সন্তানকে নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করা বলতে কী বোঝায়?



অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

ইদানিং বাচ্চারা কথা শুনে না এটা সার্বজনীন সমস্যায় রূপ নিয়েছে। কেন বাচ্চা কথা শুনে না? সেখানে আমাদের ভূমিকা কী ছিল? আসুন ধাপে ধাপে আমরা মনস্তাত্ত্বিকভাবে সেটা খুঁজি। সন্তানকে নিঃস্বার্থভাবে গ্রহণ মানে কী? আপনি ভাবছেন, আপনি সন্তানের জন্য যা করছেন সব নিঃস্বার্থ ভাবে। কিন্তু সন্তানও কী তাই অনুভব করছে? আপনার আচরণে বাচ্চা কী মনে করছে যে সে- আপনার ভালোবাসার যোগ্য? পরীক্ষায় ভালো না করলেও আপনি তাকে ভালোবাসবেন? বাচ্চাটা কি তার রাগ দুঃখ ভয় আনন্দ অকপটে আপনাকে বলে? যদি বলতে না পারে, এখানে অবশ্যই অবচেতনভাবে আপনার ভূমিকা আছে একজন অভিভাবক হিসেবে।

সন্তানকে নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করা বিষয়টিকে আমি চারটা ভাগে ভাগ করতে চাই। * প্রথমত: মানসিক * দ্বিতীয়ত: সামাজিক * তৃতীয়ত: শারীরিক এবং * চতুর্থ স্পিরিচুয়াল বা আধ্যাত্মিক।

প্রথমেই আসি সন্তানকে নিঃশর্ত গ্রহণ প্রয়োজন কেন? সন্তানকে গ্রহণ করার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর মানসিক দিক। কারণ প্যারেন্টিং বা সন্তান লালন হলো একটি লার্নিং প্রসেস বা জ্ঞান আহরণের পদ্ধতি। আমরা যেদিন গর্ভধারণ করি, সেদিন থেকেই আমরা মানসিকভাবে সন্তানকে গ্রহণ করি। নারীটি সেদিনই মা হন, পুরুষটি সেদিনই পিতা। কিন্তু আমাদের ডিএনএ গঠন, অনাগত সন্তানের থেকে ভিন্ন হওয়ায়, সন্তান পিতা মাতার থেকে ভিন্ন মানবসত্ত্বা। আমি পিতা বা মাতা হয়ে যত সহজ ভাবে নিজের সন্তানকে তার ভিন্নতা সহ গ্রহণ করতে পারব, সহজে আমি বলব, যে আমি আমার মতন ঠিক আছি, তুমি তোমার মতন ঠিক আছো তত সহজে সন্তানের ভিন্নতাকে বুঝবে। সন্তান তো আমাদের ফটোকপি না। ওর ভিন্নতাকে সম্মান করলে আমার সন্তান যেমন নিজেকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে গ্রহণ করতে পার্মিশন পাবে তেমনি অন্যর ভিন্নতাকেও গ্রহণ করতে শিখবে।

