নজরুল-স্মৃতিধন্য হেরিটেজ ভবন গ্রেসকটেজে বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদযাপন



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
নজরুল-স্মৃতিধন্য হেরিটেজ ভবন গ্রেসকটেজে বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদযাপন।  বার্তা২৪.কম

নজরুল-স্মৃতিধন্য হেরিটেজ ভবন গ্রেসকটেজে বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদযাপন। বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বৈশাখের প্রবল প্রতাপের মধ্যেই গত ১৭ এপ্রিল, ২০২২ (রোববার) গ্রেস কটেজে ঘরোয়া পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল 'সুজন বাসর' এবং কলকাতার বিশিষ্ট নজরুল কেন্দ্রিক সংস্থা  'ছায়ানট' -এর যৌথ আয়োজনে 'বিদ্রোহী' কবিতা-প্রকাশের শতবর্ষ উপলক্ষে এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান।

কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সৃষ্টিশীল জীবনের এক উল্লেখযোগ্য সময় (১৯২৬ থেকে ১৯২৮) সপরিবারে কাটিয়েছিলেন কৃষ্ণনগরে। প্রথমে মাস ছয়েক বন্ধু হেমন্ত কুমার সরকারের পারিবারিক আশ্রয়ে, পরে 'গ্রেস কটেজ' নামক এক নির্জন বাগানবাড়িতে। তাঁর 'মৃত্যুক্ষুধা' উপন্যাসে এই বাড়ি এবং এলাকার পরিচয় আছে। এখানেই পুত্র বুলবুলের জন্ম হয়। বাংলায় প্রথম গজল গানের সৃষ্টিও হয় এই বাড়িতে।

গ্রেস কটেজের রীতি অনুসারে 'দুর্গম গিরি কান্তার মরু' কোরাসে গেয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। শঙ্খশুভ্র সরকারের নেতৃত্বে এই কোরাসে সুজন বাসর এবং ছায়ানটের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। তার আগে কবির আবক্ষ মূর্তিতে মাল্য অর্পণ করেন ছায়ানটের কর্ণধার সোমঋতা মল্লিক। ঘরের ভিতরে নজরুলের প্রতিকৃতিতে মাল্য অর্পণ করেন কবিতা কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী 'শৃন্বন্তু'র সভাপতি এবং 'ঋদ্ধ' পত্রিকার সম্পাদক  বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী রতন কুমার ঘোষ।

বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী আকাশ দত্ত। ছায়ানটের পক্ষে সোমঋতা মল্লিক, তন্ময় মুখোপাধ্যায়, কাকলী সেন, ইন্দ্রাণী লাহিড়ী, রীনা রায়, সুরূপা মল্লিক গান ও কবিতা পরিবেশন করেন। ছায়ানটের পক্ষ থেকে গ্রেস কটেজ তথা সুজন বাসর কর্মকর্তাদের হাতে সোমঋতা মল্লিক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এবং কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিতে একটি ক্যালেন্ডার এবং একটি স্মারক উপহার তুলে দেন। সেই সঙ্গে কলকাতায় নজরুল স্মৃতি বিজড়িত ১২টি ভবনের বর্তমান ছবি দিয়ে তৈরী পোস্টকার্ডের সেট তুলে দেন।

সুজন বাসরের পক্ষে তপন কুমার বিশ্বাস, শঙ্খশুভ্র সরকার, বীথিকা মল্লিক, সুকৃতি ঘোষ প্রমুখ সঙ্গীত এবং আবৃত্তি পরিবেশনার মাধ্যমে কবির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। রতন কুমার ঘোষ  তাঁর ভালো লাগার অনুভূতি প্রকাশের সাথে উল্লেখ করেন যে, কৃষ্ণনগর শহরের অনেক শিক্ষিত মানুষকে গ্রেস কটেজ কোথায় জিজ্ঞাসা করলে বলতে পারছেন না। সুতরাং এর একটা উপযুক্ত প্রচার হওয়া দরকার।

নদীয়াতে নজরুল প্রসঙ্গে আলোচনা করেন গবেষক দেবনারায়ণ মোদক। নজরুল জীবনীকারদের লেখায় কৃষ্ণনগর পর্বের আলোচনা যথেষ্ট কম এবং এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে তিনি মনে করেন। নদী গবেষক সুপ্রতিম কর্মকার অঞ্জনা নদী সহ নজরুল সাহিত্যে যেসব নদীর উল্লেখ আছে সে বিষয়টি নিয়ে একটা পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ হওয়া দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজন বাসর সংস্থার সভাপতি দীপংকর দাস। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সম্পাদক ইনাস উদ্দীন।

