সন্তানকে নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করা বলতে কী বোঝায়?



অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

ইদানিং বাচ্চারা কথা শুনে না এটা সার্বজনীন সমস্যায় রূপ নিয়েছে। কেন বাচ্চা কথা শুনে না? সেখানে আমাদের ভূমিকা কী ছিল? আসুন ধাপে ধাপে আমরা মনস্তাত্ত্বিকভাবে সেটা খুঁজি। সন্তানকে নিঃস্বার্থভাবে গ্রহণ মানে কী? আপনি ভাবছেন, আপনি সন্তানের জন্য যা করছেন সব নিঃস্বার্থ ভাবে। কিন্তু সন্তানও কী তাই অনুভব করছে? আপনার আচরণে বাচ্চা কী মনে করছে যে সে- আপনার ভালোবাসার যোগ্য? পরীক্ষায় ভালো না করলেও আপনি তাকে ভালোবাসবেন? বাচ্চাটা কি তার রাগ দুঃখ ভয় আনন্দ অকপটে আপনাকে বলে? যদি বলতে না পারে, এখানে অবশ্যই অবচেতনভাবে আপনার ভূমিকা আছে একজন অভিভাবক হিসেবে।

সন্তানকে নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করা বিষয়টিকে আমি চারটা ভাগে ভাগ করতে চাই। * প্রথমত: মানসিক * দ্বিতীয়ত: সামাজিক * তৃতীয়ত: শারীরিক এবং * চতুর্থ স্পিরিচুয়াল বা আধ্যাত্মিক।

প্রথমেই আসি সন্তানকে নিঃশর্ত গ্রহণ প্রয়োজন কেন? সন্তানকে গ্রহণ করার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর মানসিক দিক। কারণ প্যারেন্টিং বা সন্তান লালন হলো একটি লার্নিং প্রসেস বা জ্ঞান আহরণের পদ্ধতি। আমরা যেদিন গর্ভধারণ করি, সেদিন থেকেই আমরা মানসিকভাবে সন্তানকে গ্রহণ করি। নারীটি সেদিনই মা হন, পুরুষটি সেদিনই পিতা। কিন্তু আমাদের ডিএনএ গঠন, অনাগত সন্তানের থেকে ভিন্ন হওয়ায়, সন্তান পিতা মাতার থেকে ভিন্ন মানবসত্ত্বা। আমি পিতা বা মাতা হয়ে যত সহজ ভাবে নিজের সন্তানকে তার ভিন্নতা সহ গ্রহণ করতে পারব, সহজে আমি বলব, যে আমি আমার মতন ঠিক আছি, তুমি তোমার মতন ঠিক আছো তত সহজে সন্তানের ভিন্নতাকে বুঝবে। সন্তান তো আমাদের ফটোকপি না। ওর ভিন্নতাকে সম্মান করলে আমার সন্তান যেমন নিজেকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে গ্রহণ করতে পার্মিশন পাবে তেমনি অন্যর ভিন্নতাকেও গ্রহণ করতে শিখবে।