সাইকেল অফ ডেভলপমেন্টে গর্ভধারণ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়টিকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। একে বলে becoming বা গড়ে ওঠার সময়। আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন, চিকিৎসাশাস্ত্রেই হোক, কিংবা প্রত্যেকটা ধর্মেই হোক গর্ভবতী নারীকে বিশেষ যত্নের কথা বলা হয়েছে। কেন? একটা ছোট্ট এক্সাম্পল দেই। গতকাল আমি একজনের কাউন্সিলিং সেশন নিলাম। ভদ্রমহিলার বয়স ৪০, উচ্চশিক্ষিত, খুব ভালো চাকরি করেন। উনার মা কিন্তু গর্ভকালীন সময় অ্যাবরশনের চেষ্টা করেছিলেন। ভদ্রমহিলা আজকে সূপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সেই অ্যাবরশনের স্মৃতি তার মনোজগতে না থাকলেও, তার ডিএনএ লেভেলে জমা আছে। তিনি প্রচণ্ড ভয় পান, অস্থির হয়ে ওঠেন, দুশ্চিন্তা বোধ করেন, কেন এমন হচ্ছে কারণ আইডেন্টিফাই করতেই আমার কাছে তার আসা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত শিশু। আর সাইকেল অফ ডেভলপমেন্ট বলে, একটা মানুষ ১৯ বছর পর্যন্ত মানসিক ভাবে বৃদ্ধি লাভ করে। এর মধ্যে প্রথম পাঁচ বছর কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। কাউন্সিলিং টেবিলের গল্পগুলোর মধ্যে কমন প্রবলেম আমি পাই, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি, সেল্ফ কেয়ারের অভাব, আত্মসম্মান নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এই ঘটনাগুলো বীজ কিন্তু শৈশবেই শিশুমনের গহীনে রোপণ হয়ে যায়। পাঠক একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, মা গর্ভধারণ করলে আপনি, আমি কিন্তু প্রথমে জানিনা যে গর্ভস্থ শিশুটি ছেলে, মেয়ে নাকি তৃতীয় লিঙ্গ হবে? ঠিক সেরকমই সন্তান হচ্ছে বীজের মতন। আপনি বীজ বপন করবেন ঠিকই কিন্তু কি ফল হবে সেটার আশা করবেন না। কারণ প্রত্যেকটা মানুষ স্বতন্ত্র। আমি গাছ লাগাবো কিন্তু কি ফল হবে সেটা পরবর্তী সময় বলে দেবে। সেটা নির্ভর করবে আমি কিভাবে যত্ন নেব সেই ছোট্ট চারা গাছের তার উপর। যেভাবে গাছের পরিচর্যা করব, গাছটি সেভাবেই বেড়ে উঠবে। সন্তান এই গাছটার মতন।

এবার আসি নিঃস্বার্থভাবে কেন করব? সন্তান রেখে যদি নিঃস্বার্থভাবে বড় করি, তাহলে সন্তানের মনের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে না। তখন সন্তান অকপটে আপনাকে, তার আনন্দ, দুঃখ, ভয় আজ রাগের কথা বলতে পারে। ফলে সেই সন্তান দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকে প্রাপ্তবয়স্ক হলে। অর্থাৎ নিঃস্বার্থভাবে গ্রহণ করলে বাচ্চা আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভরশীল হবে। অন্যকেও তার ভিন্নতাকে নিয়ে সম্মান করতে পারবে। পরিণতিতে আমার সাথেও আমার বাচ্চার সম্পর্কসহ অন্যান্য পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কগুলো ভালো থাকবে। আপনি কিন্তু এখন প্রশ্ন করবেন তাহলে কি আমার বাচ্চা কে আমি ওর ভালোর জন্য শাসন করতে পারবো না? অবশ্যই পারবেন। কথায় আছে, "শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।" যেটাতে আমরা বলি পজেটিভ বা ইতিবাচক প্যারেন্টিং। এটা কিন্তু শিখতে হবে। প্যারেন্টিং এর ওয়ার্কশপ করাতে গেলে অনেক অভিভাবক আমাকে বলেন বাচ্চা পালা শেখার জিনিস নাকি? আমার নানী দাদী পালছে না? আমার বাপ মা পালছে না? কিন্তু অভিভাবকদের প্রতি সম্মান রেখে একটা কথা বলতে চাই, বাচ্চা পালা প্যারেন্টিং কিন্তু একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। আপনি যদি পঞ্চাশ বছর আগের মুরগি পালার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনেন, হাল চাষের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনেন, তাহলে সন্তান লালন-পালনের পদ্ধতিতে পরিবর্তন কেন আসবেনা? তাই প্যারেন্টিং শেখার জিনিস। নতুন নতুন গবেষণা লব্ধ তথ্য দিয়ে কাজে লাগানোর জিনিস। সন্তানকে নিঃস্বার্থ ভাবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সবথেকে জরুরি হলো বাচ্চাকে অন্যের সাথে তুলনা করা বন্ধ করুন। আজকে যারা এই লেখাটি পড়ছেন, তমুকের বাচ্চা এই করেছে, আর তুমি পারলে না এই তুলনাটি করবেন না। মনে রাখবেন তুলনা সন্তানের আত্মবিশ্বাসটা দুমড়েমুচড়ে শেষ করে দেবে।

