের একমাত্র ছেলে মাওলানা সালাহউদ্দিন বেলাল।
সভায় মামুনুর রশীদ নূরী মাজলিসুল উলামা বাংলাদেশ এবং আঞ্জুমানে ইত্তেহাদ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেন, মসজিদ বায়তুশ শরফের পরবর্তী খতীব নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করবেন মাজলিসুল ওলামা বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা আব্দুল হাই নদভী। আসন্ন ঈদের নামাজও তিনিই পড়াবেন।
মাওলানা আব্দুল হাই নদভী চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নে ১৯৭০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বায়তুশ শরফের মরহুম পীর হজরত মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল জব্বার।
১৯৮৫ সালে চুনতি হাকীমিয়া আলিয়া মাদরাসা থেকে আলিম এবং ১৯৮৮ সালে একই মাদরাসা ফাজিল ও ১৯৯০ সালে থেকে কামিল পাশ করেন। পরবর্তীতে ভারত উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (অনার্স) পাশ করেন। পরে ভারতের আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা হাদিস তত্ত্বের ওপর এমফিল করেন।
মাওলানা আব্দুল হাই নদভী থাইল্যান্ড, ভারত, সৌদি আরব, জর্দান, ইরাক, ফিলিস্তিন ও মায়ানমারসহ অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন।
তার সম্পাদিত, রচিত, লিখিত, অনূদিত গ্রন্থসংখ্যা দুই শতাধিক। তিনি বাংলা, আরবি, উর্দু, ফার্সি, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী। এছাড়া তিনি বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আলজেরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি চালুর বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রদূত আবদেলোহাব সাইদানি।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সচিবালয়ে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আবদেলোহাব সাইদানি সাক্ষাৎ করেন।
এ সময় ধর্ম উপদেষ্টা আলজেরিয়ার প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের অনুরোধ জানান। এছাড়া, আলজেরিয়ার খ্যাতনামা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসাসমূহে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে পাঠদানের প্রস্তাব দেন।
আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত তার দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি চালুর বিষয়ে সম্মতি জানান। তিনি রিসোর্স পার্সন বিনিময়ের মাধ্যম আলজেরিয়ার গুণী অধ্যাপকদের দিয়ে বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষার্থীদের পাঠদানের উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস দেন।
এছাড়া রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট যেকোনো বিষয়ে সহযোগিতা করতে আগ্রহ ব্যক্ত করেন এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আলজেরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও বন্ধুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারিত করার অনেক সুযোগ রয়েছে। আগামীদিনে দুই দেশের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে বলে উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়া, তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নে আলজেরিয়ার অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেন।
এ বৈঠকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মতিউল ইসলাম ও উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
শেরে বাংলা একে ফজলুল হক সম্মাননা-২০২৩ পেলেন লেখক সম্পাদক ও সংগঠক কবি মুনীরুল ইসলাম। একজন সফল সংগঠক হিসেবে তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
সম্প্রতি রাজধানীর পরীবাগের সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে ‘উদীয়মান বাংলাদেশ’-এর একটি অনুষ্ঠানে তার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়।
এ সময় দেশের বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক, ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন।