   

হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, চেতনায় নজরুল



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, চেতনায় নজরুল

হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, চেতনায় নজরুল

  • Font increase
  • Font Decrease

 

'সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, চেতনায় নজরুল', এই কথা অখণ্ড বাঙালিসত্তার সাংস্কৃতিক বীজমন্ত্র। কারণ বাঙালির হৃদয়ে, চেতনায়, মননে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কাজী নজরুল ইসলাম চির ভাস্বর। সুখে, দুঃখে, প্রেমে, অপ্রেমে, বিদ্রোহে, বিরহে আছেন তাঁরা সর্বদা।

রবীন্দ্রনাথ যখন খ্যাতির মধ্য গগনে, তখন রবীন্দ্র-বলয় থেকে প্রভাব মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব সাবলীল ভঙ্গিতে সাহিত্য রচনা শুরু করেন নজরুল। তাঁদের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল শ্রদ্ধার ও স্নেহের।

'বড়র পিরীতি বালির বাঁধ' নামক প্রবন্ধে নজরুল লিখেছেন - "বিশ্বকবিকে আমি শুধু শ্রদ্ধা নয়, পূজা করে এসেছি সকল হৃদয়-মন দিয়ে, যেমন করে ভক্ত তার ইষ্টদেবতাকে পূজো করে। ছেলেবেলা থেকে তাঁর ছবি সামনে রেখে গন্ধ-ধূপ-ফুল-চন্দন দিয়ে সকাল সন্ধ্যা বন্দনা করেছি। এ নিয়ে কত লোকে কত ঠাট্টা, বিদ্রুপ করেছে।"

বিভিন্ন সময়ে দুই কবির সাক্ষাতে তৈরি হয়েছে অমূল্য কিছু মুহূর্ত, রচিত হয়েছে ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। বিশ্বকবির আশীর্বাদ, প্রেরণা জুগিয়েছে দুখু মিঞার বিভিন্ন সৃষ্টিতে। ছায়ানট কলকাতা নজরুলচর্চায় সুদীর্ঘ বছরের সাংস্কৃতিক তৎপরতার ধারাবাহিকতায় প্রকাশ করেছে একটি নান্দনিক অ্যালবামধর্মী সাংস্কৃতিক আলেখ্য, যা মূলত সেইসব ঘটনা এবং জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে কবিগুরুকে নিয়ে লেখা নজরুলের বেশ কয়েকটি কবিতার পারফর্মিং সংকলন।

মনের রবি আর প্রাণের কাজীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নজরুল জন্মজয়ন্তীতে ছায়ানট (কলকাতা) - এর বিনম্র নিবেদন 'হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ ও চেতনায় নজরুল'। সঙ্গীত আয়োজন করেছেন সোমঋতা মল্লিক। শব্দগ্রহণ ও মিশ্রণ: রাজেন বসু (স্টুডিও ভাইব্রেশনস্)। অ্যালবামে অংশগ্রহণকারী শিল্পীবৃন্দ: অলকানন্দা রায়, স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, রায়া ভট্টাচার্য্য, মধুমিতা বসু, রাজা দাস, নিবেদিতা নাগ তহবিলদার, সুদীপ্ত রায়, স্বর্ণাভ রায়, বন্দনা রায় সরকার, ইন্দ্রাণী লাহিড়ী, শৌভিক শাসমল, শাশ্বতী ঘোষ, ড: অজন্তা দাস, রাখী ব্যানার্জী, তিস্তা দে।

অ্যালবামে উচ্চারিত কবিতা: ১৪০০ সাল (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর), ১৪০০ সাল (কাজী নজরুল ইসলাম), তীর্থপথিক, অশ্রু-পুষ্পাঞ্জলি, রবির জন্মতিথি, কিশোর রবি, সংকল্প, আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে, মৃত্যুহীন রবীন্দ্র, মৃত তারা, রবি-হারা, সালাম অস্ত-'রবি'।
গত ১১জুন কলকাতায় রবীন্দ্র সদন প্রেক্ষাগৃহে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যালবামটির মোড়ক উন্মোচিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান, রবীন্দ্রতীর্থ এবং নজরুলতীর্থের প্রাক্তন কিউরেটর অনুপ মতিলাল, আল-আমীন মিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ননী গোপাল চৌধুরী এবং বাচিকশিল্পী মধুমিতা বসু। সময়ের নিরিখে এই অ্যালবাম আজও কতখানি প্রাসঙ্গিক তা ফুটে ওঠে বিশিষ্ট অতিথিদের বক্তব্যে। অ্যালবামটির নির্মাণে বিশেষ সহযোগিতায় কৃষ্ণপুর নজরুল চর্চা কেন্দ্র এবং আল-আমীন মিশন।