এখন প্রশ্ন হলো তাহলে কি তুলনা করব না? অবশ্যই করবো। কিন্তু তুলনা করব এখানে বাচ্চার নিজের সাথে নিজের। যেমন গত পরীক্ষায় কম নম্বর পেলে এই পরীক্ষায় তার থেকে কতটুকু বেশি পেলো সেটার সাথে। অন্যের সাথে নিজের বাচ্চার কম্পেয়ার করা মানে আম গাছের সাথে কাঁঠাল গাছের তুলনা করার মতোই। আমরা বাচ্চার অতীতের সাথে বর্তমানের তুলনা করে বাচ্চার সীমাবদ্ধতা বা লিমিটেশনের জায়গাগুলা চিহ্নিত করব।

এবার যদি সামাজিক দিক থেকে দেখি, তবে আমাদের সমাজে একটা ট্যাবু আছে বাচ্চার প্রশংসা মুখের সামনে করতে হয় না। এটা মোটেও ঠিক না। কারণ আপনার ছোট্ট একটু প্রশংসা বাচ্চাকে অনেকখানি উৎসাহিত করবে। তার ভালো কাজের স্পেসিফিক্যালি প্রশংসা করুন। প্রশংসা কিন্তু আমরা প্রার্থনায় বসলে স্রষ্টারও করি। প্রশংসা সন্তানকে নিঃশর্তভাবে গ্রহণকে উৎসাহিত করে । আপনি জানেন যে নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করা মানে বাচ্চার অস্তিত্বকে গ্রহণ করা। যেটাকে আমরা মনস্তাত্ত্বিকভাবে being stage বলি। আর এটা করলে, সেটা দিবো, এটা কিন্তু শর্তসাপেক্ষে আচরণ। একে আমরা doing stage বলি। আমাদের একটা চালু কথা আছে, বাচ্চাকে আমরা বলি অংকতে ১০০ তে ১০০ পেলে তোমাকে সাইকেল কিনে দিবো, অর্থাৎ এটা করলে সেটা কিনে দিবো। এটা কখনো আর বলবেন না। আমাদেরকে কি বাচ্চার সাথে দেয়া-নেয়ার সম্পর্ক? এই শর্ত সাপেক্ষে দেয়া-নেয়া বাচ্চাদের অবচেতনভাবে কিন্তু তাই শিক্ষা দেয়। এখন যখন পিছনে ফিরে তাকাই, প্যারেন্টিং এর জিনিসগুলো যখন আমি প্রতিদিন পড়ি এখন আমি উপলব্ধি করি, আমরা তো প্রতিদিন ফার্স্ট হই না। জীবনের ফার্স্ট হওয়াটা যেমন জরুরি তেমন কখনো কখনো ফেল করে কিভাবে ব্যর্থতাটা হজম করতে হয় সেটা শেখাও জরুরি। অনেক সময় দেখা যায় বাবা-মা নিজেদের অতৃপ্ত ইচ্ছাগুলো বাচ্চাদের উপর চাপিয়ে দেন। আমি এটা হইনি তাই আমার বাচ্চাকে এটা হতে হবে। এবং এটা করতে যেয়ে আমরা এতই স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাই যে বাচ্চার কি ভালো লাগে সেটাও খেয়াল করার প্রয়োজন দেখিনা। আমার এক ছাত্রী ছিল এত চমৎকার ছবি আঁকতো চারুকলা ওর জন্য সব থেকে ভালো জায়গা ছিল। কিন্তু বাবা-মা জোর করে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল মেডিকেল কলেজে। ফলশ্রুতিতে মেয়েটা প্রচণ্ড মানসিক যাতনা ভেতর দিয়ে তার ছাত্র জীবনটা পার করে। ঠিক সেরকম কয়েকদিন আগে, আমার কাছে একটা পেশেন্ট এসছে বাচ্চাটার ছোটবেলাতেই সেক্স চেঞ্জ সার্জারি হয়ে গেছে। এখন বাচ্চাটা দৈহিকভাবে পুরুষ হলেও, মানসিকভাবে নারী। বাবা-মা বিয়ে করার জন্যে প্রচন্ড চাপাচাপি করছেন। এই বাবা-মাকে নিঃশর্তভাবে তার সন্তানকে গ্রহণ করতে পেরেছেন? অনেক বাচ্চা হোস্টেলে থাকতে চায় না, সেটা মাদ্রাসা হোক, নাম করা দামি ইংলিশ মিডিয়াম কনভেন্ট হোক। আপনি মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে যেয়ে দেখেন, প্রতিদিন কতগুলো ছেলে শিশু সেখানে রেপড হয়ে আসছে হোস্টেল থেকে। কাজেই বাচ্চারা যদি না বলে, কেন না বলছে সেটা শুনুন। কিছু না শুনেই তার ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবেন না।