আলেম লেখক ও কবি মুনীরুল ইসলাম একজন জাত লেখক। এ পর্যন্ত সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়ে তার ৮০টির মতো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে তিনি আলেম লেখকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরামের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি পর্যায়ক্রমে সংগঠনটির সহ-সাধারণ সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক এবং সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি সম্পাদনা কেন্দ্রের পরিচালক এবং সাহিত্য সাময়িকী লেখকপত্রের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
২০০৩ সালে ঢাকায় আসার আগে সরকার অনুমোদিত সেবামূলক সংগঠন ‘আল-এহসান পরিষদ কুমিল্লা’-এর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। এর আগেও তিনি লেখালেখি ও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখার জন্য অনেক সম্মাননা পদক ও পুরস্কার লাভ করেছেন।
স্বামী-স্ত্রী একে অপরের আজীবন সঙ্গী। তাই তাদের জীবন চলার পথে মান-অভিমান, ভুল-ভ্রান্তি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এই স্বাভাবিক বিষয়ই অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে যখন তা দাম্পত্য কলহে রূপ নেয়।
এ কলহের সময় কোনো পক্ষ সম্পর্কে ফাটল ধরানোর জন্য নানা অনৈতিক কাজও করে। অনেক সময় জাদু-টোনার আশ্রয় নেয় কেউ কেউ। আবার তৃতীয় কোনো পক্ষ শত্রুতার কারণে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নষ্ট করতে কাজ করে।
স্বামী-স্ত্রী যাদের ওপর জাদু করা হয়, অনেকক্ষেত্রে তারা বুঝতে পারে না। এটাকে স্বাভাবিক মনে করে তারা সারাক্ষণ ঝগড়া করতে থাকে! আমাদের দেশে ছেলের মা, মেয়ের মা থেকে শুরু করে আত্মীয়রা নানা কারণে দম্পতির ওপর কালো জাদু করে। কয়েকটি লক্ষণ থাকলে বুঝা যায় তাদের ওপর কালো জাদু করা হয়েছে। এর কয়েকটি হলো-
১. অতিরিক্ত ঝগড়া করা। স্বামী-স্ত্রী যদি হঠাৎ করে কয়েকদিন ধরে উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ ছাড়া সারাক্ষণ শুধু ঝগড়া করে, এটা অন্যতম লক্ষণ।
২. যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ করে স্বামী/স্ত্রীর প্রতি ঘৃণা তৈরি হয়। একজন আরেকজনের ভালো কথা শুনলেই রাগ ওঠে। রান্না করলে পছন্দ হয় না। তার কোনো কিছুই পছন্দ হয় না। তাকে দেখতে কুৎসিত লাগে।
৩. সহবাসে অনীহা দেখা যায়, আগে এ রকম হতো না। কিন্তু হঠাৎ দেখা যায়, কোনো একজন আগ্রহ পাচ্ছে না।
৪. হঠাৎ করে দেখা যাচ্ছে, একজন আরেকজনের প্রতি অতিরিক্ত মুগ্ধ হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক ভালোবাসা অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেছে। অফিসে, কাজে যেতে ভালো লাগে না। সারাক্ষণ স্ত্রীর সঙ্গে থাকতে ইচ্ছে করে। এই ধরনের জাদু করে স্ত্রী পক্ষের কেউ বা স্ত্রী!
স্বামী-স্ত্রী জাদু-টোনা ও বদনজর থেকে রক্ষা পেতে কী করতে পারেন?
১. নিয়মিত আমল করার কোনো বিকল্প নেই। জামাতে নামাজ আদায়, পরিপূর্ণ পর্দা, নামাজের পর আয়াতুল কুরসি, সূরা নাস, সূরা ফালাক পড়া ও ঘুমানোর পূর্বে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া।
২. স্ত্রীর কপালে ডান হাত রেখে এই দোয়া পড়া- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা আলাইহি, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা, ওয়ামিন শাররি মা জাবালতাহা।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২১৬০
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে তার মধ্যকার কল্যাণ ও তাকে আপনি যে কল্যাণ সহকারে সৃষ্টি করেছেন তা কামনা করছি। আর আমি তার মধ্যকার অকল্যাণ ও তাকে আপনি যে অকল্যাণ সহকারে সৃষ্টি করেছেন তা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
৩. বাসররাতে স্ত্রীকে নিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয়। না পড়ে থাকলে এখনো পড়তে পারেন। নামাজ শেষে এই দোয়াটি দেখে দেখেই পড়ুন- ‘আল্লাহুম্মা বারিক লি ফি আহলি, ওয়া বারিক লিআহলি ফি; আল্লাহুম্মারজুকহুম মিন্নি, ওয়ারজুকনি মিনহুম; আল্লাহুম্মাজমায়া বাইনানা মা জামায়াতা ফি খাইরিন; ওয়া ফাররিক বাইনানা ইজা ফারাকাতা ফি খাইরিন।’ -আল মুজামুল কাবির : ৮৯৯৩
অর্থ : হে আল্লাহ! আমার পরিবারে আমার স্বার্থে বরকত দিন এবং আমার মাঝে পরিবারের স্বার্থে বরকত দিন। হে আল্লাহ! তাদের আমার পক্ষ থেকে রিজিক দান করুন এবং আমাকে তাদের পক্ষ থেকে রিজিক দান করুন। হে আল্লাহ! যে কল্যাণ আপনি জমা করেছেন, তা আপনি আমাদের মাঝে জমা করুন। আর যদি আপনি কল্যাণকে পৃথক করেন, তাহলে আমাদের মাঝে পৃথক করুন।’