;

কলকাতায় নজরুল প্রণাম 'অঞ্জলী লহো মোর'



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কলকাতায় নজরুল প্রণাম 'অঞ্জলী লহো মোর'

কলকাতায় নজরুল প্রণাম 'অঞ্জলী লহো মোর'

  • Font increase
  • Font Decrease

১১ জুন ৪২৩ জন শিল্পী সমন্বয়ে সংস্কৃতির পীঠস্থান কলকাতার রবীন্দ্র সদন প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হল কৃষ্ণপুর নজরুল চর্চা কেন্দ্রের আয়োজনে নজরুল প্রণাম 'অঞ্জলী লহো মোর', সহযোগিতায় ছিল ভারতীয় বিদ্যাভবন এবং ছায়ানট ( কলকাতা)।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কবির 'অঞ্জলি লহো মোর' সঙ্গীতে - এই গানটি সহযোগে নৃত্যায়নে কবির প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন শিলিগুড়ি থেকে আগত শিল্পী অদিতি দাস ঘোষ। তারপরেই সঞ্চালক শৌভিক শাসমল অনুষ্ঠানটির মালা গাঁথতে শুরু করেন।

এই অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা এবং পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন কৃষ্ণপুর নজরুল চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি সোমঋতা মল্লিক, তাঁর প্রারম্ভিক বক্তব্যে অনুষ্ঠানটির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তুলে ধরেন। সদ্য প্রয়াত কবির কনিষ্ঠ পুত্রবধূ কল্যানী কাজীর স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সোমঋতা মল্লিকের পরিচালনায় কৃষ্ণপুর নজরুল চর্চা কেন্দ্রের ৩০ জন শিল্পী শোনালেন নজরুলের তিনটি দেশাত্মবোধক গান। এরপর একের পর এক আমন্ত্রিত সংস্থা তাঁদের নিবেদনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান কবিকে। বলাকা সংস্কৃতি অঙ্গন থেকে অর্ধশত শিশু-কিশোরের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় শতবর্ষে পদার্পিত কবিতা 'আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে'।


ছায়ানট (কলকাতা) থেকে 'হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ ও চেতনায় নজরুল' শীর্ষক একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয় এইদিন। উদ্বোধন করেন পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমেদ হাসান ইমরান, রবীন্দ্রতীর্থ এবং নজরুলতীর্থের প্রাক্তন কিউরেটর অনুপ মতিলাল, আল-আমীন মিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ননী গোপাল চৌধুরী এবং বাচিকশিল্পী মধুমিতা বসু। সময়ের নিরিখে এই অ্যালবাম আজও কতখানি প্রাসঙ্গিক তা ফুটে ওঠে বিশিষ্ট অতিথিদের বক্তব্যে।

নজরুল চর্চায় যুক্ত থাকার স্বীকৃতি হিসেবে ছয়জনকে সংস্থার পক্ষ থেকে সম্মানিত করা হয়। কৃষ্ণপুর নজরুল চর্চা কেন্দ্রের শিশু শিল্পীদের পরিবেশনা ছিল চমৎকার। ছায়ানট (কলকাতা) -এর শিল্পীরা শোনালেন কবির জাগরণ মূলক দুটি গান। সে গান আলোড়ন তুলেছিল উপস্থিত দর্শকমন্ডলীর মনে।

সবশেষে কল্যাণী কাজীর কণ্ঠে ধারণকৃত 'মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু - মুসলমান' - এই গানটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে বলাকা সংস্কৃতি অঙ্গনের শিশু শিল্পীরা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শক আসন ছিল পূর্ণ।

পরিচালক সোমঋতা মল্লিক কতখানি দক্ষতার সঙ্গে এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছেন তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না । নজরুল চেতনার প্রচার এবং প্রসারে এই উদ্যোগ সবসময়ই প্রশংসার দাবি রাখে।

;

কলকাতায় সোমঋতা মল্লিকের অ্যালবাম 'ঈদের চাঁদে লেখা' উন্মোচন



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কলকাতায় সোমঋতা মল্লিকের অ্যালবাম ঈদের চাঁদে লেখা উন্মোচন