সাইকেল অফ ডেভলপমেন্টে গর্ভধারণ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়টিকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। একে বলে becoming বা গড়ে ওঠার সময়। আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন, চিকিৎসাশাস্ত্রেই হোক, কিংবা প্রত্যেকটা ধর্মেই হোক গর্ভবতী নারীকে বিশেষ যত্নের কথা বলা হয়েছে। কেন? একটা ছোট্ট এক্সাম্পল দেই। গতকাল আমি একজনের কাউন্সিলিং সেশন নিলাম। ভদ্রমহিলার বয়স ৪০, উচ্চশিক্ষিত, খুব ভালো চাকরি করেন। উনার মা কিন্তু গর্ভকালীন সময় অ্যাবরশনের চেষ্টা করেছিলেন। ভদ্রমহিলা আজকে সূপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সেই অ্যাবরশনের স্মৃতি তার মনোজগতে না থাকলেও, তার ডিএনএ লেভেলে জমা আছে। তিনি প্রচণ্ড ভয় পান, অস্থির হয়ে ওঠেন, দুশ্চিন্তা বোধ করেন, কেন এমন হচ্ছে কারণ আইডেন্টিফাই করতেই আমার কাছে তার আসা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত শিশু। আর সাইকেল অফ ডেভলপমেন্ট বলে, একটা মানুষ ১৯ বছর পর্যন্ত মানসিক ভাবে বৃদ্ধি লাভ করে। এর মধ্যে প্রথম পাঁচ বছর কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। কাউন্সিলিং টেবিলের গল্পগুলোর মধ্যে কমন প্রবলেম আমি পাই, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি, সেল্ফ কেয়ারের অভাব, আত্মসম্মান নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এই ঘটনাগুলো বীজ কিন্তু শৈশবেই শিশুমনের গহীনে রোপণ হয়ে যায়। পাঠক একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, মা গর্ভধারণ করলে আপনি, আমি কিন্তু প্রথমে জানিনা যে গর্ভস্থ শিশুটি ছেলে, মেয়ে নাকি তৃতীয় লিঙ্গ হবে? ঠিক সেরকমই সন্তান হচ্ছে বীজের মতন। আপনি বীজ বপন করবেন ঠিকই কিন্তু কি ফল হবে সেটার আশা করবেন না। কারণ প্রত্যেকটা মানুষ স্বতন্ত্র। আমি গাছ লাগাবো কিন্তু কি ফল হবে সেটা পরবর্তী সময় বলে দেবে। সেটা নির্ভর করবে আমি কিভাবে যত্ন নেব সেই ছোট্ট চারা গাছের তার উপর। যেভাবে গাছের পরিচর্যা করব, গাছটি সেভাবেই বেড়ে উঠবে। সন্তান এই গাছটার মতন।

এবার আসি নিঃস্বার্থভাবে কেন করব? সন্তান রেখে যদি নিঃস্বার্থভাবে বড় করি, তাহলে সন্তানের মনের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে না। তখন সন্তান অকপটে আপনাকে, তার আনন্দ, দুঃখ, ভয় আজ রাগের কথা বলতে পারে। ফলে সেই সন্তান দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকে প্রাপ্তবয়স্ক হলে। অর্থাৎ নিঃস্বার্থভাবে গ্রহণ করলে বাচ্চা আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভরশীল হবে। অন্যকেও তার ভিন্নতাকে নিয়ে সম্মান করতে পারবে। পরিণতিতে আমার সাথেও আমার বাচ্চার সম্পর্কসহ অন্যান্য পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কগুলো ভালো থাকবে। আপনি কিন্তু এখন প্রশ্ন করবেন তাহলে কি আমার বাচ্চা কে আমি ওর ভালোর জন্য শাসন করতে পারবো না? অবশ্যই পারবেন। কথায় আছে, "শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।" যেটাতে আমরা বলি পজেটিভ বা ইতিবাচক প্যারেন্টিং। এটা কিন্তু শিখতে হবে। প্যারেন্টিং এর ওয়ার্কশপ করাতে গেলে অনেক অভিভাবক আমাকে বলেন বাচ্চা পালা শেখার জিনিস নাকি? আমার নানী দাদী পালছে না? আমার বাপ মা পালছে না? কিন্তু অভিভাবকদের প্রতি সম্মান রেখে একটা কথা বলতে চাই, বাচ্চা পালা প্যারেন্টিং কিন্তু একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। আপনি যদি পঞ্চাশ বছর আগের মুরগি পালার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনেন, হাল চাষের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনেন, তাহলে সন্তান লালন-পালনের পদ্ধতিতে পরিবর্তন কেন আসবেনা? তাই প্যারেন্টিং শেখার জিনিস। নতুন নতুন গবেষণা লব্ধ তথ্য দিয়ে কাজে লাগানোর জিনিস। সন্তানকে নিঃস্বার্থ ভাবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সবথেকে জরুরি হলো বাচ্চাকে অন্যের সাথে তুলনা করা বন্ধ করুন। আজকে যারা এই লেখাটি পড়ছেন, তমুকের বাচ্চা এই করেছে, আর তুমি পারলে না এই তুলনাটি করবেন না। মনে রাখবেন তুলনা সন্তানের আত্মবিশ্বাসটা দুমড়েমুচড়ে শেষ করে দেবে।