সুপ্রিয় পাঠক সন্তানের আচণনগত সমস্যাসহ তার অস্তিত্বকে সর্বপেক্ষা গুরুত্ব দিন। তার আচরণগত যদি সমস্যা থাকে তবে সন্তানকে সেই সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করুন, সংশোধনে সহায়তা করুন । কিন্তু কোনভাবেই সন্তানের হাত ছেড়ে দেবেন না। এবার আসি সন্তানকে শারীরিকভাবে গ্রহণ করা, অর্থাৎ আমার বাচ্চা যদি হ্যান্ডিক্যাপ হয়, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু হয়, তৃতীয় লিঙ্গ হয় তবুও তার চিকিৎসা এবং মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করবো। তাকে স্পর্শ করে বলবো, "তুমি যেভাবেই আছো যেমন আছো, তুমি বেঁচে আছো তার জন্য আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি যেমন আছো দেখে সেভাবেই ভালোবাসি।" রবীন্দ্রনাথ কর্ণ কুন্তী সংবাদে খুব চমৎকার একটা কথা বলেছিলেন, " সন্তান সে নহে মাত সম্পত্তি তোমার।" সন্তান আমার অধিকৃত সম্পত্তি নয়। আমি জন্ম দিয়েছি বলে, যা খুশি তাই আমি সন্তানের সাথে করতে পারব এই চিন্তাটা সঠিক নয়। সন্তান সম্পূর্ণ আলাদা একটি মানুষ। ভালোলাগা মন্দলাগা আমার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সন্তান আমার আমানত। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আমার দায়িত্ব তাকে বড় করা। আমার মতামত তার উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া নয়।

আধ্যাত্মিক ভাবে বা স্পিরিচুয়ালি যদি বলি, তবে খোঁজ নিয়ে দেখবো বিগত ২৫ জানুয়ারি ২০২১, পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম একটা হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন অধ্যাপক বাবা পুরুষোত্তম নাইডু এবং অংকের স্কুল শিক্ষিকা মা পদ্যজায়া মিলে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের মাদেনাপল্লী শহরে আলেখ্য এবং ডিব্বা নামের দুই যমজ কন্যাকে পাশবিকভাবে হত্যা করে। কারণ তারা ভেবেছিল, তারা মেয়েগুলোকে পুনর্জন্ম দিতে পারবে। বাবা-মা বিশ্বাস করছে, মা শীবের অংশ এবং করোনা মায়ের শরীর থেকে উৎপন্ন হয়েছে। আমি যদি সত্যিই নিঃশর্তভাবে আমার সন্তানকে ধারণ করতাম তাহলে কি তাকে বলি দিতে পারতাম? তাহলে কি এমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমার পারলৌকিক মুক্তির জন্য পাঠাতাম যেখানে তার ধর্ষিত হবার হওয়ার সম্ভাবনা আছে?

অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া চিকিৎসক, কাউন্সিলর, সাইকোথেরাপি প্রাকটিশনার। ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বিডি। (01675380646, 01323148404)

ডায়াবেটিস থাকলে দুধ খাওয়া কি ঝুঁকির?