কলকাতায় সোমঋতা মল্লিকের অ্যালবাম ঈদের চাঁদে লেখা উন্মোচন

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী, ছায়ানট কলকাতার সভাপতি সোমঋতা মল্লিকের একক অ্যালবাম 'ঈদের চাঁদে লেখা' আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়েছে কলকাতায়।

রোববার (৭ মে) কলেজ স্ট্রিটের অভিযান বুক ক্যাফেতে বিহান মিউজিক থেকে প্রকাশিত সোমঋতা মল্লিকের কণ্ঠে কাজী নজরুল ইসলামের ইসলামী গানের সংকলন 'ঈদের চাঁদে লেখা' উন্মোচিত হয়।

অ্যালবামটিতে মোট ৬ টি গান আছে, যার সঙ্গীত আয়োজন করেছেন গৌতম সোম এবং রেকর্ডিং হয়েছে স্টুডিও 'ভাইব্রেশনস্'-এ। সকাল হ'ল শোন্ রে আজান, তৌহিদেরি মুর্শিদ আমার মোহাম্মদের নাম, তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে, জরীন হরফে লেখা, হেরা হতে হেলে দুলে, ফুলে পুছিনু, 'বল, বল ওরে ফুল!' - এই ৬টি গান রয়েছে অ্যালবামটিতে। অ্যালবামের কয়েকটি গান বাংলাদেশের জনপ্রিয় মাল্টিমিডিয়া নিউজপোর্টাল বার্তা২৪.কম০'র ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ পেলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

অ্যালবাম প্রকাশ অনুষ্ঠানে নজরুলের ইসলামী গানে সম্বন্ধে আলোকপাত করেন বিশিষ্ট নজরুল গবেষক ড. শেখ মকবুল ইসলাম (ডি. লিট.), বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজ, কলকাতা। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী মধুমিতা বসু।

প্রসঙ্গত, কাজী নজরুল ইসলাম রচিত প্রথম ইসলামী গান সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করেছেন কিংবদন্তি-শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহ্‌মদ তাঁর 'আমার শিল্পী জীবনের কথা' গ্রন্থে। তিনি জানান, “কাজিদা, একটা কথা মনে হয়। এই যে পিয়ারু কাওয়াল, কাল্লু কাওয়াল এরা উর্দু কাওয়ালি গায়, এদের গানও শুনি অসম্ভব বিক্রি হয়, এই ধরণের বাংলায় ইসলামী গান দিলে হয়না? তারপর আপনি তো জানেন কিভাবে কাফের, কুফর ইত্যাদি বলে বাংলার মুসলমান সমাজের কাছে আপনাকে অপাংক্তেয় করে রাখবার জন্য আদা জল খেয়ে লেগেছে একদল ধর্মান্ধ। আপনি যদি ইসলামী গান লেখেন তাহলে মুসলমানের ঘরে ঘরে আবার উঠবে আপনার জয়গান।”

কথাটা তাঁর মনে লাগল। তিনি বললেন, “আব্বাস, তুমি ভগবতী বাবুকে বলে তাঁর মত নাও, আমি ঠিক বলতে পারব না।” আমি ভগবতী ভট্টাচার্য্য অর্থাৎ গ্রামোফোন কোম্পানীর রিহার্সেল- ইন- চার্জ কে বললাম। তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন, “না না ওসব গান চলবেনা। ও হতে পারেনা।”

মনের দুঃখ মনেই চেপে গেলাম। এর প্রায় ৬ মাস পরে। একদিন দুপুরে বৃষ্টি হচ্ছিল, আমি অফিস থেকে গ্রামোফোন কোম্পানীর রিহার্সেল ঘরে গিয়েছি। দেখি একটা ঘরে বৃদ্ধা আশ্চর্যময়ী আর বৃদ্ধ ভগবতী বাবু বেশ রসাল গল্প করছেন। আমি নমস্কার দিতেই বৃদ্ধ বললেন, “বসুন বসুন”। আমি বৃদ্ধের রসাপ্লুত মুখের দিকে চেয়ে ভাবলাম, এই-ই উত্তম সুযোগ। বললাম, “যদি কিছু মনে না করেন তা হলে বলি। সেই যে বলেছিলাম ইসলামী গান দেবার কথা, আচ্ছা, একটা এক্সপেরিমেন্টই করুন না, যদি বিক্রি না হয় আর নেবেন না, ক্ষতি কি?” তিনি হেসে বললেন, “নেহাতই নাছোড়বান্দা আপনি, আচ্ছা আচ্ছা করা যাবে।”