এখন প্রশ্ন হলো তাহলে কি তুলনা করব না? অবশ্যই করবো। কিন্তু তুলনা করব এখানে বাচ্চার নিজের সাথে নিজের। যেমন গত পরীক্ষায় কম নম্বর পেলে এই পরীক্ষায় তার থেকে কতটুকু বেশি পেলো সেটার সাথে। অন্যের সাথে নিজের বাচ্চার কম্পেয়ার করা মানে আম গাছের সাথে কাঁঠাল গাছের তুলনা করার মতোই। আমরা বাচ্চার অতীতের সাথে বর্তমানের তুলনা করে বাচ্চার সীমাবদ্ধতা বা লিমিটেশনের জায়গাগুলা চিহ্নিত করব।

এবার যদি সামাজিক দিক থেকে দেখি, তবে আমাদের সমাজে একটা ট্যাবু আছে বাচ্চার প্রশংসা মুখের সামনে করতে হয় না। এটা মোটেও ঠিক না। কারণ আপনার ছোট্ট একটু প্রশংসা বাচ্চাকে অনেকখানি উৎসাহিত করবে। তার ভালো কাজের স্পেসিফিক্যালি প্রশংসা করুন। প্রশংসা কিন্তু আমরা প্রার্থনায় বসলে স্রষ্টারও করি। প্রশংসা সন্তানকে নিঃশর্তভাবে গ্রহণকে উৎসাহিত করে । আপনি জানেন যে নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করা মানে বাচ্চার অস্তিত্বকে গ্রহণ করা। যেটাকে আমরা মনস্তাত্ত্বিকভাবে being stage বলি। আর এটা করলে, সেটা দিবো, এটা কিন্তু শর্তসাপেক্ষে আচরণ। একে আমরা doing stage বলি। আমাদের একটা চালু কথা আছে, বাচ্চাকে আমরা বলি অংকতে ১০০ তে ১০০ পেলে তোমাকে সাইকেল কিনে দিবো, অর্থাৎ এটা করলে সেটা কিনে দিবো। এটা কখনো আর বলবেন না। আমাদেরকে কি বাচ্চার সাথে দেয়া-নেয়ার সম্পর্ক? এই শর্ত সাপেক্ষে দেয়া-নেয়া বাচ্চাদের অবচেতনভাবে কিন্তু তাই শিক্ষা দেয়। এখন যখন পিছনে ফিরে তাকাই, প্যারেন্টিং এর জিনিসগুলো যখন আমি প্রতিদিন পড়ি এখন আমি উপলব্ধি করি, আমরা তো প্রতিদিন ফার্স্ট হই না। জীবনের ফার্স্ট হওয়াটা যেমন জরুরি তেমন কখনো কখনো ফেল করে কিভাবে ব্যর্থতাটা হজম করতে হয় সেটা শেখাও জরুরি। অনেক সময় দেখা যায় বাবা-মা নিজেদের অতৃপ্ত ইচ্ছাগুলো বাচ্চাদের উপর চাপিয়ে দেন। আমি এটা হইনি তাই আমার বাচ্চাকে এটা হতে হবে। এবং এটা করতে যেয়ে আমরা এতই স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাই যে বাচ্চার কি ভালো লাগে সেটাও খেয়াল করার প্রয়োজন দেখিনা। আমার এক ছাত্রী ছিল এত চমৎকার ছবি আঁকতো চারুকলা ওর জন্য সব থেকে ভালো জায়গা ছিল। কিন্তু বাবা-মা জোর করে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল মেডিকেল কলেজে। ফলশ্রুতিতে মেয়েটা প্রচণ্ড মানসিক যাতনা ভেতর দিয়ে তার ছাত্র জীবনটা পার করে। ঠিক সেরকম কয়েকদিন আগে, আমার কাছে একটা পেশেন্ট এসছে বাচ্চাটার ছোটবেলাতেই সেক্স চেঞ্জ সার্জারি হয়ে গেছে। এখন বাচ্চাটা দৈহিকভাবে পুরুষ হলেও, মানসিকভাবে নারী। বাবা-মা বিয়ে করার জন্যে প্রচন্ড চাপাচাপি করছেন। এই বাবা-মাকে নিঃশর্তভাবে তার সন্তানকে গ্রহণ করতে পেরেছেন? অনেক বাচ্চা হোস্টেলে থাকতে চায় না, সেটা মাদ্রাসা হোক, নাম করা দামি ইংলিশ মিডিয়াম কনভেন্ট হোক। আপনি মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে যেয়ে দেখেন, প্রতিদিন কতগুলো ছেলে শিশু সেখানে রেপড হয়ে আসছে হোস্টেল থেকে। কাজেই বাচ্চারা যদি না বলে, কেন না বলছে সেটা শুনুন। কিছু না শুনেই তার ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবেন না।