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেলেই জীবনে একটা বড়সড় পরিবর্তন চলে আসে। নিয়মের বেড়াজালে জড়িয়ে পড়ে প্রাত্যহিক জীবন। বিশেষ করে খাওয়াদাওয়ায় একটা বদল আসে। কারণ এই রোগ শরীরে বাসা বাঁধলে অনেক খাবার খাওয়া যায় না। সেই বিধিনিষেধের তালিকায় রয়েছে বেশ কিছু স্বাস্থ্যকর খাবারও। ডায়াবেটিস থাকলে দুধ খাওয়া যায় কি না, তা নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব কাজ করে অনেকের মনেই। অনেকেরই মনে হয়, দুধ খেলে বোধ হয় বেড়ে যেতে পারে ডায়াবেটিসের মাত্রা। সত্যিই কি তাই? চিকিৎসকেরা কিন্তু অন্য কথা বলছেন।

চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিক রোগীদের দুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। কারণ দুধের মতো স্বাস্থ্যকর পানীয় খুব কমই রয়েছে। দুধে রয়েছে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ, বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন এবং সেই সঙ্গে ক্যালশিয়াম। এগুলি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য জরুরি। দুধে থাকা ক্যালশিয়াম ডায়াবেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। সেই সঙ্গে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমায়। ফলে দুধ খাওয়া যেতেই পারে। তবে পরিমাণে রাশ টানতে হবে। দিনে এক গ্লাস দুধ খেলে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে দুধের সঙ্গে কয়েকটি জিনিস যদি মিশিয়ে খেতে পারেন, তা হলে আরও বেশি উপকার পাওয়া যায়।

>> হলুদ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ডায়াবেটিস জব্দ করতেও এর জুড়ি মেলা ভার। দুধের সঙ্গে যদি হলুদ মিশিয়ে খাওয়া যায়, তবে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে। এই পানীয় খেলে ডায়াবেটিস সংক্রান্ত নানা শারীরিক সমস্যা থেকেও মুক্তি মেলে।

>> রক্তে শর্করার মাত্রা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম দারচিনি। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। দুধের সঙ্গে যদি নিয়মিত দারচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়া যায়, তা হলে রক্তে শর্করার মাত্রা অনেকটাই বাগে থাকবে।

>> দুধের সঙ্গে বাদামবাটা মিশিয়ে খেলেও শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপাদান পৌঁছবে। প্রোটিন, ফাইবার থেকে ক্যালশিয়াম— একসঙ্গে সব কিছু পাবে শরীর। নিয়ন্ত্রণে থাকবে ডায়াবেটিস। রোজের ডায়েটে কাঠবাদাম বা সোয়া দুধ রাখলেও বেশ উপকার পাওয়া যায়।

;

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে চান?



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবের জেরে বেশির ভাগ মানুষেরই হার্টের স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল— এ সব যেন মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা যদি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যায়, তাহলে ওষুধ তো খেতেই হবে। সঙ্গে পছন্দের প্রায় সব খাবারেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যাবে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজকার খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হার্টের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।

খাসির বদলে মুরগি

বিরিয়ানি হোক বা পোলাও সঙ্গে মাংসের কোনও পদ ছাড়া জমে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এই ধরনের ‘লাল’ মাংস খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খাসির বদলে মুরগির মাংস খাওয়া তুলনায় স্বাস্থ্যকর।

ভাজার বদলে বেক

অনেক চেষ্টা করেও ভাজাভুজি খাবারের লোভ সামলাতে পারছেন না। এই অভ্যাসের ফলেই কিন্তু অজান্তেই বেশির ভাগ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাজার বদলে যদি বেকড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তবে এই সমস্যা অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে।

পাউরুটিতে মাখনের বদলে ডিম

সকালের খাবারে পাউরুটি খান অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পাউরুটির ওপর মাখন দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শুধু পাউরুটি খেতে যদি সমস্যা হয়, তবে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে, তা বেক করে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই থাকবে।

আইসক্রিমের বদলে ইয়োগার্ট

মন খারাপ হলে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ মন ভাল করতে এই টোটকা সত্যিই কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হল আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসে রক্তে বাড়তে থাকা কোলেস্টেরল। পরবর্তীকালে যা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

নরম পানীয়ে বদলে ফলের রস

গরমে তেষ্টা মেটাতে বার বার ঠান্ডা পানীয়ে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্তু এই পানীয়ে থাকা কৃত্রিম শর্করা যে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে, টের পেয়েছেন কী? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই তেষ্টা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নরম পানীয় না খেয়ে ফল থেকে তৈরি রস খেতে পারেন।

;

জাম খেতে হবে নিয়ম মেনে



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলছে মধুমাস। বাজারে ফলের অভাব নেই। তবে গরমে জামের কদর খানিকটা বেশি। জামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ। পটাশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ জাম শরীরের অনেক সমস্যার সমাধান করে।

