প্রসিকিউটর ছাড়া ঢাকার নিম্ন আদালতের দুইমাস

  • মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকার নিম্ন আদালতের দুইমাস/ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার নিম্ন আদালতের দুইমাস/ছবি: সংগৃহীত

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পরই আত্মগোপনে চলে যান দেশের সমস্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। আত্মগোপনে চলে যান ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সেক্রেটারীসহ নির্বাচিত ২৫ সদস্য। ৬ আগস্ট বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ঢাকার নিম্ন আদালতের এজলাসে এজলাসে গিয়ে পিপি এপিপিদের বসার চেয়ার টেবিল ভাংচুর করে। ভয়ে ঢাকার নিম্ন আদালতের প্রায় সাত শতাধিক পিপি-অ্যাডিশনাল পিপি, স্পেশাল পিপি, এপিপি, জিপি, এজিপি আত্মগোপন করে।

প্রসিকিউটরগণ ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ও তার অধীনস্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতসমূহ ও যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতসমূহ এবং ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ও তার অধীনস্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতসমূহ ও যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতসমূহ, ৪টি দ্রুত বিচার টাইব্যুনাল, ৯টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, ১০টি বিশেষ জজ আদালত, সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল, সাইবার ট্রাইব্যুনাল, জননিরাপত্তা অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল, পরিবেশ আদালত, পরিবেশ আপীল আদালত, চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট (সিএমএম) আদালত ও তার অধীনস্থ অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসমূহ ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসমূহ এবং চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট (সিজেএম) আদালত ও তার অধীনস্থ অতিরিক্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসমূহ ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালতসমূহে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

বিজ্ঞাপন

তারা সাধারণত রাষ্ট্রের স্বার্থ আছে এমন মামলায় দায়িত্ব পালন করেন। তাদের দায়িত্বে মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীকে প্রস্তুত করা, আসামি পক্ষের সাফাই সাক্ষীকে জেরা করা, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী বৈরী ঘোষণা করে তাকে জেরা করা, সাক্ষী না আসলে আদালতে সময় নেয়া, জামিন আবেদনের বিরোধিতা করা, চার্জগঠনের বিষয়ে আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ উপস্থাপন করা এবং রাষ্ট্রপক্ষে আসামির বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা প্রভৃতি।

৬ আগস্ট থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান ঢাকা মহানগর দায়রা দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু। দৌর্দণ্ড প্রতাপে ১৫ বছর রাজত্ব করা আওয়ামী লীগ নেতা, মাঝারি মানের নেতা, পাতি নেতা সবাই আদালতে আসা বন্ধ করে দেন। খালি মাঠ দখলে নেয় বিএনপি-জামায়াতের আইনজীবীরা।

দিন দশেক পর আতঙ্ক কিছুটা কমে আসে আর পরিস্থিতিও কিছুটা স্বাভাবিক হলে বিচ্ছিন্নভাবে দুই একজন স্পেশাল পিপি, অতিরিক্ত পিপি ও এপিপিদের আদালতে দেখা গেলেও আর এজলাসে ফিরে যাননি। সেই থেকে গত দুই মাস কোন ধরনের প্রসিকিউটর ছাড়ায় চলছে ঢাকার নিম্ন আদালত।

ঢাকার নিম্ন আদালতে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতসহ প্রায় শতাধিক ফৌজদারি আদালত রয়েছে। রাষ্ট্রবাদী মামলায় প্রসিকিউটররা রাষ্ট্রের পক্ষে মামলা লড়েন। রাষ্ট্রের স্বার্থ দেখেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন। কিন্তু বর্তমানে রাষ্ট্রপক্ষে কোন প্রসিকিউটর না থাকায় অতিরিক্ত সুবিধা পাচ্ছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আর হত্যা মামলাসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মামলাসমূহের প্রসিকিউটরের অভাবে নেমে এসেছে স্থবিরতা।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার গঠনের আগেই ৮ আগস্ট দুপুরে রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেন। এরপর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ৬৬ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও ১৬১ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেওয়া হলেও প্রথম থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগে সিদ্ধান্তহীনতা ভুগে সরকার।

গত ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় ঢাকা পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে ঢাকা বারের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজীকে নিয়োগ দেয় আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইং। ২৮ আগস্ট বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করলে ২৯ আগস্ট তিনি পিপি পদে যোগদান করতে অপারগতা প্রকাশ করে সলিসিটর অফিসে চিঠি দেন। তৎপ্রেক্ষিতে ওইদিনই তার নিয়োগ বাতিল করা হয়। এরপর ৪০ দিন গত হলেও এখনও কাউকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

বিএনপি দলীয় ৩ জন আইনজীবী মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর পদে নিয়োগ লাভের জন্য আবেদন করেছেন মর্মে জানা গেছে। তারা হলেন, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকী এবং বিএনপির সহ-আইন সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদন মেজবাহ। প্রার্থীদের মধ্যে ওমর ফারুক ফারুকী আদালতে সরকার পক্ষে সরব থাকলেও অন্যদের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। এদিকে বিএনপি হয়ে যে-ই পিপি পদে নিয়োগ পান না কেন স্পেশাল পিপি, অতিরিক্ত পিপি ও এপিপি পদের তালিকা তৈরি করে রেখেছে দলটি। ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ হওয়ার পরই এই তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এ তালিকায় ঠাঁই পেতে অনেক নতুন মুখকে আদালতে সোচ্চার হতে দেখা গেছে।

অ্যাডভোকেট সমাজীর নিয়োগের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হওয়ার পর তিনি পদত্যাগ করলে আত্মসম্মানের ভয়ে কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীকে একে একে মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব করা হলে তারা উক্ত প্রস্তাব গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন মর্মে জানা যায়।