সুপ্রিয় পাঠক সন্তানের আচণনগত সমস্যাসহ তার অস্তিত্বকে সর্বপেক্ষা গুরুত্ব দিন। তার আচরণগত যদি সমস্যা থাকে তবে সন্তানকে সেই সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করুন, সংশোধনে সহায়তা করুন । কিন্তু কোনভাবেই সন্তানের হাত ছেড়ে দেবেন না। এবার আসি সন্তানকে শারীরিকভাবে গ্রহণ করা, অর্থাৎ আমার বাচ্চা যদি হ্যান্ডিক্যাপ হয়, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু হয়, তৃতীয় লিঙ্গ হয় তবুও তার চিকিৎসা এবং মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করবো। তাকে স্পর্শ করে বলবো, "তুমি যেভাবেই আছো যেমন আছো, তুমি বেঁচে আছো তার জন্য আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি যেমন আছো দেখে সেভাবেই ভালোবাসি।" রবীন্দ্রনাথ কর্ণ কুন্তী সংবাদে খুব চমৎকার একটা কথা বলেছিলেন, " সন্তান সে নহে মাত সম্পত্তি তোমার।" সন্তান আমার অধিকৃত সম্পত্তি নয়। আমি জন্ম দিয়েছি বলে, যা খুশি তাই আমি সন্তানের সাথে করতে পারব এই চিন্তাটা সঠিক নয়। সন্তান সম্পূর্ণ আলাদা একটি মানুষ। ভালোলাগা মন্দলাগা আমার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সন্তান আমার আমানত। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আমার দায়িত্ব তাকে বড় করা। আমার মতামত তার উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া নয়।

আধ্যাত্মিক ভাবে বা স্পিরিচুয়ালি যদি বলি, তবে খোঁজ নিয়ে দেখবো বিগত ২৫ জানুয়ারি ২০২১, পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম একটা হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন অধ্যাপক বাবা পুরুষোত্তম নাইডু এবং অংকের স্কুল শিক্ষিকা মা পদ্যজায়া মিলে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের মাদেনাপল্লী শহরে আলেখ্য এবং ডিব্বা নামের দুই যমজ কন্যাকে পাশবিকভাবে হত্যা করে। কারণ তারা ভেবেছিল, তারা মেয়েগুলোকে পুনর্জন্ম দিতে পারবে। বাবা-মা বিশ্বাস করছে, মা শীবের অংশ এবং করোনা মায়ের শরীর থেকে উৎপন্ন হয়েছে। আমি যদি সত্যিই নিঃশর্তভাবে আমার সন্তানকে ধারণ করতাম তাহলে কি তাকে বলি দিতে পারতাম? তাহলে কি এমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমার পারলৌকিক মুক্তির জন্য পাঠাতাম যেখানে তার ধর্ষিত হবার হওয়ার সম্ভাবনা আছে?

অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া চিকিৎসক, কাউন্সিলর, সাইকোথেরাপি প্রাকটিশনার। ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বিডি। (01675380646, 01323148404)

   

এসিও চলছে, পাল্লা দিয়ে সর্দি কাশিও বাড়ছে! জেনে নিন ঘরোয়া উপায়



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রচন্ড তাপপ্রবাহে অতিষ্ট হয়ে উঠছে জনজীবন। এই গরমে শীতল হাওয়ার ছোঁয়া পেতে অনেকেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি ব্যবহার করেন। কিন্তু বাইরে প্রচন্ড গরমে ঘাম আবার অফিসে এসির ঠান্ডায় সর্দি কাশি পিছু ছাড়ে না। ওষুধ, কফ সিরাপ, অ্যান্টিবায়োটিকসহ সব রকম ভাবে চেষ্টা চালিয়েও কাশি থামছে না কিছুতেই। কাশি এক বার শুরু হলে, তা সহজে সারতে চায় না।

এদিকে কাশি হচ্ছে বলে এসি বন্ধ করে পুরো অফিসের লোকজনকে ঘামতেও বলা যায় না। আশপাশে যারা বসছেন, তাদেরও অস্বস্তি হচ্ছে। এ অবস্থায় কাশি কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। সেগুলো মেনে চললে উপকার পেতে পারেন।

১) লবণ পানিতে গার্গল:

কাশির দাপট নিয়ন্ত্রণে রাখার সবচেয়ে ভাল উপায় হল গরম পানিতে সামান্য লবণ দিয়ে গার্গল করা। সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে দুইবার গার্গল করতেই হবে। প্রয়োজনে আরও বেশি বার করা যেতে পারে।

২) মধু, তুলসীপাতা এবং গোলমরিচ:

প্রতি দিন এক চামচ করে এমনি মধু খেতে পারেন। আবার এক চামচ মধুর সঙ্গে তুলসীপাতার রস এবং এক চিমটি গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন। গলায় কোনও রকম সংক্রমণ হলে তা সেরে যাবে এই উপায়ে।


৩) হলুদ এবং দুধ:

রান্নাঘরের অপরিহার্য উপকরণ হল হলুদ। এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। বিশেষ করে গরম দুধে হলুদ মিশিয়ে খেলে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে তোলে। প্রতি দিন রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস গরম দুধে হলুদ মিশিয়ে খেলে ঠান্ডা লাগা এবং সর্দি-কাশির সমস্যা থেকে দ্রুত রেহাই মিলতে পারে।

৪) গরম পানির ভাপ:

ঠান্ডা লাগলে চিকিৎসকেরা প্রথমেই ভাপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। গলায় জমে থাকা মিউকাস তাপের সংস্পর্শে বাইরে বেরিয়ে আসে। তবে শুধু গরম পানিতে ভাপ না নিয়ে তার মধ্যে লবঙ্গ কিংবা ইউক্যালিপটাস অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন।

তথ্যসূত্র- আনন্দবাজার পত্রিকা

;

রেকর্ড ভাঙবে তাপমাত্রা, জেনে নিন গরম থেকে রক্ষার উপায়!



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
রেকর্ড ভাঙবে তাপমাত্রা, জেনে নিন গরম থেকে রক্ষার উপায়!

রেকর্ড ভাঙবে তাপমাত্রা, জেনে নিন গরম থেকে রক্ষার উপায়!

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছরের শুরু থেকেই আবহাওয়া অধিদপ্তর জানাচ্ছে এবার তাপমাত্রা আগের সব রেকর্ড ভাঙবে। ইতোমধ্যেই তাঁর প্রভাব দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে দেশবাসীর বেহাল দশা। কোন না কোন কাজে সকলকেই বাড়ির বাইরে যেতেই হচ্ছে। তাই বাইরের গেলে নিজেকে রোদ থেকে রক্ষা করতে হবে।  জেনে নিই, যেভাবে এই গরমেও নিজেকে গরম থেকে রক্ষা করবেন-

পানি: নিজেকে সুস্থ রাখতে পানির কোন বিকল্প নেই। রোগ থেকে বাঁচতে হোক অথবা নিজেকে সুস্থ রাখতে, সবসময় পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। প্রচণ্ড তাপে নিজেকে রক্ষা করতে চাইলে কোন ভাবেই পানি পান করা বাদ দেওয়া যাবে না। তেষ্টা না পেলেও পানি পান করতে হবে। দিনে অন্তত ৮ গ্লাস বা তারও বেশি পানি পান করুন।