৪. সহবাসের পূর্বের একটি দোয়া আছে। বেশিরভাগ স্বামী-স্ত্রী এই আমলে অবহেলা করেন। মুখস্থ না থাকলে দেখে দেখেই দোয়াটি পড়তে পারেন- ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শাইতানু ওয়া জান্নিবিশ শাইতানা মা রাজাকতানা।’ -সহিহ বোখারি : ৭৩৯৬
৫. স্বামী-স্ত্রীর বদনজর লাগতে পারে। তাদের সুখ দেখে অনেকেই হিংসায় পুড়ে। এটা থেকে হেফাজত থাকতে দুইজনই দোয়া পড়বেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তার নাতি হজরত হাসান ও হজরত হুসাইন (রা.)-এর জন্য এই দোয়াটি পড়তেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) তার দুই ছেলের জন্যও দোয়াটি পড়তেন।
প্যাকেজ ঘোষণার পরও হজ নিবন্ধনে তেমন সাড়া নেই। মন্ত্রণালয় হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর চূড়ান্ত নিবন্ধনের জন্য তাড়া দিলেও বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো অনেকটা গুটিয়ে রয়েছে। হাবের নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের প্রভাব পড়ছে হজ নিবন্ধনেও। এই সময়ে এজেন্সিদের হজ নিবন্ধনে সময় পার করার কথা থাকলেও তাদের সময় ব্যয় করতে হচ্ছে নেতৃত্ব ধরে রাখার পেছনে।
সোমবার (৪ নভেম্বের) সন্ধ্যা পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন মাত্র ১০ হাজার ১৫৩ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধিত হজযাত্রী ২ হাজার ৮৭০ জন ও বেসরকারি মাধ্যমে ৭ হাজার ২৮৩ জন।
এদিকে সোমবার (৪ নভেম্বর) ২০২৫ সালের হজ প্যাকেজের আলোকে চূড়ান্ত নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগ। বিজ্ঞপ্তিতে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে হজের জন্য চূড়ান্ত নিবন্ধনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে হজের সব ধরনের লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে হজপালনের সুযোগ পাবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গাইডসহ ১ লাখ ১৭ হাজার জন হজে যাবেন।
হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশের (হাব) কর্তৃত্ব দখলে হজ এজেন্সির সাধারণ সদস্যদের দু’টি গ্রুপ মাঠে নেমেছে। বিগত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী হাসিনার পতনের পর হাবে সাবেক সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম ও আরও একজন সদস্য হাব থেকে পদত্যাগ করেন। পরে বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সির মালিকবৃন্দের আহবায়ক মো. আখতার উজ্জামান ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলীসহ অন্যান্য হাব সদস্যরা হাবের কমিটির বিরুদ্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নানা অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপন করেন।
ফলে গত ১৫ অক্টোবর চলমান অস্থিরতা ও অসন্তোষ দূরীকরণের লক্ষ্যে সরকার হাবের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিলপূর্বক হাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ দাউদুল ইসলামকে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে। সরকার আগামী ১২০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে হাবের নির্বাচিত কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাবে প্রশাসক নিয়োগে বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সির মালিকবৃন্দ সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে। অন্যদিকে ‘সাধারণ হজ এজেন্সির মালিকবৃন্দ’-এর ব্যানারে আরেক গ্রুপ মানববন্ধন করে হাবে প্রশাসক নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়েছে। এর বিপরীতে হাবের সাবেক কমিটির নেতৃবৃন্দ হাবে প্রশাসক নিয়োগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় চরম বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট এবং দীর্ঘ শুনানিও হয়েছে। হজ এজেন্সিগুলোর সদস্যদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হওয়ায় সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে অধিকাংশ হজ এজেন্সিগুলোর মাঝে চরম উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। এর প্রভাব দেখা দিয়েছে হজ নিবন্ধনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন হজ এজেন্সির মালিক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘হাবে প্রশাসক থাকলে হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেব। সরকারও বিব্রত অবস্থায় পড়বে এবং হজযাত্রীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