শুনলাম পাশের ঘরে কাজিদা আছেন। আমি কাজিদাকে বললাম যে ভগবতী বাবু রাজি হয়েছেন। তখন সেখানে ইন্দুবালা কাজিদার কাছে গান শিখছিলেন। কাজিদা বলে উঠলেন, “ইন্দু তুমি বাড়ি যাও, আব্বাসের সাথে কাজ আছে।” ইন্দুবালা চলে গেলেন। এক ঠোংগা পান আর চা আনতে বললাম দশরথকে। তারপর দরজা বন্ধ করে আধঘন্টার ভিতরই লিখে ফেললেন, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ’। তখুনি সুরসংযোগ করে শিখিয়ে দিলেন। পরের দিন ঠিক এই সময়ে আসতে বললেন। পরের দিন লিখলেন, ‘ইসলামের ওই সওদা লয়ে এলো নবীন সওদাগর’।

এভাবেই বাংলা সঙ্গীতে ইসলামী গানের প্রবর্তন করলেন কাজী নজরুল ইসলাম।

;

প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রণজিৎ গুহ'র প্রয়াণ



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রণজিৎ গুহ'র প্রয়াণ

প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রণজিৎ গুহ'র প্রয়াণ

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রয়াত নিম্নবর্গের ইতিহাস সাধনার অন্যতম পথিকৃৎ, প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রণজিৎ গুহ। শুক্রবার শেষরাতে (২৮ এপ্রিল) অস্ট্রিয়ার ভিয়েনাতে নিজ বাসভবনে তাঁর জীবনবসান ঘটে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। আগামী ২৩ মে তাঁর ১০০ বছরে পা দেওয়ার কথা ছিল। শতবর্ষ স্পর্শের অল্প কয়েকদিন আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন এই প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ।

১৯২৩ সালের ২৩ মে বাংলাদেশের বরিশালের বাখরগঞ্জের সিদ্ধকাটি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন রণজিৎ গুহ। কলকাতায় এসে গুহ কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। সিপিআই-এর সক্রিয় সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি। গুহ প্রেসিডেন্সি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র ছিলেন। পরে ১৯৪৭ সালে ডিসেম্বরে প্যারিসে বিশ্ব ছাত্র সম্মেলনেও যোগ দেন। এর পর দলের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি একে একে সাইবেরিয়া, উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও চীন বিপ্লব নিজের চোখে খতিয়ে দেখেন।

১৯৫৬ সালে বিদেশ থেকে ফেরার পর হাঙ্গেরিতে সোভিয়েত অনুপ্রেবেশের বিরোধিতায় তিনি দল ছেড়ে দেন। ১৯৫৯ সালে এ দেশ ছাড়ার পরে ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্স, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে তিনি অধ্যাপনা করেন। ভারত থেকে দূরে থাকলেও রণজিতের সংস্পর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দীপেশ চক্রবর্তী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্ঞানেন্দ্র পাণ্ডে, শাহিদ আমিন, গৌতম ভদ্র, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক প্রমুখ নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চায় ব্রতী হয়েছিলেন। তিনি একাধিক বই লিখেছিলেন। ঔপনিবেশিক ভারতে কৃষক বিদ্রোহ নিয়ে তাঁর গ্রন্থে এ দেশের গণতান্ত্রিক বোধে কৃষকের ভূমিকা তুলে ধরেন রণজিৎ।

গত মার্চেই অস্ট্রিয়ায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন দীপেশ। বয়সের ভার থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তিনি জ্ঞানচর্চা করে গিয়েছেন।

গুহ ভারতের কৃষক আন্দোলন নিয়ে সূদূরপ্রসারী কাজ করেছেন। তিনি নিম্নবর্গীয় ইতিহাস চর্চার ধারা গড়ে তোলেন এবং বেশ কিছু সমমনোভাবাপন্ন তরুণ ঐতিহাসিককে নিয়ে একটি শক্তিশালী ঐতিহাসিক গোষ্ঠী গড়ে তোলেন। এই নিম্নবর্গীয় ইতিহাস চর্চার প্রভাব পড়ে সারা পৃথিবীতে।ঐতিহাসিক গুহ পৃথিবীর নানা জায়গায় পড়িয়েছেন, নানা জায়গায় তাঁর ছাত্র ও অনুরাগীরা আছে। ঐতিহাসিক গুহর প্রয়াণে জ্ঞানচর্চার পৃথিবীতে অপূরণীয় ক্ষতি হল।

;