এছাড়াও, প্রতিবার বাইরে যাওয়ার সময় অবশ্যই পানি সাথে রাখা প্রয়োজন। বিকল্প হিসেবে পানিসমৃদ্ধ ফল বা সবজি খেতে পারেন। যেমন- আপেল, তরমুজ, শসা, আপেল, পেয়ারা ইত্যাাদি।

পোশাক: বাইরে গেলে রোদের সরাসরি সংস্পর্শে আসার কারণে গরম অনেক বেশি লাগে। তাই বাইরে যাওয়ার সময় ঢিলাঢালা পোশাক পরা উচিত। এছাড়াও,কম ওজনের কাপড় ব্যবহার ক্রুন। যেমন, সুতি বা লিনেন। এছাড়াও, হাল্কা রঙের পোশাক বাছাই করা উচিত। কেননা, গাঢ় রঙ তাপ বেশি শোষণ করে বিধায় গরম বেশি লাগে।

রোদ আড়াল করা: যখন বাইরে যাবেন, নিজেকে যথাসম্ভব ছায়ায় রাখুন। সঙ্গে ছাতা রাখুন, যেন ত্বক রোদের সংস্পর্শে না আসে। 

গোসল: গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। এতে ফ্রেশ লাগে, তাছাড়া অনেক্ষ্ণ শরীর থাকে।

গাছ: বাড়িতে থাকলে তুলনামূলকভাবে গরম কম লাগে। তবে ঘরের পরিবেশ ঠান্ডা রাখতে চাইলে বাড়িতে বেশি করে গাছ লাগান। গাছ থাকলে পরিবেষ প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা হয়।

তথ্যসূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

;

গরমে চুলের যত্ন নিন ঘরে বসেই



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সারাদেশে চলছে তীব্র তাপদাহ। গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। এই গরমে মাথা ঘেমে চুল ভেজা থাকায় অনেকেই বিরক্ত থাকেন। ঘামে ভিজে চুলের অবস্থাও নাজেহাল হয়ে যায়। অনেক সময় চুলপড়া বেড়ে যায় গরমে। তাই চুলের বাড়তি যত্ন দরকার হয় এই মৌসুমে।

অনেকেই চুলের যত্ন নিতে নিয়মিত পার্লারে যান। এতে করে সময় এবং অর্থ দুই ব্যয় হয়। অনেকের সময় সুযোগ হয়ে ওঠে না নানা ব্যস্ততায়। তাই সময় এবং টাকা বাঁচিয়ে চুলের যত্ন নিন ঘরে বসেই। 

কীভাবে চুলের যত্ন নেবেন চলুন তা জেনে নিই:

ব্যস্ত সময়ে আমরা অনেকেই চুলে তেল নেই না। আর গরমে তেল না নিলে চুল আরও রুক্ষ হয়ে যায়। তাই নিয়ম করে সপ্তাহে অন্ততপক্ষে দু’দিন চুলে তেল দিতে হবে। চুলের গোড়া মজবুত করতে ‘হট অয়েল ট্রিটমেন্ট’ নিতে পারেন বাড়িতেই।

অনেকের অভ্যাস আছে তোয়ালে দিয়ে চুল পেঁচিয়ে মাথার ওপর তুলে রাখার। এই অভ্যেস থাকলে ত্যাগ করুন। কারণ এতে চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। এর থেকে ভালো হয় পুরোনো ও নরম টি-শার্ট দিয়ে আলতো হাতে চেপে চেপে চুলের পানি শুকিয়ে নিন। চুল শুকিয়ে এলে মোটা দাঁড়ার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াবেন। সেক্ষেত্রে প্লাস্টিক না বরং ব্যবহার করুন কাঠের চিরুনি ।