এবার হজ প্যাকেজে যা যা থাকবে ইতোমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ এর মূল্য ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা এবং অন্যটির মূল্য ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ মসজিদে হারাম থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মসজিদে নববি হতে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মসজিদে হারামে যাতায়াতের জন্য থাকবে বাসের ব্যবস্থা। এই প্যাকেজে মিনায় তাঁবুর অবস্থান হবে সবুজ জোনে (জোন-৫, পাথর নিক্ষেপের জায়গা থেকে পৌনে ৫ কিলোমিটার দূরে) এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিস পাওয়া যাবে।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ মক্কায় মসজিদে হারাম থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মার্কাজিয়া এলাকায় আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এই প্যাকেজটিতে মিনায় তাঁবুর অবস্থান হবে হলুদ জোনে (জোন-২, পাথর নিক্ষেপের জায়গা থেকে সোয়া দুই কিলোমিটার দূরে) এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিস পাওয়া যাবে।
উভয় প্যাকেজের হজযাত্রীরা মক্কার হোটেল কিংবা বাড়ি থেকে বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা-মিনা ট্রেনে যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া, মিনা এবং আরাফায় মোয়াল্লেম খাবার পরিবেশন করবে। দুটি প্যাকেজেই মক্কা ও মদিনায় বাড়ি বা হোটেলে এটাচড বাথরুমসহ প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৬ জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। হোটেলে থাকবে রেফ্রিজারেটরের ব্যবস্থা। এছাড়া হজযাত্রীদের মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে।
প্যাকেজের বাইরে প্রত্যেক হজযাত্রীকে খাবার বাবদ ন্যূনতম ৪০ হাজার টাকার সমপরিমাণ সৌদি রিয়াল এবং কোরবানি বাবদ ৭৫০ সৌদি রিয়াল আবশ্যিকভাবে সঙ্গে নিতে হবে। এ ছাড়া, অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করে মক্কা ও মদিনার বাড়ি বা হোটেলে ২, ৩ ও ৪ সিটের রুম এবং শর্ট প্যাকেজের সুবিধা গ্রহণ করা যাবে।
হজের লেনদেন ব্যাংকে করার আহ্বান হজের যাবতীয় লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করার আহ্বান জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিবন্ধনের জন্য সরকারি মাধ্যমের প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রী ভাউচার তৈরি করে প্যাকেজ মূল্যের অর্থ সোনালী ব্যাংকে জমা দিয়ে নিবন্ধন সনদ গ্রহণ করবেন। প্যাকেজ নির্বাচন করে চূড়ান্ত নিবন্ধনের টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবে। নিবন্ধনের পর আর প্যাকেজ পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে না। তাই বাড়ি বা হোটেলে ২, ৩ বা ৪ সিটের রুম ও শর্ট প্যাকেজে যাতায়াতের সিদ্ধান্ত আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। হজযাত্রীরা এয়ারলাইন্সের ইকোনোমি ক্লাসে গমনাগমন করবেন।
নিবন্ধনের পর হজে না গেলে ব্যয়িত অর্থ কর্তনের পর অবশিষ্ট অর্থ ফেরত প্রদান করা হবে এবং হজের খরচ কোনো কারণে বৃদ্ধি পেলে তা প্যাকেজ মূল্য হিসেবে গণ্য হবে এবং হজযাত্রীকে পরিশোধ করতে হবে। সৌদি আরবে হুইল চেয়ার ব্যবহারের প্রয়োজন হলে নিজ উদ্যোগে হুইল চেয়ার সংগ্রহ ও ব্যবহার করতে হবে।
বেসরকারি মাধ্যমে হজযাত্রী নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সরকার অনুমোদিত ‘সাধারণ হজ প্যাকেজ’ গ্রহণপূর্বক উন্নতমানের হোটেল, মিনা-আরাফায় উন্নত জোন ও সার্ভিস গ্রহণের ভিত্তিতে এজেন্সি সর্বোচ্চ ১টি বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে।
প্যাকেজ মূল্য ও প্রতিশ্রুত সেবার বিস্তারিত উল্লেখপূর্বক হজ এজেন্সি-হজযাত্রীর সঙ্গে লিখিত চুক্তি করতে হবে। হজে যাওয়ার জন্য প্রতিনিধির পরিবর্তে এজেন্সির মালিকের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা এবং হজের টাকা নগদ জমা না দিয়ে হজ কার্যক্রমে এজেন্সির নির্ধারিত ‘ব্যাংক হিসাবে’ জমা দিতে হবে।