তবে সেসব সুফলগুলো পেতে হলে জাম খাওয়ার সময় এবং পরে মেনে চলতে হবে কয়েকটি নিয়ম। সেগুলো জেনে নিন-

১. ফল খাওয়ার পর এমনিতেই পানি পানে বারণ করা হয়। তেষ্টা পেলেও জাম খেয়ে কখনও পানি পান করবেন না। নইলে ডায়েরিয়া ও বদহজমের মতো সমস্যা হতে পারে। জাম খাওয়ার অন্তত আধা ঘণ্টা পরে পানি পান করুন।

২. খালি পেটে জাম না খাওয়ায় ভালো। এতে বদহজম, অম্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

৩. জাম খাওয়ার পর দুধ, পনির, দইয়ের মতো দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।

৪. জাম এবং হলুদ খুবই মারাত্মক জুড়ি। এই দুটো জিনিস কখনও একসঙ্গে খাবেন না। জাম খাওয়ার পর তাই হলুদ দিয়ে তৈরি কোনও খাবার না খাওয়াই ভাল।

৫. জাম খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আচারজাতীয় কোনও খাবার না খাওয়াই ভালো।

;

যে ৩ উপায় দূর হতে পারে ব্রণের দাগ



লাইফস্টাইল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নির্দিষ্ট একটি বয়সে বেশির ভাগ ছেলেমেয়ের মুখে ব্রণর সমস্যা দেখা যায়। বিশেষ করে যাদের ত্বক তৈলাক্ত, ব্রণের সমস্যা যেন আরও জাঁকিয়ে বসে। অনেক চেষ্টা করার পর ব্রণ দূর হলেও সমস্যা যে একবারে মিটে গেল, তা কিন্তু একেবারেই নয়। ব্রণের জন্য যে দাগ রয়ে যায়, তা মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করে। ব্রণের দাগ সহজে যেতে চায় না। এই দাগ ম্লান হতে কয়েক মাস, কখনও আবার কয়েক বছরও লেগে যায়। অনেক চেষ্টা করেও পুরোপুরি চলে যায়নি, এমন উদাহরণও রয়েছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, ব্রণ কমে গেলেও অনেকের মুখে দাগছোপ থেকে যায়। যেটি আসলে ‘হাইপারপিগমেন্টেশন’ নামে পরিচিত। ব্রণর থেকেও এই দাগগুলি বেশি চিন্তিত থাকেন অনেকে। একটা ভয়ও কাজ করে মনের মধ্যে— আদৌ ত্বক আবার আগের মতো হবে তো? এই ধরনের দাগ দূর করতে বাজারে অনেক প্রসাধনী পাওয়া যায়। সবগুলি যে ফলদায়ক হবে, এমন নয়। কিছু ক্ষেত্রে তা খরচসাপেক্ষও বটে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিলে এই সমস্যা অনেকটাই দূর করা সম্ভব।

নিয়মিত ত্বকের যত্ন

ব্রণ কমে গিয়েছে মানেই ত্বকের পরিচর্যায় ইতি টানলে চলবে না। ব্রণ কমে যাওয়ার পর ত্বকের যত্ন নিয়ে যেতে হবে নিয়ম করে। বিশেষ করে করা ‘সিটিএম’ অর্থাৎ ক্লিনজ়িং, টোনিং এবং ময়েশ্চারাইজ়িং বন্ধ করলে চলবে না।

রোদ থেকে ত্বকের সুরক্ষা

দাগছোপ যুক্ত মুখে রোদ লাগলে তা দূর করা আরও সমস্যার হয়ে যায়। তাই রোদে বেরোনোর আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন মাখার অভ্যাস করতে হবে। বাড়িতে থাকলেও ‘এসপিএফ-৩০’ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

নিয়মিত এক্সফোলিয়েট করা

স্ক্রাব করার ফলে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়। রোমকূপে জমে থাকা ময়লা বাইরে বেরিয়ে যায়। দাগছোপ তৈরি হওয়ারও অবকাশ কমে। এ ক্ষেত্রে ‘আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড’ বা ‘বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড’ যুক্ত এক্সফোলিয়েট ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

;