কাজুবাদামের হেয়ার ওয়েল তেল, মধু আর দইয়ের প্যাক চুলের রুক্ষতা দূর করতে বিশেষ কার্যকর। লেবুর রস আর ডিমের কুসুম মিশিয়ে নিয়েও লাগাতে পারেন। এই প্যাক ফিরিয়ে আনতে পারে চুলের হারানো জেল্লা।

;

গরমে সুস্থ থাকতে যেসব খাবার খাবেন



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

তীব্র তাপদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। এ সময় শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ঘাম হয়ে বের হয়। এতে শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। ফলে শরীরে ক্লান্ত লাগে। তাই শরীর সুস্থ রাখতে আপনাকে খেতে হবে পানি ও পানিযুক্ত খাবার।

গরমে কী ধরনের খাবার শরীরের জন্য ভালো চলুন তা জেনে নিই–

পানি

পূর্ণবয়স্ক একজন নারীর দিনে অন্তত ২.৫-৩ লিটার, পূর্ণবয়স্ক একজন পুরুষের ৩-৩.৫ লিটার সুপেয় পানি পান করা উচিত। তবে কিডনি রোগীদের অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে পানির পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।

গরমে লেবু বা ফলের শরবত খাওয়া খুবই উপকারী। ডাবের পানিও খুব দারুণ কার্যকর। এসব পানীয় খুব সহজেই শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করবে। ডাবের পানি ও ফলের শরবত খেলে পানির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় খনিজ লবণের চাহিদাও পূরণ হবে।

সবজি
কাঁচা পেঁপে, পটল, ধুন্দল, শসা, চিচিঙ্গা, গাজর, লাউ, পেঁপে, পালংশাক, টমেটো, শসায় পানির পরিমাণ বেশি থাকে। পানিশূন্যতা দূর করতে এই খাবারগুলো অবশ্যই খাবার তালিকায় রাখার চেষ্টা করুন। এ ছাড়া পাতলা করে রান্না করা টক ডাল, শজনে ডাল শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।


মৌসুমি ফল

পানিশূন্যতা দূর করার জন্য কাঁচা আম খুবই ভালো। কাঁচা আমে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। এ ছাড়া ভিটামিন সি ও ম্যাগনেশিয়ামও আছে, যা শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। তরমুজ শরীর ঠান্ডা করতে সাহায্য করে। এতে আছে ভিটামিন ও খনিজ লবণ, যা এই গরমে শরীরের জন্য দরকার।

বাঙ্গি খুবই পুষ্টিকর একটি ফল, যা খুবই সহজলভ্য এবং দামেও তুলনামূলক সস্তা। শরীর ঠান্ডা রাখতে বাঙ্গির তুলনা নেই।

আখের রস

আখের রস শরীরকে ঠান্ডা রাখতে খুবই কার্যকরী। আখের রসের সঙ্গে বিট লবণ, পুদিনাপাতা এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেলে এর স্বাদও বাড়ে, পুষ্টিগুণও বাড়ে।

বেলের শরবত

বেলের শরবত পাকস্থলী ঠান্ডা রাখতে খুব কার্যকর। বেলে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, প্রোটিন, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১ এবং বি২, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও ফাইবার।


পুদিনার শরবত

শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে এবং সতেজ অনুভূতির জন্য পুদিনার শরবত অতুলনীয়।

জিরা পানি
নোনতা স্বাদযুক্ত এই পানীয় হজমে সাহায্য করে। তবে ডায়াবেটিস রোগীরা শরবতে আলাদা করে চিনি বা মধু অ্যাড করবেন না।

যা খাবেন না

অনেক কার্বনেটেড বেভারেজ আমরা গরমের সময় প্রচুর খেয়ে থাকি, যা ঠিক না। এই পানীয়গুলো শরীরকে সাময়িক চাঙা করলেও এর কোনো পুষ্টিগুণ নেই, বরং শরীরকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করে। ঝাল, বাইরের খোলা শরবত, বাইরের খাবার, ভাজাপোড়া এ সময় যতটা পারেন এড়িয়ে চলুন। পাতলা ঝোল ঝোল খাবার খাওয়া এ সময় সবচেয়ে ভালো।